পর্ব-২
মোরশেদের সাথে বিচ্ছেদ হইসিল আব্বুর সিলেটে পোস্টিং এর কারনে , আসলে আমিও অনেক খুশি ছেলাম , দেখ শালা কত মজা , আমার লগে বাটপারি কর তুমি !!! তোর লগে খেলার কেউ নাই !! তবে কি যেদিন মাদারিপূর ছেড়ে চলে আসতাছিলাম ওই দিন মোরশেদ কানতেছিল , আর কইতেছিল আমিও সিলেটে গিয়া খেলতাম , দেইক্ষা তখন মজা লাগলেও হাল্কার উপর পাতলা খারাপ যে লাগে নাই তা কমু না ।
সিলেটে আমরা যেই জায়গায় ছিলাম ঐটার নাম জকিগঞ্জ , আমরা যেখানে থাকতাম তার থেকে হাফ কি্লোমিটার দূরে হবে , একটা নদী ছিল , কুশিয়ারা নদী । সেই নদী এতই সরু ছিল যে নদীর ঐপারে ইন্ডিয়া দেখা যেত ।মানুষজন হাটতেছে ।বাজার করতেছে , ঘুরাঘুরি কতেছে ।আব্বু বলত এটা মাত্র ৮ মিটার চওড়া । প্রায় আব্বুর সাথে বিকালে ঐখানে ঘুরতে যাইতাম ।নদী দেখার উতসাহে আব্বুর আগে আগে হাটতাম , আর আব্বু বার বার পিছন থেকে ডেকে বলত,” হারায়ে যাবি মা ।“
আব্বু জকিগঞ্জ নামের ছোট গ্রামের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ আব্বুকে চিনত , হের লেইগ্যা রাস্তায় অনেক মানুষ আব্বুকে সালাম দিত ।আমি তখন বুঝতাম না সবাই আব্বুরে কেন সালাম দেয় , আমি ভাবছিলাম এটা একটা খেলা , তাই আমিও একদিন শুরু করলাম এই খেলা , আব্বুর আগে আগে হাটতাম ,আর যার সাথে দেখা হত , চেনা অচেনা যে মানুষই হোক , তাকে আগে সালাম দিতাম , কেউ কেউ হঠাত ভড়কে যেত , যে কে এই বাচ্চা , সালাম দেয় কেন ? আব্বু বকাও দিত না , কিছু কইতেও পারত না , সালামই তো দিতেছি …এটা তো ভাল কাজ , কোনো খারাপ কাজ তো না , আবার বিব্রতকরও বটে, ঃপ কেউ কেউ আবার অনেক মজা পাইতো , তারাও উত্তর দিত আনন্দের সাথে , তবে কিছু দিনের মধ্যে এই মজা শেষ হয়ে গেল , সবাই আমারে চিন্যা ফালাইলো , আর আমি সালাম দেয়ার আগেই আমারে সালাম দিত … সব মজা জলে গেল রে …
আমরা যেই বিল্ডিং এ থাকতাম সেইডার কাজ তখনও শেষ হইসিল না । তাই বাসার সামনে অনেক ইট, বালি আর সিমেন্ট এর বস্তা । আমরা নিচতলায় থাকতাম , আর জীবনে প্রথমবার বালির স্তুপ দেখতাছি … আমার জন্য সে এক বিশাল আনন্দের বাপার …রোজ আম্মুর চোখ ফাকি দিয়ে বালিতে গিয়ে গড়াগড়ি দেয়া , বালি ছোড়াছুড়ি করা ছেল আমার প্রিয় খেলা … কয়েকটা সঙ্গিও জুটায়ে ফালাইছি … একটার নাম বিপাশা , আর একটা ছেলে , শামিম( 2nd boyfriend ) ।কইয়া রাখি , বিপাশা আমার প্রথম girlfriend ।
সিলেটে গিয়ে আমার বান্দরামি আরও কয়েক গুন বাইড়া গেল,আমি একই সাথে তখন ছেলেসুলভ বান্দ্রামি এবং মেয়েসুলভ বান্দ্রামি করি … মানে তেতুলের বয়াম থেকে তেতুল চুরি করি , আর সেই তেতুল খাই নির্মানাধীন দুই তলায়ে মই বেয়ে উঠে…( )অতীতের গাছে উঠার অভিজ্ঞতারে কাজে লাগায়ে আমি মই বেয়ে রোজ দুপুরে দুইতলায় উঠে যেতাম , সেই খানে আমার জন্য অপেক্ষা করত দুই চামচা বান্দর ।আমরা ঐখানে তেতুল খাইতাম । শামিম একটা গান গাইত,”ছগ দেশি ছগ দেশি জানানেহি…” এইটা ছিল তখনকার হিন্দি সুপারহিত গান, “পারদেশি পারদেশি জানা নেহি” গানের রিমিক্স , সে পারদেশি এর জায়গায় ছগ বসাইছিল , কি মনে কইরা বসাইছিলো জানি না , তয় আমাগো প্রতিভাবান শামিম সেই বয়সেই তার রিমিক্স প্রতিভায় আমাদের মুগ্ধ করেছিল , তয় একদিন আম্মুর সামনে এই গান গেয়ে নৃত্য করতে বাধ্য হইসিলাম , মানে এই গান শুনে আম্মু বাসার সাম্নের পেয়ারা গাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে এনে আমার পিঠে সেটার শক্তি-সামর্থ পরিক্ষা করছিল।
