
আত্মজীবনীতে হুমায়ুন, আত্মপক্ষ্যে গুলতেকিন
গত কয়েকদিন ধরে গুলতেকিন খান (হুমায়ুন আহমেদের প্রথম স্ত্রী) এর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলেছে। স্ট্যাটাসে তিনি হুমায়ুন আহমেদের আত্মজীবনী “হোটেল গ্রেভার ইন”-এ তাঁর বর্ণিত এক ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করেছেন।
লেখক যখন আত্মজীবনী লিখেন, তখন পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য নানা বিষয় যোগ করেন, আবার অনেক বিষয় বিয়োজন ও করেন। আমি নিজে হুমায়ুন আহমেদের প্রায় সকল বই পড়েছি। তাই বলতে পারি, আত্মজীবনীতে তিনি নিজের অনুভূতি ও পাঠকপ্রিয়তার খাতিরে কিছু লিখেছেন।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন—“হুমায়ুন আহমেদ মারা যাওয়ার ১৪ বছর পর কেন তার সাবেক স্ত্রী এই বিষয়ে কথা বললেন? ২২ বছরের বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ে কেন বলেনি?”। আসলে, যখন বিষয়টি ব্যক্তিগত মিথ্যাচার বা অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত, তখন তা কেবলমাত্র মুহূর্তিক কষ্ট নয়, বরং তা মনকে তিলে তিলে ক্ষতবিক্ষত করে।
এই প্রেক্ষাপট মনে করিয়ে দেয় , রোমানীয় সাহিত্যিক মির্চা এলিয়াদ ১৯৩৩ সালে রচনা করেন “লা নুই বেঙ্গলী” (ইংরেজি: Bengal Nights) নামের এক উপন্যাস। সেখানে তিনি ভারতে অবস্থানকালে মাত্র ১৬ বছরের এক বাঙালি তরুণীর সঙ্গে প্রেমের কাহিনি বর্ণনা করেন। পাঠকের নন্দনবোধকে আকর্ষণ করার জন্য তিনি সেই প্রেমকে রোমান্টিক আঙ্গিকে রূপ দেন, এমনকি শারীরিক সম্পর্কের প্রসঙ্গও যুক্ত করেন।
যা পৃথিবীতে কয়েকটা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে, সেই গল্পনিয়ে সিনেমাও আছে।
কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল মিথ্যাচার, বাঙালি সংস্কৃতির পরিপন্থী এক উপস্থাপন, এবং সেই তরুণী নারীর প্রতি গভীর অপমান।
দীর্ঘ চার দশক পর, সেই অসম্মানের প্রতিক্রিয়া রূপ নিল সাহিত্যেই। ১৯৭৪ সালে গল্পের সেই নারী, বিশিষ্ট সাহিত্যিক মৈত্রেয়ী দেবী, রচনা করলেন “না হন্যতে” (ইংরেজি: It Does Not Die: A Romance)। সেখানে তিনি নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যের বয়ান তুলে ধরলেন—এবার আর পুরুষ লেখকের রোমান্টিক কল্পনায় নয়, বরং এক নারীর গভীর অনুভূতি ও মর্যাদার ভাষায়।
যা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সঞ্জয় লীলা বনশালি হিন্দি চলচ্চিত্র হাম দিল দে চুকে সনম নির্মাণ করেন।
এই দুই গ্রন্থ আজ বাংলা সাহিত্যচর্চায় এক অনন্য দ্বন্দ্বের প্রতীক—যেখানে মিথ্যাচারের জবাব সত্যই দেয়, এবং অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া হয় কলমের শক্তিতে।
সরোয়ার ফারুকী হুমায়ুন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবনের বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করেছিলেন “ডুব” চলচ্চিত্র। সেখানে শাওনকে উপস্থাপন করা হয়েছে এক সুন্দর সংসার ভাঙার ‘ভিলেন’ রূপে। যেন তাঁর পরকীয়ার কারণে ভেঙে গেলো এক সুন্দর সংসার, ছিন্ন হলো বাবা-মেয়ের এবং বাবা-ছেলের অসাধারণ সম্পর্ক।
আমার বিশ্বাস—যদি সাহিত্য বা চলচ্চিত্র কাউকে আঘাত করে, তবে তার প্রকৃত উত্তরও আসতে হবে সাহিত্য ও শিল্পের ভেতর দিয়েই।
শাওনেরও উচিত হুমায়ুন আহমেদের অসাধারণ উপন্যাস “কৃষ্ণপক্ষ” নিয়ে কোনো মাহিয়া মাহি কে নিয়ে ঐরকম নিম্নমানের সিনেমা না বানিয়ে। বরং তিনি যদি সত্যিকারের মানসম্পন্ন ও শৈল্পিক এক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেন, তবে সেটিই হতো সরোয়ার ফারুকীর “ডুব” এর যথার্থ জবাব।
সাহিত্যের জবাব সাহিত্যে আর সিনেমার জবাব সিনেমায় দেখার প্রতিক্ষায় রইলাম।যেন আমরা আরো বেশি সমৃদ্ধ হতে পারি।
[link|https://www.facebook.com/share/p/1ZZkcAbmCw/|

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


