somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক -শেষ খন্ড, প্রথম পর্ব

১১ ই জুন, ২০২২ সকাল ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link

(এই লেখার মুল চরিত্রগুলো বাস্তবিকভাবে উক্রাইনের কৃষ্ণ-সাগর তীরের চমৎকার এক শহর অডেসা'তে থাকে! অদে(ড)সা এখন ধ্বংসপুরীতে পরিনত হয়েছে তাদের নিয়ে মুলত আমার 'বাবনিক' লেখা সাথে তাদের অনেকের সাথে আমার যোগাযোগ নেই প্রায় দেড় যুগ-।তবে হাল হকিকত সন্মন্ধে মাঝে মধ্যে খবর পেয়েছি। এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের ডামাডোলে তাদের নিয়ে আমি ভীষন শঙ্কিত! চেষ্টা করেও কোন খবর পাইনি তার!!! আশা করছি তারা যেভাবেই থাকুক ভাল থাকুক।)

১৯৯৮ সাল। সৌম্য ঢাকা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে অপেক্ষা করছে এরোফ্লোতে করে মস্কো যাবে বলে।
পড়াশুনা বা ব্যাবসায়িক কাজে নয় বন্ধুদের আমন্ত্রনে ভ্রমনে যাচ্ছে। আহা কতদিন বাদে রাশিয়া যাবে সে- যেন এখানে বসেই ওদেসার কৃষ্ণ সাগর থেকে ভেসে আসা নোনা হাওয়ার গন্ধ পাচ্ছে সে! উক্রাইনের ভিসা দক্ষিন এশীয়দের জন্য যে জটিল করেছে আর ভিসা ছাড়া আর এখন মন চাইলেই সেখানে যাওয়া যায় না সেটা সে জানে না।
লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে তখনো বাসে করে টারমাকে বিমানের সিড়ির কাছে যেতে হোত। সবখানে বাঙ্গালীরা হুড়োহুড়ি করে লাউঞ্জ থেকে বেরুতে গিয়ে, বাসে উঠতে গিয়ে, বিমানের পেটে চড়তে গিয়ে অযথাই তাড়াহুড়ো করে। ভাবখানা এমন যে আগে গেলে ভাল সিট পাবে কিংবা একটুখানি দেরি হলে তাঁকে রেখেই বিমান উড়ে যেতে পারে।
সৌম্য ধীরে সুস্থে লাউঞ্জ থেকে বেড়িয়ে দ্বিতীয় গাড়ি খানায় উঠল। আগেরটা ভীড়ে ঠাসা- এটাতে আরাম করে দাঁড়ানো যায়। গাড়ি থেকে সবার শেষে নেমে অতি শান্ত পদক্ষেপে এরোফ্লোতের সেই পুরনো বিমানের সিড়ির দিকে এগিয়ে গেল। ফ্লাশ ব্যাকে মনে পড়ে গেল বহু বছর আগে সেই প্রথমবার বিমানে চড়ার কথা। সিড়িতে কয়াক ধাপ উঠে একবার পেছন ফিরে তাকাল বহুদুরে এয়ারপোর্টের ডান দিকের সেই রেলিঙ ঘেরা খোলা জায়গাটার দিকে । বহুমানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে কিন্তু তাঁর সেই কৈশোর উত্তৃর্ণ প্রথম যৌবনের বন্ধুরা নেই।
রূশীয় স্টুয়ার্ট রমণীদের পোশাক আগের মতই আছে। টক্টকে লাল লিপিস্টিক ঠোঁটে- কৃত্তিম একটা হাসি ঝুলিয়ে সৌম্যকে নড করে বলল, গুদ ইভেনিং!
সৌম্য হেসে রুশ ভাষায় উত্তর দিল।
মেয়েটার কৃত্তিম হাসি প্রাকৃতিক এ এসে চওড়া হোল। আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বোর্ডিং কার্ড দেখে পথ দেখাল।
ছোট্ট ট্রলি ব্যাগটা টেনে নিয়ে ভেতরে ঢুকেই খানিকটা হতাশ হলাম। পরিচ্ছন্ন তবে সেই আগের মত ঘিঞ্জি আর অপরিসর সিট। নিজের সিটখানা খুঁজে বসার তোড়জোড় করছি ঠিক তখনি সেই স্টুয়ার্ট মেয়েটি আমার কাছে এসে বলল, তুমি কি আমার সাথে একটু আসতে পারবে?
আমি অবাক হয়ে ‘কানিয়াশনা’( অবশ্যই) বলে ঘুরে দাড়াতেই সে বলল, লাগেজটা নিয়ে নিতে। এবার প্রশ্ন না করেই পারলাম না- পাচিমু( কেন)?
মেয়েটা বেশ রহস্যময় বিমল হাসি দিয়ে বলল, চলই না, বুজ্বেত সারপ্রিজ(সারপ্রাইজ)!
হেটে গিয়ে টয়লেট ছাড়িয়ে নীল রঙের একটা পর্দা সরিয়েবিজনেস ক্লাসের দিকে উঁকি দিয়ে মুচকি হেসে বলল, এখানে বসবে?
আবার জিগায়! ইকোনোমিকের টিকেট কেটে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ- এতো লটারি পাওয়া। হ্যা হ্যা বলে ধন্যবাদ দিতে দিতে আমি ভেতরে ঢুকে পড়লাম। পেছন ফিরে একবার ইকোনোমিক ক্লাসের যাত্রীদের দিয়ে তাকিয়ে আমার বড্ড করুনা হোল।
