somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দু জাতীয়তাবাদের ক্রমবিকাশ জাহেদা আহমেদ

০১ লা মে, ২০০৯ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উনিশ শতকীয় প্রোপট


সাধারণ অর্থে জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধর্মনিরপে তত্ত্ব বা মতবাদ যার জন্ম আধুনিক ইউরোপের সুতিকাগারে৷ এই বিশ্বের কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের একটি মানবগোষ্ঠী যখন অভিন্ন সংস্কৃতির উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে স্বদেশ-প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে এক অখণ্ড জাতিসত্তা হিসেবে ভাবতে শুরু করে, বলা যায় তখন থেকে তাদের চেতনাজগতে জাতীয়তাবোধের ক্রমবিকাশ ঘটতে শুরু করে৷ এই পথ ধরেই পরবতর্ীকালে পৃথিবীর মানচিত্রে অভু্যদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের৷
ভারত উপমহাদেশে তত্ত্ব হিসেবে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ভারতীয়দের পরিচয় ঘটে ইংরেজদের মাধ্যমে৷ যে ভারতের মাটিতে ইংরেজরা পদার্পণ করেছিল সে ভারত ছিল আকৃতি-প্রকৃতি, বৈচিত্র্যে ও ঐশ্বর্যেও প্রায় একটি মহাদেশেরই মতো৷ যে কারণে তারা তাকে একটি দেশ না বলে উপমহাদেশ রূপেই আখ্যায়িত করেছিল৷ বহু জাতি-ধর্ম-ভাষাগোষ্ঠী অধু্যষিত একটি বিশাল ভারতবর্ষে ইউরোপের মতো ঐতিহাসিক নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে একটি জাতীয় রাষ্ট্রের অভু্যদয় ঘটেনি৷ জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশের জন্য যা অপরিহার্য ছিল_অখণ্ড জাতীয়তাবাদী চেতনা ও ঐক্যবোধ_সেই উপাদানটি ভারতবর্ষে অনুপস্থিত ছিল এই সেদিন পর্যন্ত৷ বিভিন্ন সময়ে শাসক পর্যায়ে ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে এক ধরনের রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ অবশ্যই নেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তা ওপর থেকে চাপানো ছিল বলে কোনো সুদূরপ্রসারী সাফল্য আসেনি৷ সারা ভারতকে একচ্ছত্র রাষ্ট্রীয় কতর্ৃত্বের অধীনে আনতে কেউই পারেননি_অশোক নন, আকবর নন, আওরঙ্গজেবও নন৷
একাজটি প্রথম সম্পন্ন হলো ইংরেজদের দ্বারা_উনিশ শতকে৷ সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে যে বণিকরা এদেশে এসেছিল মুনাফার লোভে, তারাই প্রথম এদেশের একচ্ছত্র নিরঙ্কুশ শাসক হয়ে বসলো৷ তার কারণ তারা এদেশে শূন্য হাতে আসেনি৷ শূন্য হাতে এলে এত বড় একটা দেশ এভাবে দখল করে বসা এবং তারপরে দীর্ঘদিন তা ধরে রাখা সম্ভব হতো না তাদের প৷ে তারা সঙ্গে নিয়ে এসেছিল নবজাগ্রত আধুনিক ইউরোপের উন্নততর ধ্যান-ধারণা, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, শিা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা৷ প্রজারঞ্জনের ল্যে অবশ্যই নয়, নেহাতই স্থূল, বস্তুগত, বৈষয়িক স্বার্থে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে৷ পটভূমিতে ইউরোপীয় প্রভাবে ও ঔপনিবেশিক শাসনের কালক্রমে নানা ঐতিহাসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় প্রথম জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটলো৷
