‘এ্যাই তোমার জন্মদিন কবে?’ আহ্লাদী কন্ঠে আমার নব্য প্রেমিকার প্রশ্ন।
‘কেন? জন্মদিন জেনে কি হবে?’ আমি অবাক হওয়ার ভান করলাম।
‘বা-রে !এমনিতেই। প্লিজ বলোনা?’
‘তোমারটা কবে?’ প্রতিউত্তরে নিজেরটা না বলে উল্টো তাকেই সে প্রশ্ন করলাম।
‘আমি তোমাকে প্রথম জিজ্ঞেস করেছি। তোমারটা আগে বল?’ তার কন্ঠে অভিমানের স্পস্ট আভাস।
নতুন নতুন প্রেম বেশী প্যাচালে বিপদ হতে পারে! অগত্যা যুদ্ধের ডঙ্কা বাজার আগেই রণে ভঙ্গ দিলাম।
‘২৪শে জুলাই। এখন তোমারটা বল?’
‘১০ই আগস্ট।-এই জানো আমি না কারো জন্মদিন মনে রাখতে পারি না!’ লাজুক ভঙ্গীতে সে বলল।
‘তাই! তাহলে নিজেরটা মনে রেখেছ ক্যামনে?’
কৃত্তিম রাগত ভঙ্গীতে আমার বাহুতে মৃদু আঘাত হেনে বলল,‘যাঃ! কিযে বল- নিজের জন্মদিন কেউ ভোলে!’
‘সেদিন যে বললে আমি তোমারই অস্তিত্বের ভিন্ন রুপ ! তাহলে নিশ্চয়ই এখন থেকে নিজেরটা না ভুললে আমারটাও ভুলবে না।’ সপ্রশ্ন দৃস্টিতে তার দিকে তাকালাম।
সে আরেকটু কাছ ঘেষে মাথাটা আমার কাধের উপর এলিয়ে দিয়ে দারুন রোমান্টিক কন্ঠে বলল,
‘কি’যে বলো জা-ন! দেখো তোমারটা আমি ঠিক ঠিক মনে রাখব।’
আমিও কম যাই কিসে ডান হাত দিয়ে তার কাধটাকে বেস্টন করে তাকে আরেকটু নিজের দিকে আকর্ষন করে কর্কশ আঙ্গুলগুলোর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে মৃদু চাপ দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম তার কথায় আমি যার পর নাই পুলকিত! এ-আবেগের ভাষা কন্ঠ নিঃসৃত শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়!
এভাবে কেটে গেল আরো অনেক মুহুর্ত ঘন্টা-দিন-মাস।... আর সপ্তাখানেক পরেই আমার জন্মদিন। শিহরন উত্তেজনায় ঠিকমতো ঘুম আসেনা!দিনে সময় পাইনা তাই রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আধো ঘুমে জাগরনে কত কি সপ্নে দেখি! এ সপ্নের মজা হোল যখন তখন নিজের ইচ্ছেমত এগুলো পরিবর্তন করা যায়।তাই সুযোগ পেলেই পুরাতন গুলোর সাথে হয় নতুন কিছু জুড়ে দেই নয়তোবা একদম ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে সাজাই!
ভোরে উঠে আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখি চোখের নিচে কালচে আভা! সারাদিন ঘুমের ঘোরে ঢলে ঢলে পড়ি!
...কি আশ্চর্য!এইপ্রথম আমার সবচেয়ে প্রিয়জন আমার জন্মদিনে স্পেশাল শুভেচ্ছা জানাতে যাচ্ছে, আর আমি এটুকু কল্পনার জাল বুনতে পারব না?
সময়টা যত এগিয়ে আসছে আমিও তত অতিকস্টে নিজেকে গুটিয়ে ফেলছি একটা কৃত্তিম খোলসে! এ’কদিন একটু কম অথচ গম্ভীর মুখে কথা বললে, আর দিন ক’তক সাক্ষাৎ পর্বটা এড়িয়ে চলতে পারলেই একটা প্রচ্ছন্ন অভিমান ভাব ফুটে উঠবে-ফলে জন্মদিনে প্রেমটা জমবে ভাল!
