somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাপুয়া নিউ গিনি মানুষ খেকোদের দেশ ৩ ( মানুষ খেকোদের গল্প)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“যেই লোকটি মাইকেল রকেফেলারকে খেয়ে ফেলেছিল” নাটকের একটি দৃশ্য


পাপুয়া নিউ গিনি সম্পর্কে অনেক আগে থেকে জানতাম মূলত দুটো কারনে । এক-- দ্বিতীয় বিশ্ব যুধ্বে জাপানের ঘাঁটি এবং পরবর্তীতে ব্যাপক যুধ্ব, দুই—মানুষ খেকোদের দেশ হিসাবে । তবে কোন দিন নিজেই ওখানে যেতে পারব ভাবি নি । কিন্তু যখন সুযোগ আসল , চিন্তা করলাম মানুষ খেকোদের সাথে দেখা করতেই হবে !! আমরা প্রথম যে পোর্টে গিয়েছিলাম তার নাম রাবাউল । রাবাউল এক সময় রাজধানী ছিল কিন্তু আগ্নেয়গিরির কারনে এখন কোন মতে ছোট্ট একটা শহর টিকে আছে ।
আমাদের এজেন্ট বারবার বলল , সন্ধ্যার পর কেউ যেন বাইরে না যায়। আমি খুব প্রাসজ্ঞিক ভাবেই তাকে জিজ্ঞাসা করলাম , বাইরে গেলে কি সমস্যা! সে জানাল পোর্ট এরিয়ার বাইরে রাস্তায় বা অন্য কোথাও রাতে লাইট নেই । তাছাড়া আছে জংলীদের উৎপাত। আমি তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম , মানুষ খেকোদের সম্পর্কে । অত্যন্ত লাজুক ভাবে বলল , আগে লোকজন সিভিলিজড ছিল না, তখন খেত কিন্তু এখন তেমনটি হয় না। এর পর গেলাম পোর্ট মেসাইদ । এখানেও আমাকে কেউ সন্তস্ট করতে পারল না । তবে পোর্ট লেই তে যেয়ে আমার মনের আশা পূর্ণ হল ।

পোর্ট লেইতে পরিচয় হল পাপুয়া নিউ গিনির এলিট (স্বঘোষিত) সিকিইরিটি কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে । তিনি শিক্ষিত এবং সব বিষয় তার ভাল জ্ঞান। পাপুয়া গিনির রাজনীতি , অর্থনীতি , সমাজ ব্যাবস্থা সম্পর্কে তার অনেক জ্ঞান। তার কাছে শুনলাম , এই দেশের শতকরা ১২ ভাগ লোক নাগরিক সুযোগ সুবিধা পায় । বাকি সবাই মোটামটি আদিম বাসীদের মত জীবন যাপন করে। এরা প্রায় সবাই বনে বা পাহাড়ে বসবাস করে। মাছ ধরা , বন জঙ্গল থেকে খাবার সংগ্রহ করে এদের জীবন চলে। আমরা যখন পোর্ট লেইতে ছিলাম তখন এখানে চলছিল রেড এলারট । কারন আদিম বাসীরা রাতের বেলা পাহাড় থেকে শহরে আক্রমণ করছে।এই দেশের আদিবাসীরা মূলত বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত । গোত্রের ভাষাও আলাদা !! (পাপুয়া নিউ গিনিতে প্রায় ৮৫০ টি ভাষা ছিল।) এবং প্রায়ই এদের গোত্রের সাথে গোত্রের মারামারি হয় এবং যারা মারামারিতে জিতে যায় তারা জয়ের স্মারক হিসাবে মৃত মানুষের মুণ্ড কেটে নিয়ে যায় যা হেড হান্টিং নামে পরিচিত।
গত শতাব্দী জুড়ে ইংরেজ এবং ওলন্দাজ মিশনারীরা সেখানকার জংলী আদিবাসীদের ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করেছে। তারা জংলী আদিবাসীদের শিক্ষিত করার পাশাপাশি খৃষ্টান ধর্ম প্রচার করছে। এবং এরাই দেশে ফিরে এসে তাদের ছিন্নমস্তক এবং মানুষের মাংস খাবার গল্প ছড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মনযোগ আকর্ষণ করেছেন।

তবে যে গল্পটি সত্যিকার অর্থে পাপুয়া নিউ গিনিকে বিশ্বব্যপি মানুষ খেকোদের দেশ হিসাবে পরিচিতি এনে দিয়েছে তা হল মাইকেল রকফেলারের (১৯৬১ সালে) পাপুয়া নিউ গিনিতে অন্তর্ধানের পরে ।

“যেই লোকটি মাইকেল রকেফেলারকে খেয়ে ফেলেছিল”/ 'দ্যা ম্যান হু এইট মাইকেল রকেফেলার' এইনামে ক্রিস্টোফার স্টোকসের একটি ছোট গল্প অবলম্বনে রচিত নাটক (জেফ কোহেন পরিচালিত) বিশ্বব্যপি পাপুয়া নিউ গিনিকে লাইম লাইটে নিয়ে আসে।

কিন্তু কে এই মাইকেল রকফেলার !! কিভাবে তার পাপুয়া নিউ গিনিতে অন্তর্ধান হল । কি হয়েছিল তার !!!