এই পেয়ারা গাছেও উপরে রাগ আগে থেকেই ছিল…।অতীতে আমি যখন তেতুল চুরি করে ধরা পড়ছিলাম , তখনও সে নিজের শক্তি-সামর্থের সুযোগ্য প্রমান রেখে ছিল , তাই ভাবলাম এরে আর ছাড়া যায় না্ ,কি করব কি করব , সিদ্ধান্ত নিলাম , এর কান টাইন্যা ছিড়া ফালাইবো । দুইদিনের মধ্যে কোনো এক দুপুরে সেই মত কাজ শুরু হল , যতদুর নাগাল পাই এর একটা একটা পাতা তাইন্যা ছিড়া শুরু করলাম , আমি,বিপাশা আর শামিম । বেশি উপরের গুলা নাগাল পাই না , তারপরও যতদুর পারলাম ছিড়লাম , মোটামুটি বিকেল নাগাদ এরে একটা চেহারায় নিয়ে আসলাম । ঐযে ছেলেরা চুল কাটে না , বাটি বসায়ে বাটির নিচে চেছে ন্যাড়া করে ফেলে , বাটি ছাট কইয় মুনে হয় । পেয়ারা গাছটারে মনে হইতেছিল বাটি ছাট দিসি,ধুর খারাপ করতে গিয়ে এরে টো ইস্টাইল দিয়ে দিলাম…, চুড়ান্ত খুশি লাগতেছিল ।
তয় সেই খুশি বেশিক্ষন সইল না … আম্মু বের হয়ে গাছের এই সৌন্দর্য সহ্য করতে পারল না … আমারে শাস্তি স্বরুপ সারা বিকাল ঐ গাছের নিচেই কানধরায়ে দাড় করায়ে রাখছিল , নিজে হাতে লাঠি নিয়ে আমারে পাহারা দিসে বারান্দায় বসে । কেউ যখনই যায় , অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কি হইসে , আম্মু তারে সবিস্তারে বর্ননা করে আমার বনায়নের গল্প ।
আব্বু তার মেয়ের বান্দ্রামি অনেক এঞ্জয় করত । তিনি নিজে পছন্দ করে আমারে একটা সাইকেল কিনে দিসিল , আমি সেই সাইকেল কাওরে ধরতে দিতাম না , না শামিম ,না বিপাশা ।ওদের দিয়ে শুধু ঠেলানোর কাজ করাতাম , ওরা অবশ্য ঠেলতে পারার সুযোগ পেয়েই খুশি।।
আব্বুর অফিসের এক কাকুর মোটর সাইকেল ছিল , কাকুরে রোজ বিকালে দেখতাম মোটর সাইকেল চালায়ে কত সুন্দর করে speedএ যাইত ।এক বিকালে উর্বর মস্তিস্কে চিন্তা আইলো , যে আমার সাইকেল যদি কোনোভাবে মোটর সাইকেলের সাথে বান্ধা যায় তাইলে আমারে এই অপদার্থ গুলোরে দিয়ে আস্তে আস্তে ঠেলানো লাগবে না , এম্নিতেই অনেক সুন্দর চলবে সাইকেল । যেই ভাবা সেই কাজ ।কাকু যেই মোটর সাইকেল স্টার্ট দিসে , আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে মোটরসাইকেল এর পিছনের কেরিয়ার ধরলাম । খুব খুশি আমি…প্রথম ৫ সেকেন্ড মত আমার সাইকেল আর আমি হাওয়ায় উড়লাম যেন … এর পর আমার সাইকেল মাটিতে আমি কিছুক্ষন হাওয়ায় , এর পর আমি রাস্তায়ে ছেচরাচ্ছি । এর পর রাস্তার লোকজনের চিতকারে কাকু মোটরসাইকেল থামায়ে দেখে আমি কেরিয়ার ধরে রাস্তায় ছেচ্রাচ্ছি । synchronous speed এ আমার মোটরসাইকেল ভ্রমন ছিল মোটামুটি ১০ second এর মত , এর মধ্যে আমার দুই হাটুর কয়েক পর্দা ছাল উঠে গেছিল , আর রক্তারকি কান্ড , তয় হাওয়ায় ভাইস্যা আমি খুব খুশি , তবে আম্মুর মাইরের ভয়ে সেই খুশি চেপে দিয়ে জোর করে চিতকার দিয়ে কাঞ্ছিলাম সেই দিন।।
এর পর আমার সুখে পানি ঢালার জন্য একদিন আমারে জানানো হল, পরের দিন থেকে আমারে স্কুল এ যাইতে হবে…
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:১১