somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৌদ্দ-তে ১৪

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৪ই ডিসেম্বর ব্লগে আমার ১৪তম বর্ষপুর্তি নিয়ে বিশেষ ভাবনার ৩ পর্বের প্রথম পর্বঃ

মানুষ আমি আমার যেন পাখির মত মন; তাইরে নারে নারে গেল সারাটা জীবন!
কিছুদিন আগে এক সাক্ষাতকারে বিখ্যাত বোহেমিয়ান কবি হেলাল হাফিজ বলেছিলেন, একটা জীবন মনে হয় তিনি অপচয় করেছেন। তার অনেক কিছু করার ছিল দেবার ছিল কিন্তু তিনি অবহেলা করে সময়টা শুধু অপচয় করেছেন।
আফসোস; হ্যাঁ আমি এই আফসোস নিয়ে মরতে চাই না

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় তার জনপ্রিয় উপন্যাস ‘লোটা কম্বলে’ সম্ভবত মাস্টার মশাইয়ের জবানীতে বলেছিলেন,
পৃথিবীতে এসেছিস যখন- একটা আঁচড় কেটে যা।

সারাবিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষ অনবরত আঁচড় কেটে যাবার চেষ্টায় আছেন। সেখানে আমার মত অর্বাচীনের খামচা খামচি করে কোন লাভ নেই জেনে বুঝেও অতি ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি- কিছুই না হবার সম্ভাবনা শতভাগ; তবুও আমি আফসোস নিয়ে মরতে চাই না।
লেখালেখি করে একজন বা একাধিক মানুষের মানসিক অবস্থার হয়তো সাময়িক পরিবর্তন ঘটানো যায় কিন্তু এসব করে কোন বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধিত হয় না!
মৃত্যুর সাথে সাথেই আমার সব কারিকুরি জারিজুরি শেষ! কত বড় বড় হাতি ঘোড়া মেরে গেলাম আর কত শত লোক আমাকে নিয়ে শোকে মাতম করল তাতে আমার কোনকিছুই আসবে যাবে না। মৃত্যু মানেই চিরতরে ব্লাক আউট- পৃথিবীর সব লেন দেন চুকে যাবে। সেখানে আমার কোন শত্রুতা মিত্রতাই কাজে লাগবে না। সারা বিশ্বজুড়ে কত মানুষ আমাকে মহান বলল কিংবা কজন আমাকে 'শয়তানের অবতার' বলল তাতে আর কিছুই আসবে যাবে না। নিজের সৃষ্টি দিয়ে কত সহস্র মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকলাম, কত মানুষ আমার জন্ম মৃত্যুদিনে হাট বাজারে হাপুস নয়নে হেসে কেঁদে সারা হলেন তাতে আমার বিন্দুমাত্র ক্ষতিবৃদ্ধি সাধন হবে না।
মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়ি- চরমভাবে! কি হবে এসব ছাইপাশ লিখে। এ উপলব্ধি থেকেই হয়তোবা পৃথিবীর বহু কবি সাহিত্যিক শিল্পী শেষ জীবনে তাদের সব শিল্পকর্ম সব সৃষ্টি ধ্বংস করে রেখে গেছেন!
********
প্রথমদিকে ব্লগের ক্যাচাল দেখে হতবাক হয়েছি, মুষড়ে পড়েছি। ভেবেছি এরা জীবনটাকে কতটাই না সিরিয়াস-ভাবে নিয়েছেন। কিছু মানুষ সামান্য খুচরো পয়সার হিসেব নিয়ে দাঙ্গা বাধায়। এরা হয়তো একদিন উপলব্ধি করবে কিংবা হয়তো উপলব্ধিও করবে না; কিভাবে অতি ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়ে ভয়াবহ কোন্দল বাঁধিয়ে সর্বোপরি নিজের ও চারপাশের মানুষের সময়ের ভীষণ অপচয়টাই না করেছে।
********
একজন গুলশান আরা জানা – যাকে ব্লগ মাতা বা বাংলা ব্লগের পথিকৃৎ বলা হয়। আমি জানিনা ক’জন জানেন চেনেন তাকে। যেই জানা আপাকে আমি জেনেছি, দেশের প্রতি বাঙলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধের কথা জেনেছি। যার ত্যাগের কথায় আমি শিহরিত হয়েছি- তার সন্মন্ধে ব্লগারেরা একটুখানি জানলে এই ভয়ঙ্কর অনর্থ বাঁধিয়ে বাঙলা ব্লগ আর ব্লগের পেছনের মানুষদের ভয়ঙ্কর দুরবস্থা ও পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিতেন না।
একটা মানুষ শত বাধা বিপত্তি তার কঠিন কোমল পায়ে দলে সিংহ হৃদয় নিয়ে ব্লগকে যেভাবে মমতার বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছেন আজ অব্দি- নিজের বিলাস ব্যাসন জলাঞ্জলি দিয়ে শেষ কপর্দকটুকু ব্লগের পেছনে ব্যয় করেছেন,সেই মহীয়সী নারীকে আমরা আমরা তার নুন্যতম যোগ্য সম্মান দিতে পারিনি।
অথচ ব্লগের পাতায় নিজের একখানা কবিতা কিংবা সাহিত্য প্রচার করে আহ্লাদে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ভেবেছি; ব্লগটাকে-তো আমি ঋণী করে দিলাম! ব্লগ কখনো কট্টর মৌলবাদের প্রচারে মুখর হয়েছে কখনোবা হয়েছে আগ্রাসী নাস্তিকদের আখরা। দিনের পর দিন চলেছে ভিন্নমতকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার প্রতিযোগিতা। অতীব নোংরা আক্রমণ করতে এসব কিছু তথাকতিথ সৃজনশীল মানুষ পিছপা হননি। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে চরম অসত্য বিদ্বেষপূর্ণ লেখা দিয়ে হয়েছে প্রশাসনের চক্ষুশূল।
যিনি লেখা দেন তিনি ভাবেন; কাম একটা করেছি- সত্য কথা বলতেই হবে সেটা যতই অপ্রিয় হোক। লেখক হয়তো ফাকে ফুকে বেঁচে যান কিন্তু এর তীব্র দহন জ্বালা পোহাতে হয়েছে ব্লগ ও ব্লগের নেপথ্যের মানুষ গুলোকে।
ভাবুনতো একবার; কি দায় ঠেকেছে এসব মানুষের এ দায় কাঁধে নেবার? কিংবা আমরা কি আমাদের স্বাধীনতার অপব্যবহার করছি না?
*********
ব্লগারদের প্রস্থান: বাঙলা ব্লগে কাউকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ করে বা ডেকে আনা হয়নি। যার ইচ্ছেয় এসেছেন যার ইচ্ছে হয়েছে চলে গিয়েছেন। সবাই যার যার নিজের স্বার্থ নিয়ে ভাবেন। যে ব্লগ আপনার সৃষ্টিশীল ভাবনাকে প্রকাশ করার একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছিল- যার জন্য অনেকেই আজ নিজেকে লেখক হিসেবে গর্বিত-ভাবে পরিচয় করান, বিভিন্ন মাধ্যমে সদর্পে দাবড়ে বেড়ান তারা অনেকেই ব্লগের দুর্দিনে আগ পিছু না ভেবে নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্লগ ছেড়েছেন। কেউবা ভয়ে, কেউবা সময়ের অভাবে কিংবা ইচ্ছে অনিচ্ছায় অনেকেই ছেড়েছেন কিন্তু ব্লগকে যারা ভয়ঙ্কর দুর্দশা দুরবস্থার মধ্যে ফেলে গেছেন তারা আর এমুখো হননি কিংবা কালে ভদ্রে আসলেও আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম বা বর্তমান বেহাল অবস্থা দেখে নাক কুঁচকে সটকে পড়েন।
এখন ভাবনার সময় এসেছে; আমরা আসলেই কি বাঙলা ভাষার সবচেয়ে বড় এই ব্লগীয় প্লাটফর্মটাকে টিকিয়ে রাখতে চাই নাকি খুচরো দলাদলি করে বা কদর্য রেষারেষি করে এর ঘণ্টা বারোটার কাটায় নিয়ে যেতে চাই?
আমরা কি পারিনা ব্লগের মানোন্নয়নের জন্য খানিকটা পরামর্শ দিয়ে চেষ্টা বা তদবির করতে?ব্লগের এই সমস্যা ওই সমস্যা বলে কাদের উপরে আমরা দায়ভার চাপাই- তাদের কি দায় ঠেকেছে রে ভাই পকেটের পয়সা দিয়ে দুনিয়ার বিপদ আপদ ঠেলে এই ব্লগ চালানোর?

