somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মস্কোর ঘণ্টা

২৯ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্কোর ক্রেমলিনের ইভান গ্রেট বেল টাওয়াররে অনতিদুরে দেখা মিলল সপ্তম আশ্চর্যর এক আশ্চর্য যাকে আমরা মস্কোর ঘন্টা বলে জানি আদপে তা ‘জার বেল’(Tsar Bell) নামে পরিচিত।
দৈত্যাকৃতি ঘন্টা আর বিশাল এক ক্যানন বা কামান সেটা 'জার কামান' নামে পরিচিত যা এযাবৎকালের বড় কামানের একটা।আমি প্রথমে যার পর নাই হতাশ হয়েছিলাম এ দুটো শিল্পকর্ম দেখে। আমি ভেবেছিলাম আমার ধারনার থেকে বিশাল ঘন্টা ঝুলে আছে ততোধিক কারুকার্য খচিত গ্রেট বেল টাওয়ারের বারান্দায়। চোখ তুলে ঘন্টার বিশালতা আর কারুকার্য দেখে বিস্ময়ে হা হয়ে যাব- সপ্তাশ্চর্য বলে কথা! বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে কাটিয়ে দেব ঘন্টার পর ঘন্টা- অপেক্ষা করব জলদগম্ভীর কন্ঠে তার ধ্বনি! বুকে কাপন ধরাবে সে ঘন্টার মুর্ছনা! গীর্জা ঠিকই আছে কল্পনার সাথে মেলে কিছুটা, কিন্তু একি-ঘন্টার এ হাল কেন?
একটা গ্রানাইডের বেদীর উপর কাত হয়ে দাড়িয়ে আছে বিশ্বের এক অন্যতম বিস্ময়। ভাঙ্গা ঘন্টা-এটা বাজবেনা কখনো।পরে জেনেছি এটা বাজেওনি কখনো! অর্থ আর প্রতিপত্তির কি নিদারুন অপচয়!
বিশ্বের এক বৃহত্তম ঘন্টা যার থেকে একবারো ধ্বনিত হয়নি কোন মূর্ছনা আর বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কামান,যেটা থেকে একটা গোলাও বর্ষিত হয়নি।লেনিনের সমাধি মন্দির দেখে যতটা বিমোহিত হয়েছিলাম ঠিক ততটাই হতাশ হলাম মাথামোটা জারদের এমন অসহ্য কর্মযজ্ঞ দেখে।
এমন দুটো মহান(!) শিল্পকর্ম মানব জাতির কাজে আকাজে কোনকিছুতেই আসেনি। তবে ঘন্টা বাজা না বাজার উপর মানবজাতির কোন কল্যান অকল্যানের ব্যাপার জড়িত থাকার কথা নয় কিন্তু কামান থেকে যে একটা গোলাও বের হয়নি এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর।
জার বেলের ওজন মতভেদে ২০০ থেকে ২১৬ টন। উচ্চতা নিয়েও মতভেদ আছে- উচ্চতা ৬ থেকে ৬.১৪ মিটার আর ব্যাসার্ধ ৬.৬ মিটার।
জার পিটার দ্যা গ্রেটের ভাতিজি সম্রাজ্ঞী আন্নার অনুমতিক্রমে তৈরি করা হয় জার বেল।
রাজকুমারী আন্না প্রথমে ফ্রান্সের রাজকীয় কারিগর দিয়ে ঘন্টাটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু জার্মানীর আদালত এটাকে অসম্ভব কর্ম বলে প্রত্যাখান করার ফলে,আন্না কাজটি করার দায়িত্ব দেন তৎকালীন বিখ্যাত রুশ কারিগর ইভান মতরিন আর ছেলে মিখাইল মতরিনকে।
প্রথমবার দুবছর কাজ করার পরে এক রহস্যময় অগ্নিকান্ডের ফলে ঘন্টাটি নষ্ট হয়ে যায়,যার শোকে মারা যায় মুল কারিগর ইভান মতরিন।(মতৈক্য বিদ্যমান)
পরবর্তীতে মিখাইল মতরিন পুরো দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেয়। দুইশত নামিদামী কারিগরের এক বিশাল বহর নিয়ে ১৭৩৫ থেকে ৩৭ সালে এই বিশাল কর্মযজ্জ্ঞটি শেষ করে। কিন্তু জনশ্রুতি আছে,ঘন্টাটি তৈরির পরে মাটির গর্তে যখন ঠান্ডা করা হচ্ছিল তখন আবার ক্রেমলিনের ফের ভয়ঙ্কর এক অগ্নিকান্ডে ঘন্টা’টির ক্ষতিসাধন হয়। রাজকীয় কর্মচারিরা উত্তপ্ত সেই ঘন্টাখানা অতুদ্রুত শীতল করেত গিয়ে সবচে বড় ক্ষতিটা করে ফেলে।
অন্য এক সুত্র মতে,আচমকা মুষল ধারায় বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তপ্ত ঘন্টাটি অতিদ্রুত ঠান্ডা (overheating and uneven cooling) হওয়ার ফলে ভেঙ্গে যায়। ঘন্টা থেকে ১১.২ টনের একটা খন্ড আলাদা হয়ে যায়।
অন্য আরেক সুত্র থেকে জানা যায় সুইডিসদের সাথে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জয়ী হয়ে পিটার দ্যা গ্রেট যখন মস্কোতে ফিরে আসেন তখন তিনি আদেশ করেন তার বিজয় সেলিব্রেট করতে মস্কোর সব ঘন্টা বাজাতে।কিন্তু সারা মস্কের সব ঘন্টা যখন টুংটাং স্বরে বাজছিল তখন নিশ্চুপ ছিল শুধু জার বেল। পিটার দ্যা গ্রেটের গার্ড রেজিমেন্টের সব সৈন্য মিলে বহু চেস্টা করেও সেই ঘন্টা থেকে একটা ঢং শব্দ বের করেত পারেনি!
জার বলে কথা-তখন পিটারের সব গোস্যা গিয়ে পড়ল সেই ঘন্টার্ উপর! তার ধারনা ছিল তার এই মহান বিজয় উৎসবের বিরোধীতা করছে এই ঘন্টা-অতএব সেটাকে ভেঙ্গে নিক্ষেপ কর গর্তে।
সুত্রমতে ‘জার বেল’ ঠিক একশত বছর ১৮৩৫ সাল পর্যন্ত অনাদর অবহেলায় পড়ে ছিল সেই গর্তে। ফরাসী স্থপতি অগুস্তে মন্তফ্রেন্দ সেটাকে উত্তোলোন করে গ্রানাইড ভিত্তিস্থম্ভে স্থাপন করেন-আর ভাঙ্গা সেই টুকরোটিকে রেখে দেন তার পাশেই।
এর আগে একই নামে আরো দুটো ঘন্টা তৈরি করা হয়েছিল। প্রথমমটা তৈরি হয় ১৬৫৫ সালে যার ওজন ছিল ১৩০টন। সেটাও কখোনো বাজেনি চার্চের বিরোধীতার কারনে আর পরেরটা তৈরি হয় ১৭০১ সালে সেটারো হাল হয়েছিল ওমনি।
(মাঝের ছবিটি ১৯৯২-৯৩ সালে পোলারয়েড ক্যামেরায় তোলা)
(রি-পোষ্ট)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৪২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×