somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাগদা তো-ভ রাশিয়া-১২

১১ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এই সর্বনাশের খবর পেয়ে ছুটে গেলাম বড় ভায়ের কাছে ‘দাদা আপনি কি সত্যিই আমার টাকা গুলো তার হাতে তুলে দিয়েছেন ?’
প্রতিউত্তরে বড়ভাই লজ্জায় আরক্ত হয়ে চোখ নামিয়ে ফোৎ ফোৎ নিঃশ্বাস ছাড়লেন!
‘আমার এখন কি হবে?’প্রশ্নটা করে তার দিকে এমন ভাবে চাইলাম যে, যেন এর উত্তরেই আমার জীবন মরন নির্ভর করছে?
তিনি হতাশায় দুদিকে মাথা ঝাকিয়ে বললেন ‘আমি জানিনা।’পরক্ষনেই কিভেবে বললেন ‘রেডি হয়ে এসো । আমার সাথে বাইরে যাবে।’
আমি বিনা বাক্য ব্যায়ে আমার ফিরে এলাম আমার রুমে। পোষাক আশাক পড়ে দরজা খুলতেই দেখি তিনি আমসে মুখে প্যাসেজে পায়চারী করছেন।

দুজনে বের হয়ে ট্যাক্সি করে সোজা গেলাম গুরুর বাসায়।
দরজা নক করার অনেক্ষন বাদে মাতাল একজন দরজা খুলে আগুন্তকদ্বয়ের দিকে একটিবার মাত্র দৃস্টি নাদিয়ে টলায়মান পায়ে উল্টো দিকে ফিরে গেল। ভিতরে ঢুকতে গিয়েই ক্ষনিকের তরে থমকে গেলাম- কেমন বিষন্ন থমথমে পরিবেশ! আগের সেই হাসি উচ্ছলতার ঠিক যেন বিপরিত চিত্র!

