ইসলাম শান্তির ধর্ম। খ্রিস্টান শান্তির ধর্ম। বৌদ্ধদের স্লোগানই হচ্ছে সম্প্রীতি। হিন্দু ধর্মও শান্তির ধর্ম। আমি মোজাফর আহমেদের "ইতিহাস কথা কয়" বইটি পড়ে শেষ করার পর মনে হলো, যে অখন্ড ভারতের জন্য হিন্দু মুসলিম একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিট্রিশ তাড়ালো তারা হঠাৎ ১৯৩৫- ৪৭ এ এসে এতটা উগ্র হলো কিভাবে? যারা ১৭০ বছর অখন্ড ভারতের জন্য লড়লো তারা আজ নিজেরাই নিজেদের প্রতিবেশীদের হত্যা করছে। শুধু ধর্মীয় বিবেচনায় অথচ ধর্মে এমনটা নেই। ট্রেন ভর্তি লাশ প্রবেশ করে ভারতে, ট্রেন ভর্তি লাশ যায় পাকিস্তানে। কোন অর্থ সম্পদ কিংবা প্রতিহিংসা / প্রতিশোধ তারা নেয় নি। শুধু ধর্মীয় বিবেচনায়। ওরা পাকিস্তানে আমাদের একজন হিন্দুকে মারছে আমার এখানে ভারতে আমার প্রতিবেশী মুসলিমকে মারবো। বিনিময় স্বর্গ মিলবে দুই হত্যাকারীর, শুধু এইটুকু ধারনা তাদের। হত্যাকারীদের কাছে তারা নিজেরা এক একজন গাজী, মারা যাওয়া দুই ব্যক্তি নরকবাসী। অথচ পুরো বিশ্বের সকল মুসলিম সাধারনের কাছে এবং হিন্দু সাধারনের কাছে নিহত দুই ব্যক্তিই স্বর্গবাসী। হত্যাকারী নরকবাসী। কি অদ্ভুত, একই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ। অথচ সত্যটা সকলে জানে ও বুঝে। লাশ দেখে, নেহেরু ও বল্লব ভাই প্যাটেল লর্ড মাউন্টবেটনের কাছে গিয়ে বলে আমরা এমন দেশ চাই না আপনারা ক্ষমতা গ্রহন করুন। লর্ড সাহেব তাই পুনরায় গর্ভনরের দায়িত্ব নেয় ভারতের। সম্ভবত ১৯৫৫-৫৬ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকেন তিনি। এবং কঠিন হস্তে দমন করে দাঙ্গা। মুসলিম হিন্দু কেউই কারো শত্রু ছিলনা বরং ক্ষমতা ও কিছু উগ্র মানুষ যারা নিতান্তই কম তারা বিভেদের দেয়াল তুলেছে, কখনও জুজুর ভয় দেখিয়ে কখনও ক্ষমতার লোভে। বাস্তবে জনগন কখনোই কোন কালে হত্যাকে সমর্থন করে নি। তারপর মার্কিনবাহিনী নতুন মাত্রা যোগ করলে, সন্ত্রাসের ধর্মীয় পরিচয়কে প্রকট রুপে বিশ্বকে ঘুলিয়ে খাওয়ালো। তার দিল মুসলিম জঙ্গি। যা স্পষ্টত অপরাধ ছিল কিন্তু ক্ষমতা লোভীরা এটাকে আরো বিভিন্ন রঙে রাঙ্গিয়ে সাধারন ধর্মবলম্বীদের মাথায় "জঙ্গি" নামক শব্দটি সেট করে দিল। ফলে সব ধর্মেই সৃষ্টি হলো আরো একটি শব্দ উগ্রবাদী। এখন আরো প্রকট হয়েছে। ফেসবুক এসে তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কমেন্ট নামক ব্যক্তি/ বাক স্বাধীনতা ব্যবহার করে সহজেই লিখি ফেলা যায়, ব্যাঙ্গ করা যায়, গালি দেয়া যায়, বিশ্রী শব্দের প্রতিক্রিয়া দেখানো যায়, গরু, মুর্তি কিংবা মসজিদ, মোল্লাদের ছবি, বক্তব্যের নিচে। বিনিময় বুক খালি হচ্ছে বহু মায়ের। প্রিয়জন, খেলার সাথী, বন্ধুরা হারাচ্ছে নিকট স্বজন। পৃথিবী, রাষ্ট্র পাচ্ছে কিছু শব্দ, উগ্র, জঙ্গি, ক্ষমতা।
পুরো ভারত জুড়ে এখন ফ্রান্সের পণ্য গ্রহনে উৎসাহ দিচ্ছে হ্যাশ ট্যাগে, মৌন নয় প্রকাশ্যে। তাদের দৃষ্টিতে এটা ইবাদত, ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ। প্রত্যেকেরই বাক স্বাধীনতা রয়েছে, লিখবার স্বাধীনতা আছে তবে অন্যায় কে ন্যায় লিখবার অধিকার কারো নেই। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারবো, কোন বিজ্ঞ আলেম কখনও হিন্দুদের নিয়ে কটুক্তি করে না এবং কোন হিন্দুের পূজারী, খ্রিস্টানদের পাদ্রীরা কখনও মুসলিমদের নিয়ে কটুক্তি করেনি। যারা কটুক্তি করে তারা দুই শ্রেনীর ১৷ ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ ২। অজ্ঞ ধর্মবলম্বী ব্যক্তি। যা এখন ফ্রান্সের ম্যঁক্রো আর এরদোগান খেলছে। কিছুদিনের মধ্যে মোদীও হয়ত যোগ দিবে।
আমি তাই বলি, ধর্মীয় শিক্ষা আরো প্রসারিত না করা হলে, সবজান্তা শমসের এবং অল্প বিদ্যায় জ্ঞানী দের কবলে অতিশ্রীঘ্রই জ্ঞানী আলেম, জ্ঞানী পূজারী পড়বে (যা এখনও দৃশ্যমান)। এখন পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না, হত্যাকারী বড় কোন আলেম বা ধর্মীয় প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। আমরা প্রত্যকে এতটাই জ্ঞানী যে অন্য ধর্মবলম্বীদের বই পড়তে দ্বিধান্বিত বোধ করি। তাই তাদের ধর্ম সম্পর্কেও জানি না, তাদের মূল্যবোধ সম্পর্কেও জানি না। যার ফলস্বরূপ আমরা অন্য ধর্মকে তার প্রাপ্য সম্মান টুকু দিইনা। ফলে নিজেও প্রাপ্য সম্মান পাই না।
আসুন বই পড়ি, জানি, তারপর কমেন্টে লিখি।
(ম্যাঁকোকে যদি এরদোগান একখানা কোরআন শরীফ দিয়ে বলত, এটা পড়ুন, তারপর আপনার প্রতিক্রিয়ার জবাব দিবো, এমন একটা দৃশ্য যদি দেখা যেত।)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৫৮