লেখাটা পড়ার আগে;।
১)ভারত বিদ্বেষ বিষয়টা মাথায় আনবেন না। আমি কোন ভাবেই ভারত বিদ্বেষী নই।
২) আপনাকে বরিশালের লোকাল ইলিশ সন্মন্ধে ধারনা রাখতে হবে। লেখায় ও মন্তব্যের উত্তরে যেটা বারবার বলা হয়েছে। স্বাদে গন্ধে সেরা এই মাছগুলো চেনে জানে শুধু এপার থেকে ওপারে যাওয়া নারায়নগঞ্জ বিক্রমপুর আর দক্ষিনবঙ্গের সব বাঙ্গালেরা যারা এই ইলিশের গল্প করে ওদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। দাদারা এখন এই বরিশালের লোকাল মাছ ছাড়া অন্য মাছ বিশেষ পার্বনে খেতেই চায় না। এদিকে এই মাছ ছাড়া আমাদের দক্ষিনবঙ্গ ও কিছু অঞ্চলের মানুষের মুখে রুচে না। অন্য অঞ্চলের মানুষ ভাবে পদ্মার মাছ স্বাদ বেশী কিন্তু এটা ভুল তথ্য। পদ্মার মাছ থেকে এই মাছের স্বাদ বেশী। এই মাছ নিয়ে চলছে বহু বছর ধরে দুই দেশের টানাটানি। এটা ভাল জানেন ইলিশ মাছ বিশেষজ্ঞ শাহ আজিজ ভাই আর জুলভার্ন ভাই।
৩) বাৎসরিক ৫ লাখ টন ইলিশ আহরনের হিসাব এখানে কোনভাবেই আসবে না। লোকাল ইলিশ আমার মতে সর্বোচ্চ বছরে ২০/২৫ হাজার টন হয়(নিশ্চিত নই)
৪) অঞ্চল ভেদে ইলিশের দাম একেকরকম। বরিশালের লোকাল ইলিশের দাম সবচেয়ে বেশী। সবচেয়ে ভাল ও দামী মাছ পাথরঘাটার। সাগরের ইলিশ কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। বার্মার ইলিশ সস্তায়ও কেউ খেতে চায় না। এগুলো পদ্মার ইলিশ বলে মানুষকে ঠকিয়ে গছানো হয়। পদ্মার ইলিশ প্রায় হারিয়ে গেছে।
৫) সরকারিভাবে শুধুমাত্র বরিশালের লোকাল ইলিশ রফতানি হচ্ছে। বলা হচ্ছে মোকামীদের বাধ্য করা হচ্ছে কমদামে সেটা রফতানী করতে।
৬) অযথা ধর্মকে টেনে আনবেন না। আমি কোন ধর্ম বিদ্বেষি নই। এটা ক্যাচাল পোষ্ট নয়। বিশেষ কারনে মন্তব্যের উত্তর দিতে দেরি হবে বা সংক্ষিপ্ত উত্তর দিব- মন খারাপ করবেন না।।
****
ভারত এবার দুর্গাপুজা উপলক্ষে আব্দার করেছে ৪৫০০ মেট্রিকটন ইলিশমাছ আর বাংলদেশ দিতে চেয়েছে ৩৫০০ মেট্রিকটন। মাছ আছে নদীতে সেগুলো জালে ধরা পরবে কি পরবে না ঠিক নাই, কিন্তু ভাগ বাটোয়ারা হয়ে গেছে। মাছের কয়েক চালানের কিস্তি অলরেডি দাদাদের বাজারে পৌছে গেছে। সাংবাদিক সুব্রত দাদা কলকাতা বাজার থেকে হাসি হাসি মুখে খবর পাঠাচ্ছেন ওপারে এপারের মাছ পৌছে যাওয়াতে আড়তে উতসবের আমেজ - কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর আগে এমাছ আসলে দারুণ বিক্রিবাট্টা হত, এখন বাজারে একটু বিক্রি কম।
বাংলাদেশের মিডিয়াতে খবর দিচ্ছে জেলেদের মুখে হাসি প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে - মাছের পেটে ডিম কম দেখে জেলেরা চাচ্ছে এবার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার সময়টা যেন একটু পিছিয়ে দেয়।
এদেশী ক্রেতা এখবরে বেজায় খুশী মনে মুক্ত কচ্ছে শুক্রবারে ছুটির দিনে মুক্তকচ্ছে ছুটছে বাজার আর ঘাট অভিমুখে। পদ্মা আর বরিশালের ইলিশের স্বাদ একটু সস্তায় চেখে দেখার লোভে। ওমা কিসের কি!! ওপারে যে মাছ যাচ্ছে মাত্র ১০ ডলারে (১০৯৫ টাকা আজকের দর) সেটার বাজারের দাম ১৭৫০ থেকে ২০০০ টাকা। তাও চাদপুরের বরিশালের পদ্মার নাকি চিটাগাং কিংবা বার্মার মাছ সেটা চেনা মুশকিল! ওদিকে আদৌ সেটা ইলিশ কি না এটাও প্রশ্ন? ইলিশের নামে ইলিশের চেহারার এদেশে এখন কতকিছু বিকোচ্ছে!!
