somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক-৮ (শেষ খন্ড)

০২ রা আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


( ~সুদীর্ঘ সময় ধরে দীর্ঘ ধারাবাহিক সত্য কাহিনী নির্ভর উপন্যাস 'বাবনিক' আমি লিখতে লিখতে ক্লান্ত আপনারা পড়তে পড়তে ক্লান্ত! তবে এটা শেষ না করে শান্তি মিলছে না। আর মাত্র তিনখানা পর্ব পরেই শেষ হয়ে যাবে এটা। সম্ভবত এটা আমার 'রাশিয়া ভিত্তিক' শেষ উপন্যাস। এই বিরক্তিকর কাজ আর করবনা মনে হয়। প্রিয় ব্লগার, যারা যারা মাঝখানে এসে মাথামুণ্ডু কিস্যু বুঝছেন না তাদের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ভাল থাকুন সবাই।)

রেমেনাকে কোলে নিতে ছোট বড় সবাই হুড়োহুড়ি করছিল। এমন পরির মত মেয়েকে কে-ই না আদর করতে চায় কিন্তু সবার নজর ঘুরে ফিরে যাচ্ছিল এলিনার দিকে। কারো কারো চোখে মুখে বিস্ময়- কেউবা খানিকটা ঘৃণাভরে তাকাচ্ছে ওর দিকে।
কি নিষ্ঠুর নির্মম পাষাণ মা। নিজের দুধের সন্তানকে ফেলে রেখে যাচ্ছি। লোভী স্বার্থপর সাদা চামড়ার বিদেশী- সামান্য ফ্লাটের লোভে নিজের সন্তানকে বিকিয়ে দিতে এরা দ্বিধা করে না। সে জন্যই সাদা চামড়ার বিদেশী মেমকে এরা বড্ড ঘেন্না করে!
এলিনার হৃদয়ে তখন কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটা কেউ জানে না-তেমন করে উপলব্ধিও করতে চায় নি।
ববির মা ও ছোট বোনের দায়িত্ব পড়ল মেয়েকে দেখ-ভাল করার। তারা সানন্দ-চিত্তে সেই গুরুভার কাঁধে নিল।কিন্তু রেমেনা এই পরিবেশে অভ্যস্ত নয়। সে মাকে ছাড়া থাকতে চায় না। কেঁদে কেটে রুশ ভাষায় আধো আধো বোলে কি বলে সেটা কেউ বুঝে না। ববিকে সারাক্ষণ আশেপাশে থাকতে হয়।

এলিনা সেবার তিনদিন ছিল বাংলাদেশে। সারাক্ষণ নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছি। কারো সাথে কথাবার্তা-তো দুরের কথা চোখ তুলে চায়নি পর্যন্ত! কারো অনুরোধ আবদারেই সে মুখে খাবার তোলেনি-শুধু ববির মা ব্যতিক্রম। সে তার কণ্যার আদরে যত্ন করে তার চুল বেঁধে দিয়েছে-নিজের হাতে তুলে খাইয়ে দিয়েছে। কখনো গা সাপটে দিয়েছে- ওর পাংশুটে বিবর্ণ মুখখানা দুহাতে তুলে ধরে নিজ ভাষায় বিড়বিড় করে আফসোস করেছে।
মা চেনে তার সন্তানকে- তিনি সবকিছু না জানলেও আন্দাজ করতে পারেন। এ মেয়ে তেমন মেয়ে নয়।এ মেয়ে তার সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য সব ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিল। তিনি ভেবে কোন কূলকিনারা পাননা কেন এমন হোল?
এলিনার ফিরে যাবার সময় হয়ে গেল! আর ঘণ্টা চারেক পরেই তার ফ্লাইট। সে চায়নি তবুও ববির মা শেষ মুহূর্তে মেয়েকে তার কাছে দিয়ে একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য সেই রুমে দিয়ে দরজা আটকে দিল।
মা মেয়ের সেই শেষ বেলায় কি কথা হয়েছিল তা পৃথিবীর কেউ জানবে না কোনদিন। সে কথা জানার প্রয়োজনও নেই। শুধু আমরা অনুভব করতে পারি বা কল্পনায় এঁকে নিতে পারি সেদিনের সেদিনের সেই চরম বিয়োগান্তক বিচ্ছেদের গল্প।
বের হবার সময় হয়ে এসেছে। ববি ধীরে ধীরে দরজা নক করল। আলতো করে এলিনাকে ডেকে বলল যাবার সময় হয়ে এসেছে।
খানিক বাদে এলিনা মেয়েকে নিয়ে বের হোল। মেয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে ভীষণভাবে আঁকড়ে ধরে আছে। সে কি জানে এই তার শেষ দেখা? আকস্মিক বা দুর্ঘটনায় এ বিচ্ছেদ নয়। এ বিচ্ছেদের আয়োজন ঠাণ্ডা মাথায় –দুপক্ষের চুক্তিতে।ববির মা হাপুস নয়নে কাঁদছে। চোখের কোন জল চিক চিক করছে সেখানকার প্রতিটা মানুষের। ববিও নিজেকে সংবরণ করতে পারেনি। তার দুচোখের কোল ভেজা।
শুধু নির্বিকার আবেগহীন পাংশুটে মুখে অনির্দিষ্ট গন্তব্যের পানে চেয়ে আছে এলিনা। পৃথিবীর কোন কষ্টই যেন তাকে স্পর্শ করছে না। মেয়ে মাকে ছাড়তে চাইছে না –এর পরেও খানিকটা জোড় করেই যেন তার কাঁধ ছাড়িয়ে নিঃশ্বংসের মত ববির মায়ের কোলে তুলে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে হনহন করে হেটে গেল দরজা অভিমুখে।
গাড়িতে উঠে অব্দি একবারও তাকায়নি মেয়েটার দিকে। অনেকে তাকে শেষবার দেখার জন্য অনুরোধ করলেও সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকল।
ইমিগ্রেশনের গেট তক ববি পৌঁছে দিল। ওর সাথে ভ্রমণরত এক পরিচিত বাঙ্গালীকে অনুরোধ করল তার দিকে নজর রাখতে।
যাবার সময়ে ববির সাথে হাই হ্যালো বিদায় কিছুই বলল না সে।সৌম্য দাঁড়িয়ে ছিল অনতিদূরে। তার দিকে একবারের জন্য ফিরে তাকাল না পর্যন্ত।

