ঘটনা ১
নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায় যুক্ত আমার প্রবাসী বন্ধু ফোন দিয়েছিল। বদরুদ্দিন ঊমরের ভাবশিষ্য আর আনু মোহাম্মদের ছাত্র সে পাক্কা সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার পাশাপাশি ভীষন উদার চিন্তাধারার মানুষ সে, তার গিন্নীও ডক্টরেট শেষ করে অধ্যাপনায় যুক্ত- সেই মেয়েও আমাদের রোডে থাকত, তাকে ছোট বেলা থেকেই চিনতাম!
আমার বন্ধু ডঃ ইউনুসকে অপছন্দ করে। তার কথায় তিনি স্বার্থপর ও ধান্দাবাজ- বাংলাদেশের কোন দুুর্যোগেই সে দুই টাকা সাহায্য করে নাই। সে একজন পুরোদস্তুর ব্যাবসায়ী মানুষ, একজন ব্যবসায়ীর দ্বারা দেশের সেই লেভেলের ভাল কিছু আশা করা বোকামী হব
সে মূলত ক্ষিপ্ত আনু মোহাম্মদকে সঠিকভাবে না মুল্যায়ন করায়।
ওদের দুজনেরই একাডেমিক বন্ধুবান্ধবের অনেকেই ক্যাডার সার্ভইসে যুক্ত! তাদের কয়েকজনের সাথে দু'জনে কথা বলে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ হতাশ। ছাত্ররা রাস্তায় ট্রাফিকিং করছে, দেয়ালে গ্রাফিতি বা আলপনা আঁকছে, অল্প বয়সের পুলাপান রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার নিয়ে বেশী মাত্রায় নাক গলাচ্ছে- এর সবই বেশী বাড়াবাড়ি মনে হয়।
এর মধ্যে একজনের নাকি একদিনেই ছয়বার গাড়ি থামিয়ে তল্লাশী করেছে; সে তো মহা খাপ্পা!
আমার বন্ধু আবার প্রাক্তন সহকারী সচিব ছিলেন। এখনকার অনেক সচিব পর্যায়ের ব্যাক্তি আছেন যারা তার একাডেমিক মেট বা বন্ধু। ওর ধারনা এই বাচ্চা পুলাপানদের কথা প্রথম দুই-চারদিন সচিবরা মানবে কিন্তু একসময় ওরা এদের পাত্তা দিবে না।
এবার আমার বলার পালা; আমি গ্রাউন্ড থেকে বলছি, বর্তমান প্রজন্ম নিয়ে আমার উচ্চ ধারনা ( আমি মাস ছয়েক আগে বর্তমান প্রজন্ম ও আমাদের প্রজন্ম ব্যাবধান নিয়ে একটা নিবন্ধ লিখেছিলাম কিন্তু সেটা ব্লগে প্রকাশ করা হয়নি।) বেশ খানিকটা বাদ প্রতিবাদ করে আমি জোর দিয়ে বললাম, দেশে পজিটিভ চেঞ্জ আসবেই।
কিন্তু সে আমাকে চ্যালেঞ্জ করল 'নো ওয়ে'!!
ঠিক আছে 'চ্যালেঞ্জ'!
( সামনের ১৬ই ডিসেম্বরে আমাদের সাথে ফের কথা হবে- বাজিটা বেশ বড়। সেটা হল বিরিয়ানি খাওয়া কিন্তু কথা হল; আমি হারলে তাকে বিমান ভাড়া দিয়ে এদেশে এনে বিরিয়ানি খাওয়াতে হবে আর সে হারলে আমাকে তার ওদেশে নিয়ে গিয়ে বিরিয়ানি খাওয়াতে হবে।) ~ রিস্ক নিয়ে ফেললাম নাকি কি বলেন?
