somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন, ভিসিকে মনে করিয়ে দেই, সনদপত্রের চেয়ে মানবিকতা, মনুষ্যত্ব অনেক বড়। আসুন, কনভোকেশন উৎসব বর্জন করি।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মা, আমার ভায়েরা, আমার গ্রামের বন্ধুরা চেয়েছিল, আমি অনেক বড় হয়। তারা আমার কনভোকেশনের ছবি দেখতে চেয়েছিল নিশ্চয়, যেটা আর আর অন্যরা প্রত্যাশা করে। আমারও খুব ইচ্ছে ছিল, কনভোকেশনে অংশগ্রহণ করার। যখনই আমি যুবায়েরের কথা ভেবেছি, যখনই তাকে নৃশংসভাবে খুন করার কথা ভেবেছি তখন আমার কাছে কনভোকেশনের চেয়ে, প্রতিবাদ জানানোটাই হয়ে উঠেছে মহত্তম। তারও তো একদিন কনভোকেশনে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল ঠিক আমাদের মতো করে। আমার মা, আমার ভায়েরা, আমার গ্রামের বন্ধুরা, তোমরা জেনো, আজ আমি অনেক বড় হয়েছি, আজ আমি প্রতিবাদ করতে শিখেছি, ঝড়ো প্রতিবাদ, খুনের এবং খুনীর বিরুদ্ধে। তোমরা হয়তো, আমার কনভোকেশনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছ, তবে মনে রেখো, আমি তোমাদের একজন হন্তারকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একীভূত করেছি। আমি তোমাদের ছেলে হারানো মা-বাবার শোক প্রকাশে শামিল করেছি। তোমারাই বলো, কনভোকেশনের আনন্দের চেয়ে, শোকের মিছিলে শামিল হওয়া আর খুনীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মিছিলে একীভুত হবার আনন্দ কিছুতেই কম নয় বরং এটাই এই মুহূর্তে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়ের দাবী।
এটাই কী আমার ক্যাম্পাস? এটাই ?
আমার সার্টিফিকেট খুনি, জল্লাদ, অপদার্থ, অথর্ব আর পা চাঁটা প্রশাসন এবং চুশীল (সুশীল?) সমাজের কাছে বন্ধক দিলাম, জুবায়ের হত্যার বিচারের বিনিময়ে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করার। আমার গ্রামের বন্ধুদের বলতে চেয়েছিলাম, আমার মা'কে ছবি দেখাতে চেয়েছিলাম, আমি অনেক বড় হয়েছি এই কথা। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আসলে আমি অনেক ছোট হয়ে গেছি।আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয় তার বিচার হয় না। লজ্জায়, ক্ষোভে, ঘৃণায় শরীরের রক্তকণা জমাট হয়ে যায়।
আমার প্রিয় ক্যাম্পাস যখন খুনীদের জয়োল্লাসে প্রকম্পিত, যখন আমার ভাই আমার চোখের সামনে খুন হয় আমারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ইশারায়, তখন আমি কীভাবে খুনীদের অট্টহাসিতে যোগ দেয়, আমার প্রতিবাদ চলবেই। আমি আমার সংগ্রামকে ভালোবাসি। আমার প্রিয় বন্ধুরা, প্রিয় অগ্রজ, নিশ্চয় এই ক্যাম্পাস আমরা কেউই দেখতে চাইনি, এই ক্যাম্পাস আমরা রেখে আসিনি আমাদের প্রিয় অনুজদের জন্য। আজ যদি আপনারই ছোট ভাই এভাবে নৃশংসভাবে বিচি’র (ভিসি?) ইশারায় খুন হত, তবে কী পারতেন, রক্তাক্ত পথের উপর দিয়ে হেটে গিয়ে আপনারই ভায়ের খুনির হাত থেকে আপনার শিক্ষিত হয়ে উঠার সীকৃতি নিতে? যুবায়ের তো আমাদেরই ভাই। যদি এখনও পৃথিবীতে মানবিক বোধগুলোর মৃত্যু না ঘটে থাকে, এখনও যদি অন্যায় অবিচার আর অত্যাচারিতের চীৎকার আমাদের ভাবিয়ে তোলে, আমাদের বাবা মা’রা আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি পাঠিয়ে থাকেন মানুষ হবার জন্যে, মানুষের মতন মানুষ, যদি আমরা খুনি, অত্যাচারী আর অথর্বদের হাত থেকে আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসকে বাঁচাতে চাই, তাহলে আসুন, চীৎকার দিয়ে বলি, খুনিদের উল্লাসমঞ্চ, আমার ক্যাম্পাস না।
বলুন, এই কনভোকেশন, আমাদের জন্য না।
এটাই হবে আমাদের জীবনে পাওয়া সবচে’ বড় সার্টিফিকেট, মানুষ হয়ে উঠার সার্টিফিকেট।
মনে রাখবেন, আপনারা যারা কনভোকেশনে যাবেন, পৃথিবী মনে রাখবে সেদিন কিছু কালো কাঁপনে মোড়া, মনুষ্যত্বহীনতার চিতা থেকে উঠে আসা একদল খুনিদের প্রেতাত্মারা জড়ো হয়েছিল, তারা কোনোদিন মানুষ ছিল না। মনে রাখবেন, সমাজ মনে রাখবে, সেদিন একদঙ্গল বুনো মোষের শাবক জমা হয়েছিল, এরচে’ বেশি কিছু না। একজন মানুষের শিক্ষিত হয়ে উঠাকে প্রমাণ করার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দরকার পড়ে না।
আমরা এখানে কেউ কারো পাশে দাঁড়াচ্ছি না, বরং আমরা এখানে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব পালনে শামিল হচ্ছি। যেদিন কনভোকেশন হবে, সেদিন আমরা যুবায়েরের শোক সভা ডাকব। আশা করি আপনারা সবাই, সেদিন শোক সভায় যোগ দিবেন।
"যেই ভিসি নিজের পালিত সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে একজন ছাত্রকে নিরাপত্তার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ক্যাম্পাসে এনে হত্যা করে আবার কনভোকেশন উৎসব পালন করতে চায়, তার ক্যাম্পাসে কি আমরা নিরাপদ ?
কনভোকেশন উৎসবের রং দিয়ে যে জুবায়েরের রক্ত মুছে দিতে চায়, সেই উৎসবে যাওয়া কি আমাদের এতটাই প্রয়োজন ? প্রক্টর আর নিরাপত্তা কর্মীকে সরিয়ে দেয়াই সমাধান না । কারণ, সন্ত্রাসীরা প্রক্টর আর নিরাপত্তা কর্মীর পালিত না। তারা ভিসি দ্বারা... পালিত, নিয়ন্ত্রিত। কনভোকেশনে অনেকেই অংশ নিবেন যারা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। চিন্তা করে দেখুন, আপনারা কি নিরাপদ ?

