Click This Link
মহাজোট শরিকদের মানভঞ্জনের উদ্যোগ
শরিয়ত খান
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাজোটের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে মরিয়া চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ চার বছর শরিকদের প্রতি অবহেলা ও বঞ্চনার কারণে জোটের ঐক্যে যে নড়বড়ে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা আর সহজে মেরামত করতে পারছে না তারা। এখন বুঝিয়ে-সুঝিয়ে এক দলের মানভঞ্জন করছে তো অন্য দল বেঁকে বসছে। আবার কোনো কোনো দল সরাসরি বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এ নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত আওয়ামী লীগ। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি উল্টাপাল্টা আচরণ করছে। এতে ফাটল ধরছে মহাজোটীয় ঐক্যে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এরই মধ্যে জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সরকারি ও বিরোধী দল বিএনপি জনসমর্থন হারিয়েছে। জনগণ এদের কাউকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই আগামী নির্বাচনে তিনি একাই নির্বাচন করবেন এবং তার দলই জিতবে। অন্যদিকে মহাজোটের শরিক ১৪ দলের নেতারাও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পথে হাঁটা শুরু করেছে। বদলে ফেলেছে সুর। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে ক্ষমতার শেষ সময়ে আওয়ামী লীগ শরিকদের কাছে টানার চেষ্টা করলেও তাতে বিশেষ কোনো লাভ হচ্ছে না। মন গলছে না কারোরই। এছাড়া সরকারের কোনো ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিতেও রাজি নয় শরিক দলগুলো। বিভিন্ন সূত্র জানায়, মহাজোটের বৈঠকেও শরিকদলগুলো ঘুরে ফিরে সরকারের ব্যর্থতাই সামনে নিয়ে আসছে। বৈঠক শেষ হয় দু'-একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে। কিন্তু ঐক্যের অভাবে এসব কর্মসূচিও বাস্তবায়িত হয় না। গত দেড় মাসে তিনটি বৈঠক হয়েছে ১৪ দলীয় জোটের। যদিও এর আগের গত ৪৭ মাসে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক হয়েছে মাত্র ৬-৭টি। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ২৩ দফার ভিত্তিতে মতৈক্য হয় ১৪ দলে। ক্ষমতায় গেলে এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। সে লক্ষ্যে প্রতিমাসে ১৪ দলের একটি বৈঠক করার কথাও ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সেসব কথার কোনোটিই রাখেনি আওয়ামী লীগ। এমনকি ঠিকমত মূল্যায়ন করাও হয়নি জোটের শরিকদের। দীর্ঘ চার বছর ধরে অব্যাহত অবহেলা ও বঞ্চনায় শরিক দলের নেতারা তুষের আগুনে জ্বলেছেন অভিমানে। আর সে অভিমানের আগুন এখন লেলিহান শিখা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জোটে। তাই সে আগুন সহজে নিভবে বলে মনে করেন না অনেকে। শরিক দলের অনেক নেতারা জানান, গত চার বছরে নানা অভিযোগ ও অনুযোগ-পরামর্শ দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগকে। কিন্তু তারা সেসব গা করেনি। এমনকি মহাজোটের প্রতি কোনো রকম দায়ও দেখায়নি জোটের প্রধান এ দল। তা হলে আজ কেন আওয়ামী লীগ মহাজোট টেকাতে এত মরিয়া হয়ে উঠল? মহাজোট কি শুধু আওয়ামী লীগের স্বার্থরক্ষার জোট? এ প্রশ্ন ছুড়ে শরিক নেতারা বলেছেন, এ জোট দেশের স্বার্থ রক্ষার জোট। আওয়ামী লীগের যখন দরকার হবে জোট ব্যবহার করবে, আর যখন প্রয়োজন মনে করবে না তখন ছুড়ে ফেলে দেবে, তা হতে দেয়া যাবে না। জোট সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে জেলা শহরগুলোতে ঝটিকা সফরের মাধ্যমে তৃণমূলে ১৪ দলকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। উল্টো বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতালসহ নানা কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হয় জোটভুক্ত বাম দলগুলো। কিন্তু সেদিনের বৈঠকে জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। জোটনেত্রীর কথামত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচালে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও এ বিচারের দাবিতে জনমত সৃষ্টি, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- মোকাবেলায় নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে গত ২২ ডিসেম্বর সারাদেশে সমাবেশ ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে তারা। জানা যায়, সর্বশেষ ১৪ দলের সভা হয় গত ৭ জানুয়ারি। সভায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তেলের বর্ধিত মূল্য কমানোর পাশাপাশি আগামীতে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ কোনো ধরনের জ্বালানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না করার পরামর্শ দেন শরিকরা। যদি আওয়ামী লীগ তা না করে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও দিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি জনগণ মেনে নেবে না। বর্ধিত মূল্য কমানোর প্রস্তাব দিতে গিয়ে ভারতের জোট সরকার ইউপিএ'র উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতে তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরেও শরিকদের চাপে ইউপিএ সরকার ২ টাকা দাম কমাতে রাজি হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেপথে যাচ্ছে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



