somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলকাশ- ৩

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিন ক্ষন ঘনিয়ে এল পাত্রী পক্ষ আসার। ঘর দোর গোছ গাছ আর খাবারের আয়োজন নিয়ে ভীষন ব্যাস্ত মইন, আলেক আর বুড়ি! আমার কোন চিন্তা নেই গায়ে ফুঁ দিয়ে ঘুরি।
মেয়েকে দেখে প্রথম দফাতোই আমি দারুন টাসকি খেলাম। এমন দুর্দান্ত রুপসী মেয়ে কিনা এই টিঙ টিঙে ভিনদেশী মইনকে বিয়ে করবে?
সাহিত্যিকরা যাকে বলে ধনুকের ছিলার মত ফিগার ঠিক তেমনি তার গড়ন। ঘাড় অব্দি কালো স্ট্রেইট চুল কালচে বাদামী চোখের কাটা কাটা নাক মুখের ফেইড জিনস আর আটোসাটো টি সার্ট পরা সেই মেয়েকে দেখেই মইন প্রথম দফাতেই ঘাবড়ে গিয়ে ভীষন চুপসে গেল! কি করবে তাল দিশা না পেয়ে ঘাপটি মেরে লাজুক কনের মত বসে পড়ল। তাই তাদের সম্ভাষন আর আপ্যায়ন পর্বটা আমার উপরই বর্তালো।
কনে এসেছে তার বড় বোনকে সাথে নিয়ে। চেহারা ফিগারে ইনি আর একেবারে উল্টো। বেশ দশাশই গোলগাল মুখাকৃতির জাদরেল সেই মহিলাকে বোনের থেকে মা বলেই ভ্রম হয়!
ছোট্ট একটা টেবিল ঘিরে তিনখানা চেয়ার আর একটা ডিভান। আমিই যেহেতু মুখ্য সঞ্চালক তাই আমার বায়ে বসল মইন ডান দিকে মেয়ের বোন আর তার পাশে স্বয়ং কনে।
কনে আর তার বোন প্রথম থেকেই মইনকে ভীষন উপেক্ষা করে আমাকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিত নিরিক্ষন করছিল! মইন শ্যেন দৃষ্টে সেটা এড়ায়নি-তাই সে আরো বেশী নার্ভাস হয়ে বারবার কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে নিচু আমাকে বলছিল ‘ মিশু ভাই আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন?’
প্রাথমিক আলাপ শেষে আমি পাশে উপবিষ্ট মইনের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলাম।
-এর সাথে পরিচয় হন- এ আমার প্রানপ্রিয় বন্ধু কাম ভাই মইন চৌধুরী।ওদের বাড়ির কাছেই আমাদের বাড়ি। ওরা বেশ বড় জমিদার। অঢেল টাকা পয়সা। ব্যাবসা করতে এসেছিল রুমানিয়াতে। ওখানে ভাল লাগেনি বলে কৃষিনেও তে এসেছে।অল্প কিছুদিন এই শহরে এসেছে তাই রুশ ভাষা ভাল বলতে পারেনা…
আমার কথা শেষ হবার আগেই কনে স্বয়ং ফস করে বলে উঠল, তুমি কি কর এখানে?
-আমি? কি বলব তোতলাতে তোতলাতে বললাম,আমি অন্য শহরে অমুক ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি। বন্ধুর বাসায় বেড়াতে এসেছি কয়েকদিনের জন্য।
মইন ফের গুতো দিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি বলল ও?
সে মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছে। না পড়ে উপায় আছে। আমারই হিংসে হচ্ছে ওর ভাগ্য দেখে! আমার ব্যাপারে কনের কৌতুহল দেখে ওর হিংসে হতে পারে ভেবে একটু মিথ্যে বললাম, আপনার ব্যাপারেই জিজ্ঞেস করছে।
ওদিকে মেয়ের বোন যদিও মইনের ব্যাপারেই জানতে আগ্রহী বেশী কিন্তু কনের সব প্রশ্ন ঘুরে ফিরে বারবার আমাকেই ঘিরে আবর্ত হচ্ছে।
আমি ভীষন বেকায়দায় পড়ে গেছি! আমাকে এখানে বসানো হয়েছে মইনের মুখপাত্র হিসেবে, কিন্তু এখন আমি নিজের গুনকীর্তন করি কিভাবে?
