somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিনা জাহান প্রিয়া
আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোর গঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

ছোট গল্পঃ- অরণ্যে বর্ষার ফুল ।।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাকতালীয় বলা চলে । ট্রেনে পাশাপাশি সিট পড়ে গেল বর্ষা আর অরণ্যের । অরন্য কলেজের সেই বিশাল বরফের মতো শীতল একটি ছেলে । বর্ষা মানেই কলেজের নতুন ভর্তি হওয়া সব চেয়ে সুন্দর মেয়েটা ।
তাদের দেখা আজ ঠিক আঠারো বছর পর । বর্ষা কিছুটা মোটা হয়েছে আর চুল গুলো হয়েছে আধুনিক । অরন্য কে দেখলে চেনাই যাবে না- তাল পাতার মতো ছেলেটা এখন বেশ অন্য রকম ।
বর্ষার কপালে সিঁদুর ছলমল করছে । অরন্যের কপালে নামাজের দাগ লেগে আছে । মুখে হালকা দাড়ি ।
এখন কিন্তু শরত কাল । একটু পড়েই ট্রেন ছাড়বে । অরন্য একটা পানির বোতল কিনে নিল । মনে হয় এখনো বর্ষা কে ভাল করে খেয়াল করে নেই অরন্য , নাকি বর্ষা চিন্তেই পাড়ছে না অরন্য কে ? বর্ষার মেয়ে প্রজ্ঞা পাশে বসা আর তার স্বামী অরণ্যের পাশে । অরন্য সেই আগের মতো চুপচাপ চোখের চশমা টা পরিষ্কার করে পত্রিকা পড়তে লাগলো । খুব ভোরের ট্রেন যাত্রী আছে সবাই যেন ঘুম ঘুম চোখে । বাহিরে কিছু না বলেই বৃষ্টি নামতে শুরু করে দিল । এই প্রথম বর্ষা বলতে লাগলো ভাই জানালার কাচটা নামান । কষ্ট শুনেই অরন্য তাকালো । সেই কষ্ট সেই চোখ সেই মানুষ । বর্ষা তাকালো অরণ্যের দিকে । কেউ কোন কথা বলছে না। অপলকে শুধু চেয়ে থাকা । বৃষ্টির পানির কথা তারা যেন ভুলে গেছে । অরন্য বলছে আপনার জানালা আগে লাগান । অরন্য তার জানালা লাগিয়ে ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে মাথা টা মুছে নিল । বেশ বড় একটা রুমাল । অবাক হয়ে দেখছে বর্ষা - বিশ বছরে আজো আগলে রেখেছে এই রুমাল । শুধু মাথাটা হালকা করে মুছে একবার অরন্য দেখল বর্ষা কে চেয়ে আর একবার রুমাল ।
বর্ষার মেয়ে প্রজ্ঞা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে আর অরণ্যের মুখে দিকে তাকিয়ে একবার দেখছে । প্রজ্ঞা সাইকোলজিতে এবার ভর্তি হয়েছে বিশ্ব বিদ্যালয়ে ।
অরন্য কিছু না বলেই চুপ করে জানালায় চোখ ফিরিয়ে নিল ।
ট্রেন যাচ্ছে শহর থেকে তার প্রিয় মফস্বল শরের দিকে । মাত্র চার ঘণ্টার যাত্রা । প্রজ্ঞার বাবা বর্ষার কে বলল - কি হল হটাৎ এত চুপচাপ হয়ে গেলে যে ।
প্রজ্ঞা একটু মজা করে বলল আচ্ছা আব্বু তুমি কি এটা বাসা পেয়েছ নাকি যে মা - রাগ সংগীত গাইতে থাকবে ।
মেয়ের কথা শুনে প্রজ্ঞা বলল - কথা বললেও দোষ না বললেও দোষ । হয়েছ তো বাবার মতো পণ্ডিত । ভাজা মাছ উল্টে খেতে যান না।
