যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যখন নিজেই অপরাধী। যা নিয়ে দেশে বিতর্কের শেষ নেই। অবশ্য আইন বিশেষজ্ঞরা ভাল বলতে পারবেন পৃথিবীতে কোন আইন বা ট্রাইব্যুনাল নিয়ে এর আগে এত বিতর্ক হয়েছে কিনা? যদি না হয়ে থাকে তাহলে এই আইন দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলেও সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত, বিতর্কিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কালো আইন হিসেবে হয়তো গ্রীনিচবুকে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। এটি হয়তো সরকারের একটি বড় অর্জন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই আইন দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা এই সরকার যখন প্রথম বলেছে, তখনই আইনের প্রভুর দেশ হিসেবে খ্যাত যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডস এটিকে শুধু কালো আইন হিসেবেই চিহ্নিত করেনি বরং আইনটি সংশোধনের জন্য ১৭টা পয়েন্টে তাদের অবজারভেশন তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকারের নিকট তাদের মতামত পাঠিয়ে দিয়েছে। মহাজোট সরকার যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসের এ ধরনের মতামতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সরকারের ধারণা ছিল কট্টরপন্থী উগ্র মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা জামায়াত নেতাদের বিচার হবে, আর সেখানে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থন দিবে এটাই স্বাভাবিক। শুনা মাত্রই বলবে কট্টরপন্থী উগ্র মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা জামায়াত নেতাদের বিচারে আবার আইন লাগে নাকি? তাদের বিচারে আবার মানবাধিকার কিসের? পঞ্চম সংশোধনী রায়ের পর সুরঞ্জিত বাবু যেমনি বলছিলেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে। যুদ্ধপরাধীদের অধিকার বলতে কিছু নেই। যাক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে দু' মোড়ল রাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের এমন মনোভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মহাজোট সরকারের অতি-উৎসাহী শিবিরে ভাটা পড়ে। আইনমন্ত্রী ছুটে যান আমেরিকায় সেখানে বুঝিয়ে সুজিয়ে ঠিক করে আসেন এটা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয়, এটা মানবতাবিরোধী আপরাধের বিচার। বিরোধীদলের পক্ষ থেকে যখন বলা হলো ভালো কথা এই সময়ে সবচেয়ে মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড করছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ তাদের দিয়েই বিচার শুরু হোক। এমন দাবিতে নড়েচড়ে বসলো সরকার। আবার শুরু করলো যুদ্ধাপরাধীদের জিগির। আইনমন্ত্রী আমেরিকার কাছে দেয়া ওয়াদা এবং মিডিয়াকে বলা কথা থেকে নিজেই সরে আসলেন।
১৪ জুলাই বৃটিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালেন ডানকান ঢাকায় সফরে আসলেন সরকারের ধারণা ছিল এখন বোধহয় তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। বৃটিশ এ মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন। এ বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করলে চলবে না। বৃটিশদের এমন পুরাতন মনোভাবে সম্ভবত খুব ক্ষুব্ধ হলেন আমাদের আইনমন্ত্রী। এজন্য আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ২৯ জুলাই সিপিবি আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারে প্রশ্ন তোলার অধিকার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নেই' বলে । ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে বলে দিতে চাই, ৩৯ বছর আগে যখন এদেশে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হলো, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নেয়া হলো, এক কোটি মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হলো তখন আপনাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? সেদিন কি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়নি? সেই ঘটনার বিচার করলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারোরই নেই।'
যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে পাশ্চাত্য দেশগুলো ও বাংলাদেশের মহাজোট সরকারের মধ্যে মতানৈক্যের সুস্পষ্ট স্বীকৃতি দিলেন মন্ত্রী নিজেই। সরকারের কোনো মন্ত্রী ইতোপূর্বে কোনো পাশ্চাত্য সরকারের মনোভাব সম্পর্কে এমন কঠোর বক্তব্য এর আগে দেননি। আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের অধিকার বা এখতিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিদেশীদের পুরোপুরি সমর্থন আছে আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনেকবার গালভরে এ বক্তব্য দিয়েছেন। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। তাদের স্বার্থের বাহিরে গেলে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, আইন, আদালত, বৈধ-অবৈধ সত্য-মিথ্যা কিছুই মানেন না। আমি মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অনেকগুলো দ্বৈতনীতি তুলে ধরবো।
নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে আওয়ামী লীগ পৃথিবীর মহাশক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রকেও তুলোধুনো করতে দ্বিধা করে না। এবার সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরামের অন্যতম নেতা ও মুখপাত্র অব: লে. জে. হারুনুর রশিদ চৌধুরী বীর বিক্রম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ আনলেন। তাহলে জামায়াত নেতা গোলাম আযমের স্বাধীনতা বিরোধিতার দায়ে যদি তৎকালীন তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতা নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন, তাহলে আমেরিকার বর্তমানে একই কারণে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন।
গত ৪ জুলাই টরন্টোতে বাংলাদেশীদের সমাবেশে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে প্রবাসীদের সমর্থন জোরদার করার আহবান জানিয়ে সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরামের অন্যতম নেতা ও মুখপাত্র অব: লে. জে. হারুনুর রশিদ চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতা করেছিল এবং কেউ যদি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ আনেন, তাহলে আমরা স্বাগত জানাবো। অবশ্য কথাগুলো বলার সময় অব: লে. জে. হারুনুর রশিদ চৌধুরী সাহেবের পুরোপুরি জ্ঞান ছিল বলে মনে হয় না।
এটার নামই আওয়ামী লীগ যারা নিজেদের পক্ষে গেলে অসত্যকে সত্য আর রাতকে দিন বানাতে দ্বিধাবোধ করেন না। যারা নিজেদের পক্ষে গেলে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির চিঠিতে ও ১/১১ জরুরী অবস্থার সমর্থন যোগান, আবার নিজেদের বিপক্ষে গেলে পৃথিবীর দু' পরাশক্তির বিরুদ্ধে হেন কথা বলতে দ্বিধা করেন না।
এবার আসুন যারা প্রত্যেকদিন হাঁকডাক দিয়ে জামায়াত নেতাদের প্রায় ফাঁসি দিয়েই ফেলেন। অবস্থা এখন এমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগের জন্য তসবিহ পড়ার সওয়াব তুল্য। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার আনুকূল্য ও দিদার লাভ করা যায়। যে নেতা যতজোরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে নোংরা বক্তব্য রাখবে তিনি ততই শেখ হাসিনার আনুকূল্য ও আস্থা অর্জন করতে পারবে। এদিক থেকে শীর্ষ আছেন, আইন প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্টমন্ত্রী, স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রীসহ অনেকেই।
এত সব যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বাংলাদেশে ঘটে যাচ্ছে। এমনি এক টানটান উত্তেজনাকর মুহূর্তে আমেরিকা আসলে কি ভাবছে? আমেরিকার হার্ডকোর মুখপাত্র হিসেবে খ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার, ঈষান ঠাকুরের লেখা ওই প্রতিবেদনটি টাইমের ৩রা আগস্ট অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়। ‘বাংলাদেশ : ব্রিঙিং এ ফরগটেন জেনোসাইড টু জাস্টিস' শীর্ষক বিপোর্টে বলা হয়- বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশেও এ বিচার প্রক্রিয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। বাংলাদেশের গণহত্যার জন্য বর্তমানে আটক চারজন সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলেও তাদের মতো অসংখ্য যুদ্ধাপরাধী এখনও সারাদেশ, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশ থেকে এসব যুদ্ধাপরাধীকে প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং