আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
[সুপ্রিয় ব্লগার, বাবনিকের প্রথম পর্বে বলেছিলাম; বাবনিক' এর কাহিনী প্রায় দু'যুগের বেশী সময় ধরে চলমান।এখানে অনেক বেশী চরিত্র,স্থান ও কালের বিন্যাসের জন্য আমার মত মামুলি লেখকের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কষ্ট। আর ব্লগার লেখক পাঠকদের জন্য এর সাথে তাল মিলিয়ে চলাতো আরো বেশী দুরুহ। যে দু'চারজন ব্লগার নেহায়েত আমাকে ভালবেসে এখনো বাবনিকের সাথে নিজেদের বেঁধে রেখেছেন তাদের প্রতি আমার আন্তরিক ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতা। আমার ধারনা বেশী দিনের ব্যাবধানে এ লেখার পর্বগুলো পোষ্ট করলে এ'কজনও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন!! তাই আমার চরিত্রের বিপরিতে গিয়ে অতি দ্রুত প্রথম খন্ডের সবগুলো পর্ব নিয়ে হাজির হচ্ছি। এজন্য অনেকে হয়তো বিরক্তবোধ করতে পারেন- তাই আগেভাগে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি- শুভ ব্লগিং]
ববির এবারেরটা টেকে নি- নাকি সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল জানা হলনা! দিন পনের যেতেই আরেকজনকে বগলদাবা করে হাজির! তার কথায়; এটাও নাকি চরম শৈল্পিক রুচির আর মোহনীয় দেহসৌষ্ঠবের অধিকারিনি!!!
আমার মাথায় আসে না এ ব্যটা এত দ্রুত পটায় ক্যম্নে!
রনি ভাই সেদিনের পর থেকে মাঝে মধ্যেই রেনেতার বাবা মায়ের সাথে গল্প গুজব করতে আসে। প্রতিবারই হাতে থাকে কিছু উপহার সামগ্রী। প্রতিবারই বেশ রাত অব্দি গল্প গুজব আর খাওয়া দাওয়া চলে।
ওদিকে আমার আর রেনেতার প্রেমের ঘুড়ি যেন আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। তাঁর উদ্দাম প্রেম আর শারিরিক আবেদনের কাছে আমি নতজানু-দিশেহারা! ও বাসায় আমার অবাধ যাতায়াত। ওর মা ও আর তেমন কুটিল চোখে তাকায় না।
আমি এবার হাঁফ ছড়ে বেঁচেছি! কি সুক্ষনেই না রনি ভাই এসে হাজির হয়েছিলেন।
মাসখানেক হয়ে গেল- আমিতো ব্যাবসার কিছুই বুঝছি না, ববি কতটুকু বুঝেছে আল্লা মালুম!
রনি ভাই এক সন্ধ্যায় লাল পাণীয়ের আসরে আমাদের দু’জনের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও মুগ্ধতা জানিয়ে বললেন; আমাদের প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আদম ব্যাবসার অতি গুরুত্বপূর্ন কাজে তাকে আরো বেশ কিছুদিন এখানে থাকতে হবে।সে না থাকায় মস্কোর ব্যাবসার দেখ ভাল করার কেউ নেই। আমাদের দুজনের এখন সেখানে গিয়ে হাল ধরতে হবে। ববি একথা শূনে বেশ খুশী- এখানে তাঁর যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
আমি চরম বিমর্ষ ও মর্মাহত হলাম! কি সুখেই না দিন কাটছে এখানে- ফালতু ব্যাবসা বানিজ্য দেখার সময় আছে!
কিন্তু ববি নাছোড়বান্দা! সে তাঁর বড় ভায়ের আশে পাশে থাকবে না। আমকে বহুত ভুজুং ভাজং দিল; চল দোস্ত যাই। মাসখানেক পরেতো রনি ভাই ফিরেই আসছে। তদ্দিনে সজলও থাকবে না। এখানকার ব্যাবসা তখন আমরা ছাড়া দেখবে কে?
