পর্ব-২
মোরশেদের সাথে বিচ্ছেদ হইসিল আব্বুর সিলেটে পোস্টিং এর কারনে , আসলে আমিও অনেক খুশি ছেলাম , দেখ শালা কত মজা
সিলেটে আমরা যেই জায়গায় ছিলাম ঐটার নাম জকিগঞ্জ , আমরা যেখানে থাকতাম তার থেকে হাফ কি্লোমিটার দূরে হবে , একটা নদী ছিল , কুশিয়ারা নদী । সেই নদী এতই সরু ছিল যে নদীর ঐপারে ইন্ডিয়া দেখা যেত ।মানুষজন হাটতেছে ।বাজার করতেছে , ঘুরাঘুরি কতেছে ।আব্বু বলত এটা মাত্র ৮ মিটার চওড়া । প্রায় আব্বুর সাথে বিকালে ঐখানে ঘুরতে যাইতাম ।নদী দেখার উতসাহে আব্বুর আগে আগে হাটতাম
আব্বু জকিগঞ্জ নামের ছোট গ্রামের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ আব্বুকে চিনত , হের লেইগ্যা রাস্তায় অনেক মানুষ আব্বুকে সালাম দিত ।আমি তখন বুঝতাম না সবাই আব্বুরে কেন সালাম দেয় , আমি ভাবছিলাম এটা একটা খেলা
আমরা যেই বিল্ডিং এ থাকতাম সেইডার কাজ তখনও শেষ হইসিল না । তাই বাসার সামনে অনেক ইট, বালি আর সিমেন্ট এর বস্তা । আমরা নিচতলায় থাকতাম , আর জীবনে প্রথমবার বালির স্তুপ দেখতাছি … আমার জন্য সে এক বিশাল আনন্দের বাপার
সিলেটে গিয়ে আমার বান্দরামি আরও কয়েক গুন বাইড়া গেল,আমি একই সাথে তখন ছেলেসুলভ বান্দ্রামি এবং মেয়েসুলভ বান্দ্রামি করি … মানে তেতুলের বয়াম থেকে তেতুল চুরি করি , আর সেই তেতুল খাই নির্মানাধীন দুই তলায়ে মই বেয়ে উঠে…( )অতীতের গাছে উঠার অভিজ্ঞতারে কাজে লাগায়ে আমি মই বেয়ে রোজ দুপুরে দুইতলায় উঠে যেতাম , সেই খানে আমার জন্য অপেক্ষা করত দুই চামচা বান্দর ।আমরা ঐখানে তেতুল খাইতাম । শামিম একটা গান গাইত,”ছগ দেশি ছগ দেশি জানানেহি…” এইটা ছিল তখনকার হিন্দি সুপারহিত গান, “পারদেশি পারদেশি জানা নেহি” গানের রিমিক্স , সে পারদেশি এর জায়গায় ছগ বসাইছিল , কি মনে কইরা বসাইছিলো জানি না , তয় আমাগো প্রতিভাবান শামিম সেই বয়সেই তার রিমিক্স প্রতিভায় আমাদের মুগ্ধ করেছিল , তয় একদিন আম্মুর সামনে এই গান গেয়ে নৃত্য করতে বাধ্য হইসিলাম , মানে এই গান শুনে আম্মু বাসার সাম্নের পেয়ারা গাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে এনে আমার পিঠে সেটার শক্তি-সামর্থ পরিক্ষা করছিল।
এই পেয়ারা গাছেও উপরে রাগ আগে থেকেই ছিল…
তয় সেই খুশি বেশিক্ষন সইল না … আম্মু বের হয়ে গাছের এই সৌন্দর্য সহ্য করতে পারল না … আমারে শাস্তি স্বরুপ সারা বিকাল ঐ গাছের নিচেই কানধরায়ে দাড় করায়ে রাখছিল , নিজে হাতে লাঠি নিয়ে আমারে পাহারা দিসে বারান্দায় বসে । কেউ যখনই যায় , অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কি হইসে , আম্মু তারে সবিস্তারে বর্ননা করে আমার বনায়নের গল্প ।
আব্বু তার মেয়ের বান্দ্রামি অনেক এঞ্জয় করত । তিনি নিজে পছন্দ করে আমারে একটা সাইকেল কিনে দিসিল , আমি সেই সাইকেল কাওরে ধরতে দিতাম না , না শামিম ,না বিপাশা ।ওদের দিয়ে শুধু ঠেলানোর কাজ করাতাম , ওরা অবশ্য ঠেলতে পারার সুযোগ পেয়েই খুশি।।
আব্বুর অফিসের এক কাকুর মোটর সাইকেল ছিল , কাকুরে রোজ বিকালে দেখতাম মোটর সাইকেল চালায়ে কত সুন্দর করে speedএ যাইত ।এক বিকালে উর্বর মস্তিস্কে চিন্তা আইলো , যে আমার সাইকেল যদি কোনোভাবে মোটর সাইকেলের সাথে বান্ধা যায় তাইলে আমারে এই অপদার্থ গুলোরে দিয়ে আস্তে আস্তে ঠেলানো লাগবে না , এম্নিতেই অনেক সুন্দর চলবে সাইকেল
এর পর আমার সুখে পানি ঢালার জন্য একদিন আমারে জানানো হল, পরের দিন থেকে আমারে স্কুল এ যাইতে হবে…
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




