somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদেরই ‘গোকুলে’ বাড়িছে তারা...

২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা ১৪০০ সাল। ক্লাশ এইটে পড়ি মাত্র। যেকোন উপলক্ষেই সাজতে ভালো লাগার বয়স। তো পয়লা বৈশাখ, বর্ষবরণের দিন। শাড়ি পড়ে যতটুকু মানায় সাজুগুজু করে বের হয়েছিলাম। ভাইবোন, ভাতিজি, বোনের বান্ধবি, ভাইয়ের বন্ধু সবাই একসঙ্গে। যাদের বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তখন। তাদের সঙ্গে ঘুরে ফিরে বাসায় ফেরা। তখন মিরপুর রোডে রিকশা চলতো। দুপুরের আগে আগে রিকশা করে বাসায় ফিরছি। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে ২৭ নম্বর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত অংশে ঘটে ঘটনাটা। রিকশার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো একটা ঘোড়াগাড়ি। বেশ কয়েকটা ছেলে সেই ঘোড়াগাড়িতে। এইটুকুই দেখেছিলাম। আর কিছু দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু মনে পড়ে একটা সটাং চাবুকের আঘাত। ওই ঘোড়াগাড়ি থেকে রিকশা যাত্রীদের গায়ে চাবুক মারা হচ্ছিলো। তারই একটা আঘাত এসে পড়ে আমার ভাজ করে রাখা দুই পায়ের উপর। আমি আজও জানিনা সেদিন কি অপরাধ করেছিলাম, আজো বুঝিনা ওদের কি আনন্দ হয়েছিল? কিন্তু এটা বুঝি বিকৃত রুচির কিছু মানুষের কাছে বিভৎসতাই হয়তো উৎযাপন।

বহু বছর পর এবার আবার পয়লা বৈশাখ সেজে গুজে বের হয়েছিলাম। সকাল বেলা এদিক ওদিক টুকটাক ঘুরে গেলাম লালমাটিয়ায়, ভাইবোনদের বাসায়। যাওয়ার পথেই হঠাৎ দেখি ১০/১২ টা মোটর সাইকেলে তিনজন করে ছেলে। প্রতিটা মোটরসাইকেল থেকে লম্বা নলওয়ালা (এয়ারগান হয়তো) বন্দুক থেকে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ছে আর জোরে হর্ন বাজাচ্ছে। মুহুর্তেই একটা আতঙ্ক। বুঝলাম না উৎসবের দিন এরকম আতঙ্ক তৈরি করে কি আনন্দ হয়? কিন্তু এটা অনেকটা বোঝা যায় কিছু মানুষের কাছে বিকৃতিটাই আনন্দ। এবং আরো ভয়াবহ বিষয় হলো যুগের পর যুগ এই বিকৃত মানসিকতার দ্বিপদগুলো দিব্যি টিকে যাচ্ছে। তাদের এই সাড়ম্বর টিকে থাকা মনে করিয়ে দেয় তারা সমাজের একটা বেশ বড় অংশ। হয়তো তারাই আমরা।

এই বিকৃত মানসিকতা পুষে রাখা আমরাই যখন উৎসবে শামিল হই। তখন মেয়ে দেখলে হাত নিশপিশ করে। পয়লা বৈশাখ সন্ধ্যায় টিএসসিতে যা ঘটে গেছে, তাতো আসলে আমরাই করেছি। আমাদের একটা ভালো যোগ্যতা আমরা সবসময় নির্যাতিত কে ওন করি। নির্যাতনকারীকে নয়। নির্যাতিতদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর ছলে ভাব নেই যেন আমিই নির্যাতিত হয়েছি। কেউ একজন প্রতিবাদ করলো, আমরা বাহবা দেই। যেন আমিও এই বাহবার অংশীদার। বিলবোর্ডে ক্রিকেট নিয়ে করা একটা সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপন দেখি, অর্জনে তোমরা গর্জনে সারা বাংলাদেশ। সত্যিই আমরা অন্যের অর্জনের অংশীদার হতে চাই। কিন্তু অন্যের ব্যর্থতার দায় পুরোপুরিই তার। ঠিক যেমন আমরা কখনো অপরাধীকে ওন করিনা । আমরা অপরাধের দায় নিইনা। যারা নির্যাতন করলো তারা কিন্তু এলিয়েন নয়। তারাও কিন্তু আমরাই। আমার আপনার বাড়ি থেকেই তো কেউ না কেউ গিয়ে কান্ডটা করলো। কিন্তু আমরা তাতে লজ্জিত হইনা। কারণ মনে মনে আমরা আমাদের উদার মনে করি। আমরা ধরেই নেই আমরা শুদ্ধ। আমাদের দ্বারা কোন ক্ষতি সম্ভব নয়। এই ফাঁকেই ঘটে যায় একেকটা ঘটনা। যেহেতু দায় আমাদের নয়, আমরা শোধরাই না। আমরাতো লজ্জাই পাই না, শোধরাবো কোন উপলক্ষ্যে?