যারা সর্বপ্রথম এই নবউদ্ভূত জাতীয়তাবাদী চেতনা ধারক-বাহকরূপে আবির্ভূত হলেন তাঁরা ছিলেন ইংরেজ আমলে ইউরোপীয় আদর্শে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত আধুনিক শিা ব্যবস্থার ফসল৷ তাঁদের উত্থানের পেছনে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের কার্যকর ভূমিকাও মনে রাখতে হবে৷ এই শিতি উচ্চ ও মধ্য শ্রেণী ইংরেজ শাসনের প্রধান কেন্দ্র কলকাতায় বিকাশ লাভ করেছিলেন৷ বৃটিশ বেনিয়াদের ছোট অংশীদার অথবা অনুগত সেবক হিসেবে এই মধ্যবিত্তের অনেকেই বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন, উঠে এসেছিলেন সামান্য অবস্থা থেকে৷ পরবতর্ীকালে এই উঠতি উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকেই বেরিয়ে এসেছিলেন বাংলার রেনেসান্স নামে কথিত উনিশ শতকীয় নবজাগরণের উজ্জ্বল ব্যক্তিবর্গ৷ ধর্ম ও সমাজ সংস্কার, শিার প্রসার, জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্য-শিল্পকলা, আইন, চিকিত্সা, দর্শন ও ইতিহাস বিদ্যার চর্চা, সংবাদপত্র ও অন্যান্য প্রকাশনা_সব মিলিয়ে তত্কালীন শিতি বর্ণহিন্দু সমাজে তাঁরা বিপুল আলোড়ন এনেছিলেন৷ তত্কালীন বাংলা তথা ভারতের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কোনো ত্রেই-তাঁদের স্পর্শ বর্হিভর্ূত থাকেনি৷ ুরধার বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন সমাজ বিজ্ঞানী ও গবেষক বিনয় ঘোষের ভাষায় "এই ধারাতেই সামাজিক ও রাজনৈতিক েেত্র পরবতর্ীকালে জাতীয়তাবোধ উদ্বুদ্ধ হয়েছে, জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং এই ধারাই বিংশ শতাব্দীর বিস্তৃত েেত্র জাতীয় আন্দোলনের জোয়ারের সঙ্গে মিশে গেছে৷"১ সংস্কৃতিেেত্রও এই ধারা রামমোহন, দেবেন্দ্রনাথ, অয়কুমার, রাজেন্দ্রলাল, বিদ্যাসাগর, প্যারীচাঁদ, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, বিহারীলাল, রবীন্দ্রনাথের ভিতর দিয়ে রবীন্দ্র-পরবতর্ীযুগে এসে মিলিত হয়েছে৷
বাংলা তথা ভারতের এই নবজাগরণকে ভারতীয় ইতিহাসবিদ ও অন্যান্য গবেষকগণ প্রায় একবাক্যে ইতিপূর্বে ইউরোপে ঘটে-যাওয়া রেনেসান্সের সঙ্গে তুলনার প্রয়াস পেয়েছেন৷ কিন্তু তুলনাটা কতখানি বাস্তবসম্মত? এই গবেষকমণ্ডলী ও চিন্তাবিদদের অন্যতম বিনয় ঘোষ তার প্রথম দিকের গবেষণায় মোটামুটি সপ্রশংস মনোভাবই দেখিয়েছেন, যেমন রামমোহন রায় সম্বন্ধে তাঁর মূল্যায়ন, "অনেক প্রথা ভাঙ্গলেও কুসংস্কারের মানসপ্রতিমা ও প্রেতাত্মাগুলিকে তিনি ধ্বংস করতে পারেন নি৷" এই ধ্বংসের কাজ প্রধানত : 'ইয়ং বেঙ্গল দলের নেতাদেরই করতে হয়েছে' বলেছেন তিনি৷২ নবজাগরণের এই ধারার পাশাপাশি অপর একটি ধারার উলেখ করেছেন তিনি, 'রাধাকান্তু-ভূদেব-রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধারা' বলে৷ এটিকে সরাসরি 'প্রতিক্রিয়াশীলতা'র ধারা না বলে 'বিরোধিতা'র ধারা বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি৷ "রাধাকান্ত-ভূদেবের ভিতর দিয়ে এই ধারার চরম প্রকাশ রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের মধ্যে হয়েছে৷... পাশ্চাত্য ভাবধারার নূতনত্ব, তার বিচারবুদ্ধি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করাই এই ধারার বৈশিষ্ট্য৷ যা কিছু নতুন, মহান, উদার তার সব এদেশেই ছিল৷ ধর্ম, আশ্রম, মঠ সবই থাকল, কিন্তু তাও যে কত মহান, কত উদার, কত গতিশীল, এমনকি কতদূর 'সমাজতান্ত্রিক' পর্যন্ত হতে পারে, বিবেকানন্দ তা শুধু এদেশের লোককেই বললেন না, বিদেশেও প্রচার করতে গেলেন৷... রাধাকান্ত-ভূদেব-বিবেকানন্দের ধারাই পরবতর্ীযুগে পরিপূর্ণ প্রতিক্রিয়াশীলতার খাতে প্রবাহিত হয়েছে৷"৩
