somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকম্প : ভালো আছি, ভালো নাই

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনটা দারুন সুন্দর ছিল। ছুটির সকাল, মেঘলা আকাশ, ঝিরঝির বৃষ্টি। অনেকটাই নিস্পলক মেঘলা দিনে রামধনু খোঁজার মতোই একটা ভালোলাগার দিন। একটু আলস্য, একটু খুঁটখাঁট। হয়তো এভাবেই কাটছিল বেশিরভাগ মানুষের শনিবার সকাল। এরপর সেই দুলুনি। প্রথমে মৃদু, একটু থেমে আবার শুরু। এরপর থেমে গিয়ে আবার শুরু টানা ঝাঁকুনি। মুহূর্তেই আতঙ্ক। কিছুক্ষণ পর আবার আফটার শক। মৃদু কম্পন। এরই সঙ্গে কিন্তু পাল্টে গেল পুরো দিনটার চিত্র। সুন্দরের জায়গা নিল আতঙ্ক। নিউজ চ্যানেলে একের পর এক ভূমিকম্পের খরব। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ।

ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিস্কার হলো উৎপত্তিস্থল নেপাল এবং বেশ বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটা। আমাদের কিছু সহকর্মী, বন্ধু আছে নেপালে। প্রায় একটানা সবাই অফলাইন। টেলিফোন আনরিচেবল। ভয় হয়, বাড়ে উৎকন্ঠা। প্রায় ঘন্টা খানেক পর একজনের টেক্সট আসে আমি ঠিক আছি, অন্যদের খবর নিচ্ছি। ব্যস এই পর্যন্তই। অন্যদের অনেকেরই এখনও কোন খবর জানিনা। কিন্তু বাড়ছে উৎকন্ঠা। প্রতি সেকেন্ডে ডেথ টোলের আপডেট দেখছি আর উৎকন্ঠিত হচ্ছি। উৎকন্ঠিত হচ্ছি নেপালী বন্ধুদের জন্য, নেপালের জন্য। উৎকন্ঠিত হচ্ছি আমাদের জন্যও, বাংলাদেশের জন্যও।

আজকে যে ভূমিকম্প হলো উৎপত্তিস্থলে এর মাত্রা রিকটার স্কেলে ৭.৯। বৈজ্ঞানিক হিসেবে উৎপত্তিস্থল থেকে প্রতি কিলোমিটার দূরত্বে .১৫ মাত্রা কমতে থাকে। সে হিসেবে বাংলাদেশে কমবেশি ৩.৫ থেকে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে দেখছি আমাদের দেশের নিউজ আপডেটে বলা হচ্ছে ৭.৫ অথবা কখনো ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এতে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এমনিতেই বিশেষজ্ঞরা বলেন ভূমিকম্পের মাত্রা একটি আপেক্ষিক বিষয়। ক্ষয়ক্ষতির কম বেশি নির্ভর করে আসলে কম্পনের ডিউরেশনের উপর। যদি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় এবং এক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, তাতে যে ক্ষতি হবে তার চেয়ে কম মাত্রার কম্পন এক মিনিট স্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি হবে।

সন্দেহ নেই আজকের ভূমিকম্পের স্থায়ীত্ব ছিল দীর্ঘক্ষণ। স্থায়ীত্বের বিবেচনায় এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো একটা ঘটনা। কিন্তু স্কেলের মাপে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প। এখন সমস্যাটা যা হচ্ছে, তা হলো - যেহেতু আমরা এখন পর্যন্ত কোন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিবৃতি পাইনি। তাই ধরেই নিচ্ছি বাংলাদেশ ও নেপালে বুঝি একই মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। নেপালে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে, আর যেকোন কারণেই হোক আমরা হয়তো বেশি দুর্যোগ প্রতিরোধক অবস্থায় আছি এজন্য আমাদের কম ক্ষতি হয়েছে। এই ভুলটা ভাঙাতে হবে। আপাততঃ নিজেরা ভালো অবস্থানে আছি, ভাবার কোন সুযোগ নাই। আমাদের জানতে হবে মৃদু, মাঝারি না তীব্র কোন ধরণের ভূমিকম্প হয়েছে। এটাও বুঝতে হবে কোন ধরণের ভূমিকম্পে আমাদের কি পরিমান ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা সবার জানতে হবে, ভূমিকম্পের চেয়ে ভূমিকম্পের আফটার শকটা বেশি আতঙ্কের।

ইতোমধ্যেই ওয়ার্ল্ড আর্থকুয়াক স্টাটিসটিকাল ডাটা তাদের আগামী ৪৮ ঘন্টার ভূমিকম্পের পূর্বাভাসে নেপাল অঞ্চলে আরেকটি ভূমিকম্প হওয়ার মারাত্মক সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো স্পেকট্রাম, ফিনিক্স ভবন, রানা প্লাজা, কয়েকদিন আগে কমলাপুরের পাইপে আটকে পড়া শিশু বা হালের খিঁলগা ঝিলপাড় বারে বারে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সামর্থ্য! আমরা প্রতিবার দেখি, হোঁচট খাই কিন্তু হাঁটতে শিখিনা। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৯৭০ এর তুলনায় কমিয়ে আনা গেছে বলে আমরা দাবি করি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা যথেষ্ট এগিয়ে গেছি। মূলতঃ জরুরী সতর্কিকরণ এবং পূর্বাভাষ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কারণেই এ অর্জন। আসলে অকস্মাৎ একটা বিপদ ঘটে গেলে বোঝা যায় আমাদের হাতুড়ি বাটাল প্রযুক্তিই এখনও সম্বল। সুতরাং ঘটনা ঘটে গেলে যেহেতু আমরা অসহায়, তাই ঘটার আগে অন্ততঃ যারা দায়িত্বে আছেন তারা একটু নড়েচড়ে বসুন। মানুষকে সতর্ক করুন। এরই সঙ্গে ভূমিকম্প হলে কি করতে হবে তার একটা সতর্কতামূলক বৈজ্ঞানিক প্রচারণা চালানো শুরু হোক এখন থেকেই। না হলে আমরা কিন্তু অনেকেই জানিনা কি করতে হবে, কি করবো। গ্যাসের সুইচ অফ করতে হবে। ছোটাছুটি না করে ঘরে তুলনামূলক নিরপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে। আফটার শকের প্রস্ততি হিসেবে প্রথম বার কম্পন থামার পর কী করতে হবে। সব বিষয়ে আমরা কিন্তু ব্যাপক অন্ধকারে আছি। অন্ধকারটা যেন আর না বাড়ে। দোহাই লাগে যারা দায়িত্বে আছেন বা ক্ষমতায় একটু নড়েচড়ে বসুন।

- See more at: Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×