ধোঁয়ায় ঢাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন দ্বীতিয় ঘরটাতে ঢুকে দেখি এককোনে উস্ক খুস্ক চুলে বিস্ত্রস্ত বসনে মাথা নিচুকরে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন তিনি। ঠিক আগেরই মত এক হাতে ধরা মদের গ্লাস আর অন্য হাতে জলন্ত সিগারেট কিংবা গাঁজার স্টিক কোলের উপর বালিশ রেখে বুক দিয়ে চেপে ধরে আছেন। আমাদের পদশব্দে ধ্যান ভেঙে তিনি চোখ তুলে তাকালেন। তার রক্ত জবা চোখের বিষন্ন দৃস্টি দেখে আমার করুনা হল। সে দৃস্টি বলে দেয় যে তিনি প্রতারক নন!
আমাকে দেখেই তেমনি করে মোহনীয় হাসি দিয়ে সম্ভাষন করতে চাইলেন;
'আরে তপন! আসো বসো।'
'তুমিতো ড্রিংক করো না কি খাবে বল, জুস আছে খাবা?
আমার ভিতরে তখন হাতুরি পেটা হচ্ছে মদ খাওয়ার সময় চলে এসেছে-জুস যাবে ভাগাড়ে!' গলার কাছে দলা পাকিয়ে থাকা কষ্টগুলো এক ঢোকে গিলে বললাম,'না ভাই লাগবেনা।'
'লাগবেনা মানে;ঝুট-ঝামেলা নিয়ে আলাপ হবে পরে।কথাগুলো খানিকটা আন্তরিকতা মেশানো হুকুমের সাথে বলে নিজের মদের গ্লাসটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললেন,' আজকে না হয় এটাই খাও?'
খানিকট ইচ্ছে তখন হয়েছিল, 'হাত বাড়াতে গিয়ে নিজেকে সংবরন করে সবিনয়ে প্রত্যাখান করলাম!'
লোকটার দিকে তাকিয়ে আমি ভাবছিলাম, আমার ক'টা টাকা যেটা একান্ত নিজের- কেন খোয়ালাম সেটা নিয়ে নিজের বড় ভাই আর বাবা ছাড়া কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবেনা-সেই চিন্তায় আমি কেলিয়ে পড়েছি। আর এই লোকটা কম পক্ষে পঞ্চাশ হাজার ডলার ধরা খেয়েছে যার এক চতূর্থাংশও তার নিজের নয়। প্রায় পুরো টাকাটাই ধার করা কিংবা আদমদের। কি করে সে এদের দেনা শোধ করবে? আর এতগুলো লোকের ভরন পোষনের দায়িত্ব , জবাবদিহিতা, সন্দেহ অবিশ্বাস ওফ ভয়ংকর!!
কিছুক্ষন চুপচাপ সবাই। শোকাবহ পরিবেশ!
নিরবতা ভাংলেন বড় ভাই - গুরুর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলল, গুরু কোন ভাবেই কি ওর টাকাটা ফেরত দেয়া যায় না?
তিনি এবার ফের সেই দৃস্টি মেলে আমার দিকে তাকালেন , তখনো যেন ঠোটের কোনে সেই হাসিটি ঝুলে আছে। কোন কথা না বলে খালি ভারী মদের বোতলটা আমার দিকে এগিয়ে ধরে বললেন ‘ধর।’আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দুসেকেন্ড তার দিকে চেয়ে রইলাম!
তিনি মুচকি হেসে বোতলটা আমার আরো কাছে এগিয়ে ধরে বললেন ‘কি হোল ধর?’
আমি বোতলটা হাতে নিতেই তিনি তার কোঁকড়ানে চুলেভর্তি মাথাটা নুয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন ‘এখানে একটা কষে বাড়ি মারো।’ আমি তার কথা বুঝতে না পেরে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বোতল হাতে নিয়ে বসে রইলাম।
তিনি সামান্যক্ষন পরে মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন ‘কি মারলা না ?...ভাইরে আমারে এখন খুন করে ফেললেও একটা টাকা দিতে পারবনা। তোমার খুব বেশী রাগ হলে আমারে খুন করে যাইও । আমি মাইন্ড করব না।’বলেই আবার হাসলেন নিস্পাপ হাসি ।
এই লোকের উপর রাগ করে থাকা যায়না। অল্পক্ষনের মধ্যেই আমরা দুঃখ বিষন্নতা ভুলে খোশ গল্পে মগ্ন হলাম! কথা প্রসঙ্গে তিনি ওয়াদা করলেন যে, যেমন করেই হোক মাস তিনেকের মধ্যে আমার পুরো টাকা দিয়ে দিবেন। আর যদ্দিন আমি টাকা না পাই তদ্দিন খরচের সবটা তিনি বহন করবেন।
আবার জমল মেলা সেই বটতা হাটতলায়...কিন্তু সেই সুর নেই-তাল লয়েরও ঘাটতি অনেক;তবুও প্রায় সব হারানো কিছু মানুষের আড্ডা মন্দ নয়।
ডকুমেন্ট হারানোর বেদনা অর্থ বিয়েগের কষ্ট! ওই বয়সে এদুটো চাপ আমাকে মানসিকভাবে খানিকটা বেসামাল করে ফেলেছিল। সান্তনা ছিল একটা প্রেম! আমার প্রথম প্রেম-কচি বয়সের সেই দুরন্ত প্রেমের কি মোহ সেটা এই বয়সে অনুভব করতে চাওয়া বোকামি!
পরিচয় ছিল আগেই কিন্তু রাশিয়া যাবার মাত্র সপ্তা খানেক আগেই ঘনিষ্ঠতা ও প্রেম। শুধু একবার মাত্র হাত ধরেছিলাম তার- সেই স্পর্শের মাদকতায় এতবেশী মাতাল ছিলাম যে,রুশীয় প্রেয়সী পানীয় ভদকাকে বারবার প্রত্যখান করেছি ।দুর্দান্ত সুন্দরী,মোহনীয়, চরম আবেদনময়ী রুশীয় নারীদের দিকে ঝাপসা আর ঘোলা চোখে তাকিয়েছি।
রাশিয়ায় সেই চরম দুঃসময়ে সব দুঃখ কষ্ট ছাপিয়ে আমার মনের অতি সুক্ষ কোনে জমানো ভাললাগা অহংকার মোহ আর ভাবাবেগ আমাকে পরম শান্তি দিত।
দেশে ফোন করা তখন বিরাট ঝামেলার ব্যাপার ছিল! গুটিকতক বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের বাসায় ফোন। রাশিয়ার এনালগ ফোন থেকে লাইন পাওয়া ভীষন কষ্ট! বাংলাদেশে তখনো এনালগের যুগ থাকলেও অবস্থা ওদের থেকে খানিকটা ভাল ছিল। ডায়াল টিপতে টিপতে আঙ্গূলে কড়া পড়ে যেত তবুও সংযোগ মিলত না। সংযোগ মিললে তখন এখানে গভীর রাত কিংবা যাকে খুজছি সে বাসায় নেই- অথবা ভুল নম্বরে চলে যাওয়অ বিচিত্র ছিল না।তাই সস্তা হলেও চরম অবসর কিংবা বিশেষ প্রয়োজন না হলে কেউ ওভারসিজ ফোন করত না।
কিভেবে আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুকে ফোন করেছিলাম। ভেবেছিলাম দু-য়েকটা সুখ(!) দুঃখের কাহন গাইব।সে আমার ফোন পেয়ে লাফিয়ে উঠল হাত দশেক! এরপর গল্প-কথা ফুরোতেই চায়না!
সেদিন যে কেন ফোনটা করেছিলাম জানিনা? আমার নিয়তি হয়তো আমাকে বাধ্য করেছিল!
কথার ফাঁকে আমার প্রেমিকার কথা জিজ্ঞেস করতেই আচমকা সে থমকে গেল;-আমতা আমতা করে কি যেত বলতে চাইল, বলল না। প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইল, আমিও নাছোড় বান্দা! কেমন একটা রহস্যের আভাস পেলাম। চরম কোন দুঃসংবাদের আভাস পেয়ে বুকের মাঝখানটা ফাকা হয়ে গেল-হৃদয় বলল, আমার এখানে আরো কষ্ট নেবার জায়গা আছে-গো তুমি ভয় পেয়ো না।
সে যতই প্রসঙ্গ পাল্টাতে চায় না কেন আমি ঘুরে ফিরে একই প্রশ্ন আউড়ে যাই?
বন্ধু আমার বলে শুধু- থাক। বাদ দাও। মনে হয় আমার দেখার ভুল!
বেশ খানিক্ষন তালবাহানা করে অবশেষে খোলসা করল;
আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার উপক্রম-মস্তিস্কের ভয়ঙ্কর জটিল এক খেলায় আমি চারপাশের জাগতিক সবকিছুকে ভুলে গেলাম কয়েক মুহুর্তের জন্য। যেন ভেসে যাচ্ছিলাম তুলোর মত হালকা শরির নিয়ে অজানায় অন্য কোন ভুবনে... ১২ তম পর্ব শেষ
আগের পর্বের জন্য ;
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৩৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×