ভারতীয় রেনেসান্সের এই সীমাবদ্ধতা যে তার উত্স ও বিকাশ প্রক্রিয়ায়, তার ঔপনিবেশিক পটভূমিতে নিহিত ছিল সে কথা বিনয় ঘোষ তাঁর পরবতর্ী মূল্যায়নে তীব্রভাবে প্রকাশ করেছেন৷ ১৯৭০ সালে প্রকাশিত 'বাংলার নবজাগরণ' শীর্ষক সমীায় তিনি ভারতীয় এই জাগরণকে প্রায় অস্বীকার করে লিখলেন, "বৈদেশিক শাসনাধীনে সংঘটিত এই জারজ রেনেসাঁসের সঙ্গে পাশ্চাত্য রেনেসাঁসের প্রকৃতিগত বৈসাদৃশ্য তো আছেই, উপরন্তু তার বাস্তব পশ্চাদভূমি না থাকার জন্য শেষপর্যন্ত তার সামাজিক ফলাফলও অধিকাংশ েেত্র বিষময় হয়েছে৷"৪ তার কারণ উলেখ করে তিনি বলছেন যে, ইউরোপে রেনেসান্স "marks the first cultural and social breach between the middle Ages and modern times : it is a typical early stage of modern age." ইউরোপীয় রেনেসান্সের ফসল হিসেবেই সেখানে আবিভর্ূত হয়েছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিা-সংস্কৃতি-ধর্ম সংস্কারের দিকপালেরা৷ পরিবর্তন এসেছিল রাজনীতি-অর্থনীতির নানা েেত্র৷ এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপে শিল্প বিপব তথা ধনতান্ত্রিক বিকাশের উপযুক্ত পটভূমি ও পরিবেশ গড়ে উঠেছিল৷ কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসনাধীন বাংলা তথা ভারতে এধরনের কোনো পরিবর্তনের লালনভূমি গড়ে ওঠার সুযোগ ছিল না, সেজন্য তিনি বলেছেন, "মূল অর্থনৈতিক ভিত্তির যদি বিশেষ পরিবর্তন না হয়, তাহলে সেই পুরাতন ভিত্তির উপরে গঠিত সামাজিক সংস্থা বা ইনস্টিটিউশনগুলির অথবা সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণাগুলির স্থায়ী পরিবর্তন হয় না, বহিরাগত ভাবসংঘাতের ফলে একটা সঞ্চরণশীল পরিবর্তন হতে পারে মাত্র৷"৫ এদেশে ওই সময়ে বিত্তশালী লোকের অভাব খুব একটা ছিল না৷ Mercantile capitalist বা কোটিপতি সদাগর থেকে তারা industrial capitalist -এ রূপান্তরিত হতে পারলেন না৷ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের প্রতিবন্ধকতা বড় পুঁজিপতি হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালেও অন্তত মাঝারি মাপের শিল্প উদ্যোক্তা তাঁরা হতে পারতেন৷ তার জন্য যথেষ্ট মূলধন তাঁদের ছিল৷ কিন্তু সে পথে না গিয়ে তাঁরা বরং নিশ্চিন্ত নিরাপদ আয়ের জমিদারী, গৃহসম্পত্তি, কোম্পানির কাগজ, স্বর্ণপিণ্ড ইত্যাদিতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সন্ধান করেছেন৷ বাদবাকি শিতিরা খুঁজেছেন সরকারি চাকরি৷ এই 'দাসত্বপ্রবণ' সামাজিক শ্রেণী "দেশের বড়জোর শতকরা দশ জনের গণ্ডি পর্যন্ত যার আলোক বিচ্ছূরিত, বাকি নব্বুইজনের রাজ্যে শুধু অজ্ঞান ও সুপ্তির ঘোর অন্ধকার৷"৬ বৃটিশ শাসকরা চেয়েছিল সামাজিক স্থিতিশীলতা, যা সম্ভব হয়েছিল অতীতের সামন্ততান্ত্রিক সামাজিক বনিয়াদ অুণ্ন রেখে৷ আর যে কোনো সমাজব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও শক্তির প্রধান উত্স হল তার institution গুলো_যেমন আমাদের এখানে যৌথ পরিবার, বর্ণপ্রথা, বিবাহ, ধর্ম, নারীর অধঃস্তনতা_ইত্যাদির গায়ে কোনো অাঁচড় লাগেনি৷ তার প্রমাণ, "...উনিশ শতকের শেষ পর্বে হিন্দু পুনরুত্থানবাদীদের সদলবলে ও সশব্দে বাংলার নবজাগরণের রঙ্গমঞ্চ দখল করা থেকে বোঝা যায় যে এগুলির দৃঢ়ভিত্তিতে কোনো অাঁচড় পর্যন্ত লাগেনি৷"৭ উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অনেকাংশে ব্যর্থতা ও ট্রাজিক পরিণতি, অসঙ্গতি ও অসম্পূর্ণতার প্রধান কারণ তিনি এভাবেই নির্দেশ করেছেন৷
হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদের আর্থসামাজিক পটভূমি এভাবে উনিশ শতকীয় প্রোপটে বিশেষণ করতে গিয়ে তিনি গুটিকয়েক উদাহরণও দিয়েছেন৷ 'ধর্ম' যখন সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী ইনস্টিটিউশন, বিশেষ করে আমাদের মতো ঐতিহ্যভারাক্রান্ত সমাজে তখন উনিশ শতকীয় ধর্মসংস্কারদের কী পরিণতি হয়েছিল তা দেখা যাক৷ রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) এদেশীয় সমাজে অসংখ্য ধমর্ীয় কুসংস্কার, আচার-বিচার, পৌত্তলিকতা, নারীর হীনাবস্থা দেখে তীব্র বেদনাবোধ করেছিলেন_পাশাপাশি খৃষ্টান ধর্মপ্রচারকদের এদেশীয় ধর্মকে আক্রমণ করা দেখেও উত্তেজিত হয়েছিলেন৷ সংস্কার চেষ্টাও করেছিলেন৷ "কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে", নইলে এই বিশ শতকের "চতুর্থ পাদে পৌঁছেও আমরা হিন্দুধর্মের এরকম মধ্যযুগীয় উত্কট স্বরূপ প্রকাশে স্তম্ভিত হতাম না৷"৮ উনিশ শতকের অপর উজ্জ্বল প্রতিনিধি কেশবচন্দ্রের পরিণতিও এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়৷ সেই কেশবচন্দ্র যিনি বলিষ্ঠ প্রগতিশীল উন্নত আধুনিকতার বার্তাবাহকরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন উনিশ শতকের ষাট ও সত্তরের দশকে তিনিও শেষপর্যন্ত "বিস্তৃত চোরাবালির ভূমিতে নিজেই প্রোথিত হলেন৷ হিন্দুধর্মের সনাতন ইনস্টিটিউশন গুরুবাদ অবতারবাদ তাঁর ুরধার বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলল৷"৯ তারপর এলেন রাজনারায়ন বসু, যিনি "Brahmoism is Hinduism" এই মতের প্রবক্তা হয়ে একই পথের অনুসারী হলেন৷ অতএব "উনিশ শতকের চতুর্থ পাদে হিন্দু পুনরুত্থানবাদীদের বিজয় অভিযান স্বাভাবিক৷"১০ তাঁরা ধর্ম ও সমাজ সংস্কার চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের প্রধান প্রতিপাদ্য ছিল এই যে সুপ্রাচীন হিন্দু ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্র আধুনিক যুগের সব প্রগতিশীল আদর্শকেই ধারণ করে আছে৷ গণতন্ত্র, নারীর সমানাধিকার, ধমর্ীয় স্বাধীনতা, সাম্য সবই পাওয়া যাবে তাতে৷ কাজেই এসব বাইরে থেকে ধার বা আমদানি করার কোনো প্রয়োজন নেই৷ বিনয় ঘোষের মতে "উনিশ শতকের প্রথম পর্বে 'ওরিয়েন্টালিস্ট'_যারা প্রাচীন সংস্কৃত-বিদ্যা শিার প্রচলন করতে চেয়েছিলেন_এবং শেষ পর্বের 'রিভাইভালিস্ট'দের মনোভঙ্গি ও যুক্তির মধ্যে পার্থক্য বিশেষ নেই৷ উভয়েরই বক্তব্য হল সবই প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে ও হিন্দু ধর্মে আছে, জাতীয় সাম্যবাদ পর্যন্ত৷ এইটাই হল সবচেয়ে মারাত্মক বিপজ্জনক চিন্তাধারা, যার প্রভাব থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের অনেক ঐতিহাসিক, সমাজবিজ্ঞানী, সমাজনেতা ও রাষ্ট্রনেতা মুক্ত হতে পারেন নি৷ ... দেশের অশিতি ও অর্ধশিতি জনসমাজকে বিভ্রান্ত করার দিক থেকে এবং তাদের অসাড় নিস্পন্দ করে রাখার দিক থেকে এ কৌশল খুব ভাল৷" ফলে, সনাতন হিন্দুধর্মের মতো একটি অটল 'ইনস্টিটিউশন' হচ্ছে জাতিভেদ, বর্ণবৈষম্য, গুরুবাদ প্রভৃতি সামাজিক অসাম্য এবং মূল অর্থনৈতিক অসাম্যের ‘hardened institutions of ineqnality সমাহার৷ একারণেই গুরুবাদ পৌত্তলিকতা, অবতারবাদ জাতিভেদ ধর্মানুষ্ঠান অত্যধিক মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে৷১১

তথ্যসূত্র
১. বিনয় ঘোষ, 'বাংলার নবজাগৃতি,' ওরিয়েন্ট লংম্যান, কলকাতা, ১৯৪৮, পৃ. ১৩৮
২. প্রাগুক্ত
৩. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪০
৪. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪৪
৫-৬. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪৪-১৫১
৭. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৩
৮. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৫-৫৭
৯-১১. ঐ

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল নতুন দিগন্তে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×