২০০৯ সাল , ক্লাস ১০ এ পড়ি ।
তখনকার সময়ের ঘটনা এটি।
প্রি-টেস্ট এক্সাম চলছিল তখন।
আর ৫/৬ টা দিনের মতই পরীক্ষা দিতে স্কুল এ যাবার জন্য বের হয়েছি।
একটিবারের জন্য ঘুণাক্ষরে ও ভাবিনি কি হতে চলেছে আজ।
তো আমি রিক্সা খুঁজছিলাম।
ঐদিন রিক্সা ড্রাইভরেরা সম্ভবত অঘোষিত ধর্মঘট পালন করছিল।
ফলস্বরূপ ,কোন রিক্সা পেলাম না।
অনেক্ষণ পর,একটা ড্রাইভার রাজি হল যেতে।
কিন্তু ,ড্রাইভার টা ছিল একদম ছোট ।বয়স ১২ কি ১৩ হবে ।
রিক্সায় উঠবো কি উঠবো না এই নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম।
এক প্রকার সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই উঠে পড়লাম।
ছেলেটি ঝুলে ঝুলে রিক্সা টানছিল।
তার এই অবস্থা দেখা যাহাপরাণ ই খুব খারাপ লাগছিল,আমার খুব ছোট লাগছিল নিজেকে।
একটা শীর্ণকায় ছেলেকে দিয়ে কি অমানুষিক পরিশ্রম ই করাচ্ছি আমি ।
আমার কি করা উচিত,ভাবছিলাম মনে মনে।
হঠাৎ মাথায় আসল,আমি কি পারি না রিক্সা টেনে নিয়ে যেতে।কিন্তু মন সায় দিচ্ছিল না ।
অনেক্ষণ চিন্তা করলাম।
এবং, শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম।
আমি ছেলেটিকে রিক্সা থামাতে বললাম।
তারপর ছেলেটিকে বললাম,ভাইরে তোর কষ্ট দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে।
তুই সিটে এ গিয়ে বস,আমি না হয় রিক্সা টা চালাচ্ছি।
কথাটা শেষ না হতেই ,রিক্সার ব্রেক কষে ক্ষাণিকটা নির্লিপ্ত চোখে তাকালো আমার দিকে ।
মুখে কোন কথা নেই তার ।
এর ই মাঝে আমি ভাবছি ,রিক্সা চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার পর সবার প্রতিক্রিয়া কি হবে।
ছেলেটি সিটে গিয়ে বসতেই,আমার সব কিছু তার কাছে দিয়ে চালকের আসুনে বসে প্যাডেলে চাপ দিলাম।
ওমা,চালাবো কি!
একটা প্যাডেল দিতেই ,রিক্সা বা দিকে চলতে চলতে উঁচু রাস্তা থেকে নিচের ধান বোনা খেতে পড়ে গেলো!
আমি শত চেষ্টা করে ও পাশ কাটিয়ে রাস্তায় আনতে পারলাম না ।
পড়ার সাথে সাথে লোকজন আসল ,জিজ্ঞাসা করতে লাগলো ,কি হয়েছে ?
আর আমি ছেলেটি কে আগেই বলে ফেললাম,লক্ষ্মী ভাই না আমার,কাউকে বলিস না।
ছেলেটি ও কানে কানে বলছে,আপনি ও কাউকে বইলেন না ভাই!আর এ কথার মমার্থ আপনারা নিশ্চয় ই না বললে ও বুঝবেন ।
এদিকে অর্ধেক পা কাদায় ঢুকে গেছে।
কাদা থেকে উঠতে যাবো,
চেয়ে দেখি একটুও সরতে পারছি না।
হঠাৎ মনে হল,অমর পায়ে তো বাটার ভারী জুতা।
অগত্যা,জুতা রেখেই আগে পা বের করলাম ।
তারপর,দুহাত দিয়ে টেনে জুতা কাদা থেকে বের করলাম।
এমন সময় আমার কয়েক ক্লাসমেট রিক্সা করে যাচ্ছিল।
ওরা জানতে চাইলে আমি বললাম,বাচ্চা ছেলে শক্তি কম ।রিক্সা টানতে না পেরে আমাকে নিয়ে পড়ে গেছে!
তারপর ছেলেটিকে ১০ টাকা দিয়ে চলে যেতে চাইলে ছেলেটি বলল,ও ভাই রিক্সা তুলে দিয়া যান না ?
আমি বললাম,ভাইরে আমার এগ্জাম ,দেরি হয়ে যাচ্ছে।
চলে গেলাম ওদের রিক্সায়।
পথে এক মসজিদের পুকুরে হাঁটু পানিতে নেমে হাত পা ধুয়ে স্কুল হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলাম।
সবাই দেখে তো অবাক ।
ভালো ছাত্রের এ কি খারাপ অবস্থা ।
এগ্জাম দিতে বসে গেলাম ।ভেজা কাপড় গায়েই শুকালো ।
যাইহোক,এগ্জাম ভালোই হয়েছিল।
ঐদিন সন্ধ্যায় ছেলেটিকে আবার দেখলাম।তা ও আবার আমাদের দোকানের সামনে ।
কিন্তু,অবাক করা বিষয় ,আমাকে চিনতে পারে নি সে।
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এই ভেবে ,যাক তাকে দেখে আর মুখ লুকাতে হবে না ।
এর পর অনেক দিন ছেলেটিকে দেখেছি ।
হেসেছি ও অনেক নিজের বোকামির কথা মনে করে ।
ঐদিনের পর এটুকুই জানলাম বা বুঝতে পারলাম যে ,রিক্সা চালানো ও শিখতে হয় । :-|

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



