somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যা..ভ্যা..সাংবাদিকতা, অমানুষিকতা

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ভাই খুব অল্প বুঝি। বেশী বুঝার চেষ্টা খুব কম করি। তবে আজকে একটু বুঝতে চাই। আজকে আমি জানতে চাই।

সাংবাদিকতার সংজ্ঞা কি আমি ঠিক জানিনা। জানতে চাই ও না। আপাতত আমার কাছে সাংবাদিকতা হলো যারা জনসাধারণের কাছে ঘটনার বিবরন দেয়া। যা মানুষকে জানানো প্রয়োজন তা জানানো। আরেকটু বেশী বলতে গেলে ঘটনার ফ্যাকচুয়াল পরিবেশন।


ব্যাঙ এর ছাতার মত বাংলাদেশে প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের সংখ্যা অনেক। মাশাআল্লাহ, বাংলাদেশের সব গুলা টিভি চ্যানেল গুলারেই সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল ধরা যায়। যখন তখন ব্রেকিং নিউজ তো স্ক্রল হইতেই থাকে। আমাদের দেশে ব্রেকিং নিউজের অভাব নাই। কইতরীর আম্মু পিছলা খাইলেও, দেখবেন দুপুরবেলার দিকে ওইটাই ব্রেকিং নিউজ। আই মিন, ব্রেকিং নিউজ স্ক্রল থাকতেই হবে। এই ব্যাপারে কোন চ্যানেলেরই নো কম্প্রোমাইজ।

এইবার আসি সাভার ট্র্যাজেডীতে। আমাদের সাংবাদিকরা উপস্থিত। সুন্দর টিভি স্টুডিও থেকে ফোন করা হয় সাইটে থাকা রিপোর্টারদের। সত্যি কথা, বিরক্তি ধরে গেসে উনাদের রিপোর্টিং শুনতে শুনতে। “আপনি দেখছেন এখানে...ভ্যা...ভ্যা...এখানে...ভ্যা...ভ্যা...ভ্যা...দেখছেন এখানে...ভ্যা... এরপরেই আমি আর ভাই সইতে পারিনা। চ্যানেল পরিবর্তন করি। এইভাবে যখনই কোন স্টুডিও লাইভ কনফারেন্সে চলে যায়, আমি তখন ওই চ্যানেল থেকে চলে যাই। টিভি রিপোর্টিং এ কি কোন কোচিং ফোচিং নাই বা টিভি চ্যানেল গুলা কি কোন রকম ট্রেইনিং ছাড়াই এইগুলার হাতে মাইক্রোফোন উঠায় দেয়? সংবাদ পরিবেশনায় যে স্পষ্টতা থাকার কথা ওই স্পষ্টতা কই? এদের ভ্যা ভ্যা এর জন্যে তো এরা কি বলছে তাই বুঝা দায়। এর উপরে আছে এক প্রশ্নের আরেক উত্তর দেয়া। যে লোক প্রশ্নই বোঝেনা সেই লোক কিভাবে নিউজ রিপোর্টার?


সাভার ট্রাজেডিতে সবচাইতে বেশী মানবিকভাবে আঘাত করে যখন রক্তাক্ত মরদেহগুলো এইভাবে লাইভ ব্রডকাস্ট করা হচ্ছে! বুঝলাম সংবাদ মাধ্যমের কাজ হলো পাবলিক ইন্টারেস্ট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিডে প্রচার করানো। কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা খুব ভালো লাগলোনা। বাবা-মার সাথে সাথে অনেক ছোট মানুষও টিভি সেটের সামনে থাকে। ছোট মানুষ কেন? অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও তো এটা ঠিকভাবে গ্রহন নাও করতে পারেন। এই ধরনের চিত্র ধারন করে কিছুটা কি আবছা করে প্রকাশ করা যায়না? নাকি আমাদেরই রুচির পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে? আমাদের এইসব নিউজের ‘raw’ প্রেজেন্টেশন ই পছন্দ করি?


