"অনিমা"
(রাত বারোটা)
মেয়েটা শুধু হাসতো আর হাসতো ....
তবে শব্দ করে নয় .... একটা কোলন আর ফার্স্ট ব্রাকেটের অবতল অংশ দিয়ে যেই হাসিটা হয় ওইটা .....
আর ছেলেটা কি ভাবতো কে জানে!!
"বসন্ত"
(দুপুর তিনটে)
ছেলেটা ঝাঁকড়া চুল এলোমেলো করে, চশমার স্বচ্ছ কাঁচের ভেতর দিয়ে নিঃশ্চুপে দেখত । আইনস্টাইনের মত দেখতে হলেও + - করে মনের কথাটা বলতে পারত না । একটা কোলন আর ব্রাকেটের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া যদিও তার কাজ নয়, তবুও কে জানে সমীকরণ ভালবাসে বলেই হয়তো ব্রাকেটের ভেতর আটকে থাকতে চায় ।
"অনিমা"
(রাত আটটা)
মেয়েটা আবার কাউকে আটকে রাখতে চাইতোনা .... অনেকটা কচু পাতার মতও বলা যায়, যে কিনা বৃষ্টি ভালোবাসে ...আর অস্থায়ী আবাস তৈরি করে এক বিন্দু জলের জন্য ...
ম্যাথম্যাটিকস এর জট বাধাঁনো ঘুরানো প্যাঁচানো সূত্র তার মাথায় ঢুকতোনা ... প্রকৃতি আর মানুষ ছিলো তার ভাবনার বিষয়বস্তু ....
"বসন্ত"
(রাত এগারোটা)
ছেলেটা আবার আত্মভোলা টাইপের । সবকিছুতেই থিওরী খোজে । এইত হিসেব কষে নিমিষেই বল দিতে পারবে কতটা সময় কচুপাতায় পানিটা আটকে থাকবে, গোলাপ ফুলটা কবে একদম ঝড়ে পড়ে যাবে । তবে এই গোলাপ ফুলটাই যে কাউকে দিয়ে একটা সহজ সূত্রের অবতারণা করা যায় তাই সে জানেনা । দিন যায়, রাতটাও পিছে পিছে রওয়ানা দেয়, কিন্তু এই সহজ সূত্রটাই মাথায় ঢোকেনা । মন খারাপ হয় ছেলেটার, প্রচন্ড মন খারাপ, দু চোখে হয়ত জল ও ঝড়ে পড়ে । হয়ত সেই জলটাই আটকে থাকে সবুজ কাঁচের চুড়ি পড়া মেয়েটার হাতের সবুজাভ কচু পাতায় । তবে মেয়েটা কি সেটা জানে ? হয়তো হ্যাঁ নয়তো..... ।
"অনিমা"
(ভোর পাঁচটা)
মেয়েটা হয়তো জানেনা অথবা জেনেও না জানার ভান ধরে... একটা স্বাভাবিক নিয়মের অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ দেখে মাঝে মধ্যে ঘাবড়ে ও যায় ...
আবার হয়তোবা কোনো অর্ধেক চাঁদের মাঝরাত্রিতে বারান্দায় ভাবতে বসে!!
কি যে ভাবে সে নিজেই বোঝেনা ...খুব মায়া হয় তার ছেলেটাকে দেখে! মায়াটা আবার ক্ষোভে রূপান্তরিত হতে সময় নেয়না খুব একটা!! মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ওই ঝাঁকড়া চুলগুলো দুই হাতের মুঠিতে নিয়ে জোরেশোরে একটা ঝাকুনি দিতে ...আবার পরক্ষনেই ওই মায়া মায়া চোখের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন ভর করে ...
তবে এটা খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। স্বপ্নের চাঁছাছোলা গানিতিক রূপটা যে তার ভাল্লাগেনা ....