অরন্য শুনে যাচ্ছে মা মেয়ের কথা - আর তাকিয়ে আছে বাহিরে । বৃষ্টি শেষ । শরত কালের বৃষ্টি এই আছে এই নাই ।
প্রজ্ঞা তার মাকে বলল মা অনেক দিন পর আজ তোমাকে অন্য রকম লাগছে । মনে হচ্ছে তুমি কিছু পেয়েছ কিন্তু সেটা তোমার না। এমন হতে পারে যা তুমি দেখছ তা ভুল ।
মেয়েকে লক্ষ্য করে বর্ষা বলল - সব জায়গায় মনো বিজ্ঞানী দেখতে এসো না।
নাও এলারজির একটা মেডিসিন খেয়ে নাও । না হয় বাতাসে আবার শ্বাস কষ্ট হবে । প্রজ্ঞার বাবা বলতে লাগলো আমাদের জাতের মধ্যে কারো শ্বাস কষ্ট নাই - মেয়েটা যে কোথায় পেল এই রোগ ।
প্রজ্ঞা একটু হেসে বলল বাবা শুন তোমার জাতের মধ্যে কারো টাক নাই কিন্তু তুমি দিনে দিনে টাক হয়ে যাচ্ছ ।
বাবা মেয়ে আর বর্ষা একেই সাথে হেসে দেয় ।
অরণ্যের চোখে ভাসতে থাকে বর্ষার কথা । হ্যা এই সেই বর্ষা যাকে কলেজে সে সব চাইতে ভয় পেত । সবাই বর্ষা কে দেখার জন্য যখন চেয়ে থাকত অরন্য তখন অন্য দিকে তাকিয়ে থাকত । অরন্য ভাবছে কথা না বলাই ভাল আজ যদি কোন কারনে বর্ষার চোখে জল চলে আসে তাহলে সে স্বামী সন্তানের কাছে লজ্জা পাবে । জীবনে যা চলে যাওয়ার তা সামনে আনা ঠিক না।
বর্ষা ভাবছে কি বলব আজ অরন্যকে কিছু বলতে গেলে যদি ওর চোখে জল আসে তবে আমি যে চিৎকার দিব ।
ট্রেন যাচ্ছে সোনালী রোদ চার পাশ আলোকিত করেছে । অরন্য তার পত্রিকা রেখে এক পলক বর্ষা আর প্রজ্ঞা কে দেখে নিল ।
প্রজ্ঞার বাবা দিকে অরন্য তাকাতে ভদ্রলোক বলল আরে দাদা কোথায় যাবেন ? অরন্য একটু মজা করে বলল বাবার কবর দেখতে ।
অহ কোথায় আপনার বাবার কবর ? জি আমাদের গ্রামে ?
-- আরে মসাই সে গ্রাম কোথায় ?
অরন্য বলল সরি আমি একটু মজা করছিলাম । আমার গ্রামের বাড়ী কাজলা দীঘি ।
-- আরে আমারা তো কাজলা দিঘীই যাচ্ছে । তা কোন বাড়ী আপনাদের ? আপনি তো দেখি খুব মজা করে কথা বলেন ।আমার মেয়েও খুব মজা করে কথা বলে ।
অরন্য বলল তাহলে তো খুবেই ভাল আপনাদের মন খারাপ হবে না।
অরণ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল প্রজ্ঞার । এই হল আমার মেয়ে । ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে এবার ভর্তি হল । আমরা অকে ভর্তি করাতেই এসেছিলাম । ভর্তি শেষ । মেয়ে বলল সে তার নানা বাড়ী যাবে তাই ট্রেনে উঠা । আমার বাড়ী নেত্রকোনা শহরে ।
অরন্য বুঝতে পারলো বর্ষা একটা ভাল বর পেয়েছে । বর্ষা বার বার দেখছিল অরন্য কে । সেই আগের মতো শান্ত দুষ্ট আর কোমল তার ব্যবহার । বার বার ইচ্ছা করছিল অরণ্যের সাথে একটু কথা বলতে । কিন্তু চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই দিনের কথা । অরন্য বৃষ্টিতে ভিজে বর্ষা কে বরন করে নিতে ছুটে আসে বর্ষার বাড়িতে । ধুম বৃষ্টির মধ্যে বর্ষার বিয়ের হারমনি বাচতে ছিল ।
বর্ষা একটা হলুদ কাপড় পড়ে লাল পাররের তার সামনে এসে বলল - অরন্য দেখ তুমি চলে যাও । আমি যেতে পাড়ব না । কারন আমি চলে গেলে আমার বাবা ফাঁসি নিবে । তার জাত যাবে । তুমিই বল বাবা এক রুখা মানুষ । তাই করবে । আমার মায়ের বিয়ে সময় সে বিষ খেয়েছিল ।
অরন্য ভাবতেই পারে নাই যে বর্ষা তার সাথে আসবে না। এত প্রেম এত মায়া এত মমতা আজ সে সবেই ভুলে গেল । অরন্য আর অনার্স দেয়া হল না। গ্রামের মানুষ দেখলে অরন্যে কে নিয়ে তামাশা করে ।
সে রাতেই সে বুঝে গেছে আজ বর্ষার আকাশ তার মাথায় ভেঙে পড়েছে ।
এই তো সেই বর্ষা যে আমাকে ঠকিয়েছে । তাতে কি সে ভাল আছে এটাই কম কিসের ।
অরন্য আর কিছুই ভাবতে চায় না। টিটি এসে টিকেট চেক করছে । টিটি মানে আমজাত হোসেন খান । বর্ষা আর অরণ্যের এক সময় প্রিয় বন্ধু ।
অরন্য কিছু বলার আগে আমজাত বলল এ দেখি মেঘ না চাইতে অরণ্যের মাঝে বর্ষার বন্যা । অরন্য বলল যা করতে আসছিস তাই কর । আর পারলে চা খাওয়াও খান । বর্ষা বলল আমজাত তুমি ভাল আছ । আমজাত বলল সবাই এক সাথে দারুন মজা । বর্ষা বলল তিনি আমার স্বামী ইনি আমার কন্যা ।
আমজাত বুঝে গেল এখনো কেউ কারো সাথে কথা বলে নাই । আমজাত মজা করে বলল আচ্ছা বর্ষা পরিচয় করিয়ে দেই চির কুমার অরন্য । কোন কালে কাকে ভালবেসে আজো বিয়ে করে নাই । কোন ভাল পাত্রী পেলে বল ।
বর্ষার স্বামী বলে বলেন কি এখনো বিয়ে করেন নাই । অরন্য বলল না ভাই বিয়ে করেছিলাম বউ পালিয়ে গেছে । এই কথা শুনা মাত্র বর্ষার চেহারা কালো হয়ে গেছে ।
মনে মনে বলছে হ্যা অরন্য সত্য বলছে । আমি তো বিয়ে করেছিলাম অরন্য কে । আমার ধর্ম মতে আর অরণ্যের ধর্ম মতে । আমরা কথা দিয়েছিলাম কেউ কারো ধর্ম বাদ দিব না। হ্যা আমিই বেঈমানি করেছি আজ অরন্য বলবে কিন্তু সেই দিন অরণ্যের মা । আমাকে বলেছিল যদি অরন্য কে বিয়ে করি তাহলে তার মা বিষ খাবে কারন অরণ্যের বাবা ব্যবসায় অনেক লোকসান করে । তখন সে তার ননদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে মানুষের পাওনা পরিশোধ করে । তার বিনিময়ে অরণ্যের কাছে তাদের বড় মেয়ের বিয়ে দিবে এই প্রতিজ্ঞা করেছিল । যদি অরন্য তাকে বিয়ে করে তাহলে তাদের পরিবারের অনেক ক্ষতি হবে। বর্ষা সেই দিন অরণ্যের মায়ের কথা রেকেছিল আর সব দোষ তার বাবার কাঁদে ফেলেছিল ।
আমজাদ দুই জন কে ভাল করে দেখে অরন্য কে হালকা করে বলল শুন কত বছর হল সেই দিনের সেই বাজী আজো ধরে আছিস । মানে তোরা এখনো কথা বলিস নাই । বর্ষার স্বামী আর প্রজ্ঞা এক সাথে কি বাজী ?