****
বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটা প্রাক্টিক্যাল জোকস শেয়ার করি সংক্ষেপে, যেটা ফেসবুকে বেশ সমাদৃত হয়েছে। ( মুল ভাব ঠিক রেখে পুনর্লিখিত)
~ দুই বন্ধু বের হয়েছে দেশের হাল হকিকত দেখতে। রাস্তা বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া বাচ্চারা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করছে, ময়লা দেয়ালগুলো ধুয়ে মুছে রঙ করে চমৎকার সব গ্রাফিতি আঁকছে; দেখে তাদের চোখে জল এসে গেল! এ এক নতুন বাংলাদেশ- এমন দেশের ছবিই তো তারা কল্পনায় এঁকেছিল।
একটা ছেলে হেলমেট ছাড়া মটর সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল। তাকে রাস্তায় থামিয়ে অভিনব এক শাস্তির ব্যবস্থা করল। ছেলে মেয়েরা বলল, ভাইয়া আপনার শাস্তি হল আমাদের সাথে দুইঘন্টা ট্রাফিক কন্ট্রোল করবেন।
~দেখেছিস দোস্ত কি ইনোভেটিভ এরা। এমন চমৎকার শাস্তির বিষয় আমাদের কখনো মাথায়ই আসেনি। ঘুষ দুর্নীতি দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। আহারে আমার সোনার বাংলা; এই প্রজন্মের হাত ধরেই গড়ে উঠবে সপ্নের দেশ।
~ চল ওপারে যাই গিয়ে দেখি বাচ্চা পুলাপান কি তেলেসমাতি দেখায়?
হেটে হেটে তারা দুজন রাস্তা পার হতেই, একজন স্টুডেন্ট তাদের সামনে এসে দাড়াল।
~ আঙ্কেল, ফুট ওভার ব্রিজ থাকতে আপনারা এখান দিয়ে পার হলেন কেন।
দুই বন্ধু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে তখন। একজন তড়িঘড়ি বলল, আমার কোমড়ে ব্যাথাতো তাই সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে পারি না।
ছেলেটা অমায়িক হেসে বলল~ তাই।
এরপর তার এক সহযোগীকে ডেকে দুটো ঝাড়ু দুজনের হাতে দিয়ে বলল, ওই ফুট ওভার ব্রিজের সিড়িগুলো ঝাড়ু দিয়ে আসেন জলদি- দেখবেন আপনার কোমড় ব্যাথা সেরে গেছে। প্রমিজ
খানিক বাদে ... দুই বন্ধুর কথপোকথন;
~দেখছিস পুলাপান গুলা কি পুংটা?
~হ আর কইছ না।
~পিচ্চি পিচ্চি পুলাপান - মুরুব্বীদের কোন সম্মানই করে না।
~একদম ঠিক দোস্ত
~এদের দিয়ে কি হবে- কচু দেশের উন্নতি হবে। দুইদিন লাফালাফি পারবে- রাস্তায় মানুষের ভোগান্তি বাড়বে তারপরে যেই লাউ সেই কদু।
~হ দোস্ত একদম খাটি কথা। আরে গাধাগো দিয়া কি হাল চাষ হয় নাকি?
~এইগুলা কোন আর্ট হইল? কাউয়ার ঠ্যাং বকের ঠ্যাং আকাইছে - দেশটারে পুরা জঙ্গল বানাইতেছে।
হ আমার তিন বছরের মাইয়াও এর থেকে ভাল আকে। বাংলাদেশের সব্বাই এখন আর্টিস্ট হয়ে গেছে।
*****
আমি আশুলিয়া বিরুলিয়া নবীনগর সাভার হয়ে এ কদিন ইচ্ছে করে ঘুরে ঘুরে আসা যাওয়া করেছি। সবখানেই সমান উদ্দীপনায় এরা রাস্তা সামলাচ্ছে, পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে- আর রোড ডিভাইডার ও রাস্তার পাশের যত খালি দেয়াল সবখানে কাঁচা -পাকা হাতে গ্রাফিতি আকছে। আমি নিশ্চিত পৃথিবীর কোথাও একযোগে এত লক্ষ এমেচার অঙ্কনশিল্পী পুরো দেশটাকে রঙ্গীন করে দেয়নি।
কত কিছু দেখি আর হৃদয় পটে সব ছবি এঁকে রাখি। ব্লগারদের সব কথা বলা হয় না।
করুনাধারা আপার মত আমার গিন্নীর মেট্রো নিয়ে ভীষন আবেগ। মেট্রোর পিলারে কেউ একটা পোস্টার লাগালে তার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে। মিরপুর জুড়ে মেট্রোর সব পিলারে গ্রাফিতি আঁকায় সে বেশ বিরক্ত।
আমি আমার মেয়ের আর্ট খাতাটা এনে পাতা উল্টে তার আঁকা একটা পেইন্ট দেখিয়ে বললাম;
কেমন এঁকেছে এটা?
সে বিগলিত হেসে বলল, ওর ন্যাচারাল টয়ালেন্ট আছে। আমি ভাবছি ওকে আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিব।
আমি ফের জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে ওর এই আর্টটা কেমন লাগছে?
~ সেটা আর বলতে হয় নাকি- কি দারুন এঁকেছে দেখেছ!
~ তোমার কি মনে হয় গাছে পাতা আর নদীর পানি ঠিকঠাক আছে। গাছের পাতা এমন হয় আর কখনো এই টাইপের নদী দেখেছ?
~ আরে রাখতো বাচ্চা মেয়ে যা এঁকেছে তা-ই যথেষ্ঠ।
এই তো লাইনে আসছ। ভেবে নাই ওরা আমাদেরই বাচ্চা-কাচ্চা। কি ভীষন আবেগ দিয়ে ওরা সব আঁকছে দেখেছ? যে বাচ্চাটা কোনদিন একা গেটের বাইরে পা রাখে নি, মা মুখে না তুলে দিলে খায় নি। যাদেরকে আমাদের নতুন পৃথিবী একান্ত স্বার্থপর বানিয়ে রেখেছিল- তারা আজ দেখ কাধে কাধ মিলিয়ে রোদ বৃস্টিতে কাদা আর ধুলোয় মাখামাখি হয়ে, ঘামে নেয়ে একাকার হয়ে, চাদা উঠিয়ে কিংবা বাপ মার কাছ থেকে আবদার করে টাকা নিয়ে জীবনের প্রথম বাজারে গিয়ে রঙ তুলি কিনে দেয়ালে দেয়ালে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্য্যে ছবি আঁকছে। তাদের এই আবেগকে কেন অবমুল্যায়ন কর তুমি।
এক মেয়েকে দেখলাম উঁচু হয়ে আর্ট করছে, আরেক বন্ধু কোমড়ের কাছে তার জিন্সের প্যান্ট তুলে ধরে রেখেছে যেন সেটা খুলে না পড়ে।
ইংলিশ মিডিয়ামের একদল ছেলে মেয়ে রাস্তার বহুদিনের পচা আবর্জনা পরিস্কার করছে দেখে কৌতুহলে কাছে এগিয়ে দেখি তারা বমি ঠেকানোর আপ্রান চেষ্টা করছে। ~আমি নিশ্চিত এদের অনেকেই তেলাপোকা দেখে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে যায়।
নীচের মানচিত্রগুলো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেই কটুক্তি করেছে। এধরনের মানচিত্র কেন আঁকতে হবে এ নিয়ে অনেকে ধমকের সুরেও কথা বলেছেন। কিন্তু ওরা দমে যায়নি- এসব নিয়ে ওরা চমৎকারভাবে স্যাটায়ার করেছে;
~ এই ছবির শিরোনাম ছিল; এমন মানচিত্র আঁকবা যাতে পাশের দেশের বুকে কাঁপন ধরে যায়!!!
***
কাল সাভার হয়ে আসার পথে তিনবার গাড়ি ছাত্রদের চেকিং এর মুখে পড়েছিল। কেউ বলে বড় ভাই, কেউ আঙ্কেল আর কেউ স্যার, আমি বেশ মজা পেয়েছিলাম- ওরা বার বার স্যরি বলায় বেশ লজ্জাই পেয়ে গেলাম। তৃতিয়বার চেক করার পরে একজনের কাছে চেকিং এর টিকেট চাইলাম; সে আমাকে একটা আইডি কার্ড বের করে ছবি তুলে নিতে বলল; ( আইডিয়াটা মন্দ নয়।)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৪৯