কথা মন্দ নয়! রেনেতাকে ছেড়ে যেতে ভীষণ কষ্ট হলেও- মাত্র মাসখানেকের ব্যাপার ভেবে কয়েক সহস্র চুম্বনের স্বাদ নিয়ে আর বাষ্পীভূত কন্ঠে গদ গদ হয়ে অমর প্রেমের ফুলঝুরি ছুটিয়ে মস্কোর পথে ছুটলাম।
পর পর দু’রাত তো রেনেতা কেঁদে কেটে নির্ঘুম কাটাল।
মস্কোতে ফেরার দু’দিন বাদের ববির উক্রাইনের সে বান্ধবী এসে হাজির। একখানামাত্র রুমের সেই বাসায় অগত্যা আমাকে করিডরের ডিভানেই শুয়ে রাত্রি যাপন করতে হয় । বন্ধ দুয়ারের ওপার থেকে শীৎকার চিৎকার হাসি ঠাট্টার শব্দে আমি বেতাল হয়ে মদ খেয়ে হুঁশ ফেরাই।
কিসের ব্যাবসা কিসের কি- ববি ব্যস্ত তাঁর বান্ধবী নিয়ে আর আমি ব্যাস্ত সারাদিন টেলিফোনে রেনেতার সাথে গল্প নিয়ে! রেনেতা আমার ভাষাগত দুর্বলতা কোন ধর্তব্যের মধ্যে ফেলে না- যেন কোন শিশু কথা কইছে এই ভেবে সে আমার ভুল-ভাল কথায় হাসিতে গড়িয়ে পড়ে। এই শুনে আমিও আমার জানা শব্দগুলো বিকৃত করে উচ্চারন করি।
রনি ভায়ের একমাস এভাবে দু’মাসে গড়িয়ে গেল। মস্কোর ব্যাবসা নিয়ে তাঁর কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। তাঁর ঘাড়ে এখন আদম ব্যাবসার ভুত সওয়ার!
ইদানিং তিনি বেশ ঘনঘন রেনেতাদের বাসায় যাচ্ছেন। ফুল চকোলেট মিষ্টি আর এর ওর জন্য টুক টাক উপহার নিয়ে যান। রেনেতা এ বিষয়ে কিছু বলার আগেই রনি ভাই সবিস্তারে বলেন সব কথা, যাতে আমার মনে কোন সন্দেহ না জাগে। ছোট ভায়ের ভাবি শ্বশুরবাড়িতে বো ভাই যেতেই পারেন- এই নিয়ে আর দুঃচিন্তার কি আছে।
দীর্ঘদিন দূরে থাকলে ধীরে ধীরে ভালবাসার উত্তাপ কমে আসে! আমরাও তাঁর ব্যতিক্রম নই।
তবে রেনেতাকে আমি আর আমাকে রেনেতা মনে প্রানেই ভালবেসে ফেলেছি! ওকে নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে সংসারি হবার কল্পনা করি। তবে ডাইনে বায়ে যে আড় চোখে তাকাইনা তা কিন্তু নয়। ববির জিগার দোস্ত আমি একটু আধটু ছোঁকছোঁক করা জায়েজ আছে!