ময়না তদন্তের প্রমাণের অভাবে বিচার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকার তার পরিচিত প্রতিপক্ষ এবং রাজনৈতিক শত্রুদেরকে দমন করতেই এ বিচারকে ব্যবহার করছে। আলী রিয়াজ বলছেন, ‘এ বিচার প্রক্রিয়া যতটা সম্ভব স্বচ্ছ হতে হবে। সরকার যদি পুরোপুরিভাবে সেটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটা সমগ্র জাতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে।' বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশেরও এ বিচার প্রক্রিয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। তবে এগিয়ে যাবার পথ এখনও আঁধারে আচ্ছাদিত। এ বিপোর্টে কয়েকটি বিষয় তাদের সংশয় তারা প্রকাশ করেছে- এক-বিচার প্রক্রিয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে । দুই- বাংলাদেশের গণহত্যার জন্য বর্তমানে আটক চারজন সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলেও তাদের মতো অসংখ্য যুদ্ধাপরাধী এখনও সারাদেশ, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিন- আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকার তার পরিচিত প্রতিপক্ষ এবং রাজনৈতিক শত্রুদেরকে দমন করতেই এ বিচারকে ব্যবহার করছে। চার- ‘এ বিচার প্রক্রিয়া যতটা সম্ভব স্বচ্ছ হতে হবে। সরকার যদি পুরোপুরিভাবে সেটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটা সমগ্র জাতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো ভারত ও আমাদের দেশের বাম বুদ্বিজীবীদের চাপে যে কি কাজ হাত দিয়েছেন তা কিঞ্চিৎ হলেও মাঝে মধ্যে উপলব্ধি করেন এবং এ বিচার সমগ্র জাতির জন্য কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে তা ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য থেকেই বুঝা যায়। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হাতে নিয়েছি' বলে অভিহিত করে ঘোষণা দিলেন, ‘জামায়াতকে আমরা নিষিদ্ধ করবো না। সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে।' সংসদেও তিনি এমন বক্তব্যই রেখেছেন।
পাঠক লক্ষ্য করুন আর আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ১৭ জুলাই বলেছেন, ‘চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের' চলতি বছরের মধ্যেই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী রায় বাতিলের মাধ্যমে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে।'
এবার আসুন প্রেফতার প্রক্রিয়া নিয়ে যতখেলা আওয়ামী লীগ খেললো। এত বড় বড় যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার যে কায়দায় করল তা, রীতিমতো হাস্যকর। একটি ঠুনকো অসত্য ও জামিনযোগ্য মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করে সরকার শক্তিহীনতার পরিচয় দিয়েছে। দ্বিতীয়ত এই জাতীয় নেতাদের গাড়ী পোড়ানো, পুলিশী কাজে বাধা, পুরাতন হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশকে খেলো ও পুতুলি বাহিনীতে পরিণত করেছে। বর্তমানে আমরা যেন পুলিশী রাষ্ট্রেই বাস করছি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন- দেশে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। বিচার বিভাগের ভেতরেও আইনের শাসন ব্যাপকভাবে অনুপস্থিত। (১১ আগস্ট বিডি নিউজ) এ সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে যে খেলা শুরু করেছে তা মনে হয় আওয়ামী লীগ নিজের জন্যেই শুভ হবে না। আমি এর আগের লেখায় সম্ভবত পুলিশ এখন যেভাবে রিমান্ডে নির্যাতন, হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে তার প্রসঙ্গে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের গল্পটি তুলে ধরেছিলাম-ঊনবিংশ শতাব্দীর বৃটিশ মহিলা সাহিত্যিক মিসেস মেরী শেলী (১৭৯৭-১৮৫১) তার উপন্যাসে এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন। এক বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে ডা: ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এক মানবরূপী দানবের সৃষ্টি করেন, যে-দানব পরিণামে তার স্রষ্টাকেই হত্যা করে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব বলতে এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠা করা কিংবা এমন কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি করা কিংবা এমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা বা কর্মকান্ড শুরু করাকে বোঝায়-যা পরিণামে তার স্রষ্টা বা উদ্যোক্তার জন্যেই ধ্বংস কিংবা মহাবিপদ ডেকে আনে। সম্ভবত খুব বেশী দূরে যেতে হবে-না মহা-ফ্রাঙ্কেনস্টাইন মহাজোট সরকারের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে।