এখন সত্যিকারে ভাববার সময় এসেছে; ব্লগের জন্য আমরা কি করেছি- সেটার?
********
কোন কোন ব্লগার কখনো একটাও মন্তব্য করেন না। অথচ দিনের পর দিন নিজেদের পোস্ট দিয়ে যান, সেখানেও তারা তেমন মন্তব্য পাননা। মন্তব্যের ঘর ফাকা থাকলে তারা থোড়াই কেয়ার করেন। একের পর এক পোস্ট দিতেই থাকেন। এদের নিয়ে আমার ধারনা; ইঁনারা ব্লগকে নিরাপদ স্টোরেজ হিসেবে ধারনা করে তাদের লিখা জমিয়ে রাখেন।
কিন্তু ভাই, অন্যসব ব্লগের কথা বাদ দিলাম- প্রথম আলোর মত জাঁদরেল প্রকাশনা সংস্থা তাদের ব্লগীয় কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছিলেন। সময় মত উত্তোলন করিনি দেখে আমার মত অনেকেই জামানত হারিয়েছেন। ব্লগের হাল এমন চলতে থাকলে কোন একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবেন সব লেখা হাওয়া! অতএব নিজেদের স্বার্থেই ব্লগের প্রতি একটু নজর দিন।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০০
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×