হারের পর মন খারাপ হয় না বাংলাদেশ দলের। জিতলেও কি খুব একটা ভাবান্তর দেখা যায়? প্রথম সফরে আপাতত 'পর্যবেক্ষণ' করতে ব্যস্ত স্টুয়ার্ট ল কিভাবে জানবেন বাংলাদেশ দলের এ রসায়ন! তবে হারারে টেস্টে হারের পর বাংলাদেশ দলের দুজনের অভিব্যক্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়। আপাতদৃষ্টিতে এ বিষণ্নতা হারারের প্রভাব বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিও সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালের এ বিষণ্নতার কারণ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বরং কেউ কেউ খুবই সংগতিপূর্ণ বলে মনে করছেন!
কোনো সন্দেহ নেই, গত দেড় বছরে বাংলাদেশ দলের সাফল্যের পেছনে সাকিব ও তামিমের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সে অবদানের কারণে কোচিং স্টাফ, বোর্ড ও মিডিয়ার এমনই বাঁধভাঙা সমর্থন পেয়েছেন, যার তোড়ে ভাসতে ভাসতে তাঁরা ভুলেই গেছেন যে খেলাটা ক্রিকেট। এবং তাঁরা দলের বাকি ১৩ সদস্যের মতো ক্রিকেটারই। যাঁরা ক্রিকেট খেলে দেশকে ধন্য করছেন না। ভালো খেলেন বলে বাংলাদেশ দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন। এই প্রথম জাতীয় দলের সঙ্গে জিম্বাবুয়ে সফরে আসা নাসির হোসেনও তা-ই। ড্রেসিংরুমে এ সমতা নিশ্চিত করাটাকেই নাকি স্টুয়ার্ট ল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, হারারে টেস্টের আগেই এ নিয়ে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সঙ্গে আলাদাভাবে আলাপ করেছেন স্টুয়ার্ট ল। সে আলোচনার বিষয়বস্তু সরকারিভাবে উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব হলেও যেটুকু আভাস-ইঙ্গিত মিলেছে, তাতে পরিষ্কার যে দলের মধ্যে প্রকাশ্য যে বিভেদ রেখা, সেটি মুছে দিতে চান স্টুয়ার্ট ল। মাঠে একটি দল খেলে। সে দলটি যদি খণ্ড খণ্ড উপদলে বিভক্ত থাকে, তাহলে সফল হওয়া কঠিন-দলীয় খেলার প্রধানতম এ শর্ত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব করা স্টুয়ার্ট ল'র অজানা থাকার কথা নয়।
তিনি বিলক্ষণ বিভেদের রেখা দেখে ফেলেছেন। বিশেষ করে মোহাম্মদ আশরাফুলের প্রতি অধিনায়ক, বিশেষ করে সহ-অধিনায়কের নেতিবাচক ধারণা মেনে নিতে পারছেন না বাংলাদেশ কোচ। হারারে টেস্টের একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে কিছু আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই নাকি সাকিব ও তামিমকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন স্টুয়ার্ট ল। সে বৈঠকে আশরাফুলবিরোধী 'এজেন্ডা' থেকে সাকিব-তামিমকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন নতুন কোচ। এতে কতটা কাজ হয়েছে বা হবে, সেটি ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করবে।
তবে সে আলোচনার প্রথম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মঙ্গলজনক হয়নি। হারারে টেস্টে হারের পর ড্রেসিংরুমে শিষ্যদের স্কুল মানের ক্রিকেট খেলার জন্য সমালোচনা করেছেন। এরপর নেটে অনুশীলন করার পরিকল্পনার কথা শুনে স্টুয়ার্ট বলেছিলেন, 'এত প্র্যাকটিস করে কী হবে? মাঠে তো এর কোনো সুফল দেখছি না!' শুনে এ মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন তামিম ইকবাল। সহ-অধিনায়ককে সমস্বরে সমর্থনও দেন কেউ কেউ, যা সেখানে উপস্থিত বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের কারোরই ভালো লাগেনি। সে মন্দ লাগার বিষয়টি টিম ম্যানেজমেন্টের একজন টেলিফোনে অবহিত করেন বিসিবির এক কর্মকর্তাকে। সেই কর্মকর্তা কিংবা তাঁর কাছ থেকে জেনে অন্য কেউ খবরটি জাতীয় একটি দৈনিকের ঢাকা অফিসে সরবরাহ করেন! পরদিন পত্রিকায় প্রকাশের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত যা নিয়ে ভীষণ চাপে আছেন আশরাফুল। কারণ, ড্রেসিংরুমের খবর বাইরে চলে যাওয়ার ব্যাপারে প্রধান 'সন্দেহভাজন' ছিলেন তিনি! যে সন্দেহ বুধবার সন্ধ্যায় হোটেলে অনানুষ্ঠানিক টিম মিটিংয়ে আরো প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ে দলীয় ম্যানেজারের কাণ্ডজ্ঞানহীন একটি মন্তব্যে। আশরাফুলকে ঘিরে সে সন্দেহ অবশ্য দূর হয়েছে। তবে এর জন্য দলের সঙ্গে আসা নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে বিস্তর ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে সে রাতে।
ক্ষতিপূরণ কতটা হয়েছে বলা মুশকিল, তবে মঙ্গলবার রাতেই পুরো দলকে নিয়ে আলাদাভাবে বসেছিলেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ারে সম্ভবত এটাই পুরো দলকে নিয়ে সাকিবের প্রথম সভা। যেটাকে 'আপাতদৃষ্টি'তে পরিবর্তন বলে মনে করছেন টিম ম্যানেজমেন্টের কোনো কোনো সদস্য। তবে সে পরিবর্তন স্বপ্রণোদিত নাকি পরিস্থিতির কারণে, তা নিয়ে সংশয় আছে।
অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়ককে ঘিরে কর্মকর্তাদের মনে এ সংশয় শিউরে ওঠার মতো ব্যাপার! কোথায় দলের সেরা পারফরমারদের মাথায় করে নাচবে সবাই, তা না, উল্টো এ দুজনের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছেন সবাই। টিম ম্যানেজমেন্টের একজনের মন্তব্য, 'দিন পনেরো যাক, তারপর বোঝা যাবে এরা (সাকিব ও তামিম) সত্যি সত্যিই বদলেছে কি না।'
সে ভবিষ্যতের দিকে তিনি আশা না নিরাশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। অনিশ্চিত এ যাত্রার চূড়ান্ত ফল অবশ্য সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতোই পরিষ্কার-হয় তাঁরা নিজেরা বদলে যান, নয় তাঁদের বদলে ফেলুন
সংগ্রহ : এইখানে
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১০:৩২