আজকে তাদের এই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হলো সাক্ষাৎকার। এক কথায় নির্মম এই সাক্ষাৎকার। মানুষগুলো ভবনের নানা জায়গায় আটকে পড়ে আছেন। সাহায্যকর্মীরা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, আর সাংবাদিক তার মাইক্রোফোন গর্তের ফুটো দিয়ে ঢুকিয়ে দেয় এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্যে। রক্তাক্ত অর্ধমৃত মানুষটাকে এটা কি ধরনের প্রশ্ন? কোন ধরনের সাংবাদিকতা? সাংবাদিকতার কোন এথিকস এ পড়ে এই ব্যাপারটা?


আমি সাংবাদিকদের একদম দোষারোপ করছি না! আপনারা অনেক করেছেন। আপনারা না থাকলে হয়তো বা কিছুক্ষন পরপর নিউজ আপডেট পেতাম না! সংবাদপ্রচার মাধ্যমের আধুনিকায়নের কারণে আজকে ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আমরা খবর গুলা পেয়ে যাই, লাইভ টেলিকাস্টের কারণে দেখতেও পারি। আগের মত অবস্থা হলে দুপুর ২টা, সন্ধ্যা ৭টা, রাত ১০টার খবরের জন্যে বসে থাকতে হতো। অথবা প্রাইভেট টিভি চ্যানেল গুলো না থাকলে বিটিভির সরকারী নিউজ এর উপর ই ভরসা করতে হতো বা পরের দিনের পত্রিকার দিকে চেয়ে থাকতে হতো। এখন টিভি খুললেই পেয়ে যাই, কি ঘটে যাচ্ছে আসে পাশে আপনাদের এই ভালো কাজ আমি অস্বীকার করতে পারবোনা। কিন্তু একটু খেয়াল রাখবেন, একটু মানবিকতার কথা চিন্তা করে নিউজ প্রেজেন্ট করবেন, আমরা দেখতে চাইনা কিভাবে বিশ্বজিতকে কোপানো হলো যখন আপনাদের ক্যামেরা রোল করছিলো, আমরা দেখতে চাইনা যখন পুলিশ কর্মকর্তার হাত বোমায় উড়ে গেলো। এইসব ফুটেজ এর কাটতি হয়তো বেশী কিন্তু এসব ফুটেজে আপনাদের মানবিক দৈন্যতাও ফুটে উঠে। সরকার মারে, বিরোধীদল মারে, এইসব তো আছেই কিন্তু মানুষ হিসেবে কি আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম না? বলেন? আমরাও সাভারের ঘটনা জানতে চাই, কি হচ্ছে দূর থেকে দেখতে চাই, আর আপনারাই একমাত্র ভরসা আমাদেরকে দেখানোর, জানানোর। কিন্তু বিনীত অনুরোধ থাকলো কান্ড-জ্ঞান ছাড়া রিপোর্টিং গুলা করবেন না। আটকে পড়ে থাকা একজন মানুষকে জিজ্ঞেস করবেন না তার এখন কি অনুভূতি হচ্ছে, মাত্র উদ্ধার হওয়া কারো পথ আটকিয়ে তার ইন্টারভিয়্যু নিবেন না। লোকগুলা অনেক দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু নিউজের রেটিং বাড়ানোর জন্যে এধরণের স্টান্ট গুলা নিবেন না। রাজনীতিবীদদের মতো কান্ড-জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন না!


রাজনীতিবীদদের কান্ড-জ্ঞান কখনো ছিলো বলে মনে করি নি। সাভারের লাশ গুলোতে পচন ধরেছে তো কাল থেকে, আমাদের রাজনীতিবীদরা পচে গেছেন যুদ্ধের আগেই। আর আজকে এই ধরনের সাংবাদিকতা চালিয়ে, শুধু টিভি রেটিং বাড়াতে গিয়ে আপানারাও অমানুষের খাতায় নাম লিখালেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:২৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×