মেয়েটা যেভাবে তাকাচ্ছে আমার দিকে তাতে আমি কেন এ ঘরের সবাই বুঝে গেছে পানি কোনদিকে গড়াচ্ছে! মইনের চেহারা ঘন কালো মেঘে ঢাকা।
আমার প্রতি মইনের অকৃত্তিম বন্ধুত্বপূর্ন আচরন, উদার্যতা অনেক বেশী মুল্যবান। সেখানে সামান্য পরিচয়ের এক তরুনীর সৌন্দর্য আর সেক্স অ্যাপিল নেহায়েৎ তুচ্ছ। সব ভুলে আমি বাস্তবে ফিরে এলাম। শুরু করলাম মুক্ত কন্ঠে মইনের গুনকীর্তন। স্বয়ং কনের থেকে তার বোনের প্রতি যেন আমি অনেক বেশী মনযোগী।
মইনের এই আছে ওই আছে হেন তেন কি নেই। আচমকা মইন তার এলবাম ঘেটে একখানা ছবি বের করে দিয়ে বলল, ওদের বলেন যে এইটা আমার বাসা। ছবিটা দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক!
এইরকম বাড়ি ভু-বাংলাদেশে যে একখানাও নেই তা এই ছবির আদ্যপান্ত না জেনেও বলা যায়। আর আমিতো আগেই জানি এর পেছনের কাহিনি!
মইন দাড়িয়ে আছে লেটেস্ট মডেলের একটা মার্সিডিসে হেলান দিয়ে আর তার পিছনে ইটালিয়ান স্থাপত্যে নির্মিত বিশাল একখানা বাড়ি- বাড়ি বললে ভুল হবে সেটাকে প্রাসাদ বললেও চলে।
ওইটা নাকি ওর বাড়ি! আমিতো আগেই জানি সেই আমাকে বলেছে ওইটা রুমানিয়ায় অবস্থিত ইটালিয়ান এ্যাম্বাসী। আর সামনের গাড়িখানা যে কার তা সে নিজেই জানেনা।সে অবশ্য স্বীকার করেছে তার ব্যাবসায়িক ভাবমূর্তির জন্য গেয়ো ক্লায়েন্টদের এই ছবি দেখে তাক লাগিয়ে দেয়!
তাই বলে যাকে সে সহধর্মিনী করতে যাচ্ছে সেই মেয়ের সাথে শুরুতেই এমন মিথ্যাচার?কি আর করার বন্ধুর অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। ওদেরকে ছবিখানা দেখিয়ে বললাম আরো একটু রঙ চড়িয়ে! ছবিটা দেখে ওরা বেশ চমকিত আর যুগপৎ বিস্মিত হল, কি বল? এযে বেশ কেউকেটা আদমী!
হুম বোঝ তাহলে,তোমাদের এখানে এসে অতি সাধারনের মত থাকা এই লোকটির দেশে কি দারুন প্রভাব আর প্রতিপত্তি!
তবুও একটু অবিশ্বাসের দোলাচালে কনের বোন প্রশ্ন করল’ তবে এসব রেখে কেন সে এই পোড়ার দেশে মরতে এসেছে?
