ঠিক ঈদের দ্বিতীয় দিন হওয়ায় চারদিকে উৎসব উৎসব ভাবের কোনো কমতি ছিল না। সর্বত্র নতুন পোশাকের প্রতিযোগিতা, আড্ডা, হই-হুল্লোড়। আড্ডার এক ফাঁকে ঢাকা থেকে আসা এক ছোট ভাইকে নিয়ে রওনা দিলাম শহরের সিও অফিস এলাকার দিকে। পরিচিত রাস্তার অপরিচিত নীরবতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যাওয়ার সময়ও জানতাম না আজ আরেকটা স্মরণীয় দিনের সঙ্গে দেখা হতে যাচ্ছে আমাদের। উদ্দেশ্য, বিখ্যাত সরোদশিল্পী ওস্তাদ আফজালুর রহমানের বাড়ি দেখা; যিনি নয় বছর বয়সেই টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেন দৃষ্টিশক্তি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন অন্ধ। বাবার মতো দুই মেয়ে মহুয়া রহমান রুবা ও অন্তরা রহমান টুংটাংও আজ দৃষ্টিহীন।
বাড়ির সামনে যেতেই চোখে পড়ল সাইনবোর্ডে লেখা, ‘ইনার আইস মিউজিক্যাল ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ড’ এবং দেখা হলো ওস্তাদজির সহধর্মিণী আনোয়ারা রহমানের সঙ্গে। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পরিচয় দিতেই ভেতরে বসতে বললেন। তিনি দুই মেয়ে রুবা ও টুংটাংকে নিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। শৈশবে গ্লুকোমা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি হারানো এ দুজনই একাধারে বাজাতে পারেন কিবোর্ড, ভায়োলিন, তবলা, পাকোয়াসসহ নানা সংগীতযন্ত্র। লিখতে পারেন কবিতা, গল্প, গান। গাইতে পারেন বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি ও জাপানিজ ভাষায়। সৃষ্টিশীল সব গুণই যেন তাঁদের মধ্যে বিদ্যমান। সংগীতের মাধ্যমে পেয়েছেন তাঁরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং এক ডজন জাতীয় পুরস্কার। গান গেয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে।
ঈদ কেমন কাটল—জানতে চাইতেই টুংটাং বলেন, ‘ভালো কাটেনি! আব্বুকে খুবই মিস করেছি।’ বলেই চুপ হয়ে গেলেন। ‘ঈদের দিন আম্মু-আব্বু এবং আরও কয়েকজন মিলে আমরা বেড়াতে যেতাম। কিন্তু এবার...।’ এ কথা বলেই রুবাও নীরব হয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর দুই বোন একসঙ্গে হেসে উঠলেন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুবা বলে উঠলেন, ‘জানেন ভাইয়া, আব্বু একা থাকতে পারতেন না। যখন আব্বুর এনজিওগ্রাম হয়, তখন ডাক্তারকে বলেকয়ে আমাদেরও থাকতে হয়েছিল আব্বুর সঙ্গে।’
একপর্যায়ে গেয়ে শোনালেন তাঁদের লেখা ও সুর করা অসাধারণ কয়েকটি গান। দেখালেন সিঙ্গাপুরের একটি দৈনিকে প্রকাশিত তাঁদের একটি গল্প এবং বাংলাদেশে প্রকাশিত একটি গল্পের বই। সবকিছুই আমাদের মুগ্ধতার বাঁধ ভাঙার জন্য যথেষ্ট ছিল। আসার আগে আব্বুকে কীভাবে অনুভব করেন—জানতে চাইলে জবাব দেন, ‘আম্মু-আব্বু মিলে আমরা চারজন
ছিলাম একজন। তাই আব্বু মিশে আছে আমাদের হৃদয়ে।’
View this link লেখাটা আজ প্রথম আলো বন্ধুসভা পাতায় ছাপা হয়েছে...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




