কিছু অপ্রাসাংগিক কথা দিয়ে শুরু করি। একদম ছোট থেকে আমি নিজের হাতে ভাত খেতে চাইতাম না (অভ্যাসটা এখনো রয়ে গেছে)। আর এই নিয়ে বাবার কি রাগ, মা কেনো আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে? বাবার একটায় অভিযোগ আমি পরনির্ভরশীল হয়ে পরবো। আর বাবা আমার চাইতেন আমি যাতে জীবনের প্রতিটি ধাপে সাবলম্বী হতে পারি। তখন ছোট বলে এই ব্যাপার বুঝতাম না, এখন অনেক বড় হয়েছি। অনেক কিছুই বুঝি, অনেক কিছুই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে শুধু বাবার সাথে আমার দূরত্ব কমেনি। আজকে অনেকদিন পরে একটা মুভি দেখার পর মনে হলো ঈশ আমার বাবা যদি এমন হতেন???
মুভিটির নাম John Q. আমার খুব পছন্দের অভিনেতা Danzel Washington এর অভিনীত এই মুভিতে তার রোল হচ্ছে একজন সন্তান সচেতন বাবার। John Quincy Archibald আর Denise Archibald এর একমাত্র সন্তানের নাম Mike Archibald. বড় হয়ে তার ব্যায়ামাবীর হওয়ার স্বপ্ন। একদিন বেসবল খেলতে গিয়ে দৌড়ানোর সময়ে মুখ থুবরে পড়ে Mike.অভাবে জর্জরিত John কিছু বুঝে উঠার আগেই শুনতে পান তার ছেলের জন্ম থেকেই হার্ট স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুন বড়। আর হার্ট অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে গিয়ে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা ছাড়া অন্য কোন রাস্তা খোলা নেই। John ইন্সুরেন্স ক্লেইম করতে গিয়ে খবর পান যে তার পরিবারের জন্যে যে ইন্সুরেন্স আছে সেইটা দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়। যেইখানে Mike এর চিকিৎসার জন্যে দরকার $250,000 সেখানে John এর ইন্সুরেন্স কাভার করে শুধুমাত্র $20,000. John এর সর্বাত্মক চেষ্টার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কোন সাহায্য করতে তো অস্বীকার করেই উলটা Mike কে হাসপাতাল থেকে জোর করে রিলিস করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।উপায়ন্তু না দেখে John হাসপাতালের ডাক্তার নার্স সহ কিছু সাধারণ রোগীকে জিম্মি করে নেয় অস্ত্রে মুখে। সন্তানের জন্যে নিজের হার্ট পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত John কি শেষ পর্যন্ত পারে Mike কে বাচাতে?
পিতা পুত্রের মধুর সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি আছে। কারো কাছে এইটা হয়তো খুব একটা ভালো নাও লাগতে পারে, তবে কিছু অসাধারণ মূহুর্ত আছে যা আপনাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে ডায়লগ আরো একটু ভালো হতে পারতো, কিছু কিছু জায়গায় ডায়লগ বেশ দুর্বল মনে হয়েছে। এছাড়া স্ক্রিপ্ট, ডিরেকশান,পিকচারায়জেশান, আমার কাছে সব-ই ভালো লেগেছে। মুভির টেকনিকাল ব্যাপারগুলো আমি ভালো বুঝি না। ঐগুলো আমি আপনাদের সবার উপর ছেড়ে দিলাম।
আরেকটু অপ্রাসাংগিক কথা বলে শেষ করি, একটা সময় পর্যন্ত আমার মনে হত আমার বাবা আমাকে ভালোবাসে না, কিন্তু একদিন আমি বেহুশ হয়ে যাওয়া পরে যখন আমার হুশ আসে তখন দেখতে পায় আমার বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদছে। সেদিন প্রথম বুঝতে পারলাম ভালোবাসার কথা সবসময় মুখ ফুটে বলতে হয় না, কিছুটা অনুভবেও বুঝে নিতে হয়। একিভাবে আমার মনে হত আমি আমার বাবাকে একদম ভালোবাসি না। কিন্তু চিকিৎসার জন্যে যখন আমার বাবা ইন্ডিয়া গেলো তখন হঠাৎ একদিন রাস্তা দিয়ে হেটে আসার সময় মোটরসাইকেলের হর্ন শুনে মনে হলো আমার বাবার বাইক। পরক্ষণেই আমার মনটা ভারী হয়ে উঠে এই ভেবে যে না জানি আমার বাবা কেমন আছে? সম্পর্ক সে যতই তিক্ত হোক তাকে সুযোগ দেওয়া উচিত। হয়তো আমরা বাপ বেটার সম্পর্ক বন্ধু মত হয়ে উঠেনি কখনোই কিন্তু তার মানে এইটা কিন্তু কখনোই না যে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি না। হয়তো বুকে জড়িয়ে ধরে কখনো বাবাকে বলতে পারবও না বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি, কিন্তু রাতের আধারে বালিশে ভেজা আমার চোখের জল জানে আমি আমার বাবাকে কতখানি ভালোবাসি।
শেষ করার আগে এইটুকু বলতে চাই পৃথিবীর সকল পিতা পুত্রের সম্পর্ক হোক বন্ধু চেয়েও মধুর।
বিঃদ্রঃ আমার এই রিভিউ অনেকের কাছে হয়তো সত্যিকার অর্থে রিভিউ বলতে যা বোঝায় তা মনে নাও হতে পারে, আসলে আমি সেইভাবে লিখতেও চাইনি। আমার উদ্দেশ্য পিতা পুত্রের সম্পর্ককে আমাদের নিজেদের মত করে দেখাতে। এই মুভির কাজটি অনেকাংশে সঝজ করে দিলো। ভালো থাকেন সবাই, সবসময়।