আমিও ছাত্রলীগ করতাম। না, এই ভয়াল দানব নব্য ছাত্রলীগ নয়। বিরোধীদলে যখন আজকের সুবিধাবাদীরা মনের সুখে ঘুরে বেড়াত, তখন তৎকালীন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের রক্ত-চক্ষু উপেক্ষা করে রাজনীতি করেছি। আজ, আমার সংগঠনেরই এক কর্মীকে একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ভিসির ইশারাতে হত্যা করা হয়। জোবায়েরের রক্ত এখনো শুকায় নাই। ওর রক্তের ওপর দিয়ে হেঁটে হত্যাকারীদের কাছ থেকে সনদ আমি নেব না।

আসুন, ভিসিকে মনে করিয়ে দেই, সনদপত্রের চেয়ে মানবিকতা, মনুষ্যত্ব অনেক বড়।
আসুন, কনভোকেশন উৎসব বর্জন করি।
আমি অনেক ছোট মানুষ। তাই প্রতিবাদের ভাষাটিও ছোট। কিন্তু, আমি, আপনি, আমরা সবাই মিলে এই ছোট প্রতিবাদটিকে সমুদ্রসম করতে পারি।
আসুন, চিৎকার করে বলি........... খুনি ভিসির রক্তে কলঙ্কিত হাত থেকে সনদ নিব না.............(আনন্দ ভাইয়ের ফেইসবুক একাউন্ট থেকে)।"
"বর্বর ভিসির র্ববরতার কাছে জুবায়ের বলি হয়েছে... আর এর প্রতিবাদে একটা ঠুনকো কনভোকেশন যদি বর্জন করতে না পারি তবে আমরা মানুষ হিসেবে, বড় ভাই/বোন হিসেবে জুবায়েরের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবো চিরজীবন!!! (মাহবুব ভাইয়ের ফেইসবুক একাউন্ট থেকে)।"

অতএব, আসুন, ভিসিকে মনে করিয়ে দেই, সনদপত্রের চেয়ে মানবিকতা, মনুষ্যত্ব অনেক বড়।
আসুন, কনভোকেশন উৎসব বর্জন করি।

জয়েন করুনঃ কনভোকেশন বর্জন
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×