somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গঃ বাবরী মসজিদ

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতের সুপ্রীম কোর্ট আজ বাবরী মসজিদ মামলার রায় দিয়েছে।রায়টা ঐতিহাসিক কিন্তু কন্ট্রাডিক্টরি। রায়ে একদিকে বলা হয়েছে ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ভেঙে ফেলাটা বেআইনী ছিল আবার অন্যদিকে বাবরী মসজিদের স্থানে হিন্দুদেরকে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে,আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অনুসন্ধানে জানা গেছে যে বাবরী মসজিদের নিচে কিছু একটার কাঠামোর সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু সেটা ইসলামী স্থাপত্য নিদর্শন নয় আবার হিন্দু স্থাপত্য নিদর্শনও নয়। আদালত এটা কাদের স্থাপত্য তা পরিস্কার না করে সে জায়গা হিন্দুদের দিয়ে দিল। এখন ইতিহাসের অনুগত মানুষেরা যদি বলে, আদি শঙ্করাচার্যের নেতৃত্বে ভারতবর্ষে যে ব্যাপক বৌদ্ধ গণহত্যা হয়েছিল সে সময় বৌদ্ধ মন্দিরগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল কিংবা সেগুলির আকৃতি পরিবর্তন করা হয়েছিল। কাজেই বাবরী মসজিদের নিচে যে কাঠামো পাওয়া গেছে তা বৌদ্ধ মন্দিরের কাঠামো হতে পারে এবং সে জায়গা বৌদ্ধদের প্রদান করে পরিবর্তিত বা ধ্বংসকৃত বৌদ্ধমঠ আবার নির্মান করা হোক, তবে কি সে দাবি অন্যায় হবে?
(উল্লেখ্য বোধগয়ার মহাবোধি বিহারকে জোর করে শিব মন্দিরে পরিণত করা হয়েছে কিনা – তা নিয়ে বাদানুবাদ আজও চলছে। কুশিনগরের বুদ্ধের স্তুপ-প্যাগোডাকে রমহর ভবানী নামের এক অখ্যাত হিন্দু দেবতার মন্দিরে পরিবর্তিত করা হয়। জানা যায় যে আদি শঙ্কর অধিকৃত বৌদ্ধ আশ্রমের জায়গাতে হিন্দু শ্রীঙ্গেরী মঠ বানিয়েছিলেন। অযোধ্যার অনেক হিন্দু তীর্থস্থান, যেমন সবরীমালা, বদ্রীনাথ কিংবা পুরীর মত প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ্য মন্দির আদতে একসময় ছিল বৌদ্ধ মন্দির)

যাই হোক বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ মানুষ বর্তমান মোদি শাসিত সাম্প্রদায়িক ভারতের আদালত থেকে মোটামুটিভাবে যে রায় আসার ধারনা কিরেছিল তাই হয়েছে। এই রায় ভারতের জন্য শুভ হলো না অশুভ হল তা ভবিষ্যতই বলে দিবে। তবে এই রায়ের ফলে ভারতে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক উগ্রতার ডানায় যে আরো নতুন পালক গজালো এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। আজকের রায়ে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যতে শিবসেনার কর্মীরা যে ভারতের অন্য অঞ্চলে অযোধ্যার ন্যাক্কারজনক ঘটনার পূণরাবৃত্তি ঘটাবেনা তা বলা যায় না। ভারতের আদালত চাইলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভারতের স্থিতিশীলতার স্বার্থে নির্লিপ্ত রায় দিয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে সাম্প্রদায়িক উম্মাদনাকে নিরুৎসাহিত করে একটা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের প্রতি সুবিচার করতে পারতো। যাই হোক ভারতের সরকার ও জনগন বুঝবে তারা একজন চা বিক্রেতার নিউরনে ভর করে তাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়।
অপরদিকে উপমহাদেশে একিসময়ে আরো একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক কালের চরম উত্তেজনা ও অস্থীরতার মধ্যেই ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ভারতের শিখদের জন্য পাকিস্থানে অবস্থিত, শিখদের ধর্ম গুরু নানকশাহির মাজার গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে প্রবেশের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এখন বিনা ভিসা ও বিনা বাঁধায় ভারতীয় শিখরা তাদের তীর্থে গমন করতে পারবেন, এতদিন যা তারা সীমান্তের ওপার দাঁড়িয়ে দূরবীনের সাহায্যে দেখতেন। এটি একটি চমৎকার রাজনৈতিক ও অসাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্বান্তের আউটকাম ব্যাপক। এই সিদ্ধান্ত একদিকে পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য যেমন কল্যানকর তেমনি অপরদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য দৃষ্টান্ত। অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর ইস্যুতে কাশ্মিরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল ভারতীয় শিখেরা। ইমরান খানের এই সিদ্ধান্ত, কাশ্মীর কেন্দ্রীক শিখদের অবস্থানের জন্য ভারতীয় শিখদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রীতি উপহার হিসেবে ধরা যায়। আবার শিখদের খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থনের ইঙ্গিতও বহন করে। যাই হোক ইমরান খানের সিদ্ধান্তের আফটারম্যথ কি হবে তা ভবিষ্যতই বলে দিবে। তবে অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব গড়ার দৃষ্টিকোন থেকে আপাতত এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।

একটা বিষয় বলে লেখাটা শেষ করব, ভারতীয় ও পশ্চিমা মিড়িয়া এবং কিছু ইসলামোফোবিক ব্যক্তি ও সংস্থা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে যতই সাম্প্রদায়িক সাম্প্রদায়িক বলুক বাস্তবে কিন্তু এই দুই দেশের জনগন কখনোই সলিডভাবে কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি বা দলকে ক্ষমতায় বসায়নি। অপরদিকে ধর্ম নিরপেক্ষ বলে যে ভারতকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় সে ভারতের জনগন বিজেপির মতো একটা নগ্ন সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বারবার ক্ষমতায় বসিয়েছে। আসল সত্যটা এখানেই লুকিয়ে।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×