somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক~৪র্থ পর্ব (তৃতীয় খন্ড)

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সারাদিন মেজাজ খিঁচড়ে আছে! ববি বিবিধ উপায়ে আমাকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে। তবে সুমন আমাকে দেখলেই ফিক ফিক করে হাসছে- গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে! - দোস্ত দোস্ত না রাহা। এভাবে চলতে থাকলে শেষমেশ ক্লাউন হয়ে যাব। তাই মনের দুঃখ রাগ জ্বালা ক্ষোভ একপাশে সরিয়ে রেখে সবার থেকে বেশী লম্ফ ঝম্প শুরু করলাম।
লাল বেনারসিতে এলিনাকে কেমন লাগে সেটা আমার খুব দেখার ইচ্ছে।গতকাল মিরপুর থেকে আমরাই সবাই মিলে শাড়ি পছন্দ করে এনেছি আর এলিফ্যান্ট রোড থেকে ববির চুড়িদার নাগরাই,টোপর আর বেশ কাজ করা শেরওয়ানী। মনসুর ভবন থেকে নিজেরাও পোশাক আশাকাদি খরিদ করেছি।
ন্ধ্যের শুরুতেই ঝলমলে উৎসবের শুরু। পোলাপান তারাবাতি আর পটকা ফোটাচ্ছে। দিনের বেলায় রঙ টঙ ছেটানোর রব উঠেছিল কিন্তু মুরুব্বিদের চোখ রাঙ্গানীতে সেটা ভেস্তে গেছে।
আজ শুধুমাত্র বিয়ে আর বাসর(!) বৌভাত হবে কালকে!
বাড়ির অল্পবয়সী ছেলে মেয়ে আর বন্ধুরা মিলে ফুল দিয়ে হিন্দি সিনেমা স্টাইলে একটা বাসরঘর সাজানোর চেষ্টা করেছে। আমিও খানিকটা হাত লাগিয়েছিলাম। গাঁদা ফুলগুলো বেশিরভাগ শুকিয়ে গেছে, গোলাপের পাপড়ি কিছুটা নেতিয়ে গেলেও চলনসই একটা কিছু হয়েছে।
ছাদে গতকালের স্টেজেই বিয়ের পরের ক্রিয়াকর্ম যাকে বলে ‘সাদী কি রসম’ সারা হবে। সারা দেশ জুড়ে হিন্দি সিনেমার বাতাস লেগেছে তখন। ‘দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের’ অনুকরণে মধ্যবিত্ত উচ্চ মধ্যবিত্তরা বিয়ের এন্তেজাম করে।
সমস্যা হচ্ছে বর পক্ষ আর কনে পক্ষ নিয়ে! গেট ধরবে কে? জুতা চুরি, হাত ধোয়া সহ কনে বাড়ির যাবতীয় মৌজ মাস্তি করবে কারা? বন্ধুদের কাজ কাম কম- কামলা খাটা আর গল্প গুজব করা ছাড়া তাদের অন্য কিছু করার নেই। একজনের কাজে সবাই মিলে ছুটছে।
কনে পক্ষ বিহীন বিয়ে বাড়ির মজাটা খানিকটা ম্লান হলেও বিদেশী কনে বলে পুরো আমেজ পালটে গেছে।
পার্লার থকে সাজুগুঁজু করে লাল বেনারসিতে আগুনে রূপে হাজির হোল এলিনা-তার রূপ দেখে আমার তাপমাত্রার পারদ চর চর করে বাড়তে লাগল। সে আমার দিকে তির্যক দৃষ্টি হেনে এমন এক বক্র হাসি দিল যা দেখে আমার উত্তেজনা বরফ জলে গলে গেল।
সে ঠিক আমার নাকের সামনে সটান এসে জিজ্ঞেস করল , কেমন লাগছে আমাকে?
কি বলব আমি? ফ্যাঁসফ্যাঁসে কণ্ঠে কোনমতে বললাম, সেই রকম সুন্দরী!
-ফের একটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে সরে পড়ল সে। আর একরাতে পালটে যাওয়া সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি।
আমি উকিল বাপ বলে কথা সাক্ষী সাবুদের সাক্ষর, দেন মোহর থেকে শুরু করে কবুল তক আমার সরব উপস্থিতি থাকতে হবে। প্রেমিকাকে ত্যাগ করার শাস্তি এমন করে কেউ পেয়েছে বলে আমার জানা নেই! এমন অম্ল মধুর অত্যাচারে আমি ভীষণ বেকায়দায়- কিছুটা দিশেহারা!

দেনমোহর আর উসুল নিয়ে বেশ হাউকাউ করলাম- সাথে সুমন ও গলা বাড়াল। মুরুব্বী সেজে বেশ ভাব গম্ভীর ভঙ্গীতে এলিনার সই নিয়ে এসে নিজে সাক্ষর করলাম। বিয়ে পড়ানোর সময়ে ঘোমটাখানি কে যেন বেশী নামিয়ে দিয়েছিল- তাই কবুল শব্দ শুনতে পেলেও ওর মুখের অভিব্যক্তি দেখতে পেলামনা বলে খানিকটা আফসোস হোল। তবে প্রশান্তি যে সেই মুহূর্তে সেও দেখেনি আমার রক্তহীন ফ্যাকাসে মুখাবয়ব আর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ!
-------------------------------------------
বির নতুন ব্যবসা। হাতে সময় নিয়ে আসেনি একেবারে। বৌভাতের পরদিনই তার ফ্লাইট শিডিউল। বহু অনুরোধ করলাম ফিরা যাবার তারিখটা পেছানোর জন্য- এলিনাকে নিয়ে সীতাকুণ্ডে একবার বেড়িয়ে যাবার জন্য, সাথে এই সুযোগে কক্সবাজারে বাংলা হানিমুন ও হয়ে যাবে। কিন্তু ওর উপায় নেই- ফিরে যাওয়া নাকি খুব জরুরী।
ফ্লাইট ছিল সন্ধ্যে বেলায়। আমার গাড়িতে করে ওদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিলাম! গাড়ি থেকে নেমে ববি কোলাকুলি করে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে এগিয়ে গেল বিমানবন্দরের ডিপারচার গেইটের প্রবেশ মুখে। এলিনা একটু ধীরে সুস্থে নামল। তার পরনে বহু-রঙ্গা সালোয়ার কামিজ ওড়না ঠিক করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে!
বিদায়ের সময় ঠিক আমার নাকের সামনে এসে দাঁড়াল!
তার সেই ট্রিপিক্যাল গা জ্বালানো হাসিটা দিয়ে বলল, তুমি যা চেয়েছিলে আমি তাই করলাম। এখন খুশী-তো?? বিদায় হয়তো ফের কোনদিন দেখা হবে...বলেই সটান ঘুরে গট গট করে হেটে চলে গেল একবারের জন্য ফিরে তাকাল না!!

পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:২৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×