১৯৩৮ সালে নিউইয়র্কে জন্ম হয় মাইকেল রকফেলার।মাইকেল রকফেলার বাবা ছিলেন নিউইয়র্কের মেয়র এবং পরবর্তীতে আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট নেলসন অলড্রিচ রকেফেলার!!!!! রকেফেলার পরিবারের সম্পদ ও সাম্রাজ্যের পরিচিতি উনবিংশ শতাব্দি শেষ ভাগ থেকে বিশ্বব্যাপী রয়েছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় তাদেরই অর্থে তৈরি ।

মাইকেল মানুষ হন প্রাচুর্যের মধ্যে । সেই সময় তাদের পরিবার সারা বিশ্বে সুনামের সাথে পরিচিত । তারা ১৯২৫ সালের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করছেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং শিশুদের কল্যাণে । শহর সেরা স্কুল, ইউরোপে ছুটি কাটাতে যাওয়া এবং আমেরিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় রকফেলার ম্যানসনগুলিতে ভ্রমণ এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তার। মাইকেলের গ্রাজুয়েশন হয় ১৯৬০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে ।মাইকেলের পরিবার তাকে খুব সাধারন ভাবে জীবন যাপনে অভ্যস্ত করে তোলেন । নতুন যায়গা, মানুষ ও বিষয়ের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। এবং সেই আগ্রহ মেটাতে নিয়তির খেলায় মাত্র তেইশ বছর বয়সে নিউ গিনির জঙ্গলে তিনি হারিয়ে যান।

হার্ভার্ডের গ্রাজুয়েশন শেষে ৬ মাস বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেইনিং এর পরে বাবার ব্যাক্তিগত আর্টের সংগ্রহশালার জন্যে শিল্পকর্ম সংগ্রহ করার জন্যে তার দক্ষিণ আমেরিকার যাবার কথা ছিল। কিন্তু তার রুমমেটের কাছে শুনতে পান যে হার্ভার্ডের একজন তরুণ প্রফেসর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরের হয়ে নিউ গিনিতে একটি নৃতাত্বিক অভিযানে যাবেন। ঠিক হল যে রকফেলার নিজ খরচে অভিযানে যোগ দেবেন এবং ডকুমেন্টারি দলে সাউন্ড রেকর্ডার এবং ফটোগ্রাফারের কাজ করবেন। এই অভিযানে মাইকেল আসমাত আদিবাসীদের সম্পর্কে শোনেন এবং তাদের কাঠের কাজ, মস্তকের খুলিতে কাজ ইত্যাদি সংগ্রহ করতে আগ্রহী হন। তিনি স্টিলের কুঠার আর সিগারেট এর বদলে এগুলোর কয়েকটি নমুনা যোগাড় করেন । ১৯৬১ সালের জুন মাসে তিনি মূল অভিযান থেকে আলাদা হয়ে আসমাতদের সন্ধানে যান। রকফেলার তার ডায়রিতে আসমাত আদিবাসী সম্পর্কে লেখেন: “এইসব শিল্পের মতই আশ্চর্যজনক হচ্ছে তাদের আচার ও রীতি যা এখনও আদিম রয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও এরা সবাই হেডহান্টিং বা ছিন্নমস্তক সংগ্রহ করত। ওখানে কম সভ্য লোকই যেতে পারত বলে তাদের মানুষখেকো আদিম আচার তখনও চলছিল।” তবে উদ্ধত ও বিপদজনক আসমাতদের সাথে সমস্যা হওয়ায় তিনি আবার মূল অভিযানে ফিরে যান জুলাই মাসে। সেপ্টেম্বর মাসে তারা সবাই আমেরিকা ফিরে যান।



মাইকেল পাপুয়া গিনির রহস্যভরা এলাকার নেশায় পড়ে যান। বাড়িতে ফিরে মাইকেল শোনেন যে তার বাবা-মার বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে এবং তার মন ভারাক্রান্ত হয়। তিনি আবার ফিরে যেতে মনস্থ করেন এবং সেই অভিযানের জন্যে যোগাড়-যন্তর শুরু করেন। এর জন্যে সরকারী অনুমোদনের দরকার ছিল – তবে তার পিতা ক্ষমতার জোরে সহজেই মার্কিন ও ডাচ সরকারের (পাপুয়ায় নিউ গিনি তখন ডাচদের হাতে ছিল) কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি সংগ্রহ করে দেন। দু সপ্তাহ বাড়ি থেকেই তিনি সেপ্টেম্বরেই আবার পাপুয়া নিউ গিনি ফিরে যান। শুরু হয় মাইকেলের অন্তর্ধান অভিযান।

চলবে.........................।


এরা কি এখনও মানুষ খেকো ??

সুত্র :পাপুয়া হেরিটেজ সোসাইটি ,ডেভিড ক্রাইচেক, ট্রুটিভি ক্রাইম লাইব্রেরী
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:২৬
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×