ছোট বেলায় আলিফ লায়লা দেখেছি, সিন্দাবাদ দেখেছি, স্পাইডারম্যান দেখেছি। চোখ দুটো যেন টিভির ভিতর ঢুকে যেতো, মনে হতো পৃথিবীতে এগুলোই সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার-স্যাপার।।রাতে ঘুমাতে গেলে মনে হতো আলাদ্দিনের চেরাগ মাথার পাশে আছে, ভাবতাম নিজেই যেন টিভির সেই আলাদ্দিন ।একটা চেরাগ পেলে দৈত্যরে দিয়া পরীক্ষার সব প্রশ্ন আগের দিন বাইর করে নিয়া আসবো। কখনো নিজেরে স্পাইডারম্যান বানানোর খুব খায়েস করতো। ইচ্ছা ছিলো বড়ো হইয়া ব্যাংক চুরি করবো। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়তাম। সকালে উঠে তো সোজা স্কুল।হারিয়ে যেতো আলাদ্দিনের চেরাগ, হারিয়ে যেতো স্পাইডারম্যানের মুখোশ।
চলে আসি মুল কথায়। ব্লগে তেমন একটা ঢুকা হয় না কয়েকদিন। অফলাইনে কটু ঢু মারতেই গতকাল রাতে প্রথম পাতায় একটা পোস্ট চোখে পড়লো। শিরোনামে ছিলো ''RAW প্রশিক্ষিত ১০০ কিলার হত্যাকান্ড চালাচ্ছে বাংলাদেশে !!- ETV নিউজ''। মাথার এন্টেনার উপর দিয়া গেলো প্রথমে, গরমকালের প্রভাব বলা যেতে পারে, এন্টেনা খানিকটা দুর্বল হয়ে যায় গরমের উত্তাপে। আবার চোখ বুলালাম পোস্টে। না , ঠিকি তো। দেশে ছাত্রলীগ মানুষ মারে, শিবিরে মারে, পুলিশে মারে, র্যাব তো ধরলে বাপরে বাপ!!!!! তার উপর এখন র'র ট্রেনিং নিয়া আসলে ওরা তো মহা মসিবত। তাও আবার তারা শীর্ষ ইসলামপন্থী মারবে।তার উপর ব্লগার যেভাবে অবাক আর বিস্ময়ের কথা বলল তাতো পুরাই এন্টেনার কাভারের বাইরে। যাই হোক লেখক এতো একটা গোপন সংবাদ দিলেন হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা লিংক। ভাবলাম ঘেটে দেখি একটু। লিংক রিডাইরেক্ট করে নিয়ে গেলো ফেসবুকের ব্রেকিং নামের একটা পেজের প্রকাশিত একটা ভিডিও।পোস্টদাতা ভিডিও ডেসক্রিপশনে লেখা লাইনগুলো হুবুহু দাড়ি, কমাসহ সোজা কপি-পেস্ট করে দিয়েছেন।
আচ্ছা শেয়ার যখন দিছে, দেখি মুল কাহিনি কি। আমার ব্রাউজারে ফ্ল্যাশব্লক থাকায় ফ্ল্যাশ ওপেন করে শুরু করলাম রোমাঞ্চকর, বিস্ময়কর ভিডিও দেখা। বাফারিঙ্গের পর একবার দেখে আবার দেখলাম পুশ করে করে। ১৯ সেকেন্ড থেকে সাউন্ড খুব কমে যেতে লাগলো। প্রথমবারে বুঝিনাই ব্যাপারটা, ধরতে পারছি তৃতীয়বারে। মাউস হাতে নিয়ে একটু রিওাইন্ড করলাম। না ঠিক আছে- ১৯ সেকেন্ড থেকে সাউন্ড কমে যাচ্ছে। রাত হলেও পিসির সাউন্ড ফুল করলাম। এটা কি শুনি?
গত ২৩ এপ্রিল শ্রীলংকার প্রভাবশালী গনমাধ্যম শ্রীলংকান গার্ডিয়ান দ্যা বেঙ্গল টাইগারস ইন দ্যা র কেইজ শিরোনামে...