আমরা গু মুত যা খাই- ওপারে কিন্তু দাদাদের জন্য একেবারে খাঁটি ( যাকে বলে লোকাল) ইলিশগুলো গেছে (টেলিভিশনে দেখলাম); গর্দান মোটা মাথা ছোট চকচকে রুপোলি গোলগাল টাইপের একেবারে খাঁটি মাছগুলো। না দিয়ে উপায় নেই- তারা মাছ চেনে। আমরা জানি এখন খবর চেপে-চুপে রাখা কষ্ট বটে।
এক মাছ বেপারি আক্ষেপ করে বলল; ভাই কি আর কব, আমরা তো জাইল্যা, দাদাগের পুকুর- আমাগের যে মাছ মাইরব্যার দেয় তাই বেশী!! কথাটার অর্থ অনেক গভীর।
অনেক কিছু জেনেও বলা যায় না।
তবে অসমর্থিতসুত্রে ( তবে ওপেনসিক্রেট) বরিশালের প্রশসন কঠোরভাবে এটা নিয়ন্ত্রন করে বলে শুনেছি। আড়তে ভাল মাছ ( লোকাল বলে পরিচিত) যেটা আসবে প্রথমে সেটা রপ্তানী হবে তারপরে উদ্বৃত্তগুলো দেশেরবাজারে যাবে।
দেখুন কি দুর্ভাগ্য আমাদের। পৃথিবীর সবদেশ থেকে ঝড়তি পড়তি আর ঝাড়া বাছা মালগুলো এদেশে আসে। আমার মনে হয় না অন্য কোন দেশ নিজেরা ভাল মাল অন্যদের অল্প পয়সায় খাইয়ে নিজেরা বেশী পয়সায় সেগুলো কিনে খায়। এদেশে যত ফল মুল, শাক-সব্জি, জুস-চকলেট, চাল-ডাল, আনাজ আসে সবগুলো বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানের। ফল-ফলাদি প্রক্রিয়াজাত মাছ মাংস দুগ্ধজাত খাবার, জুসের তো কথাই নাই- যেগুলো পশু পাখিও খায় না সেগুলো এদেশে পয়সা দিয়ে আমদানি করে। সব মেয়াদউত্তীর্ন মালগুলো নতুন ট্যাগ লাগিয়ে এদেশে পাঠায়। আর আমরা আর আমরা নিজেরা ভাগারের মাল খেয়ে তাদেরই সবচেয়ে সরেস সেরা ভাল মালটা খাওয়াই।
আফসোস সত্যিকারেই আফসোস!!!
কোন একদিন কলকাতায় গিয়ে আমাদের এদেশী পদ্মার ইলিশ কিনে আনতে হবে।
***
একখানা কুইজ;
~একইসাথে চাঁদপুর আর বরিশালের লোকাল ইলিশ ভাজা হচ্ছে উপরেই পাশাপাশি আছে। ডানে বাঁয়ে মাঝে বলুনতো কোনটা কোথাকার???
~ বরিশাল লোকাল ডিম ছাড়া মাছ কাটার পরে এমন দেখা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৪৮