somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যি মরে যাব

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডান পায়ের জুতোটা ছিড়ে গেছে । হাঁটতে গিয়ে টের পেলাম । এই যাহ্‌ ! এমনিতেই মাসের শেষ । তার উপর ২ দিন পর সুমির জন্মদিন । আমি ৩ টা টিউশন করে তার পড়ার খরচ চালাই । ঢাকা ভার্সিটিতে থার্ড ইয়ারে পড়ি । হলে থাকি । তাই সব মিলিয়ে একটু হিসেব করেই চলতে হয় ।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের যা হয় আর কি ?
সুমির সাথে পরিচয় হল ৫-৬ মাস হল । ফেসবুকে । প্রথম প্রথম নিয়মিত চ্যাট । তারপর সেল ফোনে মেসেজ আদান প্রদান । এরপর কথা বার্তা । ওই ফোন দিতো বেশি । আমি মোবাইল এ ফ্লেক্সি খুব কমই করতাম । হিসেব করে চলি তাই । কত রাত কেটে যেত কথা বলে বলে তার হিসেব নেই । একসময় বুঝতে পারলাম আমি সুমির প্রতি দুর্বল ।

হলের সামনের মুচি মামার কাছে জুতোটা সেলাই করতে নিয়ে গেলাম ।
মুচি মামা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, কি মামা ? আবার ছিঁড়ছে ?
আমি অপরাধির মত হাসলাম ।
দেন, সিলাইয়া দেই । একজোড়া নতুন জুতা কিনলেই পারেন । কি যে করেন ?
আমি মনে মনে বললাম, তুমি কি বুঝবে ? আমার খবর ? মানুষের বাইরে থেকে কি ভেতর বুঝা যায় ? আমার মত মানুষরা এভাবেই কষ্ট করে বড় হয় ।
জুতো সেলাই শেষে একটু আজিজ সুপার মার্কেট গেলাম । সুমির জন্য একটা চাদর কিনব । নিত্য উপহার থেকে । কালো রঙের । ও খুব ফরসা । সবরি কলার মত । আমি খুব কালো ।
মাঝে মাঝে আমি অবাক হই, ও কি দেখে আমায় ভালবাসল । আমি খুব সাধারন । একটা শার্ট ৩ দিন পরি । মাথার চুল এলেবেলে করে রাখি । ফ্যাশন করি না । করব কোথা থেকে ? আমার কাছেত টাকাই নেই ।

চাদর পছন্দ হচ্ছে না । খুব টেনশনে আছি । মাঝে মাঝে এমন হয় আমার । কিছুই মনে লাগে না ।
সুমির ফোন.........

ইফতি কি করছ ?
এইতো কিছু না । একটা ফ্রেন্ড এর সাথে আজিজে আসছি ।
দুপুরে খেয়েছ ?
না। খাব । হলে গিয়ে ।
তুমি যে কবে মানুষ হবে ? এখনও খাও নি ? এরপর বিকেলে ফোন দিলে বলবে পেট ব্যথা ।
আমি যে এমন তুমিত জানই ।
হুম । শুন, পরশু আমার সাথে ঘুরতে বেরুবে । বিকেলে । আমি তোমার ওখানে আসব । মনে থাকবে ?
আচ্ছা । মনে রাখব ।
ওকে । এখন রাখি ।

মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। সুমি এত কেয়ারিং ! আমাকে বেবিদের মত আগলে রাখতে চায় । ভালই লাগে । অবশেষে একটা চাদর পছন্দ হল । অনেক গুলো বিন্দু একসাথে ।
বাহ ! থিমটা পছন্দ হইসে ।

২ দিন পর। বিকেল ৫ টা ।
আমার কাঁধে একটা ব্যাগ । তাতে সুমির চাদর রাখা । ওর আজ জন্মদিন ।
আমি টি এস সি তে বসে আড্ডা দিচ্ছি। সমাজ, রাজনীতি নিয়ে জটিল বক্তব্য শুনছি, নিজেও মাঝে মাঝে দিচ্ছি । হথাত সুমির ফোন ।

