somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক -শেষ খন্ড, দ্বিতীয় পর্ব

০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
কসমস’সেন্টার। রুশ জাতির গর্ব করার মত অনন্য সাধারন মিউজিয়াম ছিল এটি। যা ছিল অন্য আর দশ-পাঁচটি মিউজিয়াম থেকে সম্পূর্ন ব্যাতিক্রম। মিউজিয়ামের বাইরে বিশাল ওই চত্বরে ঢুকলেই প্রথমে নজরে আসবে দুটো অত্যাধুনিক বিমান আপনাকে স্বাগত জানাতে পাখা মেলে দাড়িয়ে আছে । হয়তো ওর শেষ যাত্রী আপনিই আপনাকে পেটে পুরেই ও উড়াল দিবে অনির্দিষ্ট গন্তব্যে। কাছে গেলে অবাক হবেন সত্যিকারের বিমান দুটোর পেটে রেস্টুরেন্টের সাইন বোর্ড দেখে। বিমান দুটোর পিছনেই দাড়িয়ে আছে সুচালু অগ্রভাগ উর্ধ্বমুখে রেখে দু'দুটো রকেটকে পিঠে করে দুটো রকেট বুষ্টার।
মহাকাশ ভ্রমনে যাবেন? ঠিক এমনই একখানা রকেটে করে চাঁদে গিয়েছিলেন নীল আর্মষ্ট্রং ,ইউরি গ্যাগারিন, এডউইন অলড্রিন। বিস্বয় ভরা চোখে সেদিকে কিছক্ষন চেয়ে থেকে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস বুকের ভিতর চেপে রেখে শুভ্র ফেনিল পানির ফোয়ারাটা পেরিয়ে এগিয়ে যান মুল মিউজিয়ামের দিকে - বিশাল উঁচু গেট গলে ভিতরে ঢুকতেই আপনি থমকে দাড়াবেন চমকে উঠবেন সন্দেহ নেই!
অনেক দুর থেকে মাইকেল গ্যাগারিনের বিশাল পোট্রেট আপনাকে হাসিমুখে সন্ভাষন জানিয়ে মৃদু হেসে বলবে, আসুন আমাদের গর্বের ও মহান কর্মের ভাগীদার আপনিও হোন।
কি ছিলনা সেখানে। বিশাল বিশাল মহাকাশ যান থেকে শুরু করে মায় প্রথম মহাকাশচারী প্রানী ‘লাইকা’র মমি পর্যন্ত।
আর এখন সেখানে ইলেকট্রনিক্সের পাইকারী বাজার থেকে শুরু করে বাংলাদেশী ভাতের রেস্টুরেন্ট। মিউজিয়ামের অমুল্য ডেকোরশন পিসের কতকগুলো প্রশাসন সরিয়ে নিয়ে গেছে কয়েকটা চুরি গেছে আর বাকিগুলি এখানে পরে পরে নস্ট হচ্ছে। চারিদিকে ভাঙনের আভাস। স্যাঁতসেতে মেঝেতে শত শত গর্ত! ছাদ আর দেয়ালের বর্ননা নাইবা করলাম।
ইউরি গ্যাগারিনের ধুলি মলিন ছবিটা এখনো ওভাবে পরে আছে। বিষন্ন নয়নে সে চেয়ে চেয়ে দেখছে মহান সৃস্টির দুর্ভগ্যজনক পরিনতি!-লেখার এই অংশটুকু আমার লেখা ‘কাগদা তো-ভ রাশিয়ার’ শেষ পর্ব থেকে নেয়া)
পেরেস্ত্রোইকার পরেই রাশিয়ার হাউস-হোল্ড ইলেকট্রনিক ও গার্মেন্টস ব্যাবসার বড় অংশ বাংলাদেশীদের দখলে চলে যায়। তবে দখল বললে ভুল হবে –তারা এই ব্যাবসান সর্বপ্রথম ওখানে শুরু করে ।
টেকনোটেক, মিয়া,ডারটল্যান্ড নামে তৎকালীন রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশীদের হাত ধরে গড়ে ওঠে।
২৫শের কম বয়েসী এম গে উ( মস্কো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) এর এক স্টুডেন্ট চ্যাংড়া ছেলে তুহিনের গড়া ‘ডার্টল্যান্ড’ সর্বপ্রথ্ম রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় চ্যানেলে( তখনও বেসরকারি চ্যানেল আসেনি) একঘন্টার একটা অনুষ্ঠান স্পন্সর করত। এমনকি রাশিয়ার মেট্রোতে বিজ্ঞাপন প্রচারনার ধারনা তারাই দেয়- ছুটে চলা মেট্রো কোচে 'ডার্টল্যান্ডে'র বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের বুকটা গর্বে ফুলে উঠত।