তৃতীয়ত- জাতীয় নেতাদের এ ধরনের হাস্যকর মামলায় প্রায় মাসাধিককাল রিমান্ডে নিয়ে আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে, যেমন করা হচ্ছে বর্তমানে আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএনপি নেতা মির্জা আববাস, শমশের মোবিন চৈাধুরীসহ বিরোধীদলীয় আরো অনেকের সাথে। যা কারো জন্যই শুভ নয়। বিরোধীদলীয় নেত্রী একাধিকবার তার বক্তব্যে বলেছেন, এই সরকারই শেষ সরকার নয়, আমরা আওয়ামী লীগ থেকে শিখছি আমরা ক্ষমতায় আসলে এগুলো প্রয়োগ হবে।
আবার আসা যাক, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এখনো কোন স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে পারেনি। জাতীয় নেতাদের এ ধরনের হাস্যকর মামলায় প্রায় মাসাধিককাল রিমান্ড শেষে এবার ভয় হলো কখন যুদ্ধাপরাধীরা জামিনে বের হয়ে পড়ে, তাহলে কি করা যায়, প্রভুদের ইশারায় এবার তড়িঘড়ি করে যুদ্ধাপরাধীদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে প্রেফতার দেখানো, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট আভিযোগ নেই। সরকার যুদ্ধাপরাধীদর বিচারের শুরুতেই অস্বচ্ছতার পরিচয়ই দেয়নি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনালে বিতর্কের শেষ পেরেকটি মারলেন এডভোকেট টিপু সাহেব। এই জন্যই মনে হয় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এক আলোচনা সভায় যুদ্ধাপরাধীদর বিচারের ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু সাহেবকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘‘ছাগল দিয়ে হাল চাষ হয় না’’ ।
প্রথমেই যুদ্ধাপরাধীদর বিচারের ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারে অস্বচ্ছতার প্রশ্ন তুললেন এডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেন-মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়টি আইনসম্মত হয়নি। কথায় বলে ‘‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’’ তার মন্তব্য নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে তোলপাড় চলছে। প্রসঙ্গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সরকারপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের চার শীর্ষ নেতাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দেন আদালত। এ আটকাদেশ আইনসম্মত হয়নি বলে বক্তব্য দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান কৌঁসুলি ও বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এডভোকেট আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আইনের ১১ (৫) ধারা অনুযায়ী অভিযোগ গঠনের আগে অভিযুক্ত কারো বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সুযোগ নেই। এ সংক্রান্ত বিধিমালার ৯ নং বিধিতে তদন্তের যেকোনো পর্যায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানার যে অধিকার ট্রাইব্যুনালকে দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই মূল আইনের ১১ (৫) ধারার আলোকে হতে হবে। এ কারণে জামায়াত নেতাদের অভিযোগ গঠনের আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি বা গ্রেফতার প্রদর্শনে সংশ্লিষ্ট আইন লঙ্ঘিত হয়েছে।
বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হলে কী হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, চ্যালেঞ্জ হলে আমরা আদালতে তা মোকাবিলা করবো। তবে বিষয়টি চ্যালেঞ্জযোগ্য হবে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে না। এ সময় এডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তিনি একজন আইনজীবী হিসেবে তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। এটি একান্তই তার নিজস্ব বিষয়। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।
