somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ অস্বস্তি

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জোর করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। একটু আগে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে। অস্বস্তির মাত্রা বাড়তে না দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

হাতড়ে হাতড়ে মোবাইল বের করে সময় দেখলাম। ৪টা বেজে ২১ মিনিট। জানালার পর্দা নামানো থাকার কারণে বাইরে ফ্যাকাশে হয়ে আসছে কিনা বলতে পারছিনা। রুমের মধ্যে একটা বেগুনী-নীল আলো জ্বলছে নিভছে। কম্পিউটার বন্ধ করে শুয়ে পড়লেও স্যুইচ অফ করা হয়নি। আবার মোবাইলটা হাতে নিলাম। স্ক্রীনের ব্যাকগ্রাউন্ডটাও বেগুনী-নীল। হোমস্ক্রীনে কিছু অর্থহীন ফেসবুক নোটিফিকেশন জমে আছে। দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই। এপাশ হয়ে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছি।


অপরিচিত একটা স্থানে দাঁড়িয়ে মেয়েটা হাসছে। সুন্দর মনকাড়া হাসি। হাত নাড়িয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে আর একটু পর পর বাতাসে উড়তে থাকা চুল গুলোকে মুখের উপর থেকে সড়িয়ে নিচ্ছে। আমি কিছু শুনতে পাচ্ছিনা। আবার মনে হলো আমি নড়তেও পারছিনা। নাহ এইতো আমি সামনের দিকে এগুতে পারছি। চারিদিক কেমন যেন আবার পাল্টে গেলো। সামনে এক টুকরো শুকনো বালিচর। চারিদিকের পানি নীল। সূর্যটা লাল হয়ে দূরে কোথাও। বালিতে পা দেবে যাচ্ছে। পা টেনে টেনে এগুবার চেষ্টা করছি। এখানে মেয়েটার মন ভালো নেই। উদাস একটা ভাব। মাথা নিচু করে পানির দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো। আমি ঝাপসা দেখছি। চোখে হাত দিয়ে দেখলাম চশমা নেই। যতই কাছে যাচ্ছি, সবকিছু আরো ঝাপসা হয়ে আসছে। ঝাপসা হতে হতে আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।


চারিদিক নীরব, নিস্তব্ধ। হঠাত পরিচিত একটা গলা শুনতে পেলাম। আরো কিছু শোনার অপেক্ষায় আছি। নাহ, চারিদিকে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।পরিচিত গলাটা আর শুনতে পাচ্ছিনা। কি বলছিলো তাও মনে করতে পারছিনা। ঘুমের ঘোরেই অস্থিরতাটা টের পাচ্ছিলাম। ঘুম ভাঙ্গার পরও জোর করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। অস্বস্তির মাত্রা বাড়তে না দেয়ার চেষ্টা করছি।

স্বপ্নের বিষয়টা মাথা থেকে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছি। ঘড়ি দেখছি। এপাশ-ওপাশ করছি কিন্তু পারছিনা। এটা তো স্বপ্ন নাও হতে পারে। স্বপ্নে কোন রঙ দেখা যায়না। আমি পানির রঙ খেয়াল করতে পারছি। আবার কল্পনাও না। কল্পনা হলে সবকিছু মনে করতে পারতাম। তাও পারছিনা। তবে খুব অস্পষ্ট করে সব কিছু মনে পড়তে লাগলো। অপরিচিত স্থানে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা হয়তো অপরিচিত কেউ না হয়তো। আরো কিছুক্ষন পর মনে হলো মেয়েটার পড়নে শাড়িই ছিলো। একজায়গায় সাদা কালো আরেক জায়গায় নীল। পরিচিত কণ্ঠস্বরটা কার চিন্তা করছিলাম কিন্তু ঠিক মিলিয়ে নিতে পারছিলাম না। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করতে পারিনি।


তীব্র অস্বস্তির মধ্যে জেগে উঠলাম। টেবিল থেকে জগটা নিয়ে পানি খেলাম। যতটুকু মনে পড়ে মেয়েটাকে আবার দেখেছি। এবার মেয়েটা একা ছিলো না।


ভার্সিটিতে টঙ এ বসে চা খাচ্ছি। মোবাইল ফোন ভাইব্রেট করছে। ক্লাস হয়তো শুরু হয়ে গিয়েছে তাই কোন বন্ধু ফোন করেছে হয়তো। যেতে ইচ্ছা করছে না। অলস ভঙ্গিতে টাকা বের করে দিয়ে ক্লাসের দিকে হাটা দিলাম। ঘুম হয়নি রাতে ভালোমত তাই কেমন যেন লাগছিলো। ক্লাসে ঢুকেই পেছনের বেঞ্চে চলে গিয়েছি। পেছনের বেঞ্চে বসলে প্রায় সবাইকেই দেখা যায়। আমি এদিক-ওদিকে তাকিয়ে করেই সময় কাটিয়ে দেই। একদম ডানদিকের সারির সামনের বেঞ্চে দৃষ্টি গেলো। হঠাত করে সারা শরীরে একটা কাঁপুনি ধরে গেলো। সাদা-কালো ফতুয়ার সাথে উপরে গাড় গোলাপী রঙের ওড়না পড়ে মেয়েটা বসে আছে। উদাসভাবে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। আসার পথে পথে যতকিছু মেলাতে পারছিলাম না কেন যেন মিলে যাচ্ছিলো সব। এমনভাবে মেলাতে চাচ্ছিলাম না।


ক্লাস শেষ হলো। আমি আসতে আসতে বের হয়ে আসছিলাম বাইরে। ওর চোখ পড়া মাত্রই চোখ ফিরিয়ে নিলো। ওর পাশ কাটিয়ে বের হয়ে আসলাম। কোন একটা কারণে ওর সাথে তেমন কথা হয়না। আজকেও কথা হয়নি।


রাত ৩টা বাজে। এখনো ঘুম আসছেনা। একধরণের অস্বস্তি টের পাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×