তবে অতি উচ্চভিলাষি পরিকল্পনা। কল্পনাতীত অর্থের আগমনে দিশেহারা হয়ে যাওয়া, নিজ দেশের বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজনের বিশ্বাসঘাতকতা। বিশাল ব্যাবসা পরিচালনার জন্য লোকবলের অভাব কিংবা অযোগ্য লোক দ্বারা পরিচালনার অভাব সহ নারি মদ জুয়ায় চরম আসক্তি , অন্য দেশের কোর ব্যাবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে খুব অল্পদিনের তারা তাদের অবস্থান হারিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে সবাই ভুলে যায় তাদের কথা।
আমি দ্বীতিয়বার যখন গেলাম রাস্তায় বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে ঝুলছে টেলি কমিউনিকেশন, বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউস আর নামীদামী ইলেকট্রনিক কোম্পানীর বিজ্ঞাপন! আলাদীনের চেরাগের ছোঁয়ায় অবিশ্বাস্যভাবে ফুলে ফেপে ওঠা বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীরা তখনো টিকে আছে কিন্তু ধীরে ধীরে কোনঠাসা হয়ে পড়ছে।
তখন কসমস কেন্দ্রিক ব্যাবসা-টাই বেশী জমজমাট।
ববির অফিসে ঢুকে দেখি হুলস্থুল অবস্থা! ওর তিন চারজন পার্টনার সহ বেশ কিছু রুশ-বাঙ্গালি কর্মচারি চরম ব্যাস্ত। অফিস সহকারি, একাউন্টেন্ড, ম্যানেজার সুবেশী, এডীকেটেড দুর্দান্ত রুপসী রুশীয় সুন্দরীরা অফিসটাকে যেন উদ্যান করে রেখেছে।
আমি ওদের দিকে লোভী দৃস্টিতে তাকিয়ে সাইফকে ইশারায় বললাম, কি রে কি অবস্থা??
ববি একটা ফিচেল হাসি দিয়ে দিয়ে চোখ টিপে আমাকে বুঝিয়ে দিল এটা নুস তো( অতি স্বাভাবিক ব্যাপার)।
ঠিক তখুনি ড্রাইভার ভারি মিষ্টির প্যাকেটগুলো অফিসে এনে রাখল।
আলাউদ্দিন তখনো বাংলাদেশের সবচাইতে স্বনামধন্য বাংলাদেশী মিষ্টির ব্রান্ড। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন যায়যায়দিনের শেষ পাতাজুড়ে তখনো 'আলাউদ্দিনের মিষ্টি অপূর্ব সৃষ্টি' শিরোনামে বিজ্ঞাপন চলে! কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে এই ব্রান্ডের মিষ্টি অতিথির ইজ্জত বাড়ায়! আমি আসার সময়ে সেখান থেকে দশ কেজি শুকনো মিষ্টি নিয়ে এসেছি।
কেন? কেননা দারুন একটা সুখবর পেয়েছিলাম আসবার আগে- ঠিক দিন সাতেক আগে ববি এলিনার ঘর আলো করে তাদের প্রথম কন্যাসন্তানের পৃথিবীতে আগমন!
ববি চেয়েছিল পুরো কসমস সেন্টারের সবাইকে খাঁটি বাংলাদেশি মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করবে। প্যাকেটে করে মিষ্টি আনা বেশ হুজ্জোতি। ইচ্ছে থাকলেও কেজি দশেকের বেশী মিষ্টি আনার রিস্ক নেইনি।

পরের পর্ব~৩ ও ৪ঃ Click This Link
প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৩৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×