আমার জন্মদিনের দু’দিন আগে সে ফোন করল। সে তিনটে কথা বললে,-প্রতিউত্তরে আমি বলি একটা। অনেক কথা আটকে গিয়ে গলার কাছে হাঁসফাঁস করে!
কিছুক্ষন পরে সে আমায় কোমল কন্ঠে শুধাল;
‘তোমার কি হয়েছে, বলোতো?’
প্রশ্নটার গভীরে এতটা ভালবাসা আর আবেগে ছিল যে আমার আর্দ্র হৃদয় দ্রবীভুত হয়ে সত্য কথাটা বলেই দিয়েছিল প্রায় ...
‘উ-হুম!’
‘কি ব্যাপার কিছু বলছনা যে?’
‘তুমি বল আমি শুনি।’
আচমকা ট্র্যাক চেঞ্জ করে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল, একটু লজ্জিত ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করল,
‘আচ্ছা তোমার জন্মদিন এ’মাসে না? ক’তারিখে যেন? স্যরি,-ডিয়ার আমি ভুলে গেছি!’
লজ্জা ও অপমানে আমার চোখ কান লাল হয়ে গেছে।সামনে কেউ ছিল বিধায় রক্ষে- না হলে, দু-এক ফোটা নুন মিশ্রিত উষ্ণ জল দু’গন্ড বেয়ে গড়িয়ে পরা বিচিত্র ছিল না। কিন্তু প্রচুর জলীয় বাস্পে ভেজা দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়ে এল জোর করে! কোন মতে গম্ভীর কন্ঠে বললাম ,‘২৪শে জুলাই।’
’ও-হ্হো ! আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে,২৪শে জুলাই-ই হবে। কিন্তু তারপরও একটু ‘কনফিউস’ ছিলাম। আই’ম স্যরি ’সুইট হার্ট’! তুমি রাগ করোনিতো?’
শেষের কথাগুলো টেনে টেনে খুব দরদ দিয়ে বলল,-এমন করে বললে আর কেউ রাগ করে থাকতে পারে!
এক ধাক্কায় আমার অর্ন্তজ্বালা শুন্যের কোঠায় নেমে এল।নিজের মনে নিজে নিজে বললাম, “ভুলতো হতেই পারে! সেতো আর লিখে রাখেনি! বাসায় যেতে যেতে স্মৃতি শক্তি কিছুটা ঝাপসা হওয়াই স্বাভাবিক।”
তবুও আহত কন্ঠে ক্লিস্ট হেসে বললাম,
‘নাহ্!রাগ করিনি,এ আর এমন কি!’
এবার সে অনেকটা আবদারের সুরে রোমান্টিকতার ঝুড়ি উপুড় করে দিয়ে বলল, ‘তুমি কিন্তু সে-দিন রাত ঠিক বারোটা এক মিনিটে আমাকে ফোন করবে, আমি তোমাকে জন্মদিনের ‘উইশ’করব!’
“অ্যা-বলে কি! আমার জন্মদিনে আমি তাকে ফোন করে শুভেচ্ছা নিব! এমন কথা কখনো শুনিনি বাপ! তাকে কি ফোন করে আমি গানের সুরে সুরে বলব ,‘হ্যাপি বার্থ ডে টু মি!!”
তার এই বিস্ময়কর অনুরোধটা হজম করতে আমার একটু সময় লেগেছিল। সে-বার কন্ঠে একটু উষ্মা এনেই জিজ্ঞেস করেছিলাম,
‘কেন-আমি কেন ফোন করব?’
