somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিশাল শাহরিয়ার
ভালোবাসা কেমন আমার জানা নেই, জানা নেই কিভাবে কি হলে ছোঁয়া যায়। আমি শুধু জানি আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় নি। আরো অনেকটা পথ একা একা হেটে যেতে হবে। ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবার আগে শেষবারের মত ছুঁতে চাই, তোমার অনামিকা জুড়ে একটা অভ্যাস হয়ে থাকতে চাই, ব্যাস।

গাঁধা

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



[এক]

- ''কি করছ তুমি এখানে ?''
- ''না কিছু না, এই দেখছি । তুমি উঠতে গেলে কেন, আবার শরীর খারাপ করবে তো ।''
- ''কি দেখছ ?'' জাহিদের উদ্বেগটা পাত্তা দেয় না সিমি ।
- ''কাকের বাসাটা ।''
- ''সবসময় কি তুমি ওটাই দেখ ? কি আছে ওটায় ?'' ভুরু নাঁচিয়ে প্রশ্ন করে ও ।
- ''একটা ছড়া শুনবে ? সিমির প্রশ্নটা যেন শুনতেই পারেনি জাহিদ । উত্তরের অপেক্ষা না করে ওয়ানের বাচ্চার মত সুর করে আবৃত্তি করে -

* ''কালো কোকিল বড়ই চতুর
নেই যে বাসাবাড়ি
ডিমটা কোথায় পারবে ভেবে
কাকের বাসায় পাড়ি
কর্কশ কাক চালাক হলেও
আছে কি তার জানা ?
নিজের ঘরেই বছর বছর
ফোটে কোকিল ছানা ।'' *

- ''হঠাৎ ছড়া, কার লেখা ?''
উত্তর দেয় না জাহিদ
- ''তুমি কি আমায় কাক ভাব ?''
মায়াময় মুখটার দিকে চেয়ে বলে ও ।
- ''কি বলছ আবোল-তাবোল ? তোমাকে কাক ভাবতে যাব কেন ? মাথাটা কি গেছে তোমার ?''
মৃদ্যু হেসে জবাব দেয় সিমি ।
- ''বাচ্চাটা কার সিমি ? কোকিলটা কে ?''
কাঁটা কাঁটা গলায় বলে ওঠে জাহিদ ।

ঘুম থেকে চমকে ওঠে ও, গেন্জিটা ঘামে ভিজে চপচপ করছে । পাশে সিমি ঘুমিয়ে, নিশ্বাসের তালে তালে পেটটা উঠছে নামছে, ন্যাচারাল দোলনা । পিচ্চিটা ভালই দুলছে ভেতরে ।
বারান্দার চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়ে । সিমি প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকেই নিয়ম করে দিনসাতেক পর পর দেখছে স্বপ্নটা, ইদানিং ঘন ঘন হচ্ছে ব্যাপারটা । মাথায় কিছু ঢোকেনা ওর, কেন দেখছে ? শুধু ঐটুকুই কেন ? তার পর কি হয় ? সিমি কিভাবে রিএ্যাক্ট করে ? হাজার ভেবেও প্রশ্নগুলোর উত্তর পায়নি সে ।

একটা সিগারেটের জন্য ভেতরটা হাসঁফাস করতে থাকে জাহিদের । সিমির বকাবকিতে বছরখানেই আগেই ছেড়েছে ওটা, আজ নেশাটা জোড় চাগিয়ে উঠছে । নাহ্ মাথাটা ঠান্ডা করে জাহিদ, চুপচাপ সিমির পাশে যেয়ে শুয়ে পড়ে । চোখ লেগে আসছিলো ওর, বুকে আলতো একটা ভার পেয়ে চমকে চোখ খোলে । সিমি, ঘুমের ঘোরেই বুকে মাথা রেখেছে । একরাশ ভাললাগা গ্রাস করে জাহিদকে, দূরে থাক সব দুঃস্বপ্ন । নিমিষে ভাল হয়ে যাওয়া মনটাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ও, একহাতে আলতো জড়িয়ে রাখে প্রেয়সীকে ।