পাঠকবৃন্দ এখানেও লক্ষ্য করুন এডভোকেট আনিসুল হক উনি যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মন্তব্য করলেন তখন তা তার ব্যক্তিগত মত হয়ে গেল। অথচ এই আনিসুল হক দুদকের একজন আইনজীবী, যতটা না যোগ্যতায় তার চেয়ে বেশি আওয়ামী ভক্তির কারণে। এরশাদের আইনজীবী এবং শেখ মুজিব হত্যা মামলার কৌঁসুলি। আশ্চর্য়ের ব্যাপার হলো- বাংলাদেশে অনেক হাইপ্রোফাইল লইয়ার থাকা সত্ত্বেও এবং তারা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানার সমালোচনা করলেও কেউ কানের মাছি পর্যন্ত তাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। যেমন বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ, ব্যারিস্টার রফিকুল হকসহ অনেক বাঘ বাঘা আইনজীবী।
কিন্তু যখন আওয়ামীভুক্ত আনিসুল হকের মত কেউ মন্তব্য করে তখন মিডিয়ায় তোলপাড় হয়ে যায় আবার তা নিয়ে আইনমন্ত্রী মিটিং করেন। তাতে এটাই বোঝা যায় আওয়ামী লীগ তার প্যানেলের বাইরের কোন আইনজীবীকে আইনজীবী মনে করে না। আবার আনিসুল হকের মন্তব্যকে তার ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে টিপু সাহেব (মন্তব্য) করেছেন। একজন আইনজীবীর কথা কি ব্যক্তিগত মন্তব্য হতে পারে? এখন অপেক্ষার পালা আনিসুল হক কখন তার মন্তব্য পরিবর্তন করে।
এবার দেখুন আওযামী লীগের চাপাবাজির নমুনা। নিজেদের পক্ষে না থাকলে এমনকি রাজাকার না হলেও জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেই তারা যুদ্ধাপরাধী। আওয়ামী লীগের সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলে বসেছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে বেগম খালেদা জিয়ারও বিচার করা হবে। সাজেদা চৌধুরীর মতে, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের এক জেনারেলের সাথে বেগম খালেদা জিয়া সেনাক্যাম্পে থেকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যার পরিকল্পনায় ছিলেন। সেই অপরাধে তার বিচার হবে। রাজাকারের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রুখতে হবে।' অথচ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়েই অন্তরীণ ছিলেন।
রাজাকার মানেই যুদ্ধাপরাধী। আর তাই ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার বেয়াই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাবা যে বড় রাজাকার ছিলেন সে কথা। সেটি আলোচনায় মাঝে মধ্যে আসে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের প্রতিপক্ষ সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী হওয়ার কারণেই। গত ২২ এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে একথা শুনে ক্ষেপে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বলেন, দেশে রাজাকার বলে কোনো শব্দ নেই। দেশে কোনো রাজাকার নেই। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দাদাশ্বশুর ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম খন্দকার নুরুল হোসেন নুরু মিয়া ফরিদপুরে রাজাকারদের তালিকায় ১৪ নম্বর রাজাকার হলেও তিনি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। একই সাথে তিনি আওয়ামী লীগের ফরিদপুরের নেতাদের কাছে প্রশ্ন করেন, তার ভাই শেখ সেলিম ফরিদপুরের রাজাকার, মুসা বিন শামসিরের ওরফে সূইলা মুসার মেয়ের সাথে ছেলে বিয়ে দিয়ে আত্মীয়তা করেছেন, এটা তারা কখনো বলেন না কেন? অথচ শেখ হাসিনার মেয়ের দাদাশ্বশুর নুরু মিয়ার নামে সবাই অভিযোগ করেন, তিনি রাজাকার ছিলেন। শেখ হাসিনা গর্বের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়ে দেন, নুরু মিয়া পিস কমিটির সদস্য থাকলেও যুদ্ধের সময় তিনি কোনো অপরাধমূলক কাজকর্ম করেননি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রখ্যাত কলামিস্ট বদরুদ্দিন উমরের লেখায় এবার খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী থিং ট্যাঙ্কদের মহাগুরু আব্দুল গাফফার চোধুরী। তিনি বদরুদ্দিন উমরকে রাজাকারদের নয়া স্পোকস্ম্যান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আব্দুল গাফফার চোধুরী অন্যের মতের প্রতি কখনই সহনশীলতা প্রদর্শন করতে পারেন না। এটা আওয়ামী লীগের মুদ্রাদোষই বলতে হবে।
