শিক্ষা জীবনে ঢাকায় পড়াশুনা করেছি। অবসর কাটাতে আবার একটু ভালভাবে চলার জন্য ২/৩ টা টিউশনী করতাম। বন্ধুরা একে বলতাম “চেয়ার টেবিলের ব্যবসা” । তখনই দেখতাম আমার ছাত্র-ছাত্রীরা একরকম বাধ্য হয়েই স্কুল কলেজের শিক্ষকদের কাছে ও পড়তে যেত। আমার সাথে হয়ত সবাই একমত হবেন যে, গ্রামের অনেক সাধারন ঘরের অদম্য মেধাবী ছেলে-মেয়েরা স্কুল শিক্ষকের কাছে প্রইভেট পড়তে না পারলেও ভাল রেজাল্ট করে।
২০ জুন শিক্ষামন্ত্রী এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়েছেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা নিজ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না । তবে অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক/প্রিন্সিপাল স্কুল-কলেজেই অতিরিক্ত ক্লাশ নেয়ার ব্যবস্থা করবেন। যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে দিতে হবে। এই প্রজ্ঞাপনের ফলে সবচেয়ে বেশী লাভবান হয়েছেন শিক্ষকেরাই। আগে শিক্ষকেরা অন্য কোথাও বাসা ভাড়া করে প্রাইভেট পড়াতেন, এখন স্কুলেই পড়ান । তাদের বাসা ভাড়া ও পরিশ্রম দুটোই সাশ্রয় হবে।
আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন। আমার এলাকার পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্কুলের প্রায় ৬০০ ছাত্রদের অভিভাবকদের কাছে একটা চিঠি দিয়েছেন, অভিভাবকগণ আগ্রহী হলে ২০০ টাকার বিনিময়ে তাদের অতিরিক্ত ক্লাশ করানো হবে। অভিভাবকগণ যদি স্বেচ্ছায় তাদের সন্তানদের স্কুলে কোচিং করানোর ব্যপারে আগ্রহী হত তাহলে আজ আমার এই ব্লগ লিখতে হত না। আমার পরিচিত অনেক অভিভাবক স্কুলের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা হুমকি দিয়েছেন, “স্কুলে কোচিং না করালে টি.সি দিয়ে দেওয়া হবে” ।
ঐ চিঠিতে প্রত্যেক ছাত্র কে প্রতি মাসে ৫০ টাকা করে স্কুলে জমা দিতে বলা হয়েছে । এই টাকা দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রয়োজনে মোবাইলের মাধ্যমে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করা হবে।
আমার প্রশ্ন হল, ৬০০ ছাত্রর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০,০০০/- টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষক ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রয়োজনে মোবাইলের মাধ্যমে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমাদের দেশে ইন্টারনেট ও মোবাইল খরচ কি এতই বেশী।
এই অবস্থা শুধু আমার জেলাতেই না, আমি পরিচিত , বন্ধুদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছি ঢাকা সহ অনেক জেলাতেই শিক্ষকেরা স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একরকম বাধ্য করছেন কোচিং করার জন্য। আগে শিক্ষকেরা কোচিং করাতেন কোন আইনগত ভিত্তি ছাড়াই। এখন তাদের আর কে পায় খোদ শিক্ষামন্ত্রী তাদের জন্য কোচিং এর সু-ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনি স্কুল–কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়া বন্ধ করতে গিয়ে এই প্রবনতা কি আরও বাড়িয়ে দিলেন ? চেয়ার টেবিলের ব্যবসা আরও রমরমা হতে যাচ্ছে। একবার কি ভেবে দেখবেন, যে সব ছাত্র-ছাত্রীর ২০০ টাকা করে দেয়ার সামর্থ্য নেই তাদের কি হবে ?