তবুও দিনে দু’চারবার কথা হয়। আবেগের উচ্ছাস কমে ধীরে ধীরে। একসময় তিনবার ফোন করলে একবার ওকে ওপাশে পাই- বাকি সময় তাতিয়া কিংবা নাতাশার সাথে কথা হয়।
তাতিয়ার সাথে কথা জমে বেশ। ছোট্ট মানুষ গড় গড় করে সব সত্যি কথা বলে দেয়! মাঝে মধ্যেই শূনি রেনেতা রনি ভায়ের সাথে বাইরে গেছে।
রনি ভাই কিংবা রেনেতাকে জিজ্ঞেস করলে কাজের কথা বলে পাশ কাটায়। তবে রনি ভায়ের কথায় বুঝি টুক টাক মিথ্যা কথা বলেন আমাকে- রেনেতার সাথে কথায় মেলে না। রেনেতার আবেগে বেশ ভাটা পড়লেও কথা বলে যখন ঘন্টা পেরিয়ে যায়। কথার শুরুতে মনে একটু সন্দেহ জাগলেও শেষের দিকে সেটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
রনি ভাইকে নিয়ে খারাপ চিন্তার জন্য নিজেকে গালি দেই।
পর্ব-১০
এর মাঝে উজ্জ্বল একেবারে পাততাড়ি গুটিয়ে জার্মান চলে গেছে! আমার স্থায়ী আবাস হারালাম আমি।
রনি ভাইকে তাগাদা দেই কবে তিনি মস্কো আসবেন। তিনি না আসলে আমিতো অডেসায় যেতে পারছিনা।
তিনি আসবেন আসছেন, কাজের চাপ এইসব বলে ধানাই পানাই করেন আর আমার সন্দেহ দিনে দিনে আরো বেশী ঘনীভূত হয়।
ববিকে বললে ও হেসে উড়িয়ে দেয়। রনি ভায়ের প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস! এমনটা ভাবা আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচায়ক।
অবশেষে রনি ভাই ফিরে আসলেন; দীর্ঘ তিন মাস পরে। তিনি আসতেই আমি তল্পি তল্পা গুছিয়ে ওখানে যাবার ট্রেনে উঠতে চাইলাম। কিন্তু রনি ভাই বিভিন্ন কাজের কথা বলে আমাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেন।
কিন্তু আমার গোয়ার্তুমির কাছে তিনি হার মেনে অবশেষে আমাকে যেতে দিলেন। তবে ববি আটকে গেল! তাঁর সে কি আফসোস!
তবে আমি আসার সময়ে রনি ভাই আরেকটা একটা গেইম খেললেন। আমার সাথে আরেকজনকে জুটিয়ে দিলেন। আমি একা যদি পথ ভুলে যাই কিংবা অন্য কোন বিপদ আপদ আসে সেই ভেবে তিনি স্থানীয় অভিভাবকের গুরুদ্বায়িত্ব পালন করলেন।
আমার সহযাত্রীর নাম সুমন। এর আগে তাঁর সাথে দেখা হয়নি। ওডেসার বিখ্যাত আই আই মেখনিকভ ন্যাশনাল ভার্সিটিতে পড়ে। ১৮৬৫ সালে নির্মিত ভার্সিটি এটা- ওর বাপ বেশ পয়াসাওয়ালা মনে হয়। কিয়েভে নিজে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকে। নিরিহ ভদ্র ছেলে। কথা বলে কম তবে বেশ আন্তরিক। নিজে যেচেই আমার সাথে খাতির জমাল। আমি বাঁচাল হলেও আজ যেন কেমন চুপ চাপ রইলাম।
সারারাতের ট্রেন জার্নি।ঘুম টুম সব উধাও- বুকের মাঝখানটা আবেগে খালি হয়ে যায়। কন্ঠতালু শুকিয়ে আসে বারবার। শীতের শুরু তখন – গাছের পাতা সব ঝড়ে গেছে। একটানা বৃষ্টি নামে ঝুম ঝুম করে। ট্রেনের কাচের জানালা কুয়াশায় ভিজে যায়- বাইরের দিনরাত ঠাহর করা মুশকিল!
সন্ধ্যা রাতে কিছুক্ষন বাৎচিতের পর ম্যাক ডোনাল্ডস-এর ঠান্ডা বার্গার খেয়ে সুমন এক প্রস্থ ঘুমিয়ে নিল। আমাকে অফার করেছিল- আমি পরে খাব বলে রেখে দিয়েছি।
ট্রেন ভোরে এসে ওডেসায় থামল। সাকুল্যে বার/তের ঘন্টার জার্নি। ট্রেন থেকে নামার আগে থেকেই সুমন বারংবার অনুরোধ করল তাঁর ফ্লাটে যেতে। কিন্তু আমি তাঁর সন অনুরোধ উপরোধ উপেক্ষা করে ছুটলাম রেনেতার বাসার উদ্দেশ্যে!