বদরুদ্দিন উমর লিখেছেন- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু কোনো নতুন ইস্যু নয়। বাস্তবত ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরই এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু ও তৎকালীন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্পন্ন হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তখন প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করলেও তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। শুধু তাই নয়, এর তালিকা প্রক্রিয়া শুরু করে তারা তালিকাভুক্ত ১৯৫ পাকিস্তানি সামরিক অফিসারের বিচার না করে তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়েছিল। যদিও তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিল যে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে। সে বিচার হয়নি, তারপরও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাদের আটক করা হয়েছিল তাদেরও ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। তাদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণ করতে। এ কাজ শেখ মুজিব তাদের মন্ত্রিসভার কোনো সিদ্ধান্তের মাধ্যমে করেননি। সাংবিধানিকভাবে ক্ষমা ঘোষণা ছিল রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারভুক্ত, তবু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই তিনি এ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন নিজে এই কাজের কৃতিত্ব গ্রহণের জন্য। এক্ষেত্রে সব থেকে ‘চমৎকৃত' হওয়ার মতো ব্যাপার ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব কর্তৃক ১৯৭১ সালের সব থেকে বড় ও ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে শুধু মাফ করে দেয়া নয়, ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে ইসলামী সম্মেলনের সময় তাকে পরম বন্ধু হিসেবে আলিঙ্গন করে তার গালে চুমু খাওয়া এবং পরে তাকে মহাসম্মানিত রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাজসিক সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা। এরপর বাস্তবতা আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো নৈতিক অথবা আইনগত ভিত্তি থাকেনি। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ও তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শুধু তা-ই নয়, যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই তারা জামায়াতে ইসলামী এবং অন্য ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নিলেও এখনকার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই সততার জন্য বিখ্যাত নন। কাজেই সুযোগ বুঝে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে অনেক গালভরা কথা বললেও আওয়ামী লীগ সরকারের এই নেতিবাচক কার্যকলাপের বিরোধিতা না করে নিজেরাও এর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক ফালতু কথাই তাদের বলতে হচ্ছে। (সূত্র : কালের কণ্ঠ, ০১/০৭/২০১০)
আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেছেন, সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বর্তমানে শ্রমিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের মতো একটি বিষয়কে নিয়ে সরকারের এ ধরনের আচরণ জাতির জন্য ভালো পরিণতি বয়ে আনবে না। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে গতকাল রাজধানীতে ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবির ন্যায্যতা' শীর্ষক সংলাপে বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপকরা এতে বক্তব্য রাখেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা কোনো অযৌক্তিক দাবি করছেন না বরং তারা বাঁচার মতো ন্যূনতম মজুরির দাবি জানাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনসহ সারাদেশে যেকেনো ধরনের কর্মসূচিকে ভুল ব্যাখ্যা করে জনসম্মুখে উপস্থাপন করছে। আনু মুহাম্মদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করে সরকারকে জনগণের সমর্থন নেয়ার পরামর্শ দেন। (নয়া দিগন্ত, ৫ আগষ্ট)
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২২ জুলাই রাজশাহীতে যুবলীগের সমাবেশে বললেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত যত না বেশি কথা বলে, তার চেয়ে একশ' ভাগেরও বেশি কথা বলে বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বেগম জিয়া মরিয়া হয়ে উঠেছেন।' ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার প্রকাশ্য বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য বেগম জিয়া আন্দোলনে নেমেছেন বলে অভিযোগ তোলেন।