প্রতিউত্তরে আমার ফোন করার পক্ষে সে কতগুলো মোক্ষম যুক্তি দিয়েছিলো। যেগুলো শুনে নিজেই নিজেকে ‘গাধা বলে গালি দিয়েছিলাম’। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম,“বাকি জীবনের সবগুলো জন্মদিনে আমিই তাকে ফোন করব!” যাহোক-সেবার ঠিক বারোটা এক মিনিটে ফোন করা হয়নি বেরসিক এক বন্ধুর বদান্যতায়। ফোন করতে একটু দেরী করায়,“তার সে-কি অভিমান। শেষে মান ভাঙ্গাতে রাত যায় ...!”
প্রায় বছর খানেক পরে তখন আমি দেশ থেকে অনেক অনেক দুরে প্রিয়তমা-প্রিয়জন-শত্র“দের ছেড়ে বরফের দেশে বরফের মাঝে বসে আইসক্রিম খাই আর ঘোর লাগা চোখে তার কথা ভাবি! প্রথম প্রেমের প্রথম বিচ্ছেদ বলে কথা-তাও দুজনের মাঝে হাজার আস্টেক কিলোমিটারের ব্যাবধান- শুধুকি তাই! কবে ফের দেখা হবে তারও কোনও ঠিক নেই। বিচ্ছেদের দাবানলে ভালবাসার উত্তাপ তখন বেড়ে গেছে কয়েকগুন। ফুসরৎ পেলেই টেলিফোনে বাক বা-কুম করি, আর মাস শেষে বিল দেখে ভিমড়ি খাই! প্রতিজ্ঞা করি, “সামনের মাসে গুনে গুনে চারবারের বেশী ফোন করব না।” কোনমতে সপ্তাহের তিনদিন যেতেই ভাবি,“ব্যাস অনেক হয়েছে!” আমার প্রেমিক মন হিসেবি মনকে দর্শন শেখায়,“প্রতিজ্ঞা করাই হয় প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গার জন্য- আর তুমিতো করছ মাত্র মিনিট দুয়েকের জন্য ক’পয়সাই বা বিল আসবে! কেমন আছ, ভাল আছি বলেই রেখে দিও। এতে অন্তত মনটা শান্ত হবে-নেক্সট ফোনটা না-হয় দশদিন পরেই কোর!”
নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় নিজেকে আবিস্কার করি ফোন সেটটার সামনে! অবাধ্য দু-হাতের একটা ছুটে যায় রিসিভারের দিকে আরেকটা ডায়াল প্যাডের বোতাম লক্ষ্য করে।
সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার কোন সাধ্যি আমার নেই!
হয়তো দু’বার তাকে পেলাম না। সেকি- টেনশন! আর তৃতিয়বার তাকে পেয়ে দু’মিনিটের মাথায়- হুশ ফিরে লক্ষ্য করি বিশ মিনিট চলে গেছে! লাজ-শরম শিকেয় তুলে বলতেও পারিনা,“এবার তাহলে রাখি!”
আবেগের অতিশয্যে কিংবা চক্ষুলজ্জার খাতিরে দু’চারটে ফোন যে সেও করেনি তা কিন্তু নয়।
জুলাই মাসের পনের তারিখ থেকে পরবতী সপ্তাখানেক টেলিফোনের বোতাম চাপতে চাপতে আমার অনামিকা আর মধ্যাঙ্গুলির অগ্রভাগে কড়া পড়ে গেছে!
টু-টা আওয়াজ শুনতে শুনতে কানের অবস্থাও বেতাল! কিন্তু আমার কাঙ্খিত নাম্বার রিচ্ করছে না! অন্য কাউকে দিয়ে যে খবরটা নেব সে উপায়ও নেই।
মনের দুঃখে বিমান অফিসে যখন ফোন করতে মনস্থির করেছি,ফিরতি টিকিট কনফার্ম করার জন্য-ঠিক তখুনি ইনডেক্সের কোনায় খুজে পেলাম তার পাড়াতো বান্ধবীর ফোন নাম্বার !