আমজাত হেসে বলল সে অনেক লম্বা কাহিনী এই দুইজন তিন ঘণ্টায় কোন কথা বলেছে ।প্রজ্ঞা বলল না দেখে মনে হয় কেউ কাউকে চিনে না- তবে তাদের বাড়ী নাকি একেই গ্রামে ।
আমজাত বলল মা তুমি কথা বলাও । আমারা কলেজে পড়া অবস্তায় সবাই ফেল মেরেছি তিন বছর । আমি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি । গ্রামে গেলে তোমার মায়ের সাথে যেও আমার বাড়ী । তোমার নানা বাড়ীর চিরার নাড়ু আর নারিকেল নাড়ু আমাদের জীবনের সাথে মিশে আছে ।
অরন্য আমজাত কে বলল আচ্ছা খান রা কি সব সময় এমন মিথ্যা বলে । আমজাত বলল হ্যা বর্ষার মায়ের খবার তো আমি একা খেয়েছি রান্না ঘরে বসে আর তুমি খাও নেই ।
অরন্য বলল যা চাপাবাজ চা পাঠিয়ে দে - আর ভাল দেখে চপিস ।
বর্ষার স্বামী একবার বর্ষার দিকে একবার অরণ্যের দিকে তাকিয়ে বলল আপনারা দুই জন কি মানুষ না কি দেব দেবী ।
অরন্য বলল আমি কোন মিথ্যা বাদীর সাথে কথা বলি না। কারন অরন্য কিছু দিন পর জেনেগিয়েছিল যে তার মায়ের জন্য বর্ষা অন্য ছেলেকে বিয়ে করেছে ।
অরন্য অনেক বছর তার মায়ের সাথে কথা বলেনেই ।
প্রজ্ঞা বলল মা তুমি এত কঠিন - তুমি তোমার বন্ধুর সাথে এত বছর কথা না বলে আছ । বর্ষার চোখ দিয়ে সত্যি অঝরে জল পড়ে যাচ্ছে । কিছুই বলছে না। বর্ষা তার মেয়েকে বলল মা প্রজ্ঞা বলত তোমার বাবা আর আমি রাগ করলে কে আগে কথা বলে ।
প্রজ্ঞা বলল কেন বাবা কথা বলে ।
বর্ষা বলল হ্যা তুমিই বল কার কথা বলা উচিৎ । বর্ষার স্বামী বলল কেন তোমার মায়ের বন্ধুর ।
অরন্য বলল সরি আসলেই আমার কথা বলা উচিৎ ছিল । আমজাত চা নিয়ে চলে আসলো । সবাইকে চা হাতে দিতে লাগলো । অরন্য এক কাপ চা হাতে নিয়ে বর্ষা কে দিয়ে বলল লেডিস ফাস্ট ।
প্রজ্ঞা বলল আপনি কিন্তু আমার মাকে কাদালেন । এটা কি ঠিক ? আমার প্রথমে মনে হয়েছিল আপনারা একে অন্য কে চেনেন জানেন ,
----- অরন্য বলল প্রজ্ঞা কেন মনে হল আমারা একে অন্য কে চিনি ?
----- সেটা রহস্য । অন্যদিন বলব । কিন্তু আপনি মেয়েদের মতো ডান হাতে ঘড়ী পড়েন কেন ?
----- তার আগে বল এত মিষ্টি নাম কে রাখলো ? প্রজ্ঞা তোমার নাম । খুব সুন্দর নাম । আসলে আমার এটাও রহস্য কেন ডান হতে ঘড়ী পড়ি । আমি ও পড়ে বলব ।

--- প্রজ্ঞা বলল মায়ের পছন্দের নাম প্রজ্ঞা । ভাল নাম তনুজা রায় । আচ্ছা আপনি বিয়ে করেন নাই কেন ?
প্রজ্ঞা মা কিছু বদ অভ্যাস আছে তাই ।
----কি কি বদ অভ্যাস ?
---- সব ন্দ অভ্যাস কি মাকে বলা যায় , যেমন ধর বৃষ্টি হলে আমি ভিজতে পছন্দ করি । রাস্তায় মিষ্টির দোকান দেখলে খেতে চলে যাই । কোন ধর্ম পালন করি না।
---- আপনি কি নাস্তিক ?
---- ঠিক নাস্তিক না- বলা চলে ঈশ্বর মানি কিন্তু তার হুকুম হাকাম মানি না। নিজের মতো চলি ।
----- কোন বিষয়ে পড়েছেন ।
----- সাইকোলজি ছাত্র ছিলাম কিন্তু পাশ করা হয় নাই ।
----- কেন পাশ করা হয় নাই ?