এই যে মেঘ বালক, কই তুমি !
এইতো টি এস সি তে ।
আমি আসছি ৫ মিনিটের ভেতর ।
ওকে । আস ।

ঠিক ১০ মিনিটের মাথায় সুমি আসল । ওর সাদা ধবধবে গাড়িতে । নিজেই ড্রাইভ করে সে ।
ও আজ হলুদ শাড়ি পড়েছে । সাথে কালো ব্লাউজ । খোঁপা করা । একপাশে ফুল গোঁজা ।
আমাকে ইশারায় গাড়ির ভেতরে আসতে বলল ।
আমি বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওর গাড়ির কাছে গেলাম । ও দরজা খুলে বলল......
গাড়িতে উঠ ।
কই যাবে?
দেখি কই যাওয়া যায় তোমায় নিয়ে ।
আমি সুবোধ বালকের মত গাড়িতে উঠলাম ।

আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে আশুলিয়ার পথে । সুমি গান ছাড়ল । ভালো আছি ভালো থেক আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ ।
ডান হাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে সুমি । ওর বাম হাত আমার হাত এ ।
আমি আমার ব্যাগ থেকে চাদর এর প্যাকেট খুলে ওর কাছে দিয়ে বললাম, হ্যাপি বার্থ ডে ।
ও সাথে সাথে গাড়িটা পাশের রাস্তায় পার্ক করল । ছোটো বাচ্চাদের মত প্যাকেট খুলে চাদরটা বের করল । ওয়াও । জটিল । আমি এখনি পরব ।
আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম । আমি জানি ও ব্র্যান্ড এর পোশাক ছাড়া কিছু পরে না ।

ও চাদরটা গায়ে জড়াল । আমাকে বলল,
এটা আমার জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ গিফট ।
আমি থ্যাংকস বললাম ।

ও গাড়ি চালাচ্ছে । মাঝে মাঝে জোকস বলছে । আর হেসে কুটি কুটি হচ্ছে । আমিও খুব হাসছি ।
গাড়ি এখন আশুলিয়ায় ।
ও আর আমি গাড়ি থেকে নামলাম ।
দুজনে দাঁড়িয়ে আছি । গাড়িতে হেলান দিয়ে । আমি এমন ভাবে দাঁড়ালাম । যেন আমার ছেঁড়া জুতোগুলো ও দেখতে না পায় ।
ও আমার হাত ধরে বলল,

ইফতি, আমায় অনেক ভালবাস তুমি ?
হুম ।
আমি যদি কোনদিন না থাকি !
ফালতু কথা বল না । আমার রাগ লাগে ।
হা হা হা । তুমি আসলেই একটা পিচ্চি ।
তুমিও পিচ্চি ।
যাহ্‌ । আমি কেমন করে পিচ্চি হলাম। বলতো ?
আমি কিছু বললাম না । হাসলাম ।

সুমি হথাত করে বলল, ওহ ! ভুলেই গেসি । তোমার জন্য একটা গিফট ছিল ।
দাঁড়াও । এক মিনিট ।
ও গাড়ির পেছন থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করল ।
আমার হাত এ দিয়ে বলল, এটা তোমার জন্য ।
আমি দেখলাম, এক জোড়া এপেক্স এর জুতা ।
আমি ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিলাম ।

সুমি তাড়াতাড়ি আমাকে তার বুকে জড়িয়ে ধরল।
এই সোনা ! তুমি কাদ কেন ? প্লিজ, শান্ত হও । প্লিজ ।
আমি কেদেই চলেছি । ওকে আঁকড়ে ধরে ।
আমি একটু শান্ত হয়ে বললাম, তুমি আমাকে এত ভালবাস কেন ?
ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, তোমায় ভালো লাগে তাই ।
আমায় কখনও ছেড়ে যেও না । আমি সত্যি মরে যাব ।
সুমি আমার মুখ তুলে আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট রাখে ।
আমার ঠোঁট, মন, হৃদয় ভিজতে থাকে ভালবাসায় আর আদরে ।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:২৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×