-লে ঠ্যালা এখন কি উত্তর দিই? মনে মনে বেশ খানিকটা মাথা চুলকে বললাম,এসবতো ওর বাবার সম্পত্তি। নিজে কিছু করে দেখাবে বলে বহুদেশ ঘুরে তোমাদের এখানে এসেছে। ক’দিন অপেক্ষা কর দেখো কিভাবে সে ব্যাবসা জমিয়ে ফেলে।
রুশরা তখনো ছল চাতুরি মিথ্যাচার চতুরতা এসব শেখেনি। একটু মিথ্যের প্রলেপ মাখিয়ে যেকোন কথা সহজেই বিশ্বাস করানো যায় ওদের! তবে সেই বয়সেও আমি জানতাম মিথ্যাচার দিয়ে যেই সম্পর্কের শুরু তার ভিত্তি অতি দুর্বল হয়।
যাইহোক পরে কি হবে না হবে ওই ভেবে লাভ কি? কে জানে এই জুটির সম্পর্কের পরিনতি আসলে কি হবে?
মইন এবার ওদের আকর্ষন আর মনযোগের কেন্দ্রবিন্দু – আমি তখন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা! তবুও লারিসা প্রথম দর্শনেই যাকে দেখে বিমোহিত হয়েছিল তার প্রতি করুনা বশতই; হবে হয়ত বার বার আড়চোখে চাইছিল। সে চোখের ভাষা পড়তে আমার কষ্ট হয়নি। সে যেন বলছিল, কেন তুমি ও হলেনা?
হৃদয় এখানে এত সহজেই অদল বদল হয় যে- ক্ষনে ক্ষনে আর রক্তক্ষরন হয়না।তাও কেন জানিনা কষ্টে বুক খানিকটা মুচড়ে উঠল!
অনেক গল্প হল, খাবারের ফাঁকে ফাঁকে চলল কিষিনেও এর বিখ্যাত রেড ওয়াইন! মইন ততক্ষনে খোলস ছেড়ে বেরিয়েছে- তবে কথপোকথনে আমার সাহায্য ছাড়া এক পা-ও এগুতে পারছে না। গ্রীস্মে এখানে রাত নামে দেরিতে। সন্ধ্যে হয় দশটা এগারটা নাগাদ! শেষ বেলায় ওরা ফিরে যেতে অনুমতি চাইল। কনে যার নাম লারিসা, তার বোনকে বেশ কনভিন্স মনে হল। ফের দেখা হবে কোথায় হবে? তার সময়ক্ষনও নিজের উদ্যোগে ঠিক করে ফেলল!
বিদায়ের প্রস্তুতির সময়ে লারিসা আচমকা আমার দিকে চেয়ে ওর বোনকে বলল, আমার কিন্তু ওকে পছন্দ! বিয়ে করলে আমি ওকেই করব!
কি ভয়ঙ্কর কথা! এই মেয়ে এতক্ষনে কি বলে? আমার বিবর্ণ হৃদয় থেকে একমুঠো রক্ত ছলাৎ করে সারা মুখে আবির ছড়াল! সবাই নির্বাক। বুড়ির মুখটা বিস্ময়ে ব্যাথায় হা হয়ে গেছে!
মইন ভাষা না বুঝলেও মুহুর্তেই বুঝে ফেলল, মারাত্মক কিছু একটা ঘটেছে। এবার সে আর ফিস ফিস করে নয় বেশ চড়া কন্ঠেই জিজ্ঞেস করল , কি হয়েছে মিশু ভাই?
আমি কি বলব? আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বললাম, নারে ভাই তেমন কিছু না আমি পরে বলব আপনাকে।
ঘরের বাইরে বেরিয়ে মেয়ের বোন একপাশে আমাকে ডেকে নিয়ে নিচু স্বরে অনুরোধ করল, এই ব্যাপারে আমি যেন মইনকে কিছু না বলি!
ওদিকে মইনতো নাছোড় বান্দা! ওরা যেতেই সে ঘ্যান ঘ্যান শুরু করল, কি বলেছে ওরা,বলেন নারে ভাই!
আমি অনেক মিথ্যে করে বুঝিয়ে অবশেষে বুড়িকে সাক্ষী মানলাম। বুড়িও আমার পক্ষে সায় দিল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, এ সপ্তাহেই আমি মস্কোতে চলে যাব...তৃতীয় পর্ব শেষ
আগের পর্বের জন্য Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:১৫
৪৩টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×