somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাল ১৯৭৩

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭৩ সাল মে মাস

মারুফ গত ৩ দিন ধরে মনিপুরিপাড়ায় একটি বাসা থেকে একবেলা করে ভাতের মাড় খেয়ে আছে। ভিক্ষা হিসেবে ভাত চাওয়া প্রায় অপরাধের পর্যায়ে পরে এই সময়ে। ভিক্ষুকদের টিনের বাটি হাতে নিয়ে নিয়মিত বলতে শোনা যায়, 'মা ফ্যান থাকলে দেন।' 'ফ্যান' দেয়া হলে কখনো একটু নরম আবদার, 'মা একটু লবণ ছিটায় দেন'।

গত দুই সপ্তাহ মারুফকে ভিক্ষুকই বলা যায়। যদিও ৩ বছর আগেও তার এই অবস্থা ছিল না। তিন বছর আগে মারুফের বয়স ছিল দশ। ঢাকার অদূরে কামরাঙ্গিরচরে মা আর ষোল বছর বয়সী বড় ভাইকে নিয়ে চলে যাচ্ছিল তাদের জীবন। বাবা চাকরী করত চট্টগ্রাম স্টিল মিলে।

এক বছর পরেই যুদ্ধ শুরু হয় দেশে। ভাই চলে যায় যুদ্ধে। দুমাস পরেই মা-কে স্থানীয় দেশপ্রেমিক রাজাকার সদস্যরা সালিশ করার জন্য মিলিটারি ক্যম্পে নিয়ে যায়। একসময় দেশ স্বাধীন হয়। বাবা, মা, ভাই কেউই আসে না।

আরও প্রায় দু বছর চলে যায়। ১৯৭৩ সাল মার্চ মাস। সারা দেশে দুর্ভিক্ষ।
মারুফের মামা একদিন মারুফকে আড়ালে ডেকে জানায় যে তার পরিচিত একজন মারুফের বড় ভাইকে ঢাকায় দেখেছে। সে একটি দোকানে চাকরী করে। একটি ঠিকানাও দেয়। এবং আনুপ্রানিত(!) করে ঢাকায় গিয়ে ভাইকে খুঁজে বের করতে।

মারুফ পরদিনই এক কাপড়ে ঢাকায় চলে আসে।

যাই হোক।

এই মুহূর্তের বাস্তবতা হল মারুফ আজ আর হাঁটতে পারছে না। তার শীর্ণ হাত দুটি মাটিকে ঠেলে বুক একটু উঁচু করে। হাঁটু গেড়ে হামা দেবার মত করে কিছুক্ষণ ধাতস্ত হবার চেষ্টা করে। উঠতে কি আর পারবেনা? তারতো যে-কোন ভাবেই যেতে হবে আর চারটা বাড়ি দুরে। লাল টিনের দরজার বাড়ির খ্রিস্টান সেই মহিলা তো অবশ্যই তাকে ভাতের মাড় দেবে।

কিন্তু কেন আজ আর জোর পাচ্ছেনা সে শরীরে? এরকম কেন হচ্ছে? কেন প্রতিটি নড়াচড়াতেই সাদা হয়ে আসছে সবকিছু!

মারুফ হামা দেয়া শুরু করল। তার মস্তিষ্কের নিউরন কাজ করছে ধীর গতিতে। নতুবা সে বুঝত যে গত ৪০ মিনেটে সে অতিক্রম করেছে ৬ গজ দূরত্ব।

ঘুমিয়ে গেল মারুফ। রাস্তার পাশেই একটি পাচিল ঘেঁষে।
সন্ধ্যা।
মারুফের ঘুম ভাঙ্গল।
তার যেতেই হবে আর মাত্র দুইটা বাসা দুরে। সে খাবে। সে বাঁচবে।
হঠাৎ ঘাড়ে একটি হাত। কানে পরিচিত কণ্ঠ।
তুই এখানে? তোর এই অবস্থা কেন?
ভাইজান! ভাইজান? তুমি?
মারুফ রীতিমত বুঝল যে সে বেচে গেল এ যাত্রা। তার শীর্ণ পেশিবিহীন হাতের শক্তি নেই ভাইকে জড়িয়ে ধরার।
এরপরের গল্প ঘোরের মধ্যে।
ভাইজান তাকে কোলে করে নিয়ে গেল একটি বাড়িতে।
মা! বাড়িতে মা!
মা জড়িয়ে ধরল মারুফকে।
এতই আনন্দ কেন!!
মা তড়িঘড়ি চামচে করে দুধ খাইয়ে দিতে লাগলেন।
'আহঃ'- আবার মারুফ ভাবল, বেঁচে গেলাম এইবার।



রিনা গমেজ সাধারণত বাসা থেকে একা বের হয় না। আজ কি কারনে যেন বের হয়েছিল।

দু বাসা পেরতেই দেখল সেই বালকটার নিথর দেহ, যাকে সে গত তিন দিন দুপুরে ভাতের মাড় দিয়েছিল।

রিনা তার অপুষ্ট হাত দিয়ে শাড়ির আঁচলের একখণ্ড ছিঁড়ে বালকটির মুখমণ্ডল ঢেকে দিল।
১২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×