ঢাকায় এসেছি ১৯৯২ সালে।তখনো স্কুলেই ভর্তি হইনি।তাই বলা যায় আমার আনন্দময় ছেলেবেলার দিনগুলো কেটেছে এই ঢাকাতেই।আমরা থাকতাম দক্ষিণ গোড়ান এলাকায়।তখনো ওই এলাকার তেমন উন্নতি হয়নি।নতুন নতুন বাড়িঘর উঠছে।
আমরা যে গলিতে থাকতাম তার নাম ছিল হাওয়াই গলি।সেখানেই আমি পেয়ে গেলাম চমৎকার কিছু বন্ধু।সবাই এলাকায় নতুন এসেছি।আমরা ছিলাম ছয়জন এবং সবাই সমবয়সী।আমাদের আর পায় কে?সারাদিন কাটতো দুরন্তপনায়।কত মজার খেলাই না আমরা খেলেছি!
প্রথমেই যে দু'টি খেলার কথা মনে পড়ে তা হল ছোঁয়াছুয়ি আর বরফপানি। ছেলেমেয়ে সবাই একসাথেই খেলতাম ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত।তারপর মনে হল আমরাতো বড় হয়ে গেছি।মেয়েদের সাথে খেললে তো আর প্রেস্টিজ থাকে না
আরেকটি মজার খেলা ছিল টিলো-স্পেস বা এই জাতীয় কিছু।অনেকটা লুকচুরি খেলার মত।খেলাটা খেলতে গিয়ে পুরো এলাকাই আমাদের নখদর্পণে চলে এসেছিল।
ফুল-টোক্কা নামের একটি খেলার কথা আবছা আবছা মনে পড়ছে।যতদূর মনে হয় দুই দলে ভাগ হয়ে খেলাটা খেলতে হয়।এক দলের রাজা এসে অন্য দলের প্রজার চোখ চেপে ধরে,আর তার দলের প্রজা এসে ওই চোখ বাধা প্রজাই কপালে টোকা মারে।পরে চোখ বাধা প্রজাটিকে অপরজনের নাম বলতে হয়।হেন চিটিং নেই যা এই খেলায় হত না।শেষ পর্যন্ত ঝগড়া-ঝাঁটি করে,একজন আরেকজনকে জন্ম আঁড়ি দিয়ে যার যার বাড়ি ফিরতাম! পরদিন আবার যথারীতি খেলা হত।
আরেকটু বড় হতেই শুরু করলাম সাত-চারা আর বম্ব-বাস্টিং খেলা।এই দু'টি খেলার চেয়ে আর কোনও রোমাঞ্চকর বোধহয় খেলিনি।যদিও বম্ব-বাস্টিং খেলতে গিয়ে আমার একটি দাঁত শহীদ হয়েছিল
সবশেষে আসলো আধুনিক খেলা ফুটবল আর ক্রিকেট।বর্ষাকালে খেলতাম ফুটবল আর সারাবছর ক্রিকেট।
গলির মধ্যে ফুটবল খেলার মজাই আলাদা। তবে আমি ছিলাম চশমুদ্দীন, তাই ফুটবল খেলার চেয়ে রেফারিংই মনে হয় বেশি করেছি।
ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পরও যে খেলাটি এখনও খেলতে পারি সেটা হল ক্রিকেট।তবে ক্রিকেট খেলাটা উপভোগ করেছি ছোটবেলাতেই বেশি।এখন একটু দৌড়াতেই কষ্ট লাগে
একটা কথা না বলে পারছিনা।ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের চেয়ে দেশীয় খেলাগুলো খেলতেই যেন বেশি মজা পেয়েছি।না,আমি আলগা ভাব দেখানোর জন্য বলছিনা,সত্যিই এটা আমার মনের কথা।ছোটবেলায় যেখানে সহজেই দেয়াল টপকাতে পারতাম,এখন দেয়াল টপকাতে আরেকজনের সাহায্য লাগে।ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলতে যেখানে আলাদা ফিটনেস ট্রেনিং লাগে,সেখানে এই খেলাগুলোই ফিটনেস ট্রেনিং হিসেবে কাজ করে।আজকালকার ছেলেমেয়েরা খালি গেমস খেলেই সময় পার করে।ছেলেবেলার ওই মজার খেলাগুলোর স্বাদ যদি তারা একবার পেত,আমার বিশ্বাস তারা কম্পিউটার এর কথাও ভুল যেত!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




