বেশ কিছুদিন যাবত পাসপোর্ট নিয়ে টেনশনে আছি।
একবার ইউনিয়ন পরিষদ আরেকবার উত্তরা সিটি কর্পোরেশন অফিসে ঢু দিতে হচ্ছে, ফলে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে গুচ্ছের টাকা খরচ হচ্ছে, সাথে বৃদ্ধ মা থাকাতে আমার চাইতে মায়ের কষ্ট বেশী হচ্ছে, বলা বাহুল্য মায়ের চৌষট্টি পেড়িয়েছে। আমি ভাবছিলাম যে কেনো তারা আমাকে আর মাকে নিয়ে এমন লুকোচুরি খেলছে? পাঠক ভাবতে পারেন পাসর্পোটের জন্য পাসপোর্ট অফিসে না গিয়ে ভুল জায়গায় কেনো ঘুরছি, তাই বিস্তারিতভাবে জানাচ্ছি।
বিষয়টা একটু পরিস্কার করেই বলি, আমার এবং মায়ের পাসপোর্ট আছে যা আগামী নভেম্বর ২০১৫ পূর্যন্ত মেয়াদ আছে। আমারটার মেয়াদ ২০১৭ পূর্যন্ত আছে, যেহেতু সরকার মেসিন পাঠযোগ্য পাসপোর্টের ব্যাপারে প্রচার করছে তাই মা আমাকে এই সূযোগে পাসপোর্টগুলো এমআরপি’তে পরিবর্তন করে নেওয়ার জন্য আদেশ দিলেন, আমি মার আদেশ পেয়ে অনলাইনে ফরম পূরণ করে পাঠিয়ে দিয়েছি তার আগে অবশ্য ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে তার সিরিয়াল নম্বরটা সংগ্রহ করেছি। সকল কাগজপত্র নিয়ে মাকে সহ আমরা উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে লাইনে দাড়াঁলাম, কিন্তু সেখানে জনৈক কর্মচারী আমার কাগজপত্র দেখে বলল, আপনারা খিলক্ষেতে থাকেন, খিলক্ষেতের কোনো জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে একটা প্রত্যায়নপত্র আনতে হবে, যেখানে জনপ্রতিনিধি আপনাদের চিনেন কথাটা উল্লেখ থাকতে হবে। আর বাদবাকী সবকিছু ঠিক আছে, সেইদিন কোনো কাজ না করেই মাকে নিয়ে ফিরে এলাম।
আমরা খিলক্ষেতে যে অংশে থাকি, তা নাকি কোনো ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশনের ভেতর পড়েনা...একজনতো বলেই দিলো আমাদের লেকসিটি নাকি ‘না পাকিস্হান না বাংলাদেশ’ অবস্হা যার পুরোটায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মাঝে পড়ে আছে ফাইলবন্দী, আগামী নির্বাচনে যদি এই বিষয়টি সুরাহা হয় তবেই আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধি পাবো। আমি বললাম, ‘এটা তো কোনো কথা হতে পারে না, নির্বাচিত প্রতিনিধি না আসা পূর্যন্ত সব কাজ কর্ম কি তাহলে বন্ধ থাকবে? কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানে বলে মনে হলো না। আমি অবাক হলাম।
অতঃপর স্হানীয় ওয়ার্ড অফিসে গেলাম যার নং ১৭, খিলক্ষেত সংলগ্ন অফিসে গিয়ে দেখলাম তেমন লোকজন নেই, একজন বয়স্ক ব্যাক্তি বসা তার সামনে কলেজ পড়ুয়া এক মেয়ে, কিছু লিখছেন তিনি, আমি ঢুকেই সালাম দিলাম, তিনি বসতে বললে আমি পাশে গিয়ে বসলাম। তার হাতের কাজ শেষ হলে আমি আমার কাগজ এগিয়ে দিলাম, তিনি বেশ মনোয়োগ দিয়ে পড়ছিলেন কিন্তু ঠিকানার জায়গায় এসে তিনি বললেন, এটা এখান থেকে হবে না। আমি বললাম, চাচা, তারমানে কি? চাচা মাথা নাড়ে যার অর্থ আমি পারবো না। আমি কি করবো বুঝতে পারি না, পাশে বসা মেয়েটি আমার দিকে তাকায়, বাধ্য হয়ে উঠে পড়ি, অবশেষে গতকাল একপ্রকার বিরক্ত হয়েই উত্তরা সিটি কর্পোরেশন অফিসে যাই, সেখানেও একই অবস্হা, অর্থাৎ বিষয়টি তাদের এখতিয়ারের মধ্যে নেই, আমি অতঃপর বিফল মনোরথে ফিরে আসি, মাকে বলি যে, মাগো, আমি তোমার কাজটা করতে পারলাম না। আমাকে ক্ষমা করো।
রাতে ঘুমাতে গিয়েও ভাবনাটা আমাকে বার বার প্রশ্ন করছিলো যে, সরকার ডিজিটালের নামে এইসব কি শুরু করে দিলো যে টাকা নেওয়ার পর বলবে এইটা লাগবে, ঔইটা লাগবে? তাহলে টাকা পয়সা লেনদেনের পর্বটি কেনো পরে রাখবেন না? আরও বেকুবি কথা হলো আমি চট্টগ্রামের বলে আমাকে চট্টগ্রামে গিয়ে পাসর্পোট করাতে হবে? তাহলে অনলাইন কিসের জন্য?
যে কোনো জায়গা (বাংলাদেশের ভেতরে) থেকে কেন আমার পাসপোর্ট মেসিন রিডেবল করাতে পারবো না, কেনো আমি ঢাকার খিলক্ষেতে থাকি বলে আমার বাড়ীস্হ পাসপোর্ট অফিসে আমাকে আসতে হবে? তা না করলে কেন জনপ্রতিনিধির ধারস্হ আমাকে হতে হবে? তাহলে আর অনলাইনের দরকার কি ছিলো? আশা করছি আমার পছন্দের ব্লগার যারা এক সময় ব্লগিং করেছেন বাংলা ব্লগে এবং আমাকে চিনেন/জানেন, তারা আমাকে এই বিষয়ে একটা পথ বাতলে দিবেন, আমি কখনো ঘুষ দিয়ে পাসর্পোট করতে চাই না, চাই না দালাল ধরে আমার কাজ সারতে। যারা আমাকে জানেন, তারাই হয়তো বিষয়টি বুঝবেন। আমার বিশ্বাস কেউ না কেউ নিশ্চয় এগিয়ে আসবেন। আমাকে কৃতজ্ঞ করবেন আরেকবার। ভালো হতো যদি এই পোষ্টটি কোনো সাংবাদিকের নজরে আনা যাই এবং পত্রিকায় প্রকাশ করার ব্যবস্হা করা যায়।