somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গঃ কোটা সংস্কারের আন্দোলন- 'আসছে আন্দোলনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো'

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন ধরে দেশের বাইরে থাকায় চলতি ছাত্র আন্দোলন থেকে দূরেই ছিলাম বলতে গেলে। দেশে এসে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছি। প্রিয় একটি মুভির কিছু কথা বার বার মনে পড়ছে। গত কয়েকদিনের প্রেক্ষাপটে সামান্য পরিমার্জিত করে বলা যায়,

"Beneath this protest there is more than flesh. Beneath this protest, there is an idea.
And ideas are bulletproof."

এ কথা অনস্বীকার্য যে, খুব দ্রুতই এই কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। সম্ভবত সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও এতটা আশা করেনি। সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই-বোনেরা যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোটাধারী-কোটাহীন নির্বিশেষে এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন, তাতে আসলেও অবাক না হয়ে পারছি না! যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের ছাত্র জনতাকে দাবায়ে রাখতে কোন শক্তিই পারেনি। বাংলার ইতিহাসে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ৪৮, ৫২, ৫৪, ৬২, ৬৬, ৬৯, মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ কিংবা ৯০-৯১ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের রক্ত যে ছাত্র জাতির শরীরে বইছে- তাদের জেগে ওঠা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কোটা প্রথা সংস্কারের দাবি কিন্তু কয়েকদিনের নয়। আমরা সদ্য গ্র্যাজুয়েট যারা ৩৮তম বিসিএস দিয়েছি, এবং এ পদ্ধতির সাথে একটু হলেও পরিচিত, তারা অধিকাংশই এই বৈষম্যের ভুক্তভোগী। মেধার দীর্ঘমেয়াদী মূল্য আমরা কখনো পেয়েছি কি? জীবনের প্রতিটি স্টেজে উঠতে উঠতে ক্রমশ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে নতুন করে। প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, এসএসসি, এইচএসসি, গ্র্যাজুয়েশন লেভেলে মোটামুটি ভাল মানের রেজাল্ট করেও এখন আবার নতুন করে প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে পুরো শূন্য থেকে। এর মাঝে যদি কোটাশূন্যতার কারণে কেউ সরকারি সুযোগ থেকে বাদ পড়ে তার দায়দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের উপরই বর্তায়। অন্তত এই অান্দোলনের পর সরকারের উচিত ব্যাপারটা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া। বিশেষ করে কোটার শতকরা হার কমিয়ে মানানসই পর্যায়ে নিয়ে আসা। একথা বলাই বাহুল্য, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্যসন্তান। সরকার যদি তাঁদের বিশেষ সুবিধা দিতেই চান, তাহলে দিক, তাতে কারোই কোন আপত্তি নেই। নারী কিংবা আঞ্চলিক কোটার ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য। কিন্তু হারটা একটু সংশোধন করা সময়ের দাবি। আবার, অনেকে আছেন, যারা এই কোটার সুবিধা নিয়ে একের পর এক পরীক্ষায় সুযোগ নিয়েই যান। কেউ কেউ কয়েকদিন আগে ব্যাংকের নিয়োগে কোটার সুযোগ নিয়ে চাকরি পেয়ে আবার একই কোটাপদ্ধতির সুযোগ নিয়ে বিসিএস এ অংশ নেন। যার ফলে, তেলা মাথায় তেলই ঢালা হচ্ছে। আর কোটাহীন মেধাবীরা ঘা সয়েই যাচ্ছে। ফলে, মেধার বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমাগত।

মোদ্দা কথা, 'Divide and Rule' এবং দমনমূলক নীতি বা ধ্বংসাত্মক উপায় নয়, বরং আলোচনায় বসে দাবিগুলো শুনে এই পদ্ধতির সংস্কার করা উচিত। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে, এই আন্দোলন যাতে অন্য খাতে কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ফাঁদে পা না বাড়ায়। 'কোটা বাতিল নয়, সংস্কার'- এ কথাটিও সরকারের কানে ঢুকিয়ে দেয়া উচিত। ছাত্রজনতার দাবি কোন সরকারই নাকোচ করতে পারেনি, পারবেও না- এই আশা রাখি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কোনকালেই বাঙালি চুপ ছিল না, এবারো হয়তো থাকবে না। রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, জলকামান, কারাগার কোন কিছুই তাঁদের দমাতে পারেনি।

পরিশেষে, জহির রায়হানের ভাষা আন্দোলন নিয়ে রচিত 'আরেক ফাল্গুনে' উপন্যাসের চেতনা হঠাৎ মনে পড়ছে,

"ছেলেমেয়েদের জেলখানায় ঢোকানোর সময় নাম ডাকতে ডাকতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন ডেপুটি জেলার সাহেব। একসময়ে বিরক্তির স্বরে বললেন, উহ্, এত ছেলেকে জায়গা দেবো কোথায়। জেলখানা তো এমনিতেই ভর্তি হয়ে আছে।
ওর কথা শুনে একজন বললো,
'এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি?
আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো'।"

কোটাপদ্ধতির যদি আশু সংস্কার নাহয়, তবে আসছে দিনগুলোতে যে আমরা দ্বিগুণ হবনা- তার নিশ্চ্যতা কী?

১০.০৪.১৮

#ReformQuotaBD
#Quota_reformation
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৫৮
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×