ছোটবেলায় আমার পড়ার টেবিল ছিল অনেকটা জীর্ণ-শীর্ণ । ঘুণ পড়ত যখন তখন । একদিন খেয়াল করলাম কি যেন আশ্তে আশ্তে নিরন্তর ঠুক ঠুক করে যাচ্ছে । কান পেতে রইলাম অনেক্ষন টেবিলে । ঠুক ঠুক শব্দগুলোকে কেন জানি আমার খুব ভাল লাগা শুরু হল। টেবিল এর নিচে বসে থাকতাম । ঠুক ঠুক ঠুক ঠাক শব্দগুলো এখনও আমার কানে বাজে । মাঝে মাঝে টেবিল এ চাপড় দিতাম ইচ্ছা করে । শব্দগুলো কেন জানি বদলে যেত । কিন্তু কাঠ-ঘুণ কাটা চলে যেত নিরন্তর । অনেক সময় গুড়ি গুড়ি করে হলুদ কাঠের গুড়াগুলো পড়ত । সাদা টিউব লাইট এর আলোতে দেখতে ভালই লাগত । আরো জোরে জোরে চাপড় দিতাম । কিভাবে যেন ঘুনেপোকা গুলো আমার কথা বুঝত । শব্দগুলো একের পর এক বদলে ফেলত । বুঝতে পারতাম আমার প্রিয় টেবিলটা ক্ষয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন । তবুও কেন জানি ঘুণেপোকা গুলোকে মেরে ফেলার ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতাম ।
আজ কেন জানি মনে হয় বিষাক্ত শব্দগুলো আপন করে নেয়াই আমাদের সবার নিয়তি । ভ্রুক্ষেপও করি না ক্ষয়িষ্ণু মানসিকতাকে আরও তাড়াতাড়ি ক্ষয় করবার জন্য আমরা আরও বেশি করে বিষাক্ত শব্দগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে যাই । ক্ষণিকের ভালোলাগা গুলোকে আরও বেশি করে চাপড় মেরে বাড়িয়ে তুলি । ভুলের পথ বুঝেও পা থামাই না । ক্ষয় হওয়াই যেন পথের গন্তব্য । আত্মাভিমান আর আত্মতুষ্টিতে ভুলে যাই কাছের মানুষগুলোর কৃতিত্ব । নিজের ঘুণে পোকার শব্দগুলো চাপড় মেরে সবাইকে শুনিয়ে যাই বারং বার । আর বদলে ফেলি শন্দগুচ্ছ । কিন্তু আশেপাশের সমাজ,পরিবার,দেশকে কি ক্ষয়িষ্ণু পথ থেকে ফিরানোর চেষ্টা করিই বা কতটা ।
এসো সবাই মিলে চাপড় দিয়ে ঘুণেপোকার শব্দগুচ্ছকে বদলাতে না দিয়ে ঘুণে পোকা গুলোকে পিষে মেরে ফেলি বের করে করে । বলতে পারো তুমি যে আমি নিজেই তো পারিনি উপেক্ষা করতে তাহলে কেন বলছি? আশায় বুক বাধতে দোষ কি বল । এখনও বিষে নীল হয়ে যাইনি পুরোপুরি আমরা কেউ । এখনও আমাদের জাতিসত্তায় বিষাক্ত ঠুক ঠুক ঠুক ঠাক শব্দগুলোকে দমিয়ে রাখার শক্তি আছে অপরিসীম । বসে আছি আমরা সবাই এই বোধভঙ্গ হবার অপেক্ষায় । এই বোধভঙ্গের স্বপ্ন দেখে যাই নিরন্তর........

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