সামারে সেরিমোতভার( মস্কোর এয়ারপোর্ট) অন্য রূপ! দারুন খোশ মেজাজে বিমান থেকে টানেল দিয়ে সরাসরি এয়ারপোর্টে ঢুকলাম। চারিদিকে সবার মধ্যেই একটা ফুর্তি ভাব। মেরু শেয়াল যেমন সামারে লোম ঝরিয়ে ফেলে ঠিক তেমনই শরিরের ধড়াচূড়া ঝেড়ে সল্প বসনায় ছুটোছুটি করছে। ইমেগ্রেশনে সেই সেই মহা বিব্রত ভীতু ল্যাদা-প্যাদা ছেলে নই আমি। গটাগট রুশ ভাষায় কথা বলতেই অফিসার দু-চারখান প্রশ্ন করেই ছেড়ে দিলেন।
ববি শহিদ লিটন হায়দার সহ অনেক বন্ধুরা বাইরে অপেক্ষমাণ। ওদের পোশাক আর আচরণে বলে দেয় ওরা বেশ ধনবান এখন। উষ্ণ আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না মোটেই কিন্তু ওদের পোশাকি রূপের অহংকারের গন্ধ পেলাম খানিকটা।
বাইরে চমৎকার আবহাওয়া। পোর্চে গিয়ে দাড়াতেই খান তিনেক গাড়ি এসে ভিড়ল। আমি ববি’র ঝকঝকে দামী গাড়িতেই উঠলাম। খাঁটি রুশ শেফিওর(ড্রাইভার) অভিবাদন জানাল আমাকে। নিজেকে মনে হোল ইয়েলিৎসিনের রাজকীয় অতিথি।
সামারে যদিও মস্কোর একদম অচেনা ঝকঝকে রূপ! তবুও এই মস্কোকে চিনতে আমার কষ্ট হচ্ছিল। অনেক পাল্টে গেছে সেই শহরটা। চারিদিকে পুরনো আভিজাত্যে কামড় বসাচ্ছে নগ্ন আধুনিকতা। ববি বেশ অহংকারের সাথে বর্ণনা করছিল সে পরিবর্তনে গল্প! মনে হচ্ছিল এই সব কিছুর রুপকার যেন সে-ই!!!
আগে থেকেই নির্দিষ্ট ছিল হায়দারের ফ্লাটে থাকব। ওর ফ্লাটে ঢুকেই চমকে গেলাম। আধুনিক সাজে সজ্জিত দুই রুমের বড় ফ্লাট। সে একাই থাকে এখানে। ভাড়ার কথা জিজ্ঞেস না করে পারলাম না?
হায়দার একটু লাজুক অহংকারী হাসি হেসে বলল, এইতো ছয়’শ টাকার মত পরে।
ছয়শ টাকা মানে ছয়শ রুবল?
এবার সে জোরে হেসে ফেলল- বলল, দোস্ত বাঙ্গালীরা কেউ রুবলের (?) মারে না। ডলার ছাড়া ‘বেল’ নাই।
ভীষন অবাক হয়ে আমি ডলার আর টাকার হিসাব মেলাতে বসলাম।
ওদের দেমাগ ধেমাগ বুঝলাম পরদিন! ভে-দে-ন-খাঁর কসমস সেন্টার পুরোপুরি তখন বাংলাদেশীদের দখলে। রুশীয়তো বটেই পাকিস্থানি এমনকি ভারতীয়রা সেখানে ব্র্যাত্য।
কিছু পাকিস্থানী আর ভারতীয়রা সেখানে দালালি করে নেপালীরা গুরুশেক মানে ট্রলি ঠেলে। কিছু রাশীয়ান ড্রাইভার, কেউবা ম্যানেজারীয়, একাউন্টস মেইন্টেন বা করেস্পন্ডিং জব করে। চালকের আসনে তখন বাংলাদেশীরা।
পোশাক থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক্স সব ব্যাবসায়ই প্রায় বাংলাদেশীদের দখলে। বাঙ্গালীরা জাপানিজ সনি, আকাই ফুনাই, ফুজিইতসু, কোরিয়ো স্যামসাং আর এল জির মুল ইম্পোর্টার ও ডিস্ট্রিবিউটর। এমনকি আই বি এম , ইন্টেলের সামগ্রীও তাদের হাত দিয়ে আসে।
কসমস সেন্টারে ঢুকে আমি তাজ্জব! এখানে এসে বোঝার উপায় নেই যে, আমি বাংলাদেশের বাইরে আছি। চারিদিকে গুঞ্জন, হই-চই হট্টগোল, অতি ব্যস্ততা চিরায়ত বাঙ্গালী চরিত্র উপস্থিত।
ভে দে এন খাঁ (আমরা বলতাম বেদেন খা সঠিক উচ্চারনটা একটু কঠিন , রুশ ভাষায় ভি,দ্যা,এন,(খ)হা উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা কয়েক'শ একরের বিশাল কম্পাউন্ড!
মহাকাশ গবেষনা কেন্দ্র থেকে শুরু করে মিউজিয়াম, বানিজ্য কেন্দ্র পার্ক সহ অনেক সরকারী গুরুত্বপূর্ন দফতর এখানে ছিল। কম্যিউনিজমের ভাঙনের পর এখন পার্কগুলো বাদে সবকিছুই বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া খাটছে। এখানটায় এখন গেলে হয়তো বোঝা যাবেনা কম্যিউনিজমের পতনের পর মুর্খ রুশ শাসকরা কিভাবে নিজেদের হাতে নিজেদের গৌরবজনক ইতিহাসকে ধ্বংস করেছে।

পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:০৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×