somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মুক্তিযুদ্ধ ...

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বাধীনতার কয়েক বছর পর বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে আমি এক পাকিস্তানিকে খুন করার সুখ পেয়েছিলাম। আমি ছিলাম এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত চমৎকার একটি ছাত্রাবাসে। ওটার নাম ছিল গ্রান্টভবন। একেবারে পাহাড়ের পায়ের কাছে সবুজের ভেতর ছিল ছাত্রাবাসটি। আমার জানালায় এসে পাখা মেল তো উত্তর সমুদ্র থেকে উড়ে আসা গাঙচিলেরা। গ্রান্টভবনে ছাত্র এবং ছাত্রী একত্রে বাস করতো
ওখানে আমাদের নিজেদের রান্না করে খেতে হতো। রান্না ঘর ও খাবার ঘরটি ছিল সবার জন্য। ওখানেই বিদেশী ছাত্রদের দেখা হতো। বন্ধুত্ব গড়ে উঠত। আমার কক্ষের কয়েক কক্ষ পরেই বাস করতো এক পাকিস্তানি ছাত্র। তার সাথে আমার নিয়মিত দেখা হতো রান্না ঘরে। আমরা কখনই কেউ কাউ কে হাই বলিনি,হ্যালো বলিনি। বরং প্রতিবার দেখা হলে আমরা পরস্পর পরস্পরকে বুক ভরে ঘৃণা করেছি। একে অপরকে মনে মনে খুন করেছি। কোন এক গ্রীষ্মে, জুন মাসের বিকেলে ক্লান্ত হয়ে উঠেছি কোন রুপময়ী না দেখে। আমি আমার চারতালার জানালার পর্দা সরিয়ে দেখতে পাই, সেই পাকিস্তানীটি , যাকে আমি প্রাণ ভরে ঘৃণা করেছি সে এক সোনালী চুলের রূপসীর সঙ্গে বসে আছে বাগানের সবুজের ভেতরে। অনর্গল কথা বলছে পাকিস্তানী। মেয়েটি হাসছে। বাতাসে তার সোনালী চুল উড়ে উড়ে পুরো বিকেলকে সোনালী রঙ্গে রাঙিয়ে দিচ্ছে। সেই সোনা রঙ আমার জানলার ভেতর দিয়ে এসে ঢুকছে আমার ঘরে। ঢুকছে আমার বুকে। আমি বুঝতে পারছিলাম যে পাকিস্তানীটি ওই সোনালী চুলের মেয়েটির ফর্সা মাংসের জন্য পাগল হয়ে উঠেছে। কোন মেয়ের মনের জন্য পাকিস্তানীরা কাতর হবেনা। ওরা মেয়েদের হৃৎপিণ্ড নয় ওরা ভালোবাসে নারীর শরীর।
মেয়েটি যদি এক রাতের জন্য পাকিস্তানীটির ঘরে যাই তাহলে পাকিস্তানীটি কি মেয়েটির সোনালী চুলের ঘ্রাণ নিবে সারা রাত জেগে? নাকি মেয়েটিকে ধর্ষণ করবে? আমি ভাবতে লাগলাম, পাকিস্তান, ধর্ষণ ,পাকিস্তান, ধর্ষণ। আমি রান্না ঘরে ঢুকি। পাকিস্তানী মেয়েটিকে নিয়ে রান্না ঘরে আসে। আমি রান্না শেষ করে খেতে বসি। ওরা রান্না শুরু করে। রান্না শেষে ওরা আমার সামনের টেবিলে বসে। পাকিস্তানীটি মুরগীর মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে থাকে। আমি দেখতে পাই সে মেয়েটিকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। মেয়েটি আমার দিকে তাকালে আমিও তাকাই। মেয়েটি হাসে আমিও হাসি। সে বলে, হ্যালো। আমিও বলি ,হ্যালো। এরপর মেয়েটি আমাকে বলে তুমি কন দেশ থেকে এসেছো? বাংলাদেশ থেকে , আমি বলি। মেয়েটি বলে , তোমাদের দেশেতো ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে, পাকিস্তানীদের সঙ্গে? আমি বলি, আমরা ওদের পরাজিত করেছি, ওদের বিতাড়িত করেছি। মেয়েটি পাকিস্তানীটির দিকে তাকাই। পাকিস্তানীটি আমার দিকে তাকাই রক্ত চোখে। বাঙ্গালীরা তো বহু আগেই ওই রক্ত চোখকে পাত্তা দেইনি।আমি আবার উপেক্ষা করি। আমি জানতে চাই তুমি কন দেশ থেকে এসেছো? ফরাসী , মেয়েটা বলে। আমি মেয়েটিকে বলি তুমি বাংলাদেশ সম্পর্কে আর কি জানো? কিছুই না, মেয়েটি বিষণ্ণ কণ্ঠে বলে। আমি বলি। তোমার দেশ সম্পর্কে আমি অনেক কিছু জানি। মেয়েটি উৎসাহী হয়ে উঠে ,কি জানো?
আমি বলি, বলদেয়ার।
সোনালী চুল দুলিয়ে মেয়েটি চিৎকার করে উঠে, আমার প্রিয় কবি।
আমি বলি, র্যা বো।
মেয়েটি আমার টেবিলে এসে বলে, আমার আর এক প্রিয় কবি।
আমি বলি, মালার্মে।
মেয়েটি আবারো চিৎকার করে উঠে বলে, আমার আরেক প্রিয় কবি। অত্যান্ত প্রিয় কবি।
আমি বুঝতে পারলাম কবিদের নামগুলো পাকিস্তানীটির বুকে বুলেটের মতো গিয়ে বিঁধছে। রক্তাক্ত করছে। আমি ওকে আরো রক্তাক্ত করতে চাই। আমি ওই বর্বর কে খুন করতে চাই। আমি মালার্মের কবিতার কয়েকটি পঙক্তি আবৃতি করলাম। মেয়েটি আবৃতি করলো বলদেয়ারের। পাকিস্তানীটির বুকে কোন কবিতা নাই, আছে শুধু কাম ক্ষুধা, হিংস্রতা। কবিতায় কবিতায় বুক ভরে উঠছে মেয়েটির। বুক ভরে উঠছে আমার। আমি খাওয়া শেষ করে থালা বাসন পরিষ্কার করতে বেসনে গেলে মেয়েটির আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, আমি কি তোমার সাথে তোমার ঘরে যেতে পারি? আমরা কবিতা নিয়ে আলোচনা করবো। আমি বললাম অবশ্যই যেতে পারো; আমাদের আজকের সন্ধ্যাটি কবিতা দিয়ে ভরিয়ে তোলা যাবে।
পাকিস্তানীটি দরজা শব্দ করে বন্ধ করে বলল, আমি চললাম। মেয়েটি বলল, গুড নাইট।
এরপর ওই পাকিস্তানীটিকে আর কোন দিন গ্রান্টভবনে দেখিনি। আমি এক পাকিস্তানীকে খুন করে গ্রান্টভবনের দিনগুলো সুখে কাটিয়েছি।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×