[এক]
- ''কি করছ তুমি এখানে ?''
- ''না কিছু না, এই দেখছি । তুমি উঠতে গেলে কেন, আবার শরীর খারাপ করবে তো ।''
- ''কি দেখছ ?'' জাহিদের উদ্বেগটা পাত্তা দেয় না সিমি ।
- ''কাকের বাসাটা ।''
- ''সবসময় কি তুমি ওটাই দেখ ? কি আছে ওটায় ?'' ভুরু নাঁচিয়ে প্রশ্ন করে ও ।
- ''একটা ছড়া শুনবে ? সিমির প্রশ্নটা যেন শুনতেই পারেনি জাহিদ । উত্তরের অপেক্ষা না করে ওয়ানের বাচ্চার মত সুর করে আবৃত্তি করে -
* ''কালো কোকিল বড়ই চতুর
নেই যে বাসাবাড়ি
ডিমটা কোথায় পারবে ভেবে
কাকের বাসায় পাড়ি
কর্কশ কাক চালাক হলেও
আছে কি তার জানা ?
নিজের ঘরেই বছর বছর
ফোটে কোকিল ছানা ।'' *
- ''হঠাৎ ছড়া, কার লেখা ?''
উত্তর দেয় না জাহিদ
- ''তুমি কি আমায় কাক ভাব ?''
মায়াময় মুখটার দিকে চেয়ে বলে ও ।
- ''কি বলছ আবোল-তাবোল ? তোমাকে কাক ভাবতে যাব কেন ? মাথাটা কি গেছে তোমার ?''
মৃদ্যু হেসে জবাব দেয় সিমি ।
- ''বাচ্চাটা কার সিমি ? কোকিলটা কে ?''
কাঁটা কাঁটা গলায় বলে ওঠে জাহিদ ।
ঘুম থেকে চমকে ওঠে ও, গেন্জিটা ঘামে ভিজে চপচপ করছে । পাশে সিমি ঘুমিয়ে, নিশ্বাসের তালে তালে পেটটা উঠছে নামছে, ন্যাচারাল দোলনা । পিচ্চিটা ভালই দুলছে ভেতরে ।
বারান্দার চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়ে । সিমি প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকেই নিয়ম করে দিনসাতেক পর পর দেখছে স্বপ্নটা, ইদানিং ঘন ঘন হচ্ছে ব্যাপারটা । মাথায় কিছু ঢোকেনা ওর, কেন দেখছে ? শুধু ঐটুকুই কেন ? তার পর কি হয় ? সিমি কিভাবে রিএ্যাক্ট করে ? হাজার ভেবেও প্রশ্নগুলোর উত্তর পায়নি সে ।
একটা সিগারেটের জন্য ভেতরটা হাসঁফাস করতে থাকে জাহিদের । সিমির বকাবকিতে বছরখানেই আগেই ছেড়েছে ওটা, আজ নেশাটা জোড় চাগিয়ে উঠছে । নাহ্ মাথাটা ঠান্ডা করে জাহিদ, চুপচাপ সিমির পাশে যেয়ে শুয়ে পড়ে । চোখ লেগে আসছিলো ওর, বুকে আলতো একটা ভার পেয়ে চমকে চোখ খোলে । সিমি, ঘুমের ঘোরেই বুকে মাথা রেখেছে । একরাশ ভাললাগা গ্রাস করে জাহিদকে, দূরে থাক সব দুঃস্বপ্ন । নিমিষে ভাল হয়ে যাওয়া মনটাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ও, একহাতে আলতো জড়িয়ে রাখে প্রেয়সীকে ।
- ''এ্যাই ওঠ, অফিসে যাবে না ? কটা বাজে জান ?''
ঘুমের ঘোরেই সামনেটা হাতড়ায় জাহিদ, দুহাতে সিমিকে জড়ানোর আশায় । ওর এই হাতড়ানো দেখে দূরে দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসে সিমি ।
- ''উহু এদিকে আস না'' আদুরে গলায় ডাকে জাহিদ ।
- ''ইশ ডাকলেই হল, পিচ্চি আছে না সবটা দেখছে কিন্তু ।''
দুষ্টুমি মাখা উত্তর দেয় সিমি ।
উঠে যেয়ে দুহাতে জড়ায় সিমিকে ।
- ''ঊমম ছাড়, অসভ্য ! ঠোঁ শেষ করে ফেললে তো দেখি ।''
কপট মুখঝামটা দেয় সিমি ।
- ''দেখলে তো দুষ্টুমির ফল ।''
হেসে ওয়াশরুমের দিকে এগোয় জাহিদ ।
[দুই]
একতাড়া রজনীগন্ধা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথ ধরে জাহিদ । আজ তার জন্য খুব খুশির দিন । জুনিয়র অফিসার থেকে সিনিয়র এ প্রমোশন, নিজের একটা কেবিন ! হাসিটা চওড়া হয় জাহিদের ।
- ''এ্যাই তুমি যাও তো, এক্ষুণি জাহিদ চলে আসবে ।''
- ''কি যে বলনা এখনো ত্রিশ মিনিট বাকি, গাধাটা তো আর কক্ষোন আগে আসলো না ।''
- ''আসুক আর নাই আসুক, তুমি যাও, যাও বলছি ।''
ঝাড়া ত্রিশ সেকেন্ড ধরে মৃদ্যু আহ্লাদী ঝগড়াটা শুনছে জাহিদ । সিমি আর আরিফ ! নিজের কান দুটোকে বিশ্বাস হয় না ওর । হুট করেই কি যে হল, একতালা উপড়ে চলে গেল, সামনা সামনি হতে চায় না বলেই হয়তো ।
আরিফ চলে যেতেই দরজায় নক করে, মেয়েটার হাসি মুখ দেখে কে বলবে কিছুক্ষণ আগে কি হচ্ছিলো !