পাত্থর বানা দিয়া মুঝে রোনে নেহি দিয়া
দামান নে তেরি গামনে ভিগোনে নেহি দিয়া *


বিমানের সিট বেল্ট বেঁধে নিয়েছে সবাই। টারমাক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ান এরোফ্লোত – প্রচণ্ড গতিতে খানিক পথ চলে সামনের চাকা উপরে উঠতেই উচ্চ শব্দে কানে খানিকটা জ্বালা ধরাল। এলিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে শেষবার উড়ে যাচ্ছে বিমান। নতুন জীবনের রোমাঞ্চ আবেগ ভালবাসায় ভরপুর আনন্দ উদ্দীপনা সহ কত স্বপ্ন নিয়ে প্রথমবার এদেশে এসেছিল সে। ফিরে গিয়েছিল অনেক চাওয়া পাওয়া পূরণের স্বাদ নিয়ে। নিজের সংসার সাজিয়েছিল মনের মাধুরী মিশিয়ে। কিভাবে কত দ্রুত সবকিছু পালটে গেল। এবার শত স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে নিজের আত্মার সাথে সব বন্ধন ছিন্ন করে শেষবার উড়ে যাচ্ছে পরিচিত গন্তব্যে কিন্তু অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে।
কেন এমন হোল?? কার অভিশাপে কিসের পাপে এভাবে সব কিছু নিঃশেষ হয়ে যৌবনের শুরুতেই সে জীবনের প্রান্তে এসে দাঁড়াল। তার নাড়ি ছেড়া ধনের সাথে কি আর এই জনমে দেখা হবে না? বিমান আকাশে উঠে চাকা গুটিয়ে ফেলছে। এলিনা জানালার ফাঁক দিয়ে মাথা উঁচু করে শেষবারের মত প্রাণপণে দেখে নিতে চাইল তার মেয়ের এই নতুন আবাসকে। সবকিছু ধীরে ধীরে ধোঁয়াশা হয়ে গেল! হারিয়ে ফেলল চিরতরে তার মেয়েকে;
পেট খামচে ধরে ভয়ঙ্কর বেদনায় আর্ত চিৎকার করে কেঁদে উঠল সে। সে কান্নার তোড়ে হৃদয় ছলকে যেন রক্ত বেরিয়ে আসতে চাইছে চোখ মুখ ঠিকরে। বিমানের সব যাত্রীরা বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে হতবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল তার দিকে। কারো মুখে যেন সান্ত্বনার কোন ভাষা নেই।

*অনুপ জলোটা’র বিখ্যাত গজলের পংতি।


আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৩৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×