"বসন্ত"
(বিকেল পাঁচটা)
আজ খুব জ্বর ছেলেটার, ছোটবেলায় দেখেছে নিজের মাকে মন খারাপ থাকলেই বৃষ্টিতে ভিজতে । দেখাটা একদম মনে ভেতরে গেথে গেছে, সাথে সাথে ভেজার কারনটাও ।
রাতের বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর তো হয়ই ।
কারো কোন খোজ খবর নেই, বাবা দেশের বাইরে আর মা শুধু দেশ নয় এই মহাবিশ্বের বাইরে অচেনা অজানা জায়গায় ।
খুব ইচ্ছে করে ছেলেটার এই সময়টায় মায়ের হাতের স্পর্শ পেতে অথবা একজন মায়াবতী বলতে গেলে মেয়েটার হাতের স্পর্শ কপোলে পেত । ঝাপসা চোখে ছেলেটা দেখত মেয়েটার চোখ বেয়ে ফোটায় ফোটায় গড়িয়ে পড়া অশ্রুবিন্দুকে । চাঁদের আলোয় একেকটা ফোঁট টাকেই তারা বলে ধরে নিত ।
এইত সামনে বসে আছে মায়াবতী, অসম্ভব কষ্টে মাথা তুলে এগোয়, হাতটা বাড়ায় । কিন্তু হায়, ভাগ্য এবারও প্রতারণা করে । হ্যালুসিনেশন, আর সহ্য হয় না ছেলেটার ঙান হারায়
থেকে থেকে বুকটা কেপে ওঠে, মনে হয় ঘুমেই কাঁদছে ছেলেটা
"অনিমা"
(রাত একটা)
আজ মেয়েটার ও প্রচন্ড রকমের মন খারাপ ...
বার বার শুধু ওই অসহায় চাহনির ছেলেটা মাথার ভেতরে জুরে বসছে ... দেখতে ইচ্ছে করছে খুব ঝাঁকড়া চুলের আত্মভোলা আইনস্টাইন টা কে ... এই অদ্ভুত ইচ্ছেটা কেনো করছে তার সে জানেনা ... ধ্যাত ..এত্তোসব ভাবতেও ইচ্ছে করছেনা ...টান বলের উৎস টার দিকেই মন চলে যাচ্ছে।
"বসন্ত"
(সকাল আটটা)
টলোমলো পায়ে হাটছে ছেলেটা, গন্তব্য মায়াবতীর আবাসস্থল । গায়ে প্রচন্ড জ্বর ।
"মায়াবতী কি আমায় বকবে, জ্বর নিয়ে বেড়োচ্ছি বলে ?" ভাবে ছেলেটা ।
ধূর কি সব ছাইপাশ ভাবছি । মায়াবতী হয়তো আমায় চেনেই না ।
শিশুরা যেমন টলোমলো পায়ে হাটতে শেখে তেমনি ছেলেটাও হাটছে, বারবার পড়ে যেতে যেতেই কিছু একটা ধরে দাড়িয়ে পড়ে । শেষরক্ষাটুকু আর হয় না, ফুটপাতে পড়ে মাথাটা ঠুকে যায় । কপাল বেয়ে ঈষৎউষ্ন লাল রংএর তরল গড়িয়ে পড়ে । দু চোখ প্রসারিত করে দেয় ছেলেটা, ঠিক রক্তরাঙা একটা শাড়ি পড়ে ছুটে আসছে মায়াবতী ।
"স্রষ্টা এটা যেন বিভ্রম না হয়" বিড়বিড় করে ছেলেটা ।
স্রষ্টাকে কায়মনোবাক্যে ডাকতে থাকে ।
স্রষ্টা কি তার ডাক শুনবে ? কে জানে ?
"অনিমা"
(দুপুর একটা)
নাহ ... এইবার আর হ্যালুসিনেশন নয় ... লাল একটা শাড়ি পরে কলেজের অনুষ্ঠান শেষে এই পথেই ফিরছিল মেয়েটি ...
শেষটুকু তুমিই দাও বসন্ত
"বসন্ত"
(রাত আটটা)
শেষটুকু আর লেখার ইচ্ছে নেই । থাকুক না কিছু অসমাপ্ত গল্প । শেষটায় হয় দু জনে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাবে, নয়তো আরেকটা হ্যালুসিনেশন হতে দোষ কি ?