রেনেতার আমার আসার খবর আগে থেকেই জানত। ডোর বেলের সুইচে একবার মাত্র হাত ছোঁয়াতেই দরজা হাট করে খুলে গেল। রেনেতা হাসিমুখে আমাকে প্রিভেত জানাল। হাতের ব্যাগটা দরজার কাছে রেখেই জড়িয়ে ধরলাম ওকে। ঠোটে ঠোট ডোবাতেই পরম শান্তি! মনে হল নাহ সবইতো ঠিক ঠাক আছে- সেই ঘনঘন হৃদস্পন্দন , ভেজা ঠোটের সেই উষ্ণতা! আমি ওদিকে কত আকথা কুকথা ভেবে আসছি।
প্রণয়ের প্রথম পর্ব শেষে পোষাক ছেড়ে, হালকা নাস্তা সেরে রেনেতার বিছানাতেই পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম। পাশের বিছানায় তাতিয়া আর নাতাশা-ও গভীর ঘুমে তখন।
ঘুম ভাঙল দুপুর নাগাদ। উঠে দেখি আশে পাশে কেউ নেই, দরজাটা ভেজানো। ঘরের বাইরে বেরিয়ে দেখি রান্নাঘরের ডাইনিং এ রেনাতা খাবার সাজাচ্ছে। আমাকে দেখে মোহনীয় হাসি দিল। তাতিয়া আমার শব্দ পেয়েই কোত্থেকে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কিঁচির মিঁচির শুরু করে দিল।
একটুখানি ফ্রেশ হয়ে রেনেতার বাবা-মায়ের রুমে গেলাম। তারা উভয়ে সাদরে সম্ভাষণ করলেও রেনেতার মায়ের কপালের ভাঁজ আমার দৃষ্টি এড়াল না।
দুপুরের খাবার শেষে ওদের রুমে তিন বোনের সাথে তুমুল গল্প আর আড্ডা। এর মধ্যে ভারোনিকা এসেও জুড়ল। উজ্জ্বল চলে যাওয়ায় বেচারীর বেশ মন খারাপ। কথায় কথায় উজ্জলের প্রসংগ আনছিল সে- আর আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম সাধ্যমত।
রাতের খাবার শেষে আমরা সেই আমাদের অতি পরিচিত কমন বারান্দায় গেলাম! আমি আর রেনেতাই শুধু আর কেউ নয়। মস্কোর সাথে ওডেসার ক্লাইমেটের ব্যাপক পার্থক্য। ওডেসা উষ্ণ শহর। শীতকালে এখানে কদাচিৎ বরফ পড়ে। বছরের তিনের দুই ভাগ সময় সুর্যালোকিত থাকে- যেখানে রাশিয়ার অন্য শহরগুলো বরফের চাদরে ঢেকে থাকে আট মাসে অধিককাল! এখন হালকা শীত আর কুয়াশা।
এই মনোরম শীতে আমাদের প্রেমলীলা সেখানে জমল বেশ।
ক্লান্ত থাকায় রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম আগে ভাগেই।
ঘুম ভেঙ্গে গেল রাত তিনটের দিকে। পাশে হাত দিয়ে দেখি রেনেতা নেই! ভেবেছিলাম ওয়াশ রুমে গিয়েছে- কিন্তু আধাঘন্টা অতিক্রান্ত হবার পরেও সে আসছে না দেখে আমিই উঠে পড়লাম ওর খোঁজে!
দরজাটা ভেজানো ছিল- দরজাটা খুলে একটু আলতো পায়ে এগোতেই শুনি ফিস ফিস কন্ঠস্বর!
আবছা আলোতে মালুম হোল রেনাতা-ই দাঁড়িয়ে আছে। রিসিভারটা কানে ঠেকিয়ে কার সাথে যেন ফিস ফিস করে কথা বলছে!
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:১১