somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাবধান মাত্র ক'সেকেন্ড

০৭ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রচন্ড বৃস্টির সাথে ঝড়ো বাতাস। গাড়ির হেড লাইট ও ফগ লাইটের তীব্র আলোতেও একমিটার দুরের কিছু ঠাহর হচ্ছেনা। আমরা দুবন্ধু পালাক্রমে গাড়ি চালাচ্ছি। একজন স্টিরিয়াং এ বসলে অন্যজন ডিরেকশন দিচ্ছে। কোন কোন সময় গাড়ি রাস্তার ডান না বাম ঘেষে চলছে সেইটেই বুঝতে পারছি না। গাড়ি চলছে সর্ব্বোচ্চ ২০ কি.মি. বেগে। ঝড় বৃস্টির প্রকোপ বাড়লে আরো কম!
আমাদের যেন কোন অদ্ভুদ নেশায় পেয়ে বসেছে। যে করেই হোক সাত সকালে চাঁটগা গিয়ে পৌছুতে হবে। কোন বিশেষ প্রয়োজন বা কারন নেই -তবুও। এযেন জোড় করে মৃত্যুকে ডেকে আনা। ভাগ্যিস বিপরিত দিক থেকেও এমন কারো খায়েস হয়নি।
অন্য সব যানবাহন ইঞ্জিন বন্ধ করে রাস্তার পাশে গুটি সুটি মেরে বসে আছে। এদিকে হাওয়ার বেগ আর বর্ষন যেন বেড়েই চলেছে থামার কোন লক্ষন নেই। সঙ্গী বন্ধুটি ষ্টিয়ারিং হতে পেলে আমার থেকে উন্মত্ত্ব হয়ে উঠছে। সে আবার এমনিতেই চোখে একটু কম দেখে। চশমা আছে, কিন্তু সেটা এখন একটা বোঝার মত হয়ে গেছে! বাতাসে অতিরিক্ত আদ্রতার জন্য গাড়ির উইন্ডশীল্ড আর তার চশমার কাঁচ একই সাথে ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা মোছে সে আরেক সমস্যা।আমি অবশ্য যথাসাধ্য সাহায্যের চেস্টা করছি,এদিকে গাড়ির গরম হাওয়া ছেড়েছি সর্বোচ্চ গতিতে কিন্তু সেটায় কোন কাজ হচ্ছিল বলে মনে হয়না।
দু-চারটে ট্রাক ড্রাইভার বৃস্টির প্রকোপ একটু কমলেই এডভেঞ্চারের চেস্টা করছে। তেমন ক’জনের ঘাড়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলাম। ভোর চারটার দিকে বৃস্টির ধার অনেকখানি কমে গেল। বৃস্টির গতি যত কমে আসছে গাড়ির গতি তত বাড়ছে। বন্ধুর আশ্বাসে বাকিপথের দায়িত্ব ওর হাতে সপে দিয়ে সস্তির একটা হালকা শ্বাস ছেড়ে উইন্ডশিল্ডটা নামিয়ে ক্লান্ত আমি ড্রাইভিং সিটের পাশেরটায় চোখ বুজলাম। ভেজা ঠান্ডা হাওয়া যেন ঘুমকে এককাঠি সরেস করল।
হঠাৎ ওর জোড় ধাক্কায়, বিরক্তিতে চোখ মেলে চাইলাম। সে আমাকে মুখে কিছু না বলে ইঙ্গিতে রাস্তার দিকে তাকাতে বলল? ওর মুখের ভয়ঙ্কর কঠিন ভাব দেখে আমি বিনাবাক্য ব্যায়ে সরাসরি রাস্তার দিকে তাকাতেই যেন ভুমিকম্পের প্রচন্ড দুলুনিতে কেঁপে উঠলাম!
