somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিশাল শাহরিয়ার
ভালোবাসা কেমন আমার জানা নেই, জানা নেই কিভাবে কি হলে ছোঁয়া যায়। আমি শুধু জানি আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় নি। আরো অনেকটা পথ একা একা হেটে যেতে হবে। ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবার আগে শেষবারের মত ছুঁতে চাই, তোমার অনামিকা জুড়ে একটা অভ্যাস হয়ে থাকতে চাই, ব্যাস।

একান্ত ব্যাক্তিগত

৩০ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। কপালের বিন্দু বিন্দু শিশিরের মতন ঘাম ওড়নায় মিশে যাচ্ছে। আমি অডিটেরিয়ামের ফাঁকা একটা চেয়ারে বসে আছি। হাতে একতোড়া কাগজ, এর মাঝে দুটো আমার। স্টেজে দাঁড়িয়ে দুটো কথা বলতে হবে। স্টেজে দাঁড়ালেই আমার হাটু কাঁপে, ঘামে ভিজে যায় পরনের কাপড়। মেয়েটাকে কিছুক্ষণ হা করে গিললাম। ইতিউতি তাকাচ্ছে, বোধহয় কাউকে খুঁজছে। আমি নিজের চোখদুটোকে খুব কষ্টে কাগজের দিকে ফেরালাম।
----- একটু শুনবেন?
এত কাছ থেকে মেয়েটাকে দেখে গলা শুকিয়ে গেল। হৃৎপিণ্ড প্রতারণা শুরু করে দিয়েছে। ঠিক যে কিভাবে ওর চোখদুটোর দিকে চাইলাম বুঝিয়ে বলে উঠতে পারবো না।
---- আমি নয়না। রায়হান ভাই পাঠিয়েছে, কনভোকেশনে কিসব পড়তে হবে। আপনি কি বলতে পারবেন কার সাথে কথা বললে লেখাগুলো পাবো?
আমি হাতের একতোড়া কাগজ বাড়িয়ে দিলাম। নয়না ওর কাগজগুলো খুঁজে নিয়ে চলে গেল। পুরো সময়টুকুতে আমার কি যে হয়ে গেল, নিজের নামটুকু পর্যন্ত বলে উঠতে পারলাম না।
এরপর নয়নার সাথে দেখা হলো কনভোকেশনের দিন। ব্যাকস্টেজে ধাক্কা খেলাম, নয়না হেসে সরি বলে চলে গেল। দর্শকসারিতে বসে নয়নার পুরো স্পিচ টুকু শুনলাম। সামনের ইয়া বড় ফ্যানটা নয়নার চুলগুলোর সাথে সাথে আমার মনটাকেও উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল।
কনভোকেশনের পরে নয়নাকে খুঁজে পেলাম না। আমার না বলা কথাগুলো আমার কাছে বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে রইল। আমি অবশ্য নয়নাকে খুঁজতে গেলাম না। কেন যেন মনে হতে লাগলে খুঁজে নিতে গেলে ঠকে যাবো। আমার ছোটখাটো চাকুরী, সন্ধ্যেবেলার গরম চা আর ভোররাতের জেগে ওঠা আকাশটার মাঝে নয়নাকে হারিয়ে ফেললাম। শুধু মাঝে মাঝে মাঝরাত্তিরে একা একা জেগে ঐ মিষ্টি মুখটাকে মনের আনাচে কানাচে খুঁজে বেড়াতাম।

নয়নাকে খুঁজে পেলাম কফিশপে, এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি সামনে রেখে বিষণ্ণ ভঙ্গি নিয়ে বসে আছে। কাঁচের দরজাটার কাছে থমকে দাঁড়ালাম। আজকে আমার সাথে কারো দেখা করবার কথা, সেই মানুষটাকে আমার সারাজীবনের জন্য কাছে পেতে হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেবার কথা। মানুষটা যে নয়না হয়ে দাঁড়াবে আমার কাছে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। খুব ব্যস্ত ভঙ্গীতে বসতে নিতে চেয়ার উল্টে গেল, আমি অপ্রস্তুত হয়ে নয়নাকে সরি বললাম। নয়না হেসে ফেলল, নয়নার হাসিটুকু চোখে মেখে নিতে নিতে মনে মনে আমি সহস্রবার ভালোবাসি বলে ফেললাম।
এর পরের গল্পগুলো একান্ত ব্যাক্তিগত, ভালোবাসা-বাসির। অভিমান, রাগ অনুরাগের। আমাদের প্রথম রাতটুকুতে আমি পাগড়ি খুলে নয়নার পায়ের কাছে রেখেছিলাম। এতদিনের জমানো ভালোবাসা এক রাজকুমারীর সামনে অর্পন করবার এর থেকে ভালো কোন উপায় খুঁজে পাই নি। নয়না কেঁদে পাঞ্জাবী ভিজিয়ে ফেললো। আমি মুখ ফুটে হাজার হাজার বার ভালোবাসি বললাম।
শেষ রাত্তিরে ছাদে পাটি পেতে নয়নাকে নিয়ে ভোর হতে দেখলাম।
নয়নার চুলে মুখ ডুবিয়ে বললাম, একটা গল্প শুনবে?
নয়না টলটলে চোখে মুখ তুলে চাইলো।