আরিফ ই কি তবে সেই কোকিল ? নিজেকেই প্রশ্ন করে জাহিদ । নিষ্পাপ মুখ নিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে সিমি, রাইটিং ডেস্কে ও ।
আর পারে না, সামনের সাদা পাতাটা একরাশ কালো হরফে ভরিয়ে দেয় ।
জাহিদকে ছোট বাচ্চার মত ঘুমোতে দেখে হাসে সিমি । আলতো করে ঠোঁ ছুয়ে দেয় জাহিদের গালে । ওমা সিক্রেট ডায়েরী ! আজকে কোথায় যাবা, খুব তো সেফে তুলে রাখতা । জাহিদের দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দেয় ও ।
দুটো লাইনে চোখ বুলিয়েই, কানদুটো গরম হয়ে যায় সিমির, ছিঃ পারল কিভাবে জাহিদ ! অহনার সাথে ছিঃ ।
ব্যাগটা নিয়ে সিমি যখন চলে যাচ্ছিলো তখন চুপচাপ শুয়ে জাহিদ, মিশন সাকসেস ।
- ''দোষটা আমারই হোক''
বির বির করে জাহিদ ।
- ''কি রে তোর বউ কই ?'' হাসিমুখে জিঙ্গেস করে আরিফ ।
- ''ক্যান ? রামলীলা করবি ?''
- ''মুখ সামলায় কথা বল জাহিদ ।''
- ''হা হা, ক্যান প্রতিদিন অফিস যাওয়া থেকে আসার মাঝখানে তোরা যেটা করতি, সেটা কি রে ?''
- ''জাহিদ আর একটা খারাপ ইঙ্গিত দিলে, তোকে আমি খুন করব ।''
জাহিদের কলার চেপে ধরে আরিফ ।
- ''বাহ্ সত্যি বললে ই দোষ ।'' ব্যাঙ্গ করে জাহিদ ।
- ''নাহ্ তোকে বলে লাভ নেই, এরকম ভাল বউ পেয়েছিস তো, তাই । শালা তোর বউকে আমি ইংলিশ শেখাতাম রে । ব্যাটা পার্টিতে তো নিয়ে যেতি আর বউটা যে কারো সাথে মিশতে পারে না সেটা খেয়াল করেছিস কখনো ? তাই আমার কাছে ইংলিশ শিখত, তোকে চমকে দেবার জন্য ।'' একরাশ ক্ষোভ উগরে দেয় আরিফ । একধাক্কায় জাহিদকে সোফাতে ফেলে দিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে যায় ।
মাথায় কিছু ঢোকেনা জাহিদের, কি করল এটা ও ? না জেনে না বুঝে, আর সিমি ও তো প্রেগনেন্ট । দৌড়ে বাসস্টান্ডে পৌছায়, না বাস চলে গেছে । কোথাও নেই সিমি ।
চুপচাপ বাসায় চলে আসে । মাথার উপর বনবন করে ঘুরতে থাকা ফ্যানটাকে খুব আপন লাগে ওর খুব আপন, অন্তত গলায় ফাস পড়ানো পর্যন্ত তাই লাগার কথা ।
[তিন]
- ''এই জাহিদ সাহেব, জাহিদ সাহেব ।'' পাশ থেকে রীতিমত হুংকার ছাড়েন আশফাক সাহেব ।
ঝট করে মাথা তুলে আশপাশটা তাকায় জাহিদ । ওহ গড স্বপ্ন দেখছিলাম তাহলে তাও আবার অফিসে বসে ।
- ''কি ব্যাপার, প্রমোশন পেলেন আর একবারো মিষ্টি খাওয়ার নাম নিলেন না ?'' স্বভাবমত খ্যাক খ্যাক করে হাসা শুরু করলেন আশফাক সাহেব ।
চুপচাপ সবার আব্দার মিটিয়ে একতাড়া রজনীগন্ধা নিয়ে বাসার দিকে ছুটল জাহিদ, আজ সত্যিই খুশি সে ।
- ''তুমি যাও তো, জাহিদ চলে আসবে ।''
- ''গাধাটার আসতে এখনো ত্রিশ মিনিট ।''
- ''না যাও তুমি এক্ষুণি ।''
দরজা খুলে হতবাক সিমি আর আরিফ, সামনে জাহিদ । কিছু না বলেই ঘরে ঢোকে ও ।
- ''আসলে.......
কৈফিয়ৎ দিতে শুরু করে সিমি
- ''আসলে আরিফ তোমাকে ইংলিশ শেখাচ্ছে তাই তো ।'' কথাটা শেষ করে জাহিদ ।
- ''তুমি কিভাবে জানলে ?'' স্পষ্ট বিস্ময় সিমির গলায় ।
- ''জানি জানি ।'' রহস্যময় হেসে, ওয়াশরুমের দিকে এগোয় ও ।
ডাইনিং এ বসে দু গ্লাশ পানি ঢকঢক করে গলায় ঢালে সিমি, উত্তজনায় গলা শুকিয়ে কাঠ ।
মৃদ্যু হাসি ফোটে ওর মুখে, ছেলেটা আসলেই গাঁধা, এটাও বোঝেঁনা, চার ঘন্টা ধরে কি কেউ কাউকে ইংলিশ শেখায় ?
*কবিতাটা ফারাবী আহমেদ এর, ব্লগ ঘাটতে যেয়ে মনে গেঁথে যায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৩