- ''এ্যাই ওঠ, অফিসে যাবে না ? কটা বাজে জান ?''
ঘুমের ঘোরেই সামনেটা হাতড়ায় জাহিদ, দুহাতে সিমিকে জড়ানোর আশায় । ওর এই হাতড়ানো দেখে দূরে দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসে সিমি ।
- ''উহু এদিকে আস না'' আদুরে গলায় ডাকে জাহিদ ।
- ''ইশ ডাকলেই হল, পিচ্চি আছে না সবটা দেখছে কিন্তু ।''
দুষ্টুমি মাখা উত্তর দেয় সিমি ।
উঠে যেয়ে দুহাতে জড়ায় সিমিকে ।
- ''ঊমম ছাড়, অসভ্য ! ঠোঁ শেষ করে ফেললে তো দেখি ।''
কপট মুখঝামটা দেয় সিমি ।
- ''দেখলে তো দুষ্টুমির ফল ।''
হেসে ওয়াশরুমের দিকে এগোয় জাহিদ ।

[দুই]

একতাড়া রজনীগন্ধা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথ ধরে জাহিদ । আজ তার জন্য খুব খুশির দিন । জুনিয়র অফিসার থেকে সিনিয়র এ প্রমোশন, নিজের একটা কেবিন ! হাসিটা চওড়া হয় জাহিদের ।

- ''এ্যাই তুমি যাও তো, এক্ষুণি জাহিদ চলে আসবে ।''
- ''কি যে বলনা এখনো ত্রিশ মিনিট বাকি, গাধাটা তো আর কক্ষোন আগে আসলো না ।''
- ''আসুক আর নাই আসুক, তুমি যাও, যাও বলছি ।''

ঝাড়া ত্রিশ সেকেন্ড ধরে মৃদ্যু আহ্লাদী ঝগড়াটা শুনছে জাহিদ । সিমি আর আরিফ ! নিজের কান দুটোকে বিশ্বাস হয় না ওর । হুট করেই কি যে হল, একতালা উপড়ে চলে গেল, সামনা সামনি হতে চায় না বলেই হয়তো ।
আরিফ চলে যেতেই দরজায় নক করে, মেয়েটার হাসি মুখ দেখে কে বলবে কিছুক্ষণ আগে কি হচ্ছিলো !

আরিফ ই কি তবে সেই কোকিল ? নিজেকেই প্রশ্ন করে জাহিদ । নিষ্পাপ মুখ নিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে সিমি, রাইটিং ডেস্কে ও ।
আর পারে না, সামনের সাদা পাতাটা একরাশ কালো হরফে ভরিয়ে দেয় ।

জাহিদকে ছোট বাচ্চার মত ঘুমোতে দেখে হাসে সিমি । আলতো করে ঠোঁ ছুয়ে দেয় জাহিদের গালে । ওমা সিক্রেট ডায়েরী ! আজকে কোথায় যাবা, খুব তো সেফে তুলে রাখতা । জাহিদের দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দেয় ও ।
দুটো লাইনে চোখ বুলিয়েই, কানদুটো গরম হয়ে যায় সিমির, ছিঃ পারল কিভাবে জাহিদ ! অহনার সাথে ছিঃ ।

ব্যাগটা নিয়ে সিমি যখন চলে যাচ্ছিলো তখন চুপচাপ শুয়ে জাহিদ, মিশন সাকসেস ।
- ''দোষটা আমারই হোক''
বির বির করে জাহিদ ।