আইন প্রতিমন্ত্রী বললেন-জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের পর জামায়াত-শিরির দু' একটি মিছিল ছাড়াতো কিছুই করতে পারলো না। আর এখন বলছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের গন্ডগোল, চবি মারামারি সবই নাকি জামায়াত-শিবিরের ইন্ধনেই হচ্ছে। তাহলে বুঝা যায়, জামায়াত-শিবির অনেক শক্তিশালী। আইন প্রতিমন্ত্রী সাহেব- জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের পর জামায়াত-শিরির দু' একটি মিছিল ছাড়াতো কিছুই করতে পারলো না মানলাম। এর আগে আপনাদের নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রেফতার হওয়ার পর একটা মিছিলও তো আমরা দেখলাম না। বরং তাকে কিভাবে বাদ দেয়া যায় সে চেষ্টাই আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা করেছেন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করুন দেখেন জামায়াত-শিবির ময়দানে কি করতে পারে। মন্ত্রী সাহেব আপনার অবগতির জন্য বলছি-২৮ অক্টোবর ০৬, ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র দু'দিনের ব্যবধানে এ পুলিশ বাহিনি বিএনপি -জামায়াতের সহযোগীতায় এগিয়ে আসেনি।
আবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের গন্ডগোলের জন্য কিছু এনজিওকে দায়ী করলেন। ৯ আগস্ট বিএনপির গণমিছিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এমন হাজারো দ্বৈত বক্তব্য নিয়ে মাঠে যখন আওয়ামী লীগ। তাহলে কি বলা যায়, আসলে কার বক্তব্যটি ঠিক।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ অনেক বেশি অপরাধ করলে হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের অবস্থা তেমনই মনে হয়। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেছেন ‘‘শেখ হাসিনার মনে হয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে’’। অবশ্য এর আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে হাইকোর্ট একটি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এটি পাঠকদের সকলেরই জানা। আমি আবশ্য মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার ভয়ে তা, লিখলাম না। কারণ এখন দেশে নাকি মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার মওসুম চলছে।
সরকার এখন যুদ্ধাপরাধের ভুতে আক্রান্ত। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ নিয়ে আন্দোলন, আইন-শৃক্মখলার অবনতি, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মারামারি, চবি গন্ডগোল এক কথায় নুন থেকে চুন খসলেই যুদ্ধাপরাধীদের দাযী করে চলেছে মহাজোট সরকার। কবে যে পারিবারিক কলহের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের দাযী করে না বসে আওয়ামী লীগের নেতারা। জনগণের সমস্যা সমাধান না করে সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের রাজনৈতিক ঢাল দিয়ে এখন আর রক্ষা পাচ্ছে না। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের জন্য জনগণ স্বউদ্যোগে ইতিমধ্যেই আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণ বিদ্যুতের জন্য ভাংচুর করছে। এটি মনে হয় হুমকি দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সব কিছুতে যুদ্ধাপরাধীদের দাযী করা, সরকারের এ ফালতু বক্তব্য মানুষ যে গ্রহণ করছে না, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও ২৭ জুনের হরতালের মাধ্যমে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে। কথায় বলে ‘‘গরম ভাতে বিড়াল বেজার’’ আর আওযামী লীগ বেজার জোটের অন্যতম শরীক জামায়াত-শিবিরের উপর। ঈদের পর শুরু হবে সরকারবিরোধী আন্দোলন। বিরোধীদলীয় নেত্রী লাখো জনতার গণমিছিল থেকে ইতোমধ্যে সেই কথা জানিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের রাজনৈতিক ঢাল দিয়ে সরকার জনরোষ থেকে আর কতদিন রক্ষা পায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।
টাইম ম্যাগাজিনের শেষ লাইনটি দিয়েই লেখার ইতি টানছি- ‘তবে যুদ্ধাপরাধের বিচার এগিয়ে যাবার পথ এখনও আঁধারে আচ্ছাদিত'।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