----- আমার মা একটা মিথ্যা শুনেছিল- যারা সাইকোলজি পড়ে তারা নাকি এক সময় পাগল হয়ে যায় । মায়ের কথা রাখতে হয় তাই পড়ি নাই । আমার চাইতো না আমি যেন পাগল হয়ে যাই ।
প্রজ্ঞা বলল বাহ মজা তো । মায়ের কথা রাখা সুপুত্র তুমি ? আজ কিন্তু আমার মায়ের সাথে কথা বল । তোমার আর মায়ের কথা আমার বন্ধুদের বলব । কত শক্ত তোমাদের কি বাজী টাজী । তা কি নিয়ে বাজী ? আমাকে বলা যাবে ?
প্রজ্ঞার মা বর্ষা বলল - কিছুই না প্রজ্ঞা । বাজী ছিল কে কত দিন কথা না বলে থাকেতে পারে । যে আগে কথা বলবে সে কলেজের সবার সামনে কান ধরে ১০ বার উঠ বস করাবে ।
প্রজ্ঞার বাবা হাসতে হাসতে বলল তা তোমরা কত বছর কথা বল না-
আমজাত পাশে দাড়িয়ে বলল মাত্র আঠার বা উনিশ হবে । সবাই এক সাথে হেসে দিল ।
প্রজ্ঞা বলল যাও কারো কান ধরতে হবে না- আমি ধরে নিব তোমাদের পক্ষ থেকে ।
অরন্য ব্যাগ থেকে একটা ইনহ্যালার বের করে দুই বার বাফ নিল । প্রজ্ঞা বলল আরে তোমার ও শ্বাস কষ্ট । বা হ বাহ আমার মতো তোমার ও শ্বাস কষ্ট হয় ।
অরন্য বলল হ্যা মা জননী মাঝে মাঝে হয় । বেশী চিন্তা করলে বা ধুলা বালি থেকে হয় ।
বর্ষা চেয়ে দেখছে অরন্য কে । না তাদের মাঝে তেমন কোন কথাই হয় নাই । কেউ কাউকে হ্যালো পর্যন্ত বলল না-
ট্রেন যাচ্ছে আর সময় শেষ হচ্ছে । দূর আকাশে কালো মেঘ আবার হয়ত কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে । বর্ষা চোখের সামনে ভেসে উঠছে মাথায় সিঁদুর দেয়ার সেই দিন কোন বৃষ্টির রাতের কথা । কালী বাড়ী মন্দির থেকে বর্ষা কে এমন কোন শরতের বৃষ্টির সন্দ্যায় তার মাথায় সিঁদুর দিয়েছিল । ঠিক তার সাত দিন পর তারা নোটারী পাবলিক করে এডভোকেট তাদের বিয়ে করিয়ে দিয়েছিল ।
তার সাত দিন পর ছিল দুর্গা পূজা । যেই দিন দুর্গা জলে ডুবানো হল সেই রাত্রে কৃষ্ণা মাসী বাড়ী ঘর ছিল খালি । আরন্য বর্ষা মিশে গিয়েছিল তাদের ভালবাসার বৃষ্টির জলে । খুব ভোরে অরন্য কে বলে কেউ দেখার পালাও । জাত কুল রক্ষা কর । অরন্য দেখছিল সেই দিন বর্ষা কে এক অপূর্ব চোখে । শরীরের কাপড় ঠিক করতে করতে বর্ষা বলে ছিল ক্রিস্না মাসীর ঘর আমাদের জীবনের এক অধ্যায় হয়ে রয়ে যাবে ।
অরন্য বলেছিল তুমি যদি সত্যি সত্যি যদি মা হয়ে যাও । বর্ষা হেসে বলল আমি তো বিবাহিত । তুমি যদি মেনে না নাও তবু যদি আমার গর্ভে কোন সন্তান আসে আমি তাকে পৃথিবীর আলো দেখাব । বর্ষা যেন আজো অরণ্যের সেই ঘামের গন্ধ নিজের মধ্যে অনুভব করছে ।
একটা নীরব বাতাস যে তাদের সবাইকে শীতল করে দিয়ে গেছে । অরন্য বর্ষার মেয়েকে বলল আচ্ছা প্রজ্ঞা তোমাকে কে বেশী ভালবাসে । প্রজ্ঞা এক মিনিটে হেসেই বলে দিল আমার বাবা । আম্মু তো আমাকে সব সময় শাসনের মধ্যে রাখে । অরণ্যের চোখে ভাসতে থাকে এক অন্য রকম কল্পনা । আজ যদি বর্ষা তার হতো । তাহলে তো তার মেয়ে এত বড় হতো । বর্ষার কিছুই পাই নাই প্রজ্ঞা । না প্রজ্ঞা তার বাবার মতো হয় নাই । কি সুন্দর চুল । অরণ্যের দাদী জানের এমন চুলছিল । প্রজ্ঞা বলল এই আঙ্কেল কি ভাবছেন ?
