
View this link পহেলা বৈশাখ নিয়ে ছেলেবেলার কোনো স্মৃতি নেই আমার। তবে জন্মাষ্টমীর মেলার স্মৃতি আছে। এটা আমার ৪/৫ বছর বয়সের কথা। সিলেটে, নেত্রকোনায় দেখেছি এসব মেলা। নেত্রকোনায় নানাবাড়ির এলাকায় মেলা দেখতে গেছি। ছেলেবেলায় দেখা মেলা এবং এখনকার মেলার মধ্যে বড় ধরনের কোনো পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। আমার ধারণা, মেলার ক্ষেত্রে বিবর্তন খুব একটা হয়নি।
গরমের সময় হতো মেলা। সেই মেলায় পাওয়া যেত মাটির খেলনাপাতি। পাওয়া যেত তোকমা দেয়া শরবত। সেসব খেয়েছি। মনে পড়ে, একধরনের পিছলা জিনিস গলা দিয়ে নামছে। আর পাওয়া যেত বাতাসা, কদমা। চিনির শিরায় তৈরি নানা ধরনের পুতুল। মেলার ব্যাপারটি বেশ উপভোগ করতাম। যে কোনো বাচ্চারই উপভোগ করার কথা। ঝিনুক ঘষে ধার করে একপ্রকার ছুরি বানানো হতো। তা দিয়ে কাটা হতো আম। সেসব ছুরি বিক্রি হতো মেলায়।
মনে পড়ে, একবার আমি মেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। মামাদের সঙ্গে মেলায় গেছি। মনের আনন্দে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে গেছি একসময়। আমি কিন্তু মোটেও চিন্তিত ছিলাম না এ নিয়ে। ভেবেছি, মামারা আমাকে খুঁজে পাবেনই। সন্ধ্যাবেলা মেলা যখন ভাঙতে শুরু করেছে, লোকজন চলে যাচ্ছে, মেলার মাঠ ফাঁকা হয়ে আসছে—তখন মামারা আমাকে খুঁজে পান। না, তারা কোনো বকাঝকা আমাকে করেননি। আমাকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দেই তারা অভিভূত ছিলেন।
মেলায় পাওয়া যেত মুড়ি-মুড়কি। ছোট ছোট বাচ্চারা হাত দিয়ে এক-দু’মুঠো মুড়ি-মুড়কি নিয়ে নিত। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, দোকানিরা ওদের কিছু বলত না। নিশ্চয়ই এ ধরনের ব্যাপার আজকাল ঘটে না।
বাংলাদেশের সব উত্সবই ধর্মভিত্তিক। একুশে ফেব্রুয়ারি ও পহেলা বৈশাখ ছাড়া। আমাদের দুই ঈদই ধর্মভিত্তিক। একুশে ফেব্রুয়ারি ও পহেলা বৈশাখ সব বাঙালির। সব ধর্মের মানুষের। এ দুটি উত্সব সর্বজনীন; এখানে ধর্মের কোনো ব্যাপার নেই।
ইংরেজি বছরই আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করি। তবে গ্রামের মানুষ বাংলা সন অনুযায়ী চলেন। শহুরে মানুষরা চট করে বলতে পারেন না বাংলা কোন মাস চলছে, কত তারিখ আজ। ইংরেজি বছর হচ্ছে কাজের, চাকরিজীবীরা খ্রিস্টবর্ষের মাস হিসেবে বেতন পান। খ্রিস্টীয় বর্ষ কাজের, আর বাংলা বর্ষ হচ্ছে হৃদয়ের। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে পরিবর্তন আসছে। ভবিষ্যতে আরও আসবে। তবে একটা কথা কি, আমাদের কোনো সংস্কৃতি, কোনো ঐতিহ্যকেই হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না। আমাদের শেকড়ের যা সম্পদ, সংস্কৃতির ঐতিহ্য, তাকে হাতছাড়া হতে দেয়া উচিত নয়। আমার আশঙ্কা, কোনিদন না কোন্ মোবাইল কোম্পানি বলে বসে পহেলা বৈশাখ আমরা লিজ নিয়ে নিলাম। এ ধরনের কিছু ঘটলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।
পহেলা বৈশাখের দিনটি আমি বাড়িতেই থাকি। ঘরে বসে দিন কাটাই। টিভিতে অনুষ্ঠানমালা দেখি। যা গরম থাকে! ছাত্রজীবনেও রমনা বটমূলে ছায়ানটের গানের আসরে যাওয়া হয়নি। কারণ, এত সকালে আমার ঘুমই ভাঙে না। আজকাল আমার বাড়িতে পহেলা বৈশাখের দিন পান্তাভাতের আয়োজন থাকে। পান্তাভাত নিয়ে বাড়াবাড়িও কম হচ্ছে না। কবে কোন্ ফাইভস্টার হোটেল বলে ফেলবে আমাদের কাছে পাওয়া যাবে স্ট্রবেরি ফ্লেভারড পান্তা—আমি সে অপেক্ষায় আছি। এভাবে আমাদের সংস্কৃতি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
নতুন বাংলা সন ১৪১৭-এ বাংলাদেশকে দেখতে চাই বিদ্যুত্ সঙ্কট থেকে মুক্ত দেশ হিসেবে। বিদ্যুত্ সঙ্কটের সমাধান হলে পানি সমস্যারও সুরাহা হবে। বিদ্যুত্, পানি, যানজট—এই তিন সঙ্কট থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত দেখতে চাই। ঢাকা শহরে যানজটের জন্য আজকাল চলাফেরা করা যাচ্ছে না। ভয়ে আমি ঘর থেকে বেরোই না। ধরুন, একজন বৃদ্ধ মানুষ যানজটে আটকা পড়ে আছেন। তিন ঘণ্টা। তার প্রস্রাবের সমস্যা আছে। তাকে তো গাড়িতেই প্রস্রাব করে ফেলতে হবে। উপায় নেই।
১৪১৭ নতুন বাংলা সনে বৃহত্তর বাংলাদেশের জন্য যা চাই, তা হলো শান্তি। আর কিচ্ছু না। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড তো চোখের সামনেই দেখছি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




