somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিশাল শাহরিয়ার
ভালোবাসা কেমন আমার জানা নেই, জানা নেই কিভাবে কি হলে ছোঁয়া যায়। আমি শুধু জানি আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় নি। আরো অনেকটা পথ একা একা হেটে যেতে হবে। ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবার আগে শেষবারের মত ছুঁতে চাই, তোমার অনামিকা জুড়ে একটা অভ্যাস হয়ে থাকতে চাই, ব্যাস।

জল

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবা কখনই আমার উপর রাগ করেন না । সবেতেই সায় ।

'বাবা আজ না বল্টুদের গাছে গুলতি মেরেছি । জানো ঐ গুলতি না বল্টুর মাথায় লেগেছে । ভাগ্যিস কেউ দেখেনি'
বাবা কিচ্ছু বললেন না, একটু বকলেন না পর্যন্ত ! শুধু ঠোটের কোনে মুচকি একটু হাসলেন ।

আমার ধারণাটা অবশ্য ভুল, বল্টু ঠিকই টের পেয়েছে এইটা আমার কাজ । দৌড়ে আসার সময় হয়তো দেখেও থাকবে । বিকেলে বল্টুর মা এসে যাচ্ছেতাই বলে গেল, মুখের ভাষার সে কি ছিরি ।
চাচীআম্মা আমায় আচ্ছামত পেটালেন, তবুও বাবা কিচ্ছু বললেন না । এত গরমেও কাশ্মীরি শাল গায়ে বসে রইলেন । আমার অবশ্য তেমন একটা লাগেনি, বলতে গেলে লাগেনা আরকি । ভেবে নিই মা আমাকে কোলে নিয়ে ছোটবেলার মত আদর করছে, তাহলে মারের ম টাও কাছে আসতে পারে না ।
আজ প্রায় তিন বছর হচ্ছে আমরা চাচার বাড়িতে । আমরা বলতে আমি আর বাবা । মা সেই কবেই বিদেশে চলে গেছে । চাচীআম্মা মাঝে সাঝে ই নোংরা নোংরা কথা বলেন মাকে নিয়ে, 'এ কেমন মেয়েছেলেরে বাবা, ঘরে বাচ্চা ফেলে পরপুরুষের সাথে পালায় । ছ্যা ছ্যা ছ্যা, কি নোংরা কি নোংরা । এসব বেশ্যাপনা কি না করলেই চলত না । কি সুখের সংসার খানাই না ছিল । ঐ নোংরা মেয়েছেলে দিল তো সব শেষ করে, ছ্যা ছ্যা ।'

আমি ওসব কথায় কান দি না । বাবা বলেছে মা আমায় খুব ভালবাসত, তাই আমার ও উচিৎ তাকে ভালবাসা । তাই আমি ওসব শুনি না । মাঝে মাঝে অবশ্য দু একটা কথা কানে এলে এক আধটু কান্না পায়, তবে আমি সামলে নিই । চোখের কোন দুটো টেনে ধরি । চোখের জল চোখেই গড়িয়ে যায় আর কান্না পায় না । এটা অবশ্য আমি বাবার থেকে চুপিচুপি শিখেছি । বাবা যখন কাদত তখন এভাবে সামলে নিত । মজার না ?

বাবা সারাটাক্ষণ চেয়ারে বসে থাকেন । ঐ চেয়ারটেয় যে কি আছে সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না । পাশের বাড়ির সোবহান চাচা তো এই বসে থাকতে থাকতেই প্যারালাইজড্ হয়ে গেলেন । বাবাকে কত করে বললাম, 'ওঠ ওঠ, সোবাহান চাচাকে দেখলে না কেমন হয়ে গেছে ওরকম কিন্তু তোমার ও হবে, হ্যাঁ । উঠে পড়'
তার কি আর আমার কথা কানে যায়, ঐ বসেই রইলেন । মাঝে মাঝে বড্ড অভিমান হয়, 'আমি ছোট বলে কি আমার কথা শুনতে নেই !'
'দেখ ওরকম হলে কিন্তু বলতে পারবে না আমি সাবধান করি নি, হ্যাঁ'
বলেই ছুটে বল্টুর সাথে খেলতে যাই । বল্টুটা কেন জানি খুব ভালো । কাল চকলেট দিয়ে সব মিটমাট করে নিয়েছে, বাবা পচাঁ খুব পচাঁ ।

বাবা বই পড়তে খুব ভালবাসতেন । এইত এখন ও কোলের ওপর কবিতার বই রেখে বসে আছেন । আমিও পড়তে শিখে গেছি, সুর করে সংকল্প কবিতাখানা বেশ পড়তে পারি । বাংলা স্যার তো বলেই দিয়েছেন, সামনের অনুষ্ঠানে আমাকে দিয়ে কবিতা পড়াবেন । বাবার পুরোনো ট্রাংকে বেশ কটা কবিতার বই আছে । আমি মাঝে মাঝে চুপিচুপি বের করে পড়ি, বাবা দেখলে আর নিস্তার নেই ।
'হাজার বছর ধরে আমি পথ হাটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের.........'
ধ্যাত্তোর এ কি লিখেছে, হাজার তো ঐ একের পরে তিনটে শূণ্য আর পৃথিবী নাহয় বুঝলাম, কিন্তু ঐ সিংহল টা আবার কোন প্রাণী হে ?
আমার ছোট্ট মাথায় এই কবিতা দিয়ে কোন কাজ নেই, এর থেকে আমার সংকল্প ঢের ভাল ।

আজ চাচীআম্মা আমায় খুব মেরেছে, পিঠে একদম কালসিটে দাগ পড়ে গিয়েছে । অপরাধ প্লেট ভেঙ্গে ফেলেছি । আমার অবশ্য তেমন লাগেনি, মহাষৌধ আছে না । এরপর বল্টুর সাথে খেলেছি । সন্ধ্যেয় সংকল্প কবিতা পাঁচ বার লিখেছি । এখন রাত আটটা বাজে, বাবা এখন ও সেই বসেই আছেন । কোলে কবিতার বই, গায়ে কাশ্মিরী শাল আর ঠোঁটটে মুঁচকি হাসি ।
আমার না হুট করে খুব কান্না পায় । অভিযোগ করতে ইচ্ছে হয়, 'জানো বাবা চাচীআম্মা আজ আমাকে খুব মেরেছে, বল্টু বলেছে পিঠে ইয়া মোটা মোটা দাগ উঠেছে । আমার না একটুও লাগেনি । মাকে নোংড়া মেয়েছেলে বলেছে তাও খারাপ লাগেনি । জানো বাবা তোমাকে খারাপ বলেছে, তোমাকেও মেরেছে । এই দেখ তোমার কাঁচগুলো কেমন ভেঙ্গে গিয়েছে । আমার খুব খারাপ লেগেছে । তোমার খুব লেগেছে না বাবা ? ও বাবা তোমার খুব লেগেছে না ? বাবা তুমি বেড়িয়ে এস না কাঁচের ওপাশ থেকে । তুমি শুধু একটাবার বেড়িয়ে এস, দেখ আমি চাচীআম্মার কি করি । ও বাবা বাবা'

আমি চোখের কোন টেনে ধরি, আজ আর চোখের জল বাঁধ মানে না । এক ফোঁটটা দু ফোঁটটা করে গড়িয়ে পড়ে ভাঙ্গা কাঁচের ফ্রেমের ওপর ।
সে জল মুচঁকি হাসতে থাকা লোকটার ছবির চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে, ধীরে খুব ধীরে ।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×