somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অধ্যাপক মাসাহিকো তোয়াগা’র কাছে ক্ষমা চেয়ে

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শওগাত আলী সাগর
১. পাতাল ট্রেনের অভিজ্ঞতা সেটাই আমার প্রথম। সত্যি বলতে কি দেশের বাইরে যাওয়াও সেটাই আমার প্রথম।সম্ভবত ২০০০ সালের কথা। সম্ভবত বলছি কারন গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুরই সময় তারিখ আমি মনে রাখতে পারি না। আমরা দলেবলে চেপে বসি টোকিওর পাতাল ট্রেনে।নির্দিষ্ট স্টেশনে এসে নামতেই - হায়! হায় করে উঠেন আমাদের দলের একজন । তিনি তার হাতের ব্যাগটা খুজেঁ পাচ্ছেন না। কোথায় ফেলেছেন সেটাও তিনি মনে করতে পারছেন না। তরুন এই ব্যবসায়ী পড়াশুনা করেছেন হার্ভার্ড এ।দেশের বহুল পরিচিত এক ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধারের ছেলে। হাতব্যাগটিতে তার পাসপোর্ট,জরুরী কাগজপত্র নগদ ডলার,আরো মূল্যবান সামগ্রী। ডলারের জন্য মোটেও বিচলিত ছিলেন না তরুন ওই ব্যবসায়ী। তিনি ভাবছিলেন তার ব্যাগে রাখা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কাগজপত্রের কথা।
ততক্ষণে আমাদের বহন করে নিয়ে আসা পাতাল ট্রেনটিও প্লাটফরম ছেড়ে চলে গেছে।তরুন ব্যবসায়ীটি এগিয়ে যান টিকেট কাউন্টারের দিকে। এগিয়ে আসেন কাউন্টারের সামনে থাকা একজন কর্মকর্তা।সব শুনেন তিনি,টুকটাক নোট নেন।
- ‘আচ্ছা, এইটুকু কি তোমার মনে আছে,সাবওয়ে নেটওয়ার্কে ঢোকার সময় ব্যাগটি তোমার সাথে ছিলো কী না?’জানতে চান কর্মকর্তাটি।
- হ্যাঁ, ব্যাগ নিয়ে আমি সাবওয়েতে ঢুকেছি। যতটুকু মনে পড়ে টিকেট কাটার সময়ও ব্যাগটা আমার হতেই ছিলো। তারপর আর মনে করতে পারছি না। - জবাব দেন তরুন ব্যবসায়ী।
- তার মানে ব্যাগটা সাবওয়ে নেটওয়ার্কের মধ্যেই আছে। তুমি নিশ্চিত থাকো তুমি তোমার ব্যাগ পেয়ে যাবে,সমুদয় জিনিসসমেত।– বললেন ওই কর্মকর্ত।
কন্টাক্ট নম্বর রেখে তিনি আমাদের বিদায় করে দেন।
একঘন্টারও কম সময়ের মধ্যেই ফোন আসে। ব্যাগটি পাওয়া গেছে। তরুন ব্যবসায়ীটিকে অনুরোধ জানানো হয় তার একটি আইডি দেখিয়ে ব্যাগটি সংগ্রহ করে নিতে। ব্যাগটি হাতে নিয়ে ভালো করে খুজে দেখেন তিনি। না, কেউ হাত লাগিয়েছে বলেও মনে হচ্ছে না। ভেতরে জিনিসপত্র যেভাবে তিনি রেখেছিলেন সেভাবেই রয়েছে।
সাবওয়ের টিকেট কাটার সময় কাউন্টারেই ব্যাগটি ফেলে রেখে এসেছিলেন ওই ব্যবসায়ী।
২. অনেকদিনপর ঘটনাটি মনে পড়ে গেলো। মনে পড়ে গেলো আর লজ্জায় মাথা হেট হয়ে এলো। ঢাকার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘চুরি যাওয়া ল্যাপটপ ফেরত চান জাপানি অধ্যাপক’ খবরটি পড়তে পড়তে প্রায় ১০ বছর আগে টোকিওতে আমাদের অভিজ্ঞতাটির সঙ্গে মিলিয়ে দেখছিলাম।
জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসাহিকো তোয়াগা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বঙ্গবিদ্যা সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুরের খাওয়ার সময় কে বা কারা তাঁর ব্যাগটি চুরি করে নিয়ে যায়। ওই ব্যাগে দুই হাজার ডলার, এক লাখ ইয়েন, বাংলাদেশি ৫০ হাজার টাকা, একটি ল্যাপটপ, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা, মডেম, কিছু বই ও মূল্যবান কাগজপত্র এবং তাঁর পাসপোর্ট ছিলও। (সূত্র: প্রথম আলো)
প্রথম আলোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাসাহিকো তোয়াগা প্রথম আলোয় পাঠানো এক আকুতিতে বলেছেন, ‘ওই ল্যাপটপে যেসব তথ্য আছে, সেটি অন্য কারও কোনো কাজে আসবে না। কিন্তু একাডেমিক কারণে তাঁর ল্যাপটপে থাকা সব তথ্য দরকার। কাজেই যারা নিয়েছে বা যাদের কাছে এখন ল্যাপটপটি আছে, তারা কেউ যদি প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে ল্যাপটপটি বা এর হার্ডডিস্কটি ফেরত দিয়ে যায়, তাহলে তিনি খুব উপকৃত হবেন। আর যে ফেরত দেবে, তিনি প্রয়োজনে পরিচয় গোপন রেখে এটি ফেরত দিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেছেন, যারা ল্যাপটপটি নিয়েছে, তাদের কোনো ভোগান্তি তিনি চান না। তিনি শুধু তথ্যগুলো ফেরত চান।
১০ বছর আগে টোকিওর এক কর্মকর্তা বাংলাদেশের তরুন এক ব্যবসায়ীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন,’তোমার ব্যাগ তুমি ফেরত পাবে, মালামাল সমেত। এবং তারা সেই ব্যাগ উদ্ধারও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেমের পুলিশ, গোয়েন্দা, কিংবা কোনো তরফের কোনো কর্মকর্তাই জাপানি এই অধ্যাপককে আশ্বাস দিতে পারেন নি যে তিনি তার হারানো ব্যাগটা ফেরত পাবেন। অধ্যাপক ভদ্রলোক ডলার নয়,ল্যাপটপ নয়, ডিজিটাল ক্যামেরাও নয়, শুধুমাত্র তারা তথ্যগুলো ফেরত চেয়ে মিডিয়ায় আকুতি জানাচ্ছেন।কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষই তাকেই আশ্বস্থ করতে পারছেন না।
খবরটা পড়তে পড়তে আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাই। অধ্যাপক মাসাহিকো তোয়াগা’র উদ্দেশ্যে বিড়বিড় করে বলি আমাদের ক্ষমা করে দাও অধ্যাপক। তোমার কাছে আমরা ক্ষমা চাই।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×