ভারতীয় সিরিয়াল কি জিনিস তা সবারই জানা আছে। এর প্রভাব বাংলাদেশে কি পরিমান পড়ে তা সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নাই! শাশুড়ি-বৌ কোন্দল, স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া, পরকীয়া, হিংসা-বিদ্বেস এসব তো এখন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা! তারপর জামাকাপড়ের উপর প্রভাব বিস্তার করতে লাগলো। গত বছর দেখা গেল সো কল্ড পাখি ড্রেসের কারনে আত্মহত্যা করতে , আর এইবার কিরনমালার জন্য! জামার জন্য আত্মহত্যা! এরকম ছোট মানসিকতা বাংলাদেশে আগে ছিল কিনা জানা নাই । এসব যে কতবেশী হাস্যকর বলার অপেক্ষা রাখেনা । এরপর আসলো পাখি জুতা! প্রতি ঈদেই কোন না টুইস্ট নিয়ে আসে তারই অংশ হিসেবে কিছুদিন পর হয়তো দেখা যাবে পাখি ফ্রাই, পাখি চিকেন, পাখি তরকারি , পাখি লুঙ্গী ইত্যাদি ।
এক অনুসন্ধানে জানা যায় এসব আসলে ব্যাবসায়ীদের ব্যাবসার একটা কৌশল যেখানে ভারতীয় সিরিয়ালের উপর কিছু মানুষের দুর্বলাটা ব্যাবহার করছে। তারা পন্য কিনে এনে ভারতী সিরিয়ালের নামের অনুকরনে এসব নাম জুড়ে দেয় আর এক ঝাঁক মাথামোটার দল এতে ঝুঁকে পড়ে। এসব করতে ব্যাবসায়ীদের খারাপ লাগলেও ব্যাবসায়ীরা ব্যাবসায় বৈচিত্র আনার জন্য এবং ব্যাবসায়ে টিকে থাকার তাগিদে তারা এসব কর থাকেন। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান অবস্থানে আমরা !
তারপর আজ দেখলাম সবচেয়ে ভয়াবহ একটা জিনিস যা দেখার জন্য প্রশ্তুত ছিলামনা। খাতার কভারে ভারতীয় সিরিয়ালের কিরনমালা, স্টার জলসার ছবি! এত দিন শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ, গ্রামবাংলার এবং কবি-সাহিত্যিকের ছবি দিয়ে করা প্রচ্ছদের খাতা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এখন শিক্ষা উপকরণেও পড়েছে ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাব। এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে কিছুদিন পর এমন হবে যখন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আমাদের সংস্কৃতি ভুলে যাবে। এ ভুখন্ডটি পরিনত হবে এক ঝাঁক মাথামোটার অভয়াশ্রম। নিন্মে ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাবের কিছু নমুনা দেওয়া হলঃ
১। ‘পাখি’ না পেয়ে এবার গাইবান্ধায় আত্মহত্যা , ২৭ জুলাই ২০১৪
২। হায় পাখি ড্রেস , ২৩ জুলাই ২০১৪
৩। পাখি জামা কিনে না দেওয়ায় শিশুর আত্মহত্যা , ২৭ জুলাই ২০১৪
৪। কিরনমালা জামা না পেয়ে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা , ৬ জুলাই ২০১৫
৫। সিরিয়ালের পাখি "পাখি", "কিরনমালা" এখন লেখাপড়ার খাতায় , ২৩ মে ২০১৫
এগুলো শুধু গনমাধ্যম থেকে বাচাই করা কিছু অংশ! তারপর ভিবিন্য পরিবারে কি হচ্ছে তা জানার অগোচরেই রয়ে গেছে!
এত কিছুর পরও কেন কতৃপক্ষের নজর নাই ? যেখানে ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল প্রচার করার মত যোগ্যতা তাদের যোগ্যতা তৈরী হয়নাই সেখানে বস্তাভরা পচা চ্যানেল কেন এই দেশে? তাদের ছেলেমেয়েদের এইসব অপসংস্কৃতি চাওয়া মাত্রই তারা দিতে পারবে কিন্তু আরো যে গরীব মায়ের ছেলেমেয়েরা আছে যারা সামান্য যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে প্রান দিয়ে দেয়, তাদের কি হবে ? অনতিবিলম্বে এইসব বস্তাভরা পচা চ্যানেল, পচা সংস্কৃতি বন্ধ করে এক ঝাঁক মাথামোটা সম্প্রদায় থেকে আমাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