তাইতো সমগ্র বিশ্ব যখন করোনা কবলিত হয়ে গভীর সংকটে তখনো আমাদের লকডাউন, সাধারণ ছুটি ঘোষণা, প্রণোদনা মূলক আর্থিক ঋণ, ভর্তুকি প্রদানের ঘোষণা, হসপিটাল গুলোকে করোনা রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা, রোগী শনাক্ত করা নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে, পিপিই সরবরাহ করা, অসচ্ছল মানুষের মাঝে খাবার থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা, মানুষকে ঘরে রাখার ব্যাপারে পুলিশের সাথে সেনাবাহিনীকে সম্মিলিতভাবে কাজে যোগদান করা, সমস্তই হল কিন্তু সময় মত হলো না, দেরি হয়ে গেল l
এরকম অনেক কথা বলা যায়, যাই হোক শেষ পর্যন্ত প্রথম মেয়াদের ঘোষিত ছুটি বৃদ্ধি হবে কি হবে না এ নিয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের ঘোষণার অপেক্ষায় পিলো ছিল সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক কর্মীরা l এরমধ্যে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক এগারো তারিখ পর্যন্ত গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ রাখার অডিও বার্তা পাঠালেন গতকাল রাতে l সেটি কি দুদিন আগে পাঠাতে পারতেন না? পারতেন, অপেক্ষা করছিলেন সরকার এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় করার l সবচেয়ে অবাক লেগেছে অডিও বার্তায় তিনি বলেছেন প্রয়োজন হলে কেউ চাইলে কারখানা খোলা রাখতে পারেন l এই জিনিসটা কেমন যেন খাপছাড়া লেগেছে আমার কাছে l
হ্যাঁ মানছি গার্মেন্টস অর্থাৎ পোশাকশিল্পে কিছু বিষয় থাকে যেমন সময় মত বায়ারদের কাছ থেকে অর্ডার প্লেস করতে না পারলে কিংবা শিপমেন্ট করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে বায়ার হারানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবার ঝুঁকি থাকে l
অর্থাৎ অর্ডার না থাকলে কর্মীদেরকে বসিয়ে বেতন দেবার মত পরিস্থিতি কয়জন মালিকের আছে আর কেনই বা দিবেন?
কিন্তু যখন সারাবিশ্ব করোনা কবলিত মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়ে নানান অনিশ্চয়তা l সেখানে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে অর্ডার ঠিকমতো প্রেস হলো কিনা, শিপমেন্ট হল কিনা, এই বিষয়গুলো ভাবনার মধ্যে থাকলেও ততটা গুরুত্ব পায় না বলেই আমার মনে হয় l
কারণ মানুষের জীবনের জন্যই তো আয়-রোজগার সেই মানুষই যদি না থাকে তাদের জীবন যদি হুমকির মধ্যে থাকে সেক্ষেত্রে অর্ডার দিয়ে কি হবে!
যে প্রসঙ্গে ছিলাম সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ানো সেখানে আমরা কি লক্ষ্য করলাম সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব, অব্যবস্থাপনার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যখন সাধারণ মানুষ এই বিষয়গুলো বুঝতে পারে এরপরে একটা সমাধানের পথ তৈরি হয় l
যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সকলেরই রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, তাহলে সকলে মালিকানা ছেড়ে দিন, মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রীরা পদত্যাগ করুন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এমডি, চেয়ারম্যান স্ব-স্ব পদ থেকে সরে দাঁড়ান l
যেহেতু, সিদ্ধান্ত নেন একজন মানুষ যিনি কিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী lএই যদি হয় একটি দেশের অবস্থা, তাহলে শুধু করো না মোকাবেলা কেন জাতীয় কোন দুর্যোগ কোনো সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না l সবচেয়ে বড় কথা সমস্যাগুলো জাতির স্বাভাবিক নিয়ম-নীতির মতই থেকে যাবে l
আজ গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাহাত্তর হাজার সাতশত পঞ্চাশ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেন l
সহজ শর্তে ঋণ, চার থেকে পাঁচ পার্সেন্ট ইন্টারেস্টে l বাকিটা সরকার ভর্তুকি দেবে, যার সুবিধা সর্বস্তরের মানুষ ভোগ করবেন l
সরকার প্রধানের এমন প্রণোদনা প্যাকেজের যদি ইঙ্গিতবহ কোন বার্তা বিজিএমই থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মালিকপক্ষের জানা থাকতো, তাহলে হয়তোবা গতকাল গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে রিক্সা, ভ্যান, পিকআপ, ট্রাক সবকিছু ব্যবহার করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে সমস্ত মানুষ ঢাকায় ফিরেছেন, তাদের এই কষ্টটা করতে হতো না l
করোনা ঝুঁকি এতটা হুমকির মধ্যে পড়তো না l এই যে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত সাধারণ ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলো, এটা আগে ঘোষণা না করার যৌক্তিক কারণ সরকারের থাকলেও, অর্থাৎ লকডাউন সাধারণ ছুটি ঘোষণা যেটাই করুক বা না করুক তার প্রথম পদক্ষেপ তো সরকারকেই নিতে হয় l আর সরকারি সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বিজিএমইএ থেকে শুরু করে অন্যান্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সব সময় কেন সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকেন সেটুকু বোঝার মত সামান্য বুদ্ধি আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের আছে l
যাইহোক, যে সমস্ত শ্রমিক কর্মীরা পায়ে হেঁটে নানান উপায়ে আজকে কর্মে যোগদানের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন তাদেরকে কষ্টটা সরকার এবং বিজিএমইএ থেকে শুরু করে অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা সমন্বয় করে আরো আগেই মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারতেন l
মাঝেমধ্যে হতাশ লাগে কি করলে পরে এই জাতি রাষ্ট্রের সকল ভালো কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে l এবং রাষ্ট্র সকল নাগরিকের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে আর কতকাল অপেক্ষা
-- ধ্যান থেকে নেয়া ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫০