somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন শালার এই দেশে জন্মাইলাম- তাহলে মানুষের এমন কদর্য রূপ দেখতে হোত না!!

১৭ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

~ এই ১৫ই আগষ্টে ভারতে বসে শোকের পোশাকে পাশাপাশি তারা দুই বোন- এ ছবি অনেক কথাই বলে ...
জকে আমার এই লেখা বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ ও ছাত্রলীগ ও তাদের সমমনা সমর্থকদের জন্য। যারা তাদের নেত্রী হাসিনাকে প্রানপন ভালবাসেন, বিশ্বাস করেন তার উপরে যে কোন পরিস্থিতিতে আস্থা রাখেন। যারা তার বর্তমান এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ ব্যাথিত - যারা ভাবেন তিনি সবকিছুর উর্ধ্বে তিনি দেশ ও জাতিকে ভালবেসেছিলেন, দেশের উন্নয়নে কাজ করেছিলেন। আপনারা যদি জানেন তবে সঠিক তথ্য উপাত্ত্ব হাজির করে এই লেখার প্রতিবাদ করবেন কিংবা গঠনমুলক ও যৌক্তিক আলোচনায় অংশগ্রহন করবেন। প্লিজ ঠেডামী করে বলবেন না, ধুর ফালতু আমি এইসব বিশ্বাস করি না। এইসব ইতিহাসের কথা; শত সহস্র মানুষ এই ইতিহাসের সাক্ষী। আজো আপনাদের দলের প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেই সময়ের ছাত্রলীগের নেতা কর্মী বর্তমান আছেন- তারাতো জানেন আসল ঘটনা কি ছিল।
***
মতিউর রহমান রেন্টু- সমগ্র বিশ্বে শেখ হাসিনার আদর্শে যারা বিশ্বাস করেন তাদের কাছে সবচেয়ে ঘৃন্যতম ব্যক্তিদের একজন। যেমন মুসলিমদের কাছে 'সালমান রুশদি'। রেন্টুর লেখা (জনাব লিখলে অনেকেই আমাকে তার পক্ষের লোক ভাবতে পারে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ও অগ্রজ হিসেবে জনাব বলা কিনবা তার পুরো নাম বলে সন্মোধন করা আমার দায়িত্ব) 'আমার ফাঁসি চাই' এই বইটা অনেকেই ঘৃনাভরে চটি সাহিত্যের কাতারে ফেলে দিয়েছেন।
আমি নেট দুনিয়ায় তার বই থেকে একটু খণ্ডিত উদ্ধৃতি মাঝে মধ্যে দেখতে পাই যে, 'শেখ হাসিনা আবেগ দেখানোর জন্য গ্লিসারিন ব্যাবহার করছেন। তিনি মৃত লাশ দেখে কান্নার অভিনয় করে বাড়িতে এসে ভীষন উতফুল্ল হয়ে বলছেন, আমি আজকে লাশ দেখে এসেছি লাশ। ভাল ভাল রান্না কর -আজ আমি অনেক খাব।'' এই টাইপের কথাবার্তা যা প্রথম দফায় তার চরম শত্রুরাও বিশ্বাস করতে চাইত না।
সবাই এক কথায় রেন্টুকে পাগল, ধান্দাবাজ, গাঞ্জুট্যা, বটতলার চটি সাহিত্যিক বলে উপহাস করে তীব্র তাচ্ছিল্যভরে তার পুস্তকখানা ছুড়ে ফেলেছে। এরপর সরকারের দমন-পীড়নতো আছেই। মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে যে কোন উপায়ে তথাকতিথ এই অপ সাহিত্যকে সমুলে উপড়ে ফেলেছে।
আমি নিজেও তার এই লেখা নিয়ে ছিলাম ভীষন বিরক্ত!!। অবশেষে একদিন মনে হল, এই জীবনে কত আজেবাজে কু-সাহিত্যতো পড়লাম, এই বইয়ের পাতাটা একটু উল্টাই; বইয়ের শুরুতেই সে স্বীকার করেছে, 'আমার নিজের চোখের দেখাই সব দেখা নয়, চোখের বাইরে বা আড়ালেও অনেক ইতিহাস থাকতে পারে।'
***
মি এক এক করে পাতা উল্টাই আর অবাক হই, এতো শুধু শেখ হাসিনার কীর্তি নিয়ে লেখা বই নয়। এতো স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পরের এক অমুল্য রাজনৈতিক দলিল। হ্যাঁ এখানে হয়তো দেখার ভুল আছে, জানার ভুল আছে, বোঝার ভুল আছে এখানে আক্রোশ আছে হতাশা আছে, আছে ভুল মতবাদ প্রচারের চেষ্টা। কিন্ত এর পাশাপাশি আছে কিছু অন্ধকারের ইতিহাস। কিছু ভয়ঙ্কর সত্য তুলে ধরার চেষ্টা। আছে রাজনীতির খেলায় ভয়াবহ বলি সাধারন মানুষের আর দলীয় কর্মীদের আর্তনাতের কথা- আর রাজনীতিবিদদের পৈশাচিক উল্লাস!! ক্ষমতার লোভে কিভাবে একজন নেতা বিবেক আত্মা দেশ জাতিকে বিক্রি করে দেয় তার গল্প আছে - আছে লোভ হিংসা জিঘাংসা বিবমিষার ইতিহাস! বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা কিছু প্রশ্ন আপনাকে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করবে- সিরাজ সিকদারের জন্য আপনার অজান্তে বুকের গভীর থেকে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস উঠে আসবে।
যাক আর বেশী কথা না বলে আসুন 'আমার ফাঁসি চাই' বইয়ের ৫০-৫২ তম পাতায় এরশাদ কতৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী 'সেলিম ও দেলোয়ার' হত্যা এই পর্বে যাই।

(র আগে অবশ্য এরশাদ আর্মড ব্যটেলিয়ান বাহিনী কতৃক ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের আন্দোলনরত আরো ২ ছাত্র হত্যা করা হয়েছিল। এটা সংগঠিত হয়েছিল ১লা ফাল্গুন। ছাত্ররা যখন শহিদদের লাশ নিয়ে কলাভবনে শোক জানাচ্ছিল তখন অতর্কিতে হাজার হাজার আর্মড পুলিশ, সেনাবাহিনি, বি ডি আর, তাদের উপর ঝাঁপিকে পড়ে অমানুষিক অত্যাচার চালায়। রেন্টুর ভাষ্যমতে, এই ছাত্রহত্যা হয়েছিল হাসিনার প্ল্যানে-যাতে এরশাদকে চাপে রাখা যায়। আর সেই প্লান বাস্তবায়নের পরে ছাত্ররা যাতে ফের আন্দোলনের সুযোগ না পায় সেজন্য তাদের উপর আক্রমন করা হয় হাসিনা- এরশাদের যৌথ প্লানে। যা হোক আমি এটা বিশ্বাস করি কি করিনা সেটা গৌন ব্যাপার তবে ঘটনাটা ঘটেছিল, সেটা সত্য এবং ঐতিহাসিকভাবে সত্য।)
***
নবিক কমিশনের সরকারী বাসভবনে( তার স্বামী জনাব ওয়াজেদের বাসা) শেখ হাসিনা বলেন, লেঃ জেঃ এরশাদ হাতের মুঠোয় আর থাকতে চাচ্ছে না। আমার হাতের মুঠো থেকে খাটাশটা ক্রমশ বেরিয়ে যাচ্ছে। ওকে হাতের মুঠোয় পোক্ত করে আটকে রাখা দরকার।

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদকে হাতের মুঠোয় রাখার জন্য শেখ হাসিনা নামকা ওয়াস্তে ভুয়া এক ছাত্র আন্দোলনের পরিকল্পনা হাজির করে বলেন, এই ছাত্র আন্দোলনের অবশ্যই ছাত্র নিহত হতে হবে। যে করেই হোক ছাত্র আন্দোলনে নামে ছাত্র হত্যা হতেই হবে। ছাত্র হত্যা হলে ছাত্র আন্দোলন চাঙ্গা হবে। আর ছাত্র আন্দোলন চাঙ্গা থাকলেই কেবল জেনারেল এরশাদকে হাতের মুঠোয় শক্ত ভাবে রাখা যাবে। শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের নামে ছাত্র হত্যার কঠিন নির্দেশ ও পরিকল্পনা দিলেন। কোন আততায়ী বা অজ্ঞাত ঘাতকের হাতে ছাত্র হত্যা হলে কাজ হবে না। ছাত্র হত্যা হতে হবে সামরিক শাসক এরশাদের মিলিটারী অথবা পুলিশের হাতে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, টাকা যা-ই লাগুক, এটা করতেই হবে। কিভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যায় সবাই এ নিয়ে খুব ব্যস্ত ও চিন্তিত।

যোগাযোগ হলো প্যারা মিলিটারী ট্রুপস আর্মড্ পুলিশের কোম্পানী কমান্ডার (সিনিয়র এস পি) হাফিজুর রহমান লস্করের সঙ্গে। এই হাফিজুর রহমান লস্কর পুলিশের অফিসার হয়েও দীর্ঘদিন যাবত এন এস আই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টিলেজেন্ট বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) এর ডেপুটি ডাইরেক্টর পদে ঘাপটি মেরে বসে ছিলেন। এরশাদ ক্ষমতায় এসেই হাফিজুর রহমান লস্করকে এই বলে এন এস আই থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছেন যে, তুমি পুলিশের লোক হয়ে এখানে কি কর? যাও, পুলিশের পোষাক পরে রাস্তায় চোর ধর। বলেই এন এস আই-এর ডেপুটি ডাইরেক্টরের পদ থেকে হাফিজুর রহমান লস্করকে সোজা আর্মড্ পুলিশের তৎকালীন হেডকোয়ার্টার ১৪নং কোম্পানী কমান্ডার পদে বদলী করে পাঠিয়ে দেয়। এই কারণে আর্মড্ পুলিশের কোম্পানী কমান্ডার (পুলিশের সিনিয়র এস পি) হাফিজুর রহমান লস্কর জেনারেল এরশাদ ও তার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে খুবই চটা ও বৈরী ছিলেন। এর উপর ছিল নগদ অর্থের টোপ।

এরশাদের প্রতি ভয়ানক ক্ষেপা ও বিরাগভাজন এবং নগদ অর্থের টোপ দু'য়ে মিলে, ছাত্র আন্দোলনের নামে ছাত্র হত্যার প্রস্তাব আসা মাত্র সঙ্গে সঙ্গে হাফিজুর রহমান লস্কর প্রস্তাব গ্রহণ করলেন। এন এস আই এর মূলত কাজ হচ্ছে কারা সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের লিস্ট বা তালিকা তৈরি করে সরকারকে সরবরাহ করা এবং সরকারের পতন হলে সঙ্গে সঙ্গে পতন হয়ে যাওয়া সরকারের আমলে তৈরি করা সমস্ত নথিপত্র পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলে নতুন সাদা ফাইল নিয়ে নতুন সরকারের কাছে হাজির হওয়া। ৩০শে মে '৮১ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হলে এন এস আই-এর কর্মকর্তাগণ জিয়া বা বিএনপি সরকারের আমলে তৈরি করা সমস্ত নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলতে যায়। কিন্তু যে মুহূর্তে নথিপত্রে অগ্নিসংযোগ করতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। অর্থাৎ বিএনপি সরকারই টিকে যায়। ফলে এন এস আই কর্মকর্তাগণ নথিপত্র পুড়িয়ে না ফেলে আবার তা সংগ্রহশালায় যত্ন করে তুলে রাখেন। উপ- রাষ্ট্রপতি সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলেও মূলত ক্ষমতা চলে যায় সেনাবাহিনী প্রধান হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের হাতে।

সেলিম ও দেলোয়ার হত্যা

বছর ঘুরে এলো ১৯৮৪ সাল। আবার ফিরে এলো ভাষা আন্দোলনের শহীদের মাস, ফেব্রুয়ারী মাস। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নতুন বছরের নির্দেশ- এরশাদের বিরুদ্ধে আবারো ছাত্র আন্দোলন করতে হবে।

৩রা ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সাল। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে বিকেল ৪টায় বসলো এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক। বৈঠকে নেত্রী যে কোন প্রকারেই হোক ছাত্র আন্দোলন করার কঠোর নির্দেশ দিলেন। শুরু হলো আবার ছাত্র হত্যার নতুন পরিকল্পনা। একদিকে চলতে লাগলো ছাত্র হত্যাকারী পুলিশ অফিসার হাফিজুর রহমান লস্করদের ভাড়া করার কাজ। অন্যদিকে চলতে লাগলো সাধারণ ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে তুলে ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করার কাজ।

শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে খুবই দ্রুত ছাত্র হত্যাকারী পুলিশ অফিসারদের ভাড়া করার কাজ সম্পূর্ণ হলো। কিন্তু আন্দোলন করার নানাভাবে বহু রকম চেষ্টা-তদবির করেও ছাত্রদের আন্দোলনে শরীক করা গেল না।

গোটা ছাত্রসমাজই এরশাদের বিরোধী। কিন্তু আন্দোলনের প্রশ্নে, আন্দোলনের নেতৃত্বের প্রশ্নে ছাত্র সমাজ শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করলো না। বেগম জিয়া এবং বিএনপি-র তখনো তেমন কোন অস্তিত্ব অনুভব করা যায়নি। দিন গড়িয়ে যায়, কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের তেমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ছাত্র হত্যাকারী আর্মড পুলিশেরা '৮৩র মধ্য ফেব্রুয়ারীতে সংঘটিত ছাত্র হত্যার অনুরূপ পরিকল্পনা ও কর্মসূচী হাতে নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এবং গত মধ্য ফেব্রুয়ারীর ন্যায় একটা ছাত্র মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আসার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছে। তাগাদা দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। দিন যায় কিন্তু আন্দোলনের কোন খবর নেই। এক পর্যায়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা অধৈর্য হয়ে 'তোমাদের দ্বারা কিছুই হবে না' বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।

অনেক চেষ্টা করেও শ'পাচেক ছাত্রের একটা মিছিল নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আসতে পারলাম না। ফলে গত '৮৩র মধ্য ফেব্রুয়ারীর ন্যায় ছাত্র হত্যা সম্ভব না হওয়ায় হত্যার ধরন পাল্টানো হলো।

আর্মড পুলিশের কোম্পানী কমান্ডার পুলিশের সিনিয়র এস পি হাফিজুর রহমান লস্কর ছাত্রহত্যার পরিকল্পনায় আর্মড পুলিশের পরিবর্তে রায়ট পুলিশকে সম্পৃক্ত করে এবং নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হয় যে, ২০/৫০ জনের একটি মিছিল কোন রকমে যে কোন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন দিক দিয়ে বাইরে নিয়ে এলেই রায়ট পুলিশ (যে পুলিশ ২৪ ঘন্টা বিশ্ববিদ্যালয়েই থাকে) ছাত্র হত্যা পরিকল্পনা সফল করে দেবে। সাধারণ ছাত্র তো দূরের কথা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই মিছিলে আসতে চায় না।

এদিকে নেত্রীর কড়া নির্দেশ ছাত্রলীগের একটা খণ্ড মিছিল নিয়ে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যেতে হবে, নইলে তোমাদের দায়িত্ব থেকে বিদায় নিতে হবে। ২৮শে ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-এর বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো এবং যথারীতি এই সিদ্ধান্ত জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে জানান হলো শেখ হাসিনার মাধ্যমে এই সংবাদ হাফিজুর রহমান লস্করের মারফত রায়ট পুলিশের ঘাতকদের জানানো হলো।

২৮শে ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪, হঠাৎ ৩০/৪০ জন ছাত্রের একটা মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করে চানখাঁরপুল হয়ে ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ড এর দিকে দ্রুত যেতে থাকলো। এই মিছিলের পেছনে পেছনে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রায়ট পুলিশের একটি লরি আসতে লাগলো।

বোঝা গেল এবার সামনে থেকে ছাত্র হত্যা করা হবে না, হত্যা করা হবে মিছিলের পেছন থেকে। যারা এই পরিকল্পনা অবহিত তারা যতটা সম্ভব মিছিলের সামনে থাকতে লাগলো।