যদি মনে করি এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা দূর্ঘটনা, তা কিন্তু নয়। আমাদের ভেতর থেকেই একটা অংশ বেড়ে উঠে দূষিত মানসিকতা ধারণ করে। যারা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে শেখেনা। শিখে শরীর হিসেবে হিসেবে দেখতে। মানুষের মন বা মেধা এদের আকর্ষণ করেনা। আকর্ষন করে শরীর। এদের সমস্ত ইন্দ্রিয় ব্যবহৃত হয় শরীর বৃত্তিক কাজে, কোন মানবিক অর্জনে নয়।

সামাজিক বোধের যে ধারণা, একে অন্যকে শ্রদ্ধা করা, ভালোবাসার যে চিরন্তন প্রক্রিয়া, তা যেন তাদের চর্চার মধ্যে নাই। আবারো বলি এরা কিন্তু উড়ে আসা কেউ নয়। এরা কিন্তু আমরাই। আমাদের ভেতরেই এরা। নিজেদের এই অংশকে আমরা যতদিন চিনতে না পারবো, এই অংশের অন্যায়ে অনুতপ্ত না হবো। ততদিন কিন্তু সংকট চলতেই থাকবে। আমাদেরই মুখোশের আড়ালের আরেকটা মুখ সুযোগ পেলেই হামলে পড়বে।

বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি এদের কোন সন্মানবোধ নেই। সন্মান বোধ নেই আমাদের সভ্যতা বা সংস্কৃতির প্রতি। দায় কিন্তু কারো একার নয়। দায় ভার আমাদেরও। কিছু আফ্রিকান বন্ধুদের কাছে ওদের সমাজ সংস্কৃতির গল্প শুনে আসছি গত প্রায় ৮/১০ বছর। এবং যেটা বুঝেছি তা হলো একেবারে ‘বর্ন ফ্রি’ স্টাইল জীবন যাপনে অভ্যস্থ আফ্রিকানরা সরাসরি সেই জীবন থেকে চলে গিয়েছিলো কলোনিয়াজমে। অর্থাৎ বর্ন ফ্রি থেকে পশ্চিমা আধুনিকতা। মাঝখানে কোন প্রস্তুতির সময় ছিলনা। এর ফলাফল তুলনামূলক উন্মুক্ত জীবন ব্যবস্থা। এমনকি পশ্চিমা আধুনিকতাতেও হার মানায় আফ্রিকানদের উন্মুক্ততা, শরীর কেন্দ্রীক সামাজিকতা। অথচ আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য হাজার বছরের। পশ্চিমা কলোনিয়াজম সেই অর্থে আমাদের সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আনতে পারেনি। দেশ বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ মধ্যবিত্ত সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে লম্বা সময়। কিন্তু ৯০ পরবর্তী মুক্তবাজার, মুক্ত আকাশের যুগে আমাদের সুযোগ হয়েছে অনেক দেখার, অনেক জানার। তার মধ্যেই কোনটা নেব কোনটা নেবনা এই বোধটা জাগানোর দায়িত্ব ছিল কিন্তু আমাদেরই। গড্ডালিকায় ভেসে যায় আমাদেরই ভাই ব্রাদার। আর আমরা যারা ভদ্রলোক, হাজার বছরের সংস্কৃতির তথাকথিত ধারক বাহক তারা শুধু ছি ছি করি। থু থু ছুঁড়ি। ছুঁড়ি কিন্তু ওই আকাশেই। নিজের থুথুকে বৃষ্টি বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা না করে নিজেদেরই গোকুলে বেড়ে ওঠা এই দ্বিপদদের শোধরানোর দায়টা সরাসরি নেবার বরং সময় এসেছে।
http://www.priyo.com/blog/2015/04/18/143380-আমাদেরই-‘গোকুলে’-বাড়িছে-তারা
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×