অরন্য বলল ভাবছি তোমাকে ।
আমাকে ? অরন্য বলল হ্যা তোমাকে কারন অনেক বছর কোন বড় আয়নার সামনে দাড়াই না। ভাবছি আমার বয়স কত হল ।
প্রজ্ঞার বাবা হেসে বলল আরে ছেলে মানুষের আবার বয়স । ভাই একটা বিয়ে করেন আমারা সবাই আসব ।
অরন্য আবার বলল ভাই আমি বিবাহিত । আমার স্ত্রী এক বন্যায় হারিয়ে গেছে । তাকে খুজে পাচ্ছি না।
প্রজ্ঞা তার মাকে বলল - মা আসলেই আঙ্কেলের বউ কোন বন্যায় হারিয়ে গেছে । বর্ষা বলল হ্যা হয়ত সেই নিজেই পালিয়ে গেছে । মানুষ কে হারিয়ে গেলে খুজে পাওয়া যায় কিন্তু পালিয়ে গেলে খুজে পাওয়া যায় না।
ট্রেন তার শেষ স্টেশনে চলে আসছে ।
ব্যাগ গুছিয়ে নিল যে যার মতো । প্রজ্ঞার বাবা ট্রেন থেকে নেমে অটো নিতে গেল । প্রজ্ঞা বলল বিদায় আঙ্কেল ভাল থাকুন । মায়ের সাথে একটু কথা বলে নিন । আপনারা সেই জামানার মানুষ এত প্যাচ আপনাদের ভাল না। বিদায় আঙ্কেল । অরন্য বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে । প্লাট ফর্মে যে যার মতো চলে যাচ্ছে । বর্ষা অরন্য কে বলল প্রজ্ঞার গায়ে গন্ধটা নিয়ে যেও । তবে বুঝবে আমি তোমার গন্ধ নিয়েই বেঁচে আছি । আমাকে ক্ষমা কর অরন্য । বর্ষা চলে যাচ্ছে তার মেয়ে আর স্বামীর কাছে ।
অরন্য বোকার মতো দাড়িয়ে যায় প্লাটফর্মে । প্রজ্ঞার গন্ধ মানে ? অরন্য খুব দূরত্ব হেঁটে প্রজ্ঞার অটো রিক্সার কাছে ।
প্রজ্ঞা হাসি দিয়ে আঙ্কেল আমাদের অটো রিক্সায় উঠুন । এক সাথে কথা বলতে বলতে চলে যাব । অরন্য বলল মা একটু কাছে আস । এই শহরে আমার কিছু কাজ আছে । কাজ শেষ করে আবার আজকেই ঢাকা ফেরব । গ্রামে আমাদের আর কেউ থাকে না। প্রজ্ঞা অটো থেকে নামে । অরন্য প্রজ্ঞার হাতটা ধরে তার নাকের কাছে নিয়ে বলে বাড়ী মিষ্টি গন্ধ তোমার মা । অনেক বড় হও । বর্ষা প্রজ্ঞা আর তার স্বামী চলে যায় । যাবার সময় অরন্য বলে বর্ষা তুমি মানুষ না আসলে কোন দেবী । তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমি নিজেকে ছোট করব না । তুমি ভাল থেকে সব সময় । বর্ষার স্বামী বলল যাই হউক শেষ পর্যন্ত কথা তো হল কি বল প্রজ্ঞা মা মনি । প্রজ্ঞা বলল হ্যা বাবা ।
বর্ষার চলে যাওয়া দেখল চেয়ে অরন্য - মনের অজান্তে আজ নিজের অরণ্যের হৃদয়ে আর চোখে বর্ষা ঝরে পরছে ।
প্রজ্ঞা তাহলে তার মেয়ে । ঠিক তো সেই চোখ সেই হাসি - সেই গন্ধ এ যেন অরণ্যের এক কার্বন কপি ভিন্ন রুপে ।।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×