somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেভিস ফল ( কাঠমুন্ডুর পথে)- পর্ব ৯

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাস তখন একটানা ছুটে চলেছে । পথে বহুবার যাত্রী উঠেছে নেমেছে । এখনো কয়েকজন দাড়িয়ে আছে । আমার পাশে বড় ভাড়ি ব্যাগ থাকায় এদিকটায় ঘেষতে পারে নাই ।
একবার কিছু দেখা যায় কিনা এই ভেবে ডান দিকে ঘুরে তাকাতেই মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলে মনে হয় সে কিঞ্চৎ লজ্জা পেল। পাশে বাসা মাহমুদ আমাকে খোচা দিয়ে বলল,-এইটা কি হল ভাই?
আমি মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম- কোনটা কি হল?
সে খ্যাক করে সামান্য একটু হেসে বলল -‘এই যে মেয়েটা আপনার পাশে বসল আমি কি সারা পথ আঙ্গুল চুষতে চুষতে যাব?
-ও এই কথা । এখন সে এসে আমার পাশে বসলে আমি কি করতে পারি বলেন? আপনি চাইলে এখানে বসতে পারেন। কিন্তু...
-না এখন না । ঘন্টা দুই তিন পর পর বাস থামবে - তখন আমরা সিট পাল্টাপাল্টি করব। ঠিক আছে ?
- ঠিক আছে , তাই হবে। ’ মেয়েটা আমার পাশের সিটে বসায় সে যে কিছুটা ঈর্ষান্বিত তা তার চেহারাই বলে দেয় ! পরে সে অবশ্য স্বীকার করেছিল।
কিছুক্ষন চোখ বুজে তন্দ্রার ঘোরে-কিছুক্ষন প্রকৃতি পরিবেশ আর চোখ ঘুরিয়ে চারিপাশটা দেখে সময় কেটে যাচ্ছিল।
সাকাল সাড়ে আটটার দিকে হাইওয়েতে প্রথমবার বাস থামল । এখানে মাঝারী মানের একটাই হোটেল -টিন বাশ ও কাঠ দিয়ে ছাওয়া । পাশেই বাথরুম- পয়সা দিয়ে যেত হয়।
সেলফ সার্ভিস হোটেল। টেবিলের উপর থরে থরে খাবার সাজানো। একজন দাড়িয়ে আছে পরিবেশনের জন্য। বিল দিতে হয় খাবার শেষে।
এপাশ থেকে প্লেট আর চামচ নিয়ে লাইনে দাড়ালাম । নাস্তার জন্য রয়েছে পুরি, আলুর দম, চানা (শুধু মাড়ে ডোবানো ছোলা সেদ্ধ) হালুয়া আর মাছ ভাজা তবে চেহারা দেখে মনে হয় মাছের শুটকি। আমি শুধু আলুর দম আর পুরি নিলাম - মানা করা সত্বেও মাহমুদ চানা হালুয়া দুটোই নিল।
পুরির সাথে আলুর দম খেতে ভালই তবে রান্নাটা জুতের না। হোটেলের যে চেহারা তাতে করে থেকে ভাল রান্না আশা করা অবশ্য বোকামী!
আমাদের অনতি দুরেই আমার পাশের সেই মেয়েটা সাথে তার ছোট বোন (সম্ভবত -ধারনা করছিলাম,তখনও জানিনা) বসে এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে কি যেন দেখছে। হয়তো ঠিক মনস্থির করতে পারছেনা কি খাবে! হঠাৎ আমাদের পাতের দিকে চেয়ে সামান্য হেসে বড় জন উঠে গিয়ে সেই খাবারটাই নিয়ে এল। আমরা দুজন সেটা দেখে চোখে চোখে হেসে নিলাম ।
বাস ছাড়তে মিনিট বিশেক দেরী হল -
এবার আমার জানালার পাশ বসার পালা। ভ্রমন পথে পাশে বসা কোন তরুনীর সাথে চোখের কোনে লুকোচুরি খেলা আচমকা ( ইচ্ছেকরে) চোখাচোখি আর টুকরো হাসি বিনিময় করতে করতে সময় কেটে যায় দ্রুত। কথা বলার প্রয়োজন হয়না, তবুও পরিচিত হয়ে গেলে ষোল আনা। গন্ত্যব্য এসে গেলে মনে হয় পথ কেন এত দ্রুত ফুরোল!
মাহমুদের সাথে চুক্তিতে গিয়ে আমি সেই সুখ থেকে কিছু সময়ের জন্য বঞ্চিত হয়ে চোখ বুজে ঘুমানোর ব্যার্থ চেস্টা করলাম। মাঝে মধ্যে চোখ মেলে আড়চোখে দেখছিলাম মাহমুদের লুকোচুরি খেলা! তার সেই প্রচেস্টা মনে হল হাস্যকর - হয়তো আমারটাও তেমনি তার কাছে?
বেচারার দুর্ভাগ্য - তার ধারনাকে ভুল প্রমানিত করে ঘন্টা দেড়েক পরেই বাস ফের থামল। বাস কর্মচারী যাত্রীদের অনুরোধ করল,এখান থেকেই লাঞ্চ সেরে নিতে - সামনে আর খাবার হোটেল নেই?- থাকলেও বাস থামবে না।
বলে কি? একটু আগেই না নাস্তা করলাম -সবে এগারটা বাজে,এখন কি করে লাঞ্চ সারি?