প্রথমবার সে রাজী হলনা। দ্বীতিয়বার অনেক অনুরোধে ঢেকি গিলল! কিছুক্ষন ঘুরে এসে জানাল ‘তিনি ঘুমুচ্ছেন।’ আর তৃতিয়বার হয়তো কিছুটা মনক্ষুন্ন হয়েই ডেকে নিয়ে এল। সে তাকে ডাকতে যাবার ফাকে আমি ফোন রেখে আবার কল-ব্যাক করার রিস্ক নিইনা। যদি ফের সে ফোন রিসিভ না করে।
ফোন লাইন নস্ট থাকাতে আমার প্রেয়সি তার কস্টের কথাগুলো বেশ গুছিয়ে বলল । তার মধ্যে আমার জন্য হয়তো এক ছত্র হবে, বাকি গুলো অন্য কারনে! ধৈর্য্য ধরে তার কস্টের ফিরিস্তি শুনতে হোল। মনকে প্রবোধ দিচ্ছিলাম,তার কন্ঠ যে শুনতে পাচ্ছি এইতো ঢের পাওয়া! কথা প্রায় শেষের দিকে বিদায়ের পর্ব শুরু হল বলে। আমি একটা কথা তার মুখ থেকে শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।
“সেদিন কে ফোন করবে আমি নাকি সে? কোথায়? কখন?” এব্যাপারে কিছুই বলছে না ! শেষমেষ আমার ধৈর্যচ্যুতিই ঘটল! রাগ চেপে হালকা গলায় বললাম,
‘২৪ তারিখে কখন কোথায় ফোন করব?’
সে একটু বিস্ময়ের সাথে বলল,
‘২৪ তারিখে কেন?’ “আমাকে প্রশ্ন করে হয়তো উত্তরটা নিজের মনে কিছুক্ষন হাতড়ে বেড়াল!” ওহ-হো !২৪ তারিখে তোমার জন্মদিন! দ্যাখো আমি ভুলেই গেছি! জানো জান, আমি এ’কদিন এত টেনশনে আছি যে এ’ব্যাপারটা মনে করারই ফুসরৎ পাইনি। ছিঃ!’ নিজেকে ধিক্কার দিল ,‘ধন্যবাদ তোমাকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।’
রিসিভার রেখে আমি ভাবতে বসলাম। “ঠিকইতো টেলিফোন লাইন নষ্ট থাকা সাংঘাতিক গুরুতর একটা ব্যাপার! এজন্য কত বড়সড় অঘটন ঘটতে পারে! মানুষের মাথা কি তখন ঠিক থাকে! আর আমি আছি আমার জন্মদিন নিয়ে!-এসব ‘সিলি’ ব্যাপার ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক- আর মনে রাখা জঘন্যতম অপরাধের একটার মধ্যে পড়ে!”
সেবার জন্মদিনে সে বাসায় ছিলনা। প্রবাসী খালার সাথে জরুরী সপিং করতে গিয়েছিল। আর আমি বন্ধুদের উদ্বেলিত ভালোবাসার শ্যাম্পেনের ফেনিল বুদ্বুদ থেকে অনেক দুরে পুলিশের মার খাওয়া ‘বদনে’ রিসিভার কানে ঠেকিয়ে সারাদিন ঘরের কোনে ঠায় বসেছিলাম!
পরের বছর বরফে জমে যাওয়া শরীরটাকে মরুভুমির ওভেনে ‘চিল আউট ’ করছিলাম! এর মাঝে পাসপোর্টে কয়েকবার বাংলাদেশ এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন কতৃক অনেকগুলো ‘এরাইভাল ও ডিপারচার’ সিল পড়েছে। সে কারনে বিরহ আর আগের মত ভোগায় না-আস্থা বেড়েছে কিন্তু রোমান্টিকতা কমেছে!
সপ্তাহ বা দশদিন অন্তর মিনিট দশেকের আলাপেই প্রশান্তি। আগের মত সেও আর সুযোগ বুঝে হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে দু’য়েকমাস অন্তর আমাকে ফোন করেনা। তাতে অবশ্য আমার কোন ক্ষোভ নেই। কি দরকার অযথা পয়সা নস্ট করার!