মোটামুটি মিছিলের অনেকেই জানে পেছন থেকে মিছিলে আক্রমণ করা হবে। রায়ট পুলিশের লরি থেকেই এই আক্রমণ করা হবে তবে রায়ট পুলিশের লরি থেকে গুলি করা হবে, না অন্য কোন ভাবে আক্রমণ করা হবে এটা কেউ জানতো না। তখন বিকেল পাঁচটা, ক্ষুদ্র ছাত্র মিছিলটি নিমতলী পার হয়ে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই রায়ট পুলিশ তাদের লরিটি বিদ্যুৎ গতিতে মিছিলের উপর তুলে দিল। মিছিলের পিছন দিকে থাকা সেলিম মুহূর্তের মধ্যে পুলিশের লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে গেল। বাকি সবাই রাস্তার দু'দিকে ছিটকে পড়ে প্রাণে বাঁচলেও দেলোয়ার সোজা দৌঁড়াতে লাগলো। প্রাণভয়ে দেলোয়ার দৌড়ায় আগে, দেলোয়ারের প্রাণবধ করতে পেছনে দ্রুত ছুটছে রায়ট পুলিশের লরি।

মিনিট দু'য়েক-এর মধ্যেই দেলোয়ারের দেহ চাকায় পিষে রাস্তার সাথে মিশিয়ে দেয় পুলিশের লরি। দেলোয়ারের দেহ এমন ভাবে রাস্তার সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এটা যে দেলোয়ারের দেহ তা বোঝাতো দূরের কথা, এটা যে একটা মানুষের দেহ তাই বোঝা যাচ্ছে না। আর পেছনে পিচ ঢালা রাস্তার সাথে থেতলে মিশে আছে সেলিমের দেহ।



ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে সংবাদের জন্য অধীর আগ্রহে উৎসুক হয়ে বসে থাকা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী, সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে রায়ট পুলিশের চাকায় পিষ্ট হয়ে সেলিম ও দেলোয়ারের নিহত হওয়ার সংবাদটি পৌঁছাল মটর সাইকেল আরোহী। ছাত্রলীগের দু'জন নেতার নিহত হওয়ার সংবাদটি শুনে শেখ হাসিনা পুলকিত ও আনন্দিত হয়ে বলে উঠলেন, সাবাস। তারপর গাড়ির ড্রাইভার জালালকে বললেন, জালাল গাড়ি লাগাও আমি বাইরে যাবো। মটর সাইকেল আরোহী সঙ্গে যেতে চাইলে নেত্রী বললেন, তোমরা এক কাজ করো, *আসো। আজ সবাই চলে যাও।

গিয়ে নেত্রীকে না পেয়ে মটর সাইকেল আরোহী সোজা মহাখালী চলে এবং পাজেরো জীপ দেখতে পেয়ে নিশ্চিত হলো, নেত্রী এখানেই য়ে নেত্রীকে না পেয়ে বাবুর্চি রমাকান্তের কাছে জানতে পারলো, নেত্রী অজ্ঞাত গাড়ী আর চালকের সঙ্গে অজ্ঞাত স্থানে গিয়েছেন অনেক ভোরে। দুপুর ১টার দিকে ফিরে এসে নেত্রী খাওয়া-দাওয়া করে সোজা চলে এলেন ধানমন্ডি ৩২শে ভবনে। ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতা বিকেল তিনটায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে এসে সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছাত্রলীগ নেতা সেলিম ও দেলোয়ারকে পুলিশের লরির চাকায় পিষ্ট করে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার প্রতিবাদে সামরিক একনায়ক স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করার কর্মসূচী চাইলে সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই বলে ছাত্রনেতাদের সান্ত্বনা দেন যে, আমাদের মূল শত্রু জিয়াউর রহমান এবং তার দল বিএনপি। জিয়া তো শেষ। জেঃ এরশাদ বিএনপির কাছ থেকে মাত্র কিছুদিন হলো ক্ষমতা দখল করেছে। আমাদের এখন প্রধান কাজ, বিএনপিকে চিরতরে শেষ করে দেওয়া। এই মুহূর্তে আমরা জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যাব না। আমাদের মূল শত্রু বিএনপি এটা মনে রাখতে হবে। ছাত্রনেতারা সেলিম ও দেলোয়ারের হত্যার জন্য আবেগাপ্লুত হলে শেখ হাসিনা বলেন, আবেগপ্রবণ হয়ে লাভ নেই। সময় হলেই এদের পরিবারকে পুষিয়ে দেওয়া হবে।