পাশাপাশি বড় বড় দুখানা হোটেল! যদিও একচালা টিনে ছাওয়া -বাশের বেড়া দিয়ে ঘেরা কিন্তু পরিসর অনেক বড়। বেশ ভীড়!
আমরা তেমন ভাবনা-চিন্তা না করেই কাছেরটাতেই ঢূকে পরলাম।
-ক্যাশে বসা মোটসোটা এক মহিলার হাক ডাক আর কতৃত্বের ভাবে মনে হল ইনিই দোকানের মালিক। তার উল্টোদিকে বুফে স্টাইলে থরে থরে খাবার সাজানো লুচি পরোটা সজ্বি ডাল মাংস সহ অনেক কিছুই আছে কিন্তু খাবারের চেহারা দেখে ভক্তি আসেনা। পাশেই দেখি গরম গরম ভাজা সিঙারা। দেখে লোভ হোল! খাবার সার্ভ করছে লম্বা ফর্সা একহারা গড়নের এ পরিবেশে ভীষন ভাবে বেমানান বানজারান বা জিপসি টাইপের এক মহিলা। কথাবার্তা ও চেহারায় কেমন যেন একটা বন্য ভাব। খদ্দেরের সাথে ব্যাবহারটা বড্ড বেশী রুঢ়।
সিঙারার হিন্দী বা নেপালীতে কি বলে আমাদের দুজনারই কারোই জানা নেই। হিন্দী ভাষীরা হয়তো বাটাকাবড়া বা এই জাতীয় কিছু একটা বলে- বলে আমার ধারনা ছিল। মহিলাকে গিয়ে হিন্দিতেই আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলাম, ওগুলোকে কি বলে?
‘সিঙারা!’ ঠিক আমাদের সিঙারার উচ্চারন ।
অ আ তাহলে এরাও একে সিঙারা বলে ।
- দুজনকে চারটে দিন ?
মহিলাটা ক্যাসিয়ার মহিলাকে ইশারায় দেখিয়ে বলল ওখানে টাকা দিয়ে আসতে।
-এখানে আবার খাবার আগে বিল চুকাতে হয় যাতে খদ্দের ভিড়ের ফাঁকে সুযোক বুঝে টাকা না দিয়ে পালাতে না পারে। সিঙারার সাথে দু’কাপ চায়ের বিলও দিলাম- সাথে পথের জন্য এক বোতল পানি আর চিপস ।
ন্যাতানো কাচামরিচ দিয়ে স্বাদহীন গরম সিঙারা খেতে খারাপ না!
চা খেয়ে বাইরে এসে সিগারেট ধরিয়ে কষে কখানা দম দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠলাম। চুক্তি মাফিক আমাদের সিট পরিবর্তন হল ।
বাস তখনো ছাড়েনি সিটে বসে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আচমকা চোখ আটকে গেল অন্য সবার মতই একটা বিশেষ দৃশ্যের দিকে;
জিপসি টাইপের সেই মহিলাটা তার বাচ্চাকে স্তন্যপান করাচ্ছে! বিশ্বের সবচেয়ে সাধারন বিরল মহান নির্দোষ দৃশ্য। তবুও বাসের প্রায় সবার দৃষ্টিই সে দিকেই নিবদ্ধ !
-কেননা মহিলাটা যেভাবে রাস্তার দিকে মুখ করে পুরো বুক উন্মুক্ত করে তার চকচকে ভীষন ফর্সা ভারী স্তন বাচ্চাটার মুখে চেপে ধরেছে সেটা দৃষ্টিকটু ঠেকে! বাচ্চার দুধ খাওয়ানোর থেকে আমার মনে হয় সবাইকে তার বুক দেখাতে আগ্রহী। সে হয়তো জানে? হয়তো কেন বলছি;নিশ্চই জানে নিজের চেহারার সাথে মানানসই দেহবল্লভীর সৌন্দর্যের সাথে সাথে অনেক পুরুষই আরো বেশী আকর্ষনীয় এই বুকজোড়া দেখলে ভিমরী খাবে! কিংবা এমনও হতে পারে হয়তো সে এই ক্ষুদ্রতার মধ্যে নিজের সৌন্দর্য বন্দী করে রাখতে চায়না ? তাই সবাইকে দেখিয়ে এক বন্য মানসিক আনন্দ -বা অন্য রকম তৃপ্তি মেলে। জিপসিদের সমাজে হয়তো এ রকম দৃশ্য স্বাভাবিক -কিন্তু সে এখন যে সমাজ বা পরিবেশে আছে সেখানে সেটা মোটেই স্বাভাবিক দৃশ্য নয়!
এমন একটা দৃশ্য যে কোন পুরুষের মনকে বিভ্রান্ত করবে। কোন পারভার্সন ছাড়াই কেন যেন নিজের কাছেই লজ্জা লাগছিল বলে সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
ফের শুরু হল সেই খেলা। এখন অবশ্য ডাইনে ফিরে তাকাতে সমস্যা নেই কেননা ওপাশের পর্দা সরানো হয়েছে। মনের আনন্দে দুপাশের প্রকৃতি আর...দেখতে দেখতে যাচ্ছি।
এবার মাহমুদ হয়তো মন খারাপ করে চোখ বন্ধ করে জোর করে ঘুমানোর চেস্টা করছে। আহ বেচারা!
৯ম পর্ব শেষ
আগের পর্বের জন্য ক্লিক করুনঃ Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১৮
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×