- ''কি রে তোর বউ কই ?'' হাসিমুখে জিঙ্গেস করে আরিফ ।
- ''ক্যান ? রামলীলা করবি ?''
- ''মুখ সামলায় কথা বল জাহিদ ।''
- ''হা হা, ক্যান প্রতিদিন অফিস যাওয়া থেকে আসার মাঝখানে তোরা যেটা করতি, সেটা কি রে ?''
- ''জাহিদ আর একটা খারাপ ইঙ্গিত দিলে, তোকে আমি খুন করব ।''
জাহিদের কলার চেপে ধরে আরিফ ।
- ''বাহ্ সত্যি বললে ই দোষ ।'' ব্যাঙ্গ করে জাহিদ ।
- ''নাহ্ তোকে বলে লাভ নেই, এরকম ভাল বউ পেয়েছিস তো, তাই । শালা তোর বউকে আমি ইংলিশ শেখাতাম রে । ব্যাটা পার্টিতে তো নিয়ে যেতি আর বউটা যে কারো সাথে মিশতে পারে না সেটা খেয়াল করেছিস কখনো ? তাই আমার কাছে ইংলিশ শিখত, তোকে চমকে দেবার জন্য ।'' একরাশ ক্ষোভ উগরে দেয় আরিফ । একধাক্কায় জাহিদকে সোফাতে ফেলে দিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে যায় ।

মাথায় কিছু ঢোকেনা জাহিদের, কি করল এটা ও ? না জেনে না বুঝে, আর সিমি ও তো প্রেগনেন্ট । দৌড়ে বাসস্টান্ডে পৌছায়, না বাস চলে গেছে । কোথাও নেই সিমি ।
চুপচাপ বাসায় চলে আসে । মাথার উপর বনবন করে ঘুরতে থাকা ফ্যানটাকে খুব আপন লাগে ওর খুব আপন, অন্তত গলায় ফাস পড়ানো পর্যন্ত তাই লাগার কথা ।


[তিন]

- ''এই জাহিদ সাহেব, জাহিদ সাহেব ।'' পাশ থেকে রীতিমত হুংকার ছাড়েন আশফাক সাহেব ।
ঝট করে মাথা তুলে আশপাশটা তাকায় জাহিদ । ওহ গড স্বপ্ন দেখছিলাম তাহলে তাও আবার অফিসে বসে ।
- ''কি ব্যাপার, প্রমোশন পেলেন আর একবারো মিষ্টি খাওয়ার নাম নিলেন না ?'' স্বভাবমত খ্যাক খ্যাক করে হাসা শুরু করলেন আশফাক সাহেব ।
চুপচাপ সবার আব্দার মিটিয়ে একতাড়া রজনীগন্ধা নিয়ে বাসার দিকে ছুটল জাহিদ, আজ সত্যিই খুশি সে ।
- ''তুমি যাও তো, জাহিদ চলে আসবে ।''
- ''গাধাটার আসতে এখনো ত্রিশ মিনিট ।''
- ''না যাও তুমি এক্ষুণি ।''

দরজা খুলে হতবাক সিমি আর আরিফ, সামনে জাহিদ । কিছু না বলেই ঘরে ঢোকে ও ।
- ''আসলে.......
কৈফিয়ৎ দিতে শুরু করে সিমি
- ''আসলে আরিফ তোমাকে ইংলিশ শেখাচ্ছে তাই তো ।'' কথাটা শেষ করে জাহিদ ।
- ''তুমি কিভাবে জানলে ?'' স্পষ্ট বিস্ময় সিমির গলায় ।
- ''জানি জানি ।'' রহস্যময় হেসে, ওয়াশরুমের দিকে এগোয় ও ।

ডাইনিং এ বসে দু গ্লাশ পানি ঢকঢক করে গলায় ঢালে সিমি, উত্তজনায় গলা শুকিয়ে কাঠ ।
মৃদ্যু হাসি ফোটে ওর মুখে, ছেলেটা আসলেই গাঁধা, এটাও বোঝেঁনা, চার ঘন্টা ধরে কি কেউ কাউকে ইংলিশ শেখায় ?

*কবিতাটা ফারাবী আহমেদ এর, ব্লগ ঘাটতে যেয়ে মনে গেঁথে যায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×