খুব ভালোবাসা-বাসির সময়গুলোতে অভিমান হানা দেয়। অভিমান থেকে অভিযোগ, সন্দেহ। রাত বাড়লেই বিছানার দুটো পাশে দুটো মানুষ গুমড়ে মরে, বালিশ ভেজে। মাঝের রুমের বড় ঘড়িটা ডং ডং শব্দে একটা, দুটো, তিনটে বাজিয়ে দেয়। মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটুকু সাত সমুদ্র তেরো নদীকে হার মানায়। এভাবে হয়ত হাত ওঠে, কান্না জমে, কান্না ভাঙ্গে। একটা ব্যাগে কারো পুরো জীবন ঢুকে যায়। একটা রিকশায় কারো পৃথিবী হারিয়ে যায়। একটা কাগজে হৃদয় ভাঙ্গে। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে চোখের জল লুকোনো হয়। সিগারেটে মানুষ পোড়ে, স্মৃতি জমে থাকে। শার্টের কলারে কারো ঘ্রান জমে না, শাড়ির আঁচলে কারো আকাশ লুকোয় না। ঠিক সে সময় এই রকম একটা চিঠি লেখা হয়।

প্রিয় তুমি
এই চিঠিটা যখন তোমার হাতে পৌছুবে তখন হয়ত আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর দশটা ঠিকানাবিহীন মানুষের মতন আমি হারিয়ে যাব এই শহরের অলিগলিতে।
সবকিছু ফেলেছুড়ে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। সেই জোছনা রাতের মতন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ভালবাসি। তোমার স্পর্শ ভুলে গেছি জানো, ভুলে গেছি অজান্তে ছুতে চাইবার ইচ্ছেগুলো। আজকাল যন্ত্রমানব হয়ে পথ চলি। ক্লান্ত হতে নেই, নেই, নেই। অথচ একসময় তোমাকে দেখে সব ক্লান্তি ভুলে যেতাম। এখন চোখ বুজে দেখি। মাঝে মাঝে মনে হয় এটাই ভালো, এর থেকে ভালো হবার ছিল না। কল্পনায় তুমি আমার মতন। অভিমানে মুখ ফোলালেও তুমি আমার। তোমাকে পাথর হয়ে যাবার কষ্টটুকু পেতে হয় না আর আমাকে সেই ভার বইতে হয় না। তোমাকে পাশে রেখে আমি পথ চলতে পারি। একহাতে তোমার আঙুল জড়িয়ে কতটা পথ হেটেছি সেসব তোমার কখনোই জানা হবে না। জানা হবে না চুলে হাত বুলিয়ে কতবার তুমি ঘুম পারিয়েছ আমার । এই বোধহয় ভালো।

ভালবাসা কেমন আমার জানা নেই, জানা নেই কিভাবে কি হলে ছোঁয়া যায়। আমি শুধু জানি আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় নি। আরো অনেকটা পথ একা একা হেটে যেতে হবে। ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবার আগে শেষবারের মত ছুঁতে চাই, তোমার অনামিকা জুড়ে একটা অভ্যাস হয়ে থাকতে চাই। ব্যাস
চিঠি পড়ে কারো কান্না জমা হয়। ভাঙ্গা হৃদয় জোড়া লাগবার একটা চেষ্টায় জমা হয়ে যাওয়া অভিমানগুলো ভেটো দেয়।
আমি এই পর্যন্ত পড়ে থেমে গেলাম। নয়না একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার কাছে এই অভিমানগুলো অনেক বড় বাঁধা। তুমি প্লিজ প্রতিঙ্গা কর তুমি সব ভেঙ্গে চূড়ে ফিরে আসবে?
নয়না দুহাতে পাঞ্জাবী আকুড় করে চেপে ধরলো। এখনো ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে। আমি নয়নাকে জোর নাড়িয়ে দিলাম।
---------- আমি কোথাও যেতে পারবো না। বুকে হাতদুটো গভীর করে চেপে বলল এই জায়গাটুকু আমার, আমার একান্ত ব্যাক্তিগত। অভিমান কিংবা অভিযোগ নামক কোন বস্তুর জায়গা নেই নেই নেই।
আমি নয়নাকে বুকে চেপে ধরলাম। নয়নার বুকের লাবুডুবু শব্দগুলো জানিয়ে দিচ্ছে আমার কোথাও হারাবার নেই। বারংবার আমাকে ফিরে আসতে হবে, আমার একান্ত ব্যাক্তিগত ঘরটা বেশ ভালোভাবে বাঁধা হয়ে গেছে।


শাহরিয়ার বিশাল

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×