এরপর সাউন্ড আবার নরমাল হলো। মাউস সরিয়ে কয়েকবার রিওাইন্ড করে কয়েকবার শুনলাম। না ভুল শুনিনি, কিন্তু ফেরকা একটা লেগে গেলো। আজ কত তারিখ? মনিটরের ডানপাশে উইন্ডো স্ক্রিনে দেখলাম ৩১-০৩-২০১৩। না এপ্রিল ঢুকতে তো আরো কয়েক ঘন্টা বাকি। এপ্রিল ডস নাতো? না।ভালো করে শুনে দেখলাম এটা গত বছর এপ্রিলের খবর।তাই সাউন্ডটা খুব কমিয়ে দেওয়া হয়েছে তারিখ উল্লেখের সময়।প্লাস লাগিয়ে দিয়েছে ইসলামিক চিন্তাবিদ হত্যার ট্যাগ। দেশ গরম করতে হবে, তরমুজ খাইতে হবে সবাইকে এন্টেনা ঠিক রাখার জন্য। পা দুইটা বাকা করে চেয়ারে তুলে পুরা ভিডিও খানিকটা রিভিউ করলাম কয়েকবার। ভিডিওটা শো করছে ইটিভি একুশের লগো। নীচের দিকে ব্রেকিং খবরে টাইটেলে আর তার নীচেই প্রধান খবরের টাইটেল ।পুরা ভিডিও চলাকালীন ব্রেকিং আর নীচের প্রধান খবরের কোথাও নিউজটা নেই।অথচ প্রায় টিভি মিডিয়া তাদের মুল সংবাদে স্ক্রলের প্রধান খবরগুলোকেই কাস্ট করে।তাছাড়া জেনেরাল(অবঃ) আমীন আহমেদ চৌধুরী বিরবীক্রম, এবং আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডঃ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের ভিডিওতে মুখের বাচনভঙ্গীর সাথে ভিডিওর সাউন্ডের সাথে মিলছেনা। অনেকটা ধারনা করে নিলাম ভিডিওটা ফেক। কিন্তু এটার সঠিক সমাধান বলতে পারবে একুশে টিভি তাদের আর্কাইভ চেক করে।তাদের একটা মেইলও করছি, কিন্তু এখনো রিপ্লাই পাওয়া যায়নি।
এবার ফিরে এলাম মুল ব্লগপোস্টে একটা কমেন্ট করলাম কমেন্ট করতে গিয়ে খেয়াল করলাম একজন ব্লগার বলছেন ভিডিওটা 'বাঁশের কেল্লা' ফেসবুক পেজে দেখেছেন। আবার ফেরত ফেসবুকে, দিলাম বাশেরকেল্লা সার্চ। কয়েকটা শো করলেও যেটাতে মেম্বার মারহাবা সেটাতেই ঢুকলাম।মিলাও গেছে ঐটা সেই বাঁশের কেল্লা । নীচে মুভ ওরে তাদের পোস্টেও ভিডিওটা পেলাম।
তারা একই ডায়ালোগের পাশাপাশি দুটো লিংকও দিয়েছে। [লিংক১] [লিংক২] লিংক১ ক্লিক করলে আনএভেইলেবেল দেখায়। পরে ইউআরএল চেক করে দেখলাম লিংকটা হলো শ্রীলংকার দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার লিংক। একটু ঘেটেঘুটে দেখলাম ঐ নিউজ সাইটের অন্যান্য অংশ শো করছে, শুধু 'বাঁশের কেল্লা'র দেওয়া ঐ নিউজটা শো করছেনা।অর্থাৎ কর্তৃপক্ষ ঐ নিউজটা সরিয়ে নিয়েছে।বাদবাকি সব ঠিক আছে।
লিংক২ নিঊ ট্যাবে খুললাম।পেলাম আরো একটা ফেসবুক পেজের লিংক ।এখানেও একই ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। শেয়ার আর লাইকের কথা নাই বা টানলাম। গার্ডিয়ান পত্রিকার লিংকটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে বর্ননায়
একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হলো ব্লগপোস্টটিতে ৩নং কমেন্টে ব্লগার দায়িত্ববান নাগরিক একটা লিংক দিয়েছেন। আমার ব্লগে লেখা অমি রহমান পিয়ালের একটা ব্লগপোস্টের লিংক ছিলো ওটা। চেক করতে দেখলাম লেখাটা গতবছর পড়া হয়েছে। উইলিয়াম নিকোলাস গোমেজ নামের একজন ব্যক্তি এই ভুয়া তথ্যের মুল হোতা। ইলিয়াস আলীর গুম নিয়ে পাকিস্তানী এক ফোরামের একটা লেখাকে অনুবাদ করে এই লেখাটা ।তখন আমাদের সময় পত্রিকা তা এক্সক্লুসিভ আকারে ছাপায় । তথ্যের যথাযথ রেফারেন্স না থাকায় আমাদের সময় পত্রিকা নিউজটি উইথড্রও করে পরবর্তিতে। এটা ফেসবুক, ব্লগেও শেয়ার হয়। আমার ব্লগে লেখা অমি রহমাল পিয়ালের ব্লগপোস্টটি পড়লে মুল কাহিনী সবার কাছে ক্লিয়ার হবে।
এই পোস্টটা আরেকটু স্পেসিফিকভাবে লেখতে পারতাম।কিন্তু সংক্ষেপে লেখা শেষ করলাম কারন কথা এটা নয়, কথা হলো ব্লগের নিরপেক্ষতা ,কমেন্ট মডারেশানের স্বচ্ছতা, ব্লগ নিয়ে ষড়যন্ত্রতা নিয়ে ইতিমধ্যে স্টিকি পোস্ট লটকানো হয়েছে কয়েকবার।কিন্তু আসলেই কি মডারেশান যথাযতভাবে দায়িত্ব পালন করছে? বা ব্লগাররা কি এসব বিভ্রান্তিকর পোস্ট রিপোর্ট করছে? কম-বেশী সবাই বাঁশেরকেল্লা পেজ সম্পর্কে অবগত আছেন, সরকার এই পেজটি ব্যানও করেছে কয়েকবার। কিন্তু ফেসবুক বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান নয়, এটা ইন্টারন্যাশ্নাল সোশ্যাল সাইট।তাই এটার উপর সরকার বা বাংলাদেশের প্রভাব নাই বলা চলে। কিন্তু আমাদের সামুর মডুগন নিশ্চয় এইসব ফেসবুক পেজ সম্পর্কে অবগত আছেন। এই পেজে জামাত-শিবির দেশবিরোধী বিভিন্ন ভুয়া প্রোপ্যাগান্ডা চালায় ও ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়।জামাত শিবিরের লোকজন তা শেয়ার করে পুরো ফেসবুক ভিজিয়ে ফেলে। কিন্তু এইসব ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর লিংক যখন ব্লগে পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার হয়, প্রথম পাতায় এসব পোস্ট স্থান পায়, তখন ব্লগের মডারেশান প্যানেল অবশ্যই এর কিছুটা দায়ভার বহন করে। তাই সামু কর্তৃপক্ষের কাছে একটা আবেদন থাকবে ব্লগের এই দুঃসময়ে আপনাদের মডারেশান শক্ত করুন। জামাত-শিবিরের প্রোপাগান্ডামুলক পোস্ট সরিয়ে নিন। একটু মাথা খাটালে এই শত শত প্রোপ্যাগান্ডা পোস্ট আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যাবে।এসব পোস্ট সরাতে, নিক ব্যান করতে বাংলাদেশের সংবিধান লাগবেনা, ব্লগের নীতিমালার আলোকেই তা করা যায়। এখন শুধু প্রয়োজন আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা। জাতির জন্য যা বিভ্রান্তিকর ,তা ব্লগ থেকে সরিয়ে ফেলাই হবে ব্লগ কর্তৃপক্ষের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।