ছাত্রনেতারা কোন রকম কর্মসূচী ছাড়াই ভগ্ন হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু ভবন ত্যাগ করলো ।
***
এবার বলুন;
১. সেদিন কি ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে রায়ট পুলিশের গাড়ির চাকার নীচে পিষ্ঠ হয়ে সেলিম ও দেলোয়ার নামে দুজন ছাত্রলীগ কর্মী বা দুজন ছাত্র মারা যায় কি না?
২. এই ছাত্র হত্যার জের ধরে ছাত্ররা এরশাদ বিরোধী কোন আন্দোলন করেছিল কি না?

প্রশ্ন আপনাদের কাছে রইল; ছাত্রলীগের দুজন কর্মী এমন নিশ্বংসভাবে একজন স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হাতে খুন হবার পরেও তাদের নেত্রী কেন কোন আন্দোলনের ডাক দেন নি?

আপনি কি মনে করেন নিজের দলের কর্মী ছাত্রদের জীবন যার কাছে কোন মুল্য নেই- তার কাছে বাকি পুরো দেশের ছাত্রদের জীবনের কোন মুল্য আছে????
প্রশ্নটা রেখে গেলাম- উত্তর দিবেন না হয় নিজের বিবেকের কাছে খুঁজবেন?


***আপনাদের জন্য রেফারেন্স রইল;***
ত ২৮শে ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সালে ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহীম সেলিম- কাজী দেলোয়ার হোসেনের স্মরণে হাতিরপুলে একটা স্মরণসভার আয়োজন করা হয়;অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শহীদ সেলিম-দেলোয়ার স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল ওয়াদুদ, যিনি ১৯৮৪ সালের ঘটনায় আহত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাও ছিলেন।
'যে প্রতিবাদে সেলিম ও দেলোয়ারকে হত্যা করা হয় সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। আমি গুরুতর আহত হয়েছি এবং এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ছিলাম। সেই দিনের স্মৃতি এখনও আমার মনে তাজা,' তিনি স্মরণ করেন।
১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলিস্তানের কাছে এইচ এম এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের ট্রাক চাপায় সেলিম ও দেলোয়ার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রলীগ নেতা নিহত হন।
~ খবর 'দ্যা নিউ এজ'
Chhatra League leaders Selim, Delwar remembered
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫
২৯টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৌদি আরব হতে পারতো বাংলাদেশে উৎপাদিত আলু'র বাজার, কেন তা হলো না?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৪০

..
...
.......খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ১ম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আলু রপ্তানিতে ধ্বস নেমেছে। তাই, আলু রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। অন্যদিকে, ইন্টারনেট ঘেটে দেখা যায়, ২০১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তর মানে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের জীবনের ল্যান্ডমার্ক, ৩৬ জুলাই আমাদের চেতনা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪২




এই ছবিটার গুরুত্ব অপরিসীম।
কেন জানেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলের ব্লু প্রিন্ট রচনার দায় তাদের কাধে। এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আর স্বাধীনতাকামীদের এক করে ফেলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-আফগানিস্তান কূটনীতি, ক্রিকেট ও বৈশ্বিক বাস্তবতা প্রসঙ্গে!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০


কথায় আছে শত্রুর শত্রুকে বানাতে হয় বন্ধু- এই প্রবাদ ভারত ও আফগানিস্তানের সমসাময়িক কূটনীতিক তৎপরতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই মাসে কোন আন্দোলন বা বিপ্লব হয়নি, ইহা ছিলো আমেরিকান এম্বেসীর আরেকটি ক্যু

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৫



১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট'এর পর আমেরিকান এম্বসী আরেকটি বড় ক্যু করেছিলো এরশাদকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য করে; এরপর আরেকটি বড় ক্যু করে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধানসিঁড়িটির তীরে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৫



ধানসিঁড়িটির তীরে স্বপরিবারে ঘুরতে গেলাম। শালিক সাহেব পিছনে এসেই বসলেন। মেয়ে ছবি তুলতে গেলেই উড়ে গেলেন। বকের ঝাঁক কয়েকবার মাথার উপর দিয়ে টহল দিলেন। ছাগল ছানা খেলছিল বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×