২৪ তারিখ সন্ধ্যেবেলায়ই দুটো প্রিপেইড কার্ড কিনে রেখেছি। পাশের রুমের ভদ্রলোক দেশে বেড়াতে গেছেন! এখানে হাত পা ছুড়ে চিৎকার করে কথা বললেও-কেউ তেড়ে আসবে না।
রাত বারোটার ক’মিনিট আগেই ফোন করলাম। কে জানে অন্য কেউ আমার জন্মদিনে ভুল করে তাকেই ’উইশ’ করে কিনা আর এই ফাকে আমি সময় মতো ‘বিজি টোন ’ পাই!
কথা বলছি,আর উত্তেজনায় মৃদু কাঁপছি! কিন্তু যে কথা শোনার জন্য আমি ভীষন উদগ্রীব, তার কথায় সেটার আভাস ইঙ্গিতও পাচ্ছি না। প্রথম কার্ড শেষ হওয়ার পরে; আমি কিছুটা হতাশ! কে জানে হয়তোবা সে শেষ মুহুর্তে সারপ্রাইজ দিয়ে আমাকে চমকে দিবে! ...আর মাত্র দুমিনিট আছে। এত রাত্রে কার্ড কেনার হ্যাপাও কম নয়। সেই ভেবে চুপসে গিয়ে করুন কন্ঠে বললাম ,
‘আজ আমার জন্মদিন!’
ওপাশ থেকে দশ সেকেন্ডের নিরবতা! হঠাৎ সে উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘আরে তাইতো! আজ ২৪ তারিখ তোমার জন্মদিন আর আমি ভেবেছি ২৬ তারিখে! ইস্ !সেদিন তোমাকে সারপ্রাইজ দিব ভেবেছিলাম। স্যরি...’ আমার এত দিনের প্রিয় সঙ্গী সাধের মোবাইল সেটটা হয়তো তার মনিবের দুঃখের বোঝা আর বাড়াতে চাইল না- কট্ করে লাইনটা কেটে গেল!
এবার আমি দেশে। তার বাসা থেকে আমার বাসার দুরুত্বটাও খানিকটা কমেছে। ল্যান্ড ফোন থাকা সত্বেও একখানা সেল ফোন তার সর্বক্ষনের সঙ্গী।
হাটে ঘাটে মাঠে সে যেখানেই থাকুক না কেন প্রায় চব্বিশ ঘন্টা সে আমার নাগালের মধ্যে! অবারিত সুযোগ আর অফুরন্ত সময় থাকা সত্বেও তার ‘পার্সোনাল’ নাম্বারটা এখন আর চাপি না।
জন্মদিনের অল্প ক’দিন বাকি... সেদিন আমার সেল ফোনের মনিটরে তার নাম্বার ভেসে উঠল। অনেকবার রিং হওয়ার পরে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ভারি কন্ঠে বললাম,
‘হ্যালো...!
কথা হোল বেশ খানিক্ষন। হালকা সুরে-ছেড়া-ছেড়া!
দুজনের কন্ঠেই সেই রোমান্টিকতার পরশ নেই! নেই সেই আবেগ,নেই সেই উত্তেজনা!! বলার মত তেমন কথাও নেই-তবুও ফোন রাখতে দ্বীধা হচ্ছিল। হঠাৎ সে একটু উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘জানো-তোমার নামের সাথে আমার স্বামীর নামের দারুন মিল। ওর নাম...’
প্রতিউত্তরে শুষ্ক কন্ঠে বললাম শুধু, ‘তাই!’
সে আরেকটু উত্তেজিত হয়ে বিগলিত হেসে বলল,
‘আর সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার কি জানো? তার জন্মদিনও ২৪শে জুলাই !’
তার সেই আশ্চর্যজনক আবিস্কার আমার অভ্যান্তরের অতি কোমল অনুভুতিকে বিন্দুমাত্র নাড়া দিল না- শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলিটা চেপে বসল ’এন্ড বাটনে!’'
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৮:৩৮