(ঘটনাটা অল্প কয়েক সেকেন্ডের) সবে ভোর হচ্ছে চারপাশে কুয়াশার একটা পাতলা আবরন ভেদ করেও অনেকটা দুর দেখা যাচ্ছে । মাত্র কয়েক'শ মিটার দুরে রাস্তার দুপাশে অনেকগুলো লোক গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে জুবুথুবু হয়ে আড্ডাদিচ্ছে।
হয়তো সেটা কোন বাজার হবে ক্রেতার আগমন বা বিক্রেতাদের তোড়জোড় এখনো শুরু হয়নি তাই পাইকাররা অতিপ্রত্যুষে রাস্তার ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর প্রতিক্ষা করছে সুর্যের ।
তাদের ঠিক মধ্যিখানে রাস্তার ফাকা জায়গাটায় দুটো অল্পবয়েসি কিশোর বিশাল একটা ট্রাক কিংবা ট্রাক্টরের টায়ার আতি ধীর মন্থর গতিতে গড়িয়ে গড়িয়ে একপাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের সমস্ত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সেই চাকাটা অন্যদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! আমাদের গাড়ি চলছিল প্রায় এক'শ তিরিশ কিলোমিটার বেগে। রাস্তা পিছল। এটুকু দুরত্ব থেকে হার্ড ব্রেক কষলে গাড়ি স্কিড করে পাশের খাদে পড়ার সম্ভাবনা বেশী তার মানে সেটা একপ্রকার আত্মহত্যাই। আর এগতিতে চাকায় মারলে সেই দু কিশোরের সাথে আমাদেরও মহাপ্রস্তানরে দারুন সম্ভাবনা। দুপাশে যেটুকু জায়গা আছে সে ফাঁক গলে বের হওয়া অসম্ভব!চারপাচটা লোককে মাড়িয়ে যেতে হবে। সেটা হবে মর্মন্তুদ! সঙ্গী চালক অনেক আগেই হর্নচেপে ধরে আছে কিন্তু সেটা দিয়ে কেন যেন ফাটা বাঁশির মত সুর বের হচ্ছে। যা ওদের কর্নকুহড়ে পৌছানোর কথা না ।
ব্যাবধান বড়জোর ২০০মিটার! আমাদের হাতে দুটো অপসন- মৃত্যু নাহলে হত্যা!! চাকাটি নিয়ে ছেলেদুটো মাঝ রাস্তা দিয়ে একটু এগিয়েছে কি হঠাৎ হর্ন বেজেউঠল বিকট আওয়াজে। ছেলেদুটো এদিকে একনজর তাকিয়েই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দুজন দুপাশে ছিটকে গেল! আশ্চর্য রাস্তার দুপাশের বাকি লোকগুলো একবার ফিরেও তাকাল না! হয়তোবা এ হর্নটা তাদের কাছে আর দশটা সাধারন হর্নের মতই মনে হয়েছে, তারা সরাক্ষন হাইড্রলকি হর্ন শুনে অভ্যাস্ত।
ইয়া আল্লাহ! রাস্তার মাঝে যেন মৃত্যদুতের মত দাড়িয়ে আছে সেই বিশাল চাকাটি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম একটু ডান ঘেষে যাব,ওখানে ফাঁকটা একটু যেন বেশী মনে হোল। শেষ দৃশ্যটা কেউই চেয়ে দেখতে চাইলাম না। শুধু একটা দড়াম করে শব্দ কানে এল সেই সঙ্গে প্রচন্ড একটা ঝাকুনি। আর কোন ওলট পালট নেই ! চোখ মেলে চাইতেই দেখি বৃস্টিতে ভেজা সেই পিচঢালা রাস্তা । ভোজবাজির মত যেন মিলিয়ে গেছে সেই ভয়াবহ দৃশ্য। আমরা একদম অক্ষত শুধু গাড়ির বামদিকের বনেটটের অনেক খানি দুমড়ে মুচড়ে গেছে, তাতে কি বেঁচে আছি এইতো ঢেড় !
গভীর রাতে হাইওয়ে দিয়ে প্রচন্ড গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবি মৃত্যুটা কত সহজ। সামান্য একটা ভুল সামান্য অসচেনতা কিংবা মনোযোগ বিচ্যুতিতে ঘটে যেতে পারে জীবনের শেষ দুর্ঘটনা! পাশ কেটে যখন দৈত্যের মত অন্য গাড়িগুলো হাই বিমের উজ্জ্ল আলোয় আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে চোখের পলকে বের হয়ে যায় তখন তার ডিজেল বা পেট্রোলের পোড়া গন্ধ কিংবা হাওয়ার ঝাপটা আমাকে স্মরন করিয়ে দেয় তুই অল্পের জন্য বেঁচে গেলি । অনেক ট্রাক আবার রাতে এক চোখ বুজে চলেন , দুর থেকে মনে হয় টেম্পো বা স্কুটার, ঠিক যখন ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলেন তখন মালুম হয় ইনি তিনি নন।
প্রতি মুহুর্তে মৃত্যু আমাদের দাবড়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে এইভাবে । কখনো জানান দিয়ে কখনো নিভৃতে নিরবে সবার অগোচরে। জীবন আর মৃত্যুর মাঝে.. ব্যাবধান মাত্র ক’সেকেন্ডের । মানুষের জীবনের সমস্তটাকে যদি আবার রিপ্লে করে দেখানো যেত তাহলে অন্য অনেক ভুলে যাওয়া অজানা কাহিনীর সাথে সে দেখতে পেত তার অগোচরে কতবার কতভাবে মৃত্যু এসে হানা দিয়ে গেছে সে